নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দকবিতা : শব্দেই দৃশ্য, শব্দেই অনুভূতি [email protected]

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্লগারদের স্ব-নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা : তৃতীয় ও শেষ পর্ব

০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫২







কবিতা সংগ্রহ ও সম্পাদনা এবং কম্পিউটার গ্রাফিক্‌স

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই



প্রচ্ছদ : কাল্পনিক_ভালোবাসা



ছবি: পিডিএফ কপির ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যবহৃত ছবিটি কবি অরুদ্ধ সকাল এঁকেছেন। অন্যান্য ছবিগুলো হয় সংশ্লিষ্ট কবি অথবা সম্পাদক কর্তৃক ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে; তবে বেশিরভাগ ছবিই সম্পাদক কর্তৃক এডিট করে এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে। কয়েকটা ছবিতে শিল্পীর নাম যুক্ত করা হয়েছে। ব্লগার জুন নিজের আঁকা কয়েকটা ছবি ফেইসবুকে শেয়ার করেছিলেন; তাঁকে না জানিয়ে সেগুলো পিডিএফ কপিতে ব্যবহার করেছি- তাঁকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য। দেশি আপুকে অনেক ধন্যবাদ।



কবিতা শুরুর আগে



‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বা ‘শ্রেষ্ঠ’ কথাগুলোয় অনেকের অপত্তি রয়েছে; কেননা, একজন কবির কাছে তাঁর কবিতামাত্রই শ্রেষ্ঠ; কোনো একটা কবিতাকে শ্রেষ্ঠ বলা হলে অপরাপর কবিতা অপাঙ্‌ক্তেয় হয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু কবিদের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’র বই প্রকাশ করার ইতিহাস নতুন নয়। রবীন্দ্র-নজরুল থেকে শুরু করে হুমায়ুন আজাদ পর্যন্ত খ্যাতিমান কবিরা শ্রেষ্ঠ কবিতার বই প্রকাশ করেছেন। একজন কবি জীবনে ৫০০টি কবিতা লিখে থাকলে ৫০০টি কবিতাই গুণগতভাবে সমান মানসম্পন্ন হবে, এমনটা ভাবা মনে হয় ঠিক নয়।



একজন কবি কি নিজে জানেন না তাঁর দুর্বল কবিতা কোন্‌টি বা কোন্‌গুলো। এজন্য দিনের পর দিন, যখনই সময় পান, দুর্বল-নির্বিশেষে সব কবিতাই তিনি পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করতে থাকেন। রবীন্দ্রনাথও ক্রমাগত পরিমার্জন করতেন। দ্বিতীয় বা তদ্‌পরবর্তী সংস্করণসমূহে প্রথম প্রকাশিত কবিতায় অনেক পরিবর্তন বা পরিমার্জন লক্ষ করা যেতো। কখনো কখনো এ পরিমার্জিত কবিতাটি নতুন আঙ্গিক ও ভাবে আবির্ভূত হতো।



কবি তাঁর সাবলীল ও প্রিয় কবিতাগুলো সম্পর্কেও সম্যক অবহিত। ভালো কবিতাগুলো বার বার পড়েন, এতে প্রচুর আনন্দ ও তৃপ্তি পেয়ে থাকেন, তেমনি এসব কবিতায় কোনো খুঁত থাকলে তা তিনি দূর করতে সচেষ্ট হোন।



কবির কাছে তাঁর কোন কবিতাটি সবচেয়ে বেশি প্রিয়, কোনো কবি হয়তো এভাবে কখনো ভাবেন নি। ঠিক এ ভাবনা থেকেই ‘ব্লগারদের স্ব-নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা’ সংকলন পোস্ট তৈরি করার ধারণা লাভ করি। ব্লগে নানান ধরনের সংকলন পোস্ট প্রকাশিত হতে দেখা যায়, উদাহরণ স্বরূপ মাসিক ভিত্তিতে প্রকাশ করা গল্প ও কবিতা সংকলন পোস্টের নাম বলা যেতে পারে। এসব সংকলন পোস্টে ব্লগারদের আবেগ, ভালোবাসা, উচ্ছ্বাস ও উদ্যম অন্য সাধারণ পোস্টের চেয়ে অনেক বেশি লক্ষ করা যায়।



আমি যতটুকু দেখতে পেয়েছি তাতে মনে হয়েছে ব্লগে কবিদের সংখ্যা প্রচুর। কোনো কোনো কবি এক দিনে গোটা পাঁচেক, বা তারও বেশি সংখ্যক কবিতা প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ, কবিরা ক্লান্তিহীন। কবিরা প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। তাঁদের জন্য আরেকটি আনন্দদায়ক কাজ করা যেতে পারে- তাঁদের শ্রেষ্ঠতম কবিতাটি বাছাই করা। কবিরা এ যাবতকাল যতগুলো কবিতা লিখেছেন, তার মধ্য থেকেই তাঁদের শ্রেষ্ঠতম কবিতাটি বাছাই করবেন। ২১ মে ২০১৪ তারিখে এ নিয়ে ফেইসবুকে প্রথম স্টেটাস ছাড়া হয়। ব্লগার বন্ধুরা তাৎক্ষণিকভাবে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং তাঁদের সানন্দ ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কথা বলেন। এতে আমিও খুব উৎসাহিত বোধ করি। ব্লগে বর্তমানে যাঁরা এ্যাক্টিভ রয়েছেন, তাঁদের সবার কাছেই সার্কুলার পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি। যাঁরা আগে এ্যাক্টিভ ছিলেন, বা বর্তমানে যাঁরা ব্লগে খুব কম আসেন, তাঁদের কাছেও মেসেজ পৌঁছে দিয়ে তাঁদের সেরা কবিতাটি সাবমিট করতে অনুরোধ করি। পুরোনো কয়েকজন ব্লগার অনেক আগে ব্লগ ছেড়ে দিয়েছেন বলে কবিতা দিতে চান নি, তবে তাঁরা উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার পরও, বেশ কয়েকজন পুরোনো ব্লগার এতে অংশগ্রহণের জন্য এগিয়ে এসেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত কবি ও ব্লগার, হাংরি আন্দোলনের কবি মলয় রায়চৌধুরীর কথা উল্লেখ না করলেই নয়। ‘জখম’ তাঁর সেরা কবিতা। এ কবিতার সফট কপি পাওয়ার জন্য তাঁর সাথে আমার বেশকিছু মেসেজ আদান-প্রদান হয়; আমি ইন্টারনেটেও খুঁজি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ইন্টারনেটে কবিতাটি খুঁজে পেয়েছি। সুদীর্ঘ কবিতাটি থেকে প্রথম কয়েক স্তবক এ সংকলনের অন্তর্ভুক্ত করা হলো। সামহোয়্যারইন ব্লগে ‘জখম’-এর উপর আলোচনা পোস্ট রয়েছে; আগ্রহী ব্লগারগণ সেটি পড়তে পারেন।



এ ধরনের পোস্টে অনেক শ্রমের প্রয়োজন। ব্লগারদের অদম্য উৎসাহে আমি আমার ব্যক্তিগত সময় নষ্ট করে এ কাজটি করার জন্য নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এজন্য ব্লগারদের প্রতি আমার অজস্র ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।



মজার অভিজ্ঞতা



ব্লগারগণ নিজেরাই তাঁদের সবচেয়ে ভালোলাগা কবিতাটি সাবমিট করবেন - প্রিয় ব্লগারদেরকে এ বিষয়টা বোঝাতে আমি চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছিলাম। এবং অনেক ব্লগারই মনে করেছেন - কবিতাগুলো আমার পছন্দ অনুযায়ী নিলেই তো কাজ হয়ে গেলো!



