নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি জন্মগত ভাবেই একজন উৎকৃষ্ট পাঠক । তবে একাকীত্ব কাটানোর জন্য মাঝে মাঝে নিকৃষ্ট মানের লেখাও লিখি ।

ফরহাদ আহমদ নিলয়

ফরহাদ আহমদ নিলয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

২১শে ফেব্রুয়ারি ও আমার কিছু ব্যক্তিগত ভাবনা

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৭

১।

গত কয়েক বছর ধরেই দেখে আসছি, ডুড প্রজন্মের ভাষা নিয়ে আমাদের ফেসবুক সেলিব্রেটিদের বড়ই চিন্তা! ডুড প্রজন্ম বাংলার সাথে বাংলিশ মিশিয়ে অদ্ভুত উচ্চারণে কথা বলে বাংলা ভাষার সর্বনাশ করে ফেলছে, এতে করে চেতনার ঝান্ডাধারীদের ভাষানুভূতি কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তা নিয়ে কারো চিন্তার কমতি নেই! ভাষার বিকৃতি রোধে কেউ কেউ আবার ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়ে বসছেন! অথচ বাচ্চাকালে আমাকে শেখানো হয়েছিল- ভাষা প্রবাহমান নদীর মত। কালে কালে মানুষের মুখে মুখে ভাষার বিবর্তন হয়। বহুকাল পরে গিয়ে দেখা যায় নতুন একটি ভাষার সৃষ্টি হয়েছে যার সাথে মূল ভাষার দূরতম মিলও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
আমার মতে এটাই স্বাভাবিক। ভাষা তো পাল্টাবেই। সেটা আপনি চান বা না চান। এটা কেউ চাপিয়ে দিচ্ছে না, নিজ থেকেই হচ্ছে। একুশের মূল চেতনা কিন্তু বাংলা রক্ষা ছিল না, ছিল চাপিয়ে দেয়া ভাষার পরিবর্তে নিজের ভাষায় কথা বলার স্বাধীনতা। কে কিভাবে কথা বলবে সেটা ঠিক করে দেয়ার আপনি কে রে ভাই?
আজ আমরা প্রমিত বাংলা বা শুদ্ধ বাংলা বলতে যা বুঝি, এটা কিন্তু আসমান থেকে নাজিল হয় নাই! সংষ্কৃত কিংবা তারও আদি কোন ভাষা থেকে পালি হয়ে বিভিন্ন অপভ্রংশে বিভাজিত হয়ে তবেই এই রূপ পেয়েছে। আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি- যখন এই বিবর্তন প্রক্রিয়াটা চলছিল, সেই সময়ও যদি আজকের যুগের মত ফেসবুক সেলিব্রেটিরা থাকত তাহলে আমরা এখন কোন ভাষায় কথা বলতাম? উচ্চারণ করতে গিয়ে দাঁত ভেঙ্গে যাওয়া কোন ভাষা? -_-
ভাষা গাইডলাইন দিয়ে স্ট্রেইটকাট রাখার মত কোন জিনিস না, এটা বদলাবেই। আমি মূর্খ মানুষ, নিজে যেটা বুঝেছি সেটা ভুলও হতে পারে। তবে হাউকাউ সেলিব্রেটিরা আমার এঙ্গেল থেকেও একটু ভেবে দেখবেন- এটুকু আশা রাখতেই পারি।

২।

সারাজীবন ধরে পড়ে এসেছি শহীদ, লিখে এসেছি শহীদ। কিন্তু গতকাল থেকে দেখছি সবাই লিখছে শহিদ। গত বছর থেকে বাংলা একাডেমী নতুন নিয়ম করেছে- শহিদ লেখা লাগবে!
কেউ আমারে একটু বুঝান, শহীদদের শহিদ লিখলে কতটুকু বেশি সম্মান করা হয় আর শহীদ লিখলে কতটা কম সম্মান করা হয়? শহিদ লেখার সুবিধা কি আর শহীদ লেখার অসুবিধা কি? শহীদ লেখা কেন ভুল আর শহিদ লেখা কেন শুদ্ধ?
১০০ বছর ধরে (কথার কথা) শহীদ শব্দটা প্রচলিত, বাংলা একাডেমীর বয়সও কম না। তাহলে গত বছর কেন হঠাৎ করে তাদের মনে হল শহীদ শব্দটা ভুল? শব্দটা শহীদ না হয়ে শহিদ হবে। এত বছর ধরে প্রচলিত একটা শব্দকে হুট করে হঠাৎ পরিবর্তন করার হেতু কি? গ্রামারের কোন রুলস অনুযায়ী সেটা করা হয়েছে? আর সেই রুলসটাই বা এতদিন কোথায় ছিল? নাকি কোন মুরগী ডিম পাড়ার মত করে সেই রুলসটা টুপ করে পেড়েছে? -_-
বাংলা একাডেমী জিনিসটার প্রতি দিন দিন বিরক্ত হচ্ছি। যে কাজগুলো করা দরকার সেগুলো করার কোন খবর নাই, পড়ে আছে যতসব বালছাল ফাইজলামি নিয়া। :/