আসলে ব্যাপারটা তা ছিল না। একজন কবি সারাজীবনে অনেক কবিতা লিখেন। অনেকে সর্বশেষ লিখিত কবিতাটিতেই সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি পেয়ে থাকেন। কিন্তু কিছুকাল পরে সর্বশেষ কবিতাটিও হয়তো পানসে হয়ে যায়। কিন্তু সমগ্র কবিতাসম্ভারে কবির এমন কিছু কবিতা থাকতে পারে, যার প্রতি তাঁর সবিশেষ অন্তরিকতা থাকে। তা ছাড়াও, রচনাশৈলি, ভাব, সব মিলিয়ে কবির কাছে সবচেয়ে নিখুঁত কোনো কবিতা থাকতে পারে, যেটি পড়ে কবি নিজেই মুগ্ধ হয়ে যান। আমি কবিদের কাছে এমন কবিতাই চেয়েছিলাম। ‘শ্রেষ্ঠ’ কথাটিতে হয়তো আপত্তি থাকতে পারে- কিন্তু সবচেয়ে ভালোলাগা কবিতা থাকা সম্ভব। কবিদের সেই সবচেয়ে ভালো লাগা কবিতা নিয়েই এ পোস্ট। কিন্তু আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগা কবিতা নিয়ে এ পোস্টটি নয়- এ নিয়ে মেসেজিং করে আমাকে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়েছে।



পোস্ট বা সংকলন বইয়ের নাম এরকম হতে পারতো- ‘সামহোয়্যারইন ব্লগের শ্রেষ্ঠ কবিতা।’ সে ক্ষেত্রে কবি ব্লগারদের কোনো ভূমিকা নেই; তখন কবিতা নির্বাচনের সমুদয় দায়িত্ব সংকলকের। তখন বরং সংকলকের সাথে কবি মতামত বিনিময় করলে সংকলক বায়াস্‌ড হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু কোনো একটা ব্লগের শ্রেষ্ঠ কবিতা নির্বাচন কোনো মুখের কথা নয়। এ কাজটা করার জন্য প্রথমত দীর্ঘ সময়ের দরকার- এক বছরও পর্যাপ্ত সময় নয় বলে আমি মনে করি। দ্বিতীয়ত, এ কাজটা একজনের পক্ষে করা সম্ভব নয়।



অনেক ব্লগারই তাঁদের ব্লগ পড়ে আমার যেটা ভালো লাগে সেটা নিয়ে নিতে বলেছিলেন, অনেকে এ নিয়ে অনেক জোরাজুরিও করেছেন। কেউ কেউ ৩-৪টা কবিতা জমা দিয়ে তা থেকে সেরাটা বেছে নিতে বলেছেন।



আমি নিজে কবিদের ব্লগ থেকে আমার ভালোলাগা কবিতাগুলো বেছে নিলে এটা ব্লগারদের স্ব-নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা হতে পারে না। আমার জন্য সবচেয়ে কষ্টদায়ক, লজ্জাকর ও বিব্রতকর বিষয়টি ছিল- কোনো ব্লগারবন্ধুই বোধহয় অনুধাবন করেন নি যে, একা আমার পক্ষে শত শত ব্লগারের ব্লগ পড়া সম্ভব নয়। অনেকে আবার স্টেটাস ভালোমতো না পড়ে মেসেজে অনেক প্রশ্ন করেছেন। সময়ের অভাবে অনেককে সব প্রশ্নের জবাব দেয়া সম্ভব হয় নি। তবে, শতভাগ ক্ষেত্রে স্বয়ং কবি তাঁদের শ্রেষ্ঠতম কবিতাটি বাছাই করেছেন, যদিও ব্লগারদেরকে এ ব্যাপারে কনভিন্স করতে আমাকে প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে।



খুব উন্নত মানের গ্রাফিকস আমি জানি না। যতটুকু পারি তা দিয়ে পিডিএফ করতে যেয়ে দেখি সাইজ ৩৫-৪০ এমবি হয়ে গেছে। এটাকে ভাগ ভাগ করে পোস্ট দিলে হয়তো সমস্যা একটু কমবে। এ উদ্দেশ্যে সবগুলো কবিতাকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে।



এর আগে ব্লগে এ ধরনের কোনো সংকলন পোস্ট প্রকাশ করা হয় নি। এবার এ পোস্টটির জন্য কাজ করতে যেয়ে কবিদের সেরা কবিতাটি পড়ার এক অভূতপূর্ব সুযোগ পেলাম আমি, যা আমার জন্য একটা অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। সামহোয়্যারইন ব্লগের জন্য এটা একটা ইউনিক ডকুমেন্ট হিসাবেও চিহ্নিত হয়ে থাকবে।



সম্ভাবনার কথা



এই অভূতপূর্ব কবিতাসমষ্টি হাতে পাবার পর আমার ইচ্ছে প্রবল হচ্ছে- আগামী একুশে বইমেলায় এর একটা পুস্তক সংস্করণ বের করার। বড় আকারে সম্ভব না হলেও অন্তত এ থেকে নির্বাচিত কবিতা নিয়েও একটা বই প্রকাশ করার ইচ্ছে আমার আছে।



এই চমৎকার প্রচ্ছদটি এঁকেছেন ব্লগার কাল্পনিক_ভালোবাসা। বই বের করা হলে তিনিই এর প্রচ্ছদ আঁকবেন- জাদিদ ভাইয়ের কাছে আমার এ দাবি থাকলো।



যাঁরা কবিতা দিয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা। বিশেষ কৃতজ্ঞতা পুরোনো কবিদের কাছে, যাঁরা অনেক আগেই ব্লগ ছেড়েছিলেন, কিন্তু আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁদের শ্রেষ্ঠ কবিতাটি উপহার

দিয়ে এ সংকলন পোস্টের মান ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছেন।



***



লিংক



ব্লগারদের স্ব-নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা তৃতীয় পর্বের পিডিএফ কপি



ব্লগারদের স্ব-নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা দ্বিতীয় পর্ব



ব্লগারদের স্ব-নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা দ্বিতীয় পর্বের পিডিএফ কপি



ব্লগারদের স্ব-নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা প্রথম পর্বের পিডিএফ কপি



ব্লগারদের স্ব-নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা প্রথম পর্ব



***

||||****|||||

***



মলয় রায়চৌধুরী

জখম

দীর্ঘ কবিতাটির প্রথম কিছু অংশ এখানে তুলে দেয়া হলো



চাঁদোয়ায় আগুন লাগিয়ে

তার নীচে শুয়ে আকাশের উড়ন্ত নীল দেখছি এখন

দুঃখকষ্টের শুনানি মূলতবি রেখে

আমি আমার সমস্ত সন্দেহকে জেরা কোরে নিচ্ছি

হাতের রেখার ওপর দিয়ে গ্রামাফোনের পিন চালিয়ে জেনে নিচ্ছি

আমার ভবিষ্যত

বুকের বাঁদিকের আর্মেচার পুড়ে গেছে বহুকাল

এখন চোখ জ্বালা কোর্ছে মলয়ের কঙ্কাল জ্বালানোর ধোঁয়ায়

আশপাশ দিয়ে ঘণ্টায় ৯৯ কিলোমিটার দরে উড়ে যাচ্ছে বদমতলব ঝড়

কব্জিতে ঘড়ির কাঁটা রেখে চলে যাচ্ছে

সারসার সদ্বিঠ্যাং মানুষের লাভলোকসানময় দল

১টা চামচিকে অনেক নিচু দিয়ে উড়ে আমাকে ভয় দেখাচ্ছে

ওদিকে ফাঁকা মাঠের মধ্যে সাজানো রয়েছে

হাট-কোরে খোলা ৮০০০০০ কাঠের দরোজা

আমার সামনে সমস্ত দৃশ্য ধেবড়ে গেছে দেখতে পাচ্ছি

কারুর সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না আমার

আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে

আমার জিভ আমার ভাষা ভুলে যাচ্ছে

১৬ ডিভিশন কাক আমার হাত-পা ধড় ঘিরে চক্কোর কাটছে ২৫ বছর

হাড়ের রেলিঙ জাপ্টে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমারি রক্তমাংস