৩।

আমার দৃষ্টিতে যারা শহীদ মিনারে গিয়ে বিভিন্ন স্টাইলে ছবি তুলে (এমনকি জুতা পায়েও) ফেসবুকে দিচ্ছে আর যারা তাদের ছবি স্ক্রিনশট নিয়ে 'এদের নিয়া জাতি কি করিবে' টাইপ ক্যাপশনসহ শেয়ার করছে, তারা দুই শ্রেণীই সমগোত্রীয় আবাল।
প্রথম শ্রেণী কাজটা করছে কারণ তারা দিনটির গুরত্ব ঠিকভাবে উপলদ্ধি করতে পারেনি। আর দ্বিতীয় শ্রেণী করছে 'ওরা কত মূর্খ, কিচ্ছু জানে না, দেশকে একটুও ভালবাসে না, আমি দিনটা নিয়ে এত্তগুলা জানি, দেশকেও এত্তগুলা ভালবাসি, আমি প্রাণী হিসেবে ওদের চেয়ে অনেক বেটার' এটা দেখানোর জন্য।
দুই ক্যাটাগরির মানুষের মাঝেই সমস্যা আছে। দেশপ্রেম লোক দেখানো জিনিস না। আবার কেউ তার অনুভূতিগুলো ঠিক মত প্রকাশ করতে না পারলে সেটা ডেকে ডেকে লোক দেখিয়ে 'হেতে পারেনা' বলার জিনিসও না। কিন্তু দুই শ্রেণীর মানুষই এটা করে নিজেকে অন্যদের চেয়ে একটু স্মার্ট দেখানোর জন্য। কিন্তু দেখায় আবাল, সেটা তারা জানে না।

৪।

স্বীকার করুন বা না করুন, আমরা উৎসবপ্রিয় জাতি। উৎসবটা আমাদের রক্তে মিশে আছে। আমাদের শুধু উপলক্ষ পেতে দেরি, সেটা নিয়ে মাতামাতি করার কোন সুযোগই আমরা কখনোই ছাড়িনা। ইতিহাসবেত্তারাও আমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়ে এমন কথাই কিন্তু লিখে গেছেন। অর্থাৎ ব্যাপারটা আমাদের জিনগত।
শুধু ২১ শে ফেব্রুয়ারি না, শোক দিবস, বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসসহ যতগুলো শোকের দিবস আছে, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস কিংবা বাদবাকি যতগুলো আনন্দের দিবস আছে, সরকারি ছুটি পেলে ধীরে ধীরে আমরা সবগুলোকে উৎসবের দিন বানিয়ে ফেলবো, কোন সন্দেহ নেই। আজ না হোক, ৫ বছর পরে হলেও। এই ব্যাপারটা আসলেই থামানোর কোন উপায় নেই, শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া। যতই প্রতিবাদ করা হোক কিংবা থামানোর চেষ্টা করা হোক, এটা বদলানো যাবেনা কিছুতেই। কারণ, ব্যাপারটা আমাদের জিনগত। ইউ ক্যান্ট চেইঞ্জ হু উই আর! -_-

৫।

আমরা করছিটা কি? আসলেই আমরা কি করছি?
আজকেও ফুল দেয়া নিয়ে দেশের ১০/১২টি জেলায় রক্তারক্তি কান্ড। শহীদদের শ্রদ্ধা মানুষ এভাবে জানায়?
আমরা তো জীবত মানুষকেই এখনো শ্রদ্ধা করা শিখিনি, মৃতদের কিভাবে করব?

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চমৎকার বলেছেন।
তবে বাংলিশ কিন্তু স্বাভাবিক ভাষা নয়। ডুড প্রজন্ম কিন্তু নিজেকে একটু স্মার্ট হিসেবে উপস্থাপন করতে এটা এনেছে। স্বাভাবিকভাবে আসেনি। তাই ওটা ভাষার অংশ হবে না আর আমার মনে হয় না বাংলাটা অদিকে রূপান্তরিত হবে। কিছু শব্দ চলে আসবে, এসেছে, ইংরেজি থেকে, হিন্দি থেকে এমনকি উর্দু থেকেও। আমরা কিন্তু সাদরে গ্রহণ করেছি। আর এটাও লক্ষ্য করে দেখুন যে বাংলা অনেকটা পরিবর্তিত হয়েছে। এটা মনে রাখতে হবে ভাষার পরিবর্তন স্বাভাবিক, নিজেনিজেই হয়। কিন্তু বাংলিশ অস্বাভাবিক, ওটা চাপিয়ে দেয়া। ওটা মেনে নেয়া যায় না।
বাকি পুরো লেখাটার সাথে একমত

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০১

ফরহাদ আহমদ নিলয় বলেছেন: এখন হয়ত চাপিয়ে দেয়া মনে হচ্ছে, কিন্তু আর ১৫/২০ বছর পরে এটা তখন স্বাভাবিকই মনে হবে। আর চাপিয়ে দেয়া মানে কিন্তু এটা বাইরের কেউ আমাদের উপর চাপিয়ে দেয় নি, আমরা নিজেরাই এটা আমদানি করেছি। তাই চাপিয়ে দেয়া সে কথাটি খাটে না কিন্ত।

২| ২১ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:৩৩

মাদিহা মৌ বলেছেন: বাংলিশের ব্যাপারে একমত নই। এই ব্যাপারটা আমার প্রচন্ড অসহ্য লাগে।

বাংলা একাডেমির কদিন পর পর ভাষারীতি বদলানোর যুক্তি আমিও খুঁজে পাই না। তবে পরিবর্তন তো এভাবেই আসে …

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.