মলয়ের গায়ের চামড়া তুলে ফেলে

তার ঘাঁতঘোতের আত্মাভিমানী ফ্রেস্কো দেখতে পাচ্ছি

শরীরের ভেতরে চোলছে আয়ুহীন অন্তর্ঘাতী কার্যকলাপ

হেমোগ্লোবিনে টহলদার আঁধারের উস্কানিমূলক কাজ চোলছে ফিমিনিট

এখন চুপচাপ ভেবে দেখছি আমাকে নিয়ে কী করা যায়

বংশপরম্পরায় পেয়েছি ৬০০০ বছরের পালিশ-খাওয়া আপৎকালীন ক্রূরতা

চামড়ার পুরোনো পলেস্তারা চেঁছে মানুষের বোধহীনতা আমি ফেলে দিচ্ছি

ভাত খেয়ে আঁচাবার পর পরিষ্কার নখগুলোকে কেমন মহানুভব মনে হচ্ছে

আমার হাড়ের ফাঁকফোকোরে গোঁত্তা মেরে উঠছে গরম গনগনে লু

আমার লাশ আগাগোড়া তল্লাশ কোরে হৃৎপিণ্ড না পেয়ে

মানুষেরা যে যার ঘরে ফিরে যাচ্ছে

মানুষই মানুষকে শেখাচ্ছে খুন আর সেবা করার কায়দাকানুন

শরীর থেকে পড়ে-যাওয়া হাত-পা তুলে লাগিয়ে নিয়ে ফিরে যেতে হয়

দুপুরের লালচে হাওয়ায় আমি ২ চোখ বুজে শুয়ে আছি

কাঁচা কয়লার গন্ধ ঘোঁট পাকিয়ে উঠছে দুঁদে অসংযমী শিরার ১৮ নং টোটায়

আমার বাবা-মা’র ক্রোমোজম

আমাকে আমার দিকহীন খপ্পরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কিনা জানি না

ওফ্

ব্রেনের ক্রুদ্ধ শাঁসের ভাপ থেকে

রেটিনার উপর রঙিন নাইট্রো সেলুলোজ ঝরে পড়ছে

সমবেদনাজ্ঞাপক চিঠির আড়ত গড়ে উঠছে

আধভেজানো সদর দরোজার ভবিষ্যৎহীন চৌকাঠে

আখচার জং ধরে যাচ্ছে বহুব্যবহৃত মাংসপেশিতে

মাটির সঙ্গে ১ যোগে গলে ঘাঁট হয়ে যাচ্ছে জ্ঞানী আর মূর্খের সমসত্য মড়া

গর্ভের ফ্যাচাঙে

১টা কোরে কনভার্সান চার্ট নিয়ে ওৎ পেতে রয়েছেন প্রতিটি নারী

আমার ১ই শিরার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে

গান্ধী আর আত্তিলার সমকেমিকাল রক্ত

কিছুই হল না আমার পৃথিবীরো খিছু হবে না শেষ ওব্দি

তেজারতি কার্বার করা হল না

হাওয়ায় ভাসমান গাছগাছালির বীজ

আমার অনুর্বর ঘামের উপর বসে ফ্যাঁকড়া ছড়াতে চাইছে

বুমঘাঙের আপেলবাগানে বসে ব্যর্থতার কথা ভেবেছি দুপুরে রোদ্দুরে

শয্যের শাঁসের হেঁসেলে ঢুকে-থাকা পোকার অলস আরামের খোঁজে

ছুটোছুটি করা হল না আমার

নিজের শরীরের ভেতরদিকেই আজকাল থুতু ফেলছি আমি



আয়নায় শঠ পারা থেকে খুঁটে তুলছি আমি

আমার হিংস্র চোখমুখের আত্মত্রাণকারী ছাপছোপ

সকলেই যে-যার কাজ গুছিয়ে ঘাটবাবুর সার্টিফিকেট নিতে চলে যাচ্ছে

আমারি মগজ থেকে বেরিয়ে

২০০০ শিকারী কুকুর আমাকে তাড়া কোরে ফির্ছে ২৫ বছর

স্ত্রীলোকদের পায়ে চলা রাস্তার গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে

আমি এগিয়ে যাচ্ছি তাদের আমেচার আস্তানার দিকে

অন্ধকার রাস্তার ওপর পায়ের শাদা ছাপ দেখে

আমার বুক ছাঁৎ কোরে উঠেছিল

দেওয়াল থেকে ঝুরঝুরে বালি খসে পড়ার শব্দে কাঁটা দিয়ে উঠতে চেয়েছে

আমার ম্লান চামড়া

লোমের চিমনিগুলো দিয়ে ঠেলাঠেলি মেরে বেরিয়ে যাচ্ছে

আমার সির্দাঁড়া পুড়ে যাওয়া ধোঁয়া

উইদের থুতু দিয়ে তৈরি মাটির শিরার মধ্য দিয়ে

কাঁচা মাংসের লাশ টেনে নিয়ে যাচ্ছে ডেঁয়ো পিঁপড়ের সার

গায়ে-পড়া ঢেউদের সামুদ্রিক পাড় দিয়ে

খালি-পায়ে আমি চলে যাচ্ছি শকুনদের বিমর্ষ আড্ডায়

আমি জেনেছি খাদ্যজিনিশের মধ্যেই ১ সঙ্গে লুকিয়ে থাকে

রক্ত আর পুঁজের আকালষেঁড়ে রং

আখের বিকারগ্রস্ত মেধা মাটি থেকে শুষে তোলে

তরল পরোপকারী নোংরামি

আমার নোংরামি আমার ভালোবাসা আমার রক্ত

মেঘের পাশে পাশে উড়ে যায় ফেলে-দেওয়া রক্তমাখা ন্যাকড়া

হৃৎযন্ত্রের আলতো কাঁপনে কেঁপে ওঠা

নীলা-র বাঁদিকে রুগ্ন স্তন আমার মনে পড়ছে এখন

মরবার দিন অব্দি মুখ বুজে জীবনের লাথানি সয়ে যেতে হয়

এখন আমার হৃদমেশিনের জায়গায় ঝুলছে ১টা জ্বলন্ত ম্যান্টল্

এখন আমার ধমনীদের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে

যোগবিযোগের চিহ্ন আর কাঁটা-ভাঙা কম্পাস

মাটির ভেতর সিসের মগজে ওৎ পেতে আছে

সংবাদপত্রিকাদের হ্যাঁ কিংবা না

আমি বুঝতে পার্ছিনা আমি স্বধর্মনিষ্ঠ কি না

আমার পা বুঝতে পার্ছেনা যে আমিই তাদের গতি আর দিক নিয়ন্ত্রণ কোর্ছি

অফেরৎযোগ্য নারী নিয়ে

আয়কর / শুল্ককর দিয়ে বুড়ো হয়ে যেতে হবে কি না জানি না

নিজের সই জাল করে চালিয়ে দিলুম গোটা শীতকাল

চাইনি তবু জন্মালাম

জুতোর ফিতে না খুলেই

এবার আমি জোনাকিহীন অন্ধকারে লাফিয়ে পড়তে চাই

সকলেই কালকের জন্য তৈরি হয়ে নিচ্ছে

কালকের জন্যই আজ সন্ধেবেলা চোলছে জুতোর মমতায় পালিশ

ঘোরালো রাস্তা চলে যায় মানুষের পায়ের কাছ বরাবর ১ দিন না ১ দিন

দেবদারুর নতুন বাক্সে চড়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের লোভে

দেশ বিদেশের সীমান্ত অব্দি চলে যায় গ্রিজমাখা ৩০৩ কার্তুজ

বৃদ্ধের ২৫১০ বছর পর গান্ধীময়দানে পড়ে থাকে

পুলিশ ও অপুলিশ মার্পিটের ১৯৬৫ মডেলের জুতোছাতা

কোকেন আর জাল টাকার আড়তে

দেদার আরামে ১ সঙ্গে শুয়ে থাকে ভারত আর চিনের নাগরিক

আমি অন্ধ ভিকিরির হাত থেকে ৫ পয়সার চাক্তি তুলে নিয়েছিলাম

আমি খইয়ের ভেতর থেকে কাড়াকাড়ি কোরে ছিনিয়ে নিয়েছি

মড়ার দয়ালু পয়সা

সাঁতার না-জেনেও নৌকোয় পার হয়ছি মরে যাবার ভয়ে

আমাকে ধিক্কার দেয়া যায় আমাকে উপেক্ষা করা যায় না

ঈশ্বর যন্ত্রস্থ

আমি ভুল গর্ভ থেকে নেবে ভুল নাম নিয়ে ঘুড়ে বেড়ালাম ৬৫টা বছর

ভুল ইচ্ছে থেকে পেয়েছি ভুল দ্বেষ

ভুল সুখ থেকে ভুল দুঃখ পেয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল

আমি ভুল সংঘাত থেকে জড়ো কোরেছি ভুল চেতনা

আহ্ এ ভুল কোল্কাতা এ ভুল মানুষমানুষী

ভুল দম্ভ থেকে তৈরি কোরেছি ভুল হিংসে

আমি ভুল শৌচকাজ থেকে জেনেছি ভুল সরলতা

ভুল সংযম আমাকে এনে দিয়েছে ভুল বিরাগ

আমি ভুল অহংকার নিয়ে ভুল ভিড়ের কাছে চলে গেছি

আমি ভুল ভক্তি নিয়ে যে-কোনো কারুর খোঁজে জেগে বসে রইলুম সারারাত

ভুল স্বপ্ন দেখে ভুল জায়গায় স্ত্রীযন্ত্রের বদলে পেলুম অশ্বত্থের পাতা

ভুল শিক্ষা থেকে ভুল সুনাম পেয়ে কব্জির শিরা ছিঁড়ে ফেলে দিলুম

আমি ভুল নারীর পায়ের ওপরে রেখেছিলুম আমার নির্ভুল ভালোবাসা

ভুল প্রেম থেকে ভুল গন্ধের কাছে আমাকে অনেকবার চলে যেতে হল

আমি ভুল মদরুটি থেকে তৈরি কোরেছি আমার ভুল রক্তমাংস

ভুল সড়কের ওপরে দাঁড়িয়ে ভুল মত্লবের পাল্লায় ছিঁড়ে ছিঁড়ে ওড়চ্ছি

আমার ভুল ট্যানকরা চামড়া

নতুন চামড়া দেখব বলে আমি আমার ঘায়ের মামড়ি খুঁটে ফেলছি এখন

আস্তিনের তলায় আধপঁচা দগদগে ঘা লুকিয়ে

সকলের সঙ্গে হাত নেড়ে কথা বোলে যাচ্ছি

মুখের চামড়া নিচে আমার খুলি সব সময় হা কোরে হাসছে

আহ্

আঙ্গুলগুলো হৃদয়ের সঙ্গে সেলাই কোরে সিল কোরে রেখেছিলুম ২৫ বছর

আমি নদীর অযোগ্য জলে ডুবে গিয়েও ফিরে এসেছি কলের নিচে

মরামানুষের হতাশ জামাকাপড় পরে তারি খোঁজে ঘুরেছি রাস্তায় রাস্তায়

আমি অন্ধকারে কিছু ১টা আঁকড়ে থাকার জন্য চলে এলুম ২৫ বছর

অন্ধকারে নিজের সঙ্গে নিজে ধাক্কা খেয়ে আমাকে জাপ্টে ধোর্লুম

অন্ধকারে নিজেকে দেখে চমকে উঠলুম

ছাগলনাদি-র ঘুঁটেতে আগুন পোয়ালুম সারাটা চকরিহীন মাঘমাস

মাসিক ২৮৭.৭৫ টাকা ভাড়ায়

আমাকে খাটিয়ে নিল জমিদারী নিলামের চোথাপত্তর

আমি খালি পেটে ইন্টারভ্যু দিতে গিয়ে বলে এলুম অর্থমন্ত্রীর কাকিমার নাম

ঢালু জায়গায় প্রস্রাব কোর্লে নিজেরি পায়ের দিকে স্রোত গড়িয়ে আসে

শরীরে এ.সি. আর ডি.সি. ২ রকম শিরার ব্যবহারই পুরোদস্তুর চালালুম

স্বপ্নে আমি নীল আমেরিকা থেকে ধূসর জর্ডন ওব্দি চালিয়ে ফেরাচ্ছি

আমার হাইফেন গোড়ালি

আঘাতের রক্ত খুঁজতে খুঁজতে ১৫০০ মাইল চলে যায় সহৃদয় বোরিক তুলো

এখন মলয়ের বেওয়ারিশ আশা আকাঙ্খা ফির্ছে

আমার হাড়হাভাতে কোলজের খাপখোপে



***



জুলিয়ান সিদ্দিকী

সেইসব যাপিত সময়



বেভুল পথিক, মুগ্ধ আমি দেখি দিগন্তের ঘন কুয়াশায় এলানো সকাল

যেন স্মৃতিগুলো আজ ঝাপসা প্রেমের ফিনফিনে পর্দা মেলে কান্না ঢাকে

দীর্ঘশ্বাসের আড়ালে বুঝি ক্ষয়ে আসা বোধ বেদনার চাপে দারুণ বেহাল;

রাতভর কান্না হয়ে শিশিরের কণা সেজে অবুঝ স্বপ্নেরা বুঝি শুয়ে থাকে;

ফিরে যায় ভয়ে-ত্রাসে চেতনার বলাকারা। গোধূলিতে রাঙা সন্ধ্যার সাঁজাল

মিলেমিশে একাকার; তবু মিলায় ধোঁয়াশা সময় কিংবা প্রহরের ফাঁকে

প্রজাপতি আসে উড়ে উড়ে আসে মধুপোকা হলুদ সর্ষের চাদরে বিশাল

ঢেলে রাখে সব কিছু, পেতে রাখা কৃষানির লুটানো আঁচল যত ছবি আঁকে।



জীবনের রূঢ়তাকে পাশ কাটানো কি খুব বেশি প্রয়োজন? সেও থাকুক না

আমাদের নিত্যকার প্রয়োজনে যতটুকু মিশে থাকে নানা অপ্রয়োজন

ছোটোখাটো চাওয়ার ভিড়ে, হঠাৎ আলোর মত ঝলকিত কিছু মুগ্ধ প্রতারণা

কুয়াশার মসলিন আড়াল, যাপিত দিন, আসলে কি তারা সব বায়বীয়?



আমাদের সেইসব বিমুগ্ধ বিস্মিত রাত্রিদিন, প্রতিদিন ফিরে ফিরে আসে

প্রতিবেশী-পড়শির দীর্ঘশ্বাসে, শ্রান্ত-ক্লান্ত দেহের শুকানো ঘামের প্রশ্বাসে।

২৬.১২.২০১০



***



মাহবুব লীলেন

ফাঁসপাতাল



আরোগ্য-বণিকের ডেরায় নতুন এক যন্ত্রের আমদানি হলে রক্তের মধ্যে বিষের অভিযোগে স্বাস্থ্য-পুলিশেরা আমাদের ধরে নিয়ে মেশিনে ঢোকায়। হাতে গ্লাভস লাগিয়ে সে যন্ত্রবান্দর আমাদের রক্তে উকুন খুঁজে- হাড্ডিতে খাদ খুঁজে- হৃৎপিণ্ডে পোকা খুঁজে- পায়খানায় পাথর খুঁজে ছাপার অক্ষরে জানায় চোখের মধ্যে বালি ছাড়া আর কোনো সমস্যা নাই আমাদের...



তারপর কুঁচকিতে ঘা- মাথায় খুশকি- বৌয়ের সাথে রাগারাগি সব কিছুর জন্যই আমরা সেই মেশিনে ঢুকে জানতে পাই আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের পেশাবের রং সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক...



তালের মধ্যে তাল দিয়ে লাফ দিলে তারে বলে নাচ; চিৎকারের সুরে চিৎকার বাঁধলে হয় গান তাই বান্দর মেশিনকে ঘিরে ডাক্তার আর হাসপাতাল নেচে নেচে গায়- লাভেরে লাভ... আর ওদিকে মেশিনে-বণিকে-ডাক্তারে সুর হারিয়ে তাল পাই না বলে আমাদের সব লাফই হয় খিঁচুনি- সব চিৎকারই আর্তনাদ....



২০১০.০৭.১১ রোববার



***



ফকির ইলিয়াস

আমাকে দেখতে এসেছিল যে শঙ্খচিল



কবি হবার জন্য আমি কখনওই উঁচু করি নি হাত।

হাজির, হাজির বলে কোনো কাব্যসভায় দিই নি হাজিরা। পেছন সারির

দর্শক হিসেবে আজীবন শুনতে চেয়েছি কবিতা— আর নান্দনিক সন্ধ্যার

ছবিগুলো ধারণ করতে চেয়েছি আমার ক্যামেরায়। বনেদি যে পথ

আমি পেরিয়েছি— তুমি সে পথে পা না বাড়ালেও পারো। কারণ নদীতে

পা দিলেই ভিজে যেতে পারে পায়ের পাতা। ধূসর হয়ে যেতে পারে

আলতার রং। কিংবা মৃত শামুকের ভাঙা খোলস রক্তাক্ত করে দিতে

পারে পায়ের আঙুল। নিশিকামী জোনাকিরা মিটিমিটি আলোয় ছায়া ফেলে

তোমাকে দেখাতে পারে ভুল পথ।



অথবা এমনও হতে পারে— তোমাকে কবিতা শিখাবে বলে কোনো হাঙর

দেখাবে তার বীভৎস দাঁত! অতএব ফিরো না সে পথে। গ্রহণ করো অন্য

কোনো চাঁদের জাদুবিদ্যা। হাত রাখো এমন কোনো বিজলিতে, যে ঝলক

ঝলসে দেয় না পাঁজরের উত্তর মেরু। আমাকে এই নদীনক্ষত্রে দেখতে

এসেছিল যে শঙ্খচিল— তাকেও একই কথা বলেছি। কবি হবার যোগ্যতা

নেই আমার। আগুনের সাথে বায়ুর মিশ্রণে সাজিয়েছি যে তাম্রলিপি, বার বার

তা পাঠ করে হতে চেয়েছি নিতান্ত শব্দকামার।



***



মুজিব মেহদী

শর্মা বিষয়ক জটিলতা



কখনো চিকেন শর্মা খেতে খেতে তনুজা শর্মার কথা

মনে পড়ে গেলে

কারো কোনো দায় নিতে নেই চিকেন বা তনুজার

সব দায় গিয়ে বর্তায় কুচিকুচি শর্মায়



প্রভাব শব্দটা বিষয়ে যা কিছু অস্বস্তি আমার

শর্মার বরাতে দেখি কিছুটা কমেছে, তাই

সব ফেলে রেখে এসে দাঁড়াই রোদের বারান্দায়



চুল দেখলেই যারা মেয়ে ঠাওরায়

আর গোঁফ দেখলেই পুরুষ বেড়াল

মোটেই তাদের কথা হচ্ছে না এখানে

নিন্দুকের হাতে অস্ত্রের মজুত বাড়ানো

কখনো কাজের কথা নয়



আমরা বলছি ঐতিহ্যের কথা

কথা বলছি পরম্পরার

ছেঁড়া নদী কেননা কখনো সাগরে পৌঁছে না

থেমে থাকে কানাগলিতে সকল যন্ত্রযান



বেড়াল থাকল বেড়ালের জায়গায় মেয়েও থাকল মেয়েতেই

চোরা উল্লিখনে ছেয়ে গেল কেবল বাংলা কবিতার আকাশ বাতাস



***



টোকন ঠাকুর

সেপারেশন



ছিলাম কবিতাপাড়ায়, একদিন

মনে পড়ে, কবিতার সে কী জ্বর!

সারারাত কবিতার কাঁপা-কাঁপা শিয়রে বসে ভাবতাম

আমি সেই কবিতার কবিরাজ, বর



কবিতাকে আামি তাই কত ভালোবেসেছি

সীমানা-পাঁচিল ভেঙে ভেঙে কত কাছে এসেছি



তারপর, দুএকটি দুর্বোধ্য কারণে আমাদের

ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে, মনে পড়ে সারারাত কবিতার জ্বর ছিল

সেই সূত্রেই, এখনো কেউ কেউ আমাকে দেখিয়ে বলে-

‘এই লোক ভালো না, একসময় কবিতার বর ছিল...’



***



আশরাফ মাহমুদ

ঘণ্টাধ্বনির অসুখ আমার



আজকাল বুকের বাঁ পাশটায় ব্যথা হচ্ছে ঢের

কুয়াশাজল বাঁ দিকটায় গড়িয়ে পড়ে - আমি মাঝরাত্তিরে

প্রপাতঝংকার শুনি।

না, না, যা ভাবছেন তা নয়।

নিয়ম করে ডাক্তারের নিরীহদর্শন মুখমণ্ডল আর

আমুদে চোখ পরিদর্শন করে আসি; ফি সপ্তাহান্তে চিরতার রস সেবন

করি নোনা জলে মিশিয়ে! অথচ, বুকের ব্যথা গলানো মোমে

মিশে মিশে যাচ্ছে।



চোখের নীচটা কালো হচ্ছে, অভিমানী আঙুলের

ছাপ জমেছে চারিধার- ফোলা ফোলা।

রোজ তো বিছানায় পিঠ লাগাই; পাশের কামরায়

ডাকপিয়ন জলীলদা নির্বাক ঘুমায়!

বিকিকিনি হয় নাসিকা সঙ্গীতের।



কেউ জানে না, জলতরঙ্গী কবিরাজ নয়;

কী গভীর অসুখ দানা বেঁধে যাচ্ছে-

মনে আমার তোর রিকশার ঘণ্টাধ্বনির অসুখ।



১০ই ডিসেম্বর, ২০০৮



***



সোমহেপি

কালো পাইথনের মত বয়ে গেছে নদী



কালো পাইথনের মত নদী নেমে গেছে।

নদীর কালো জল তরতর করে...

অথচ আমার ভেতরে কে যেন পুড়ছে অনবরত!



অথচ নদীর দু’ধারে মানুষের বসতি। তাদের ঘর... বিছানা পাতা। সবুজ বৃক্ষশোভিত তাদের ঘরের চালা। কষ্টের রাতে নদীর ঘাটে এসে তারা শরীর জুড়ায়। স্নান করে।



অনেক কালো রাতে লণ্ঠন জ্বলে ওঠে নদীবক্ষে-



যদিও যকৃতে জন্ডিস-জ্বালা তবু নদীর মাঝে শিরশির বয়ে চলে শীতল বাতাস। আর আমার বিরহী পাখি অসীম দিগন্তে নিষ্পলক চেয়ে থেকে দেখে তারার পতন।





নদীজাগা মানুষেরা তন্দ্রায় ঢলে পড়ে জলের আরো কাছে। তারা জল ভালোবেসে গায়ে মাখে। তারা জল ভালোবেসে চোখে মাখে। তাদের শরীর জুড়ে লেপ্টে থাকে বাতাসের চাদর। অথচ আমার ভেতরে অগ্ন্যুৎপাতের শব্দ। অথচ আমার ভেতরে নগর ধসে পড়ে, লোকালয়। আগুনের পাহাড় তার লেলিহান শিখা বের করে ডাকে আয় আয়। অথচ নদীচর মানুষেরা শীতল অন্ধকারে দূরে এবং কাছে এবং অনেক দূরে আলো জ্বেলে রাখে।



নদীর চিত্ত প্রসন্ন। সে হীমের দেশ থেকে যৌবন এনে মৌবনে জল ছিটায়।



সন্ধ্যে হয়ে আসে। পরিপাটি মৃদুলয় বাতাস অনন্ত প্রশান্তি রচনা করে। অগ্ন্যৎপাতের শহরে যখন কেবল ধোঁয়াশা তখন নদীর ঘাট জুড়ে বিরাজ করে নদীতান্ত্রিক সুর।



নদীসন্তু আমার মাথায় তোমার জাদুর কাঠি ছোঁয়াও আমি নদীসুখী হই।



***



কুহক'

কুহক মাহমুদ

অনুভব



দেবতুল্য নায়কের বৃত্তান্তে আমি শ্রমণ

ঢোল-বাদ্য-নাকাড়ায় কখনোই বলি নি

মহাকাল মন্দিরের পুরোহিত জানে-

আমি নই আধুনিক সময়ের চকচকে এপিক।

জানি তুমি রুদ্রাণী নও-

অনুরণনে ক্রিয়াশীল সঙ্গীত তুমি

অনিঃশেষ শ্রুতি তুমি, আহির ভৈরবী

তুমি; বৈষ্ণব পদাবলির বেদব্যাস।



আমি নই ফেরারি ক্রিয়ার অঘটন-

তবু কেন পাঞ্জাবির অস্তিন টেনে ধরে বলো

আমার হও!

জন্মসূত্রেই জেনেছি আমি উন্মূল স্বভাবধারী

রঙিন পানীয়ের বুদ্বুদে মেপে চলা

মহাকালের ত্রিশঙ্কু।

চৈতন্য সাকারে তুমি অণিমা হও,

বাল্মীকি প্রত্যয় প্রসূনে আমি করোটির পূজারি হবো।



আমি বরাবর শব্দের রেওয়াজ-ভাঙা জাদুকর,

ধুলোর বাতাসে গুঞ্জন তোলা বন-বাদাড়-

নিষ্পেষণের যাঁতাকল;

তুমি হতে পারো নিরুদ্দেশের লালন

তবে আমিও জানি-

হারিয়ে যাওয়া চুপ-ধ্বনির বিশেষণ

মঞ্চে ম্যাজিক ছড়ালে, পিচ গলা রাজপথের কালিমা

কখনোই রেল লাইনের হেঁই-ও হতে পারবে না।



শরণার্থী ভিলেনের চই চই লোভের জিহ্বায়

এমন ঘামসিক্ত শরীরের খোয়াব চাখতেই পারে সুখ!

জিভ জানে সে একলা খায় না বা বলেও না

অনুরোধ, মিথ্যে ভানে; ভালোবসি আর বলো না।



আমি এক না-মানুষ বলতেই পারি-

স্বপ্নের বাস্তবায়ন ছাড়া ধরিত্রীর কোথাও

সুখ নেই। শশী ডাক্তার, তোমার মনে নাই সূর্যের কুসুম-

মনে রেখো,

মানুষের বিস্মৃত ভূগোলে জীবাশ্ম এক একটি ইতিহাস!

আর তোমার জাতিস্মরে পুরুষটা ঈশ্বরের ত্যক্ত অপচ্ছায়া

আর আমি তখন-

ছুঁড়ে দিতেই পারি স্রষ্টার কবরে ক্রুদ্ধ নমস্কার

পারো তো ঠেকাও, আমি বাঙালি- বাংলাকে ভালোবাসি



১১.০৫.২০১৩│১২.৩৯│ঢাকা



***



নির্ঝর নৈঃশব্দ্য

স্বপ্নের বর্জ্য ও লালা



তারা বললো আমাকে পাওয়া গিয়েছিল হরিণের চোখের ভিতর, ভয়ার্ত। জ্যোতিশ্চক্র শুদ্ধতায় উপড়ে আসে শীত। খুব দ্রুত এবং খামারের পাশের খড়ের গাদায় কাঁপন। সৌকর্যের অবিদ্য পানশালা। তারা এসেছিল। তারা এসেছিল জ্বরের ঘনক। আর আমি দণ্ডায়মান ভূমির সরোজ, কখনো পদ্মপাতায় টলোমল।



কেউ গোর ভাঙছে, ঘুম ছিঁড়ছে কিংবা অন্ধকারে চুষে খাচ্ছে আপন ঠোঁটের ক্ষয়। আর বিকলাঙ্গ বাসনা ঝরে পড়ছে ঝড়ের ফাঁক গলে, ঘনায়মান জ্বর। এই ডুবোজ্বর বানালো আমার গল্পের শরীর। তারা বাইশটি করাত দাঁতহীন করে একটি অরণ্যের কাছে পুজো দিলে আমি নিশ্চুপারতি। তারাবাতি ধীরে মুঠোর ভিতর ভস্মহিমালয়। আঁখিঠার কাঙাল কুহু, শার্টের পকেটে শুকিয়ে যাওয়া তিনটি দোয়েল, ঘ্রাণবহ। নির্জন স্বরমণ্ডলে ডুবে যাওয়া আঙুল ভুলিয়ে দিলে নারী ও মদ-- কাউকে খুঁজি না গীতবিতানে। কেউ ঘুরছে। খুলে দিচ্ছে সর্বোচ্চ গীতবিতান, রবিনাথের ললিত বৈকল্য।



তারা বললো আমাকে পাওয়া গিয়েছিল বুড়ি পিথিয়ার ভাঁজপড়া চোখের কোলে, নিষ্পলক। আমি আনন্দিত-- অ্যাপোলোর অহম ও অবিমৃষ্য খেলা। আমি কাজল নই, তারপরও কেউ আকাশ ঘেঁটে তছনছ করে আষাঢ়ের তৃতীয় দিবস। তারা রক্তের রঙ পালটে ধুয়ে দিচ্ছে স্বপ্নের বর্জ্য এবং লালা।



***



শিমুল সালাহ্উদ্দিন

সংকেত কারখানা



কৃষ্ণতিলে লেখা থাকে যে অপূর্ব মাধুরীসংকেত তা কেবল

প্রেমিকপাঠ্য বলে গোধূলীতে মেশে এসে দিন আর রাত

যেমন শ্মশানে, ছাইভস্মে পড়ে থাকা মৃগনাভী মাড়িয়ে শেকল

জীবনের, মাটির মদিরা মেখে নেয় অনন্তের হাতে রেখে হাত—



সেইভাবে বুকের কিনারে সাড়ে চব্বিশ হরফ লুকিয়েছো ঢেউ

এমন গভীরে যেনে কেউ শ্রুতিইতিহাস ঢুঁড়ে পায় না হদিশ

অথচ জাগরকাঠি হাতে ছিলে, ছিলে আত্মবিষধর কেউ

তোমাকে দেখাতে পথ, মানো নি ঈশ্বর তুমি নিজেকে নবিশ!



ছুটেছো দূরের কাছে, বসো নি কাছের ঘাসে মাতাল ঋত্বিক

অন্ধস্কুলের দুয়ারে গিয়ে শেখো নি তো বর্ণান্ধের সংকেত

নিজেকে পুড়িয়ে আমি বীজ আর অনিকেত পাখির খোঁজে

উড়ে উড়ে দেখেছি জীবন ঈশ্বরের অপারগতার ক্লেদ!



জীবনের সুমেধ হিশাব সোজাবাঁকা হৃদয়ের অনেক ভাঙচুর

বুঝেসুঝে আমি পলাতক এক সমুদ্রসাক্ষী বেলাভূমিতে একা

আদিগন্ততক ফাঁকা রেলপথে দাঁড়িয়ে পতপত উড়াচ্ছি পতাকা

আমার এ একক মহড়া গুঁড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর শেষ জাদুঘর



***



আহসান জামান

চলে যাই কোথাও, একা



ইচ্ছে করে

আড়ি দিয়ে, চলে যাই কোথাও;

একা।



রাত্রি অথবা দুপুররোদ্দুর থেকে সরে

হঠাৎ কোথাও

শূন্যতার ভাঁজে ভেসে;

একা।



জলঘর!

স্নান থেকে ফিরে

তুমি আর দেখবে না;

খুঁজে খুঁজে

চোখ থেকে খসে মিশে যাবো

হারানো বিজ্ঞপ্তির মলাটে।



এই ঘর-বাড়ি, চেয়ার-টেবিল আর

সদ্য ধুঁয়ে রাখা ভেজা

কালো কফিমগের গা চমকে

জল ঝরারও আগে; অবাধ অভিমানে

চলে যাবো একা।



তখনও তুমি

মৃদুদোল খাওয়া পর্দার ভাঁজ থেকে

খুঁজে নিও

আমার অলস স্পন্দন।



***



ফ্রাস্ট্রেটেড

শব্দচোরের সন্ধ্যা



লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে

গতকাল সন্ধ্যায় সন্ধ্যা নামলে-

এক পায়ের উপর আরেকটা ভাঁজ করে

ডান হাতে কবিতার ঝড়;

আর বাম হাত গালে মুষ্টি পাকিয়ে আমি কী সুনিপুণ সুকান্ত হয়ে যাই।



আমি কবিতা পড়ি- উঠতি কবিদের কবিতা

লিটল ম্যাগাজিনের কবিতা;

শহুরে বেশ্যার নাভিতে পিয়ার্সিংয়ের গান, ডিজে পার্টিতে নিঃসঙ্গতা,

দুপুর দুটোর চা,

মধ্যবিত্ত পিতার ঘড়ির কবিতা –

ব্যাটারির আয়ু শেষ, তিনি স্ট্যাটাস রক্ষা করার জন্য–

দাওয়াতে পড়ে যান; ঘড়ি চলে না, শুধু হাতটার নগ্নতা ঢাকে।

আমি এইসব কাব্য পড়ি,

জলের কাব্য, শহুরে কাব্য, অন্ধ গলিতে নদীর কাব্য,

অরণ্যের কাব্য, লাবণ্যের কাব্য, প্রেমের কাব্য, সঙ্গমের কাব্য।



সেলসম্যান বিরক্ত হয়– ‘কোনটা নেবেন ভাই?’

আমি মাথা চুলকাই,

চশমাটা ঠিক করি, চার পাঁচবার চোখের পাতা ফেলে–

এক নিখুঁত এলিয়েন সেজে যাই,

সে বড় তুখোড় ক্যামোফ্লেজ।

‘ও, হ্যাঁ, নেওয়া? হ্যাঁ, নিব তো, দেখি একটু চেখে, কোনটা নেয়া যায়!’

সেলসম্যান দৃষ্টি ঘুরায়,

খুব ফুর্তিতে দুলতে থাকা চারটে মেয়ের দিকে-

নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে

শহুরে বেশ্যা ঠাওর করে–

পাশের সেলসম্যানের সাথে বুকগুলি নিয়ে,



সরু পিঠে আছড়ে পড়া চুলগুলি নিয়ে-

গল্পে মশগুল হয়ে যায়।



আর আমি,

আমি কবিতা পড়ি-

ছোটো কবিতা, বড় কবিতা, ভোরের কবিতা, মধ্যরাতের কবিতা

প্রেমের কবিতা, হেমের কবিতা, ক্ষুধা আর কামের কবিতা।



শব্দের দল, স্মৃতি আর বিস্মৃতির দল ক্রমশ

আমার ডান হাতে অনবগুন্ঠিতা হয়ে পড়ে-

আমি কবিতা পড়ি;

আমার স্কালে বয়ে যায় নিখুঁত বাক্যের সুনামি।



এভাবে রাত নামে,

কড়ই গাছের ঝিরঝির করা পাতাগুলি পায়ের কাছে ধুলোর সাথে মেশে,

বইপত্র সব গোছানো শুরু হয়, স্টলের ঝাঁপি পড়ে।

আমি মাথা চুলকাই, চশমাটা নাড়াচাড়া দেই, চার পাঁচবার চোখের পাতা ফেলি, এলিয়েন ক্যামোফ্লেজ নিয়ে–

কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে একটা নগ্ন শূন্যতা পুরে রেখে বেরিয়ে যাই বইমেলা থেকে।

‘দেখি, একটা বেনসন দিন তো; ও, খুচরা নাই! আচ্ছা তাহলে অনেকগুলো দিন।

হা হা হা।’

বাহ, কী নিখাদ ভদ্রলোক!

নিজের শালীনতায়, ভব্যতায় মুগ্ধ হয়ে যাই।

দুটো বন্ধুকে সাথে নিয়ে-

কাঁধে হাত রেখে

উঠতি কবিদের অপার সম্ভাবনাসমূহে আলোকপাত করতে করতে রিকশায় উঠি। ঠাটারিবাজার স্টারে যাই, লেগরোস্ট দিয়ে ভরপেট খেয়ে–

একটা অত্যাবশ্যকীয় ঢেকুর তুলি শহিদুল জহিরের আবু ইব্রাহিম

-‘আহ, ভালোই খাইলাম।’



পরে, আপন স্বর্গে-

বিছানায় এলিয়ে দেই শরীর, বাঘের ছবি আঁকা তুলতুলে কম্বল জড়িয়ে খুব আরামে চোখ বুজে আসে।

আরো পরে, অনেক পরে, মধ্যরাতে আসে অনাহূত আগন্তুক, দুঃস্বপ্নের দল।

মধ্যরাতের চাঁদ ধোয়া ধু-ধু রাস্তা,

কিছু যুবক;

ছেঁড়া জিন্স, রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে, নোংরা,

চেক শার্ট, এখানে ওখানে দাগ, নোংরা

বড় বড় নখ, নখের মাঝে রাজ্যের ময়লা, নোংরা

দাঁড়িগুলো এলোপাতাড়ি, চুলখুলো উশকোখুশকো, নোংরা

উঠতি মাস্তান বোধহয় -

আমাকে ঘিরে ধরে।

‘মাদারচোদ, খানকির পোলা...

আইজকা দুপুরে কী খাইসি জানোস?

দুইটা ঠাণ্ডা সিঙ্গারা আর এক গ্লাস কলের পানি;

সারারাত শব্দ গাঁথতে গিয়ে, একটা লাইনের সাথে আরেকটা লাইনের সুতা বুনতে গিয়ে আমাদের খুব খিদা লাগতাসিলো, আমরা ফুটপাতের টংয়ে শুকনা পাউরুটি খাইসি, চোদানির পোলা; তুই সব, সব কেড়ে নিলি।

আমাদের পারিশ্রমিক দে;

আমাদের কবিতা-

নিঃসঙ্গতার সাথে, রাতজাগা চাঁদটার সাথে কতটা সঙ্গমের ফসল, তুই আমাদের কবিতা চুরি করে নিয়ে গেলি, টাকা দে চুতমারানির পো... ’



আমার ঘুম ভেঙে যায়, আমি চার পাঁচবার চোখের পাতা ফেলি;

মাথা চুলকাই।

তারপর আবার নির্বিকার ঘুম দেই।

সকালে ব্রাশ করবার সময় আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে উঠি, কপালে বড় করে খোদাই করা একটা আশ্চর্য শব্দ–



শব্দচোর।



***



সোনালী ডানার চিল

কামরুল বসির

মান্নান সৈয়দের পাঁচটি মাছ সাঁতার কাটে সেই সদ্য শীতল বৃষ্টিতে



বিলেতি বর্ষায়ও পানি জমে রাস্তার কোণে

মান্নান সৈয়দের পাঁচটি মাছ সাঁতার কাটে সেই সদ্যশীতল বৃষ্টিতে

সোনালি মাছটি ভেজা কাঠুরের সাথে কথা বলে

পাতাল রেলের হুইসেল কখনও উড়িয়ে নিয়ে যায় বিভ্রম বাতাস

নাগরিক কোলাহলের এই সাঁকো পুরো শহরময় ছড়িয়ে আছে

বৃষ্টির মিনতি শুধু একপেশে আগুন জ্বালায়, কুয়াশায়



বুদ্ধদেবের বিয়ারের গ্লাসে এ কোন অন্য ঠোঁট!

বৃষ্টি ধুয়ে দিচ্ছে সোহু-অঞ্চল, মধুসূদন এখানেও এসেছিলেন

তবে এই বৃষ্টিতে নয়। অন্যরাতে, কুয়াশায়



মাছগুলো মাপার বাটখারার জন্যে আমি লাইনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ চমকে উঠি

জীবনানন্দ আমার সামনে দাঁড়িয়ে

সেই যে বউয়ের সাথে ঝগড়া করে বেরিয়েছিল

কোলকাতার কেউ তাকে দেখে নি কখনও আর;

এই বৃষ্টিতে প্রিয় জীবনানন্দ ভিজছো বিলেতে একা!



সকালের কাগজে বেরিয়েছে আজ তোমার খবর

সাদা চামড়ার দাম নিয়ে নাকি তুমি উপহাস করেছো অনেক

সক্ষমতার দাম কি দেবে হারিয়ে যাওয়া বিবেক!

বিয়ারের ফোঁটা ছুঁই নি আমি কোনোদিন আর

টিস্যুতে লেখা কবিতা বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে কবেই

কালো ট্যাক্সিতে করে বাংলা ভাষা গচ্ছিত রাখি আইডিয়া লাইব্রেরিতে।



সেই হেঁটে বেড়ানো ফুলার রোড যেখানে হুমায়ুন আজাদের গোল্ডলিফ

খাওয়া দেখতাম সকালে বিকালে, আর একটু এগুলেই শামীম শিকদার

একমনে তাকিয়ে থাকতো অসম্পূর্ণ ভাস্কর্যে; আর আমরা ভাবতাম সে

পুরুষ কিনা! ক্ষুধা চেপে হেঁটে যেতাম পলাশির মোড়ে, ভাবীর হোটেলে।



সেই বৃষ্টি আর এই বৃষ্টি, সেই আকাশ এখানেও, সারি সারি নিয়মের মাঝে

হৃদয় অনিয়ম খোঁজে কবিতায়। আমার প্রিয় সব কবি একাকার করে দেয়

পৃথিবীর মানচিত্র। বৃষ্টি তখন শুধুই হৃদয়ে ঝরে।



***



হানিফ রাশেদীন

আমরা দেখবো



আমরা দেখবো, নিশ্চয়ই একদিন দেখবো

আমাদের পায়ের তলে

ধসে পড়বে নির্দয়তার যত প্রাচীর

এত আমাদের নতুন দিনের প্রতিশ্রুতি



সৃষ্টির আদি পৃষ্ঠায় আছে

যে আমি, সে তুমিও

এই বৃত্ত ভেঙে ফেলা সহজ নয়



আমাদের রক্ত ও ঘামে তৈরি করেছি হাতুড়ি

ভেঙে ফেলা হবে দেখতে মানুষ-

কিন্তু দানবের হাত

ছুঁড়ে ফেলা হবে সব পোশাকি মুকুট



আমরা দেখব, একদিন নিশ্চয়ই দেখব

তুলোর মতো উড়ে যাবে শোষণের কারখানা



আমরা আর বলব না পুরনো এই গল্প-

মায়ের বদন মলিন হলে

আমি ভাসি নয়ন জলে

এই পৃথিবীতে রাজত্ব থাকবে আমাদের

যাদের হৃৎপি- আছে



আমরা দেখব, এত আমরা দেখবই

একদিন আসবে আমাদের দিন

কমরেড, সৃষ্টির আদি পৃষ্ঠায় আছে

যে আমি, সে তুমিও



***



আহমেদ আলাউদ্দিন

বিষণ্ণ সময় ধার করে আত্মার গন্ধ খোঁজে শরীর



কতদিন পর আমাদের দেখা হয়েছে বলুন তো?

হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, দু লক্ষ বছর পর আমাদের দেখা।

ক্যামন ছিলেন? জানেন তো অংকে খুব কাঁচা,

সেকেন্ড মিনিট ঘণ্টার সমীকরণে কিছুই বুঝি নি।

বরং আপনার কুকুরটাকে নিয়ে কিছু বলুন :

তার জিহ্বার লালায় এখনো কি স্নান সারেন?

নাকি আপনার পোষা বিড়ালটার মতো এখনো

কারো কোল ঘেঁষে বসে থাকেন!

আচ্ছা, দু লক্ষ বছর তো কম কিছু নয়। নিশ্চয়,

এখন সে উত্তাপ পান না, যা আগে পেতেন?



দেখছেন মানুষ প্রতিদিন ক্যামন বদলে যাচ্ছে,

আমাদের ঘুমোবার সময় ওদের সকাল আর জেগে উঠবার সময়...

হা হা হা। ঠিক বলছেন...

দু লক্ষ বছর পর আমাদের দেখা! কই পরস্পরের

আলিঙ্গনে একটু উত্তাপ নেবো,

তা না করে আমরা কুকুর-বেড়াল নিয়ে পড়ে আছি!

সত্যিই মানুষ আমরা!



আসলেই কি মানুষ! দু লক্ষ বছর তো কেউ বাঁচে না, তবে

আমাদের দেখা হলো কী করে! বড্ড অদ্ভুত লাগছে সব!

হিমবাহ গলে গ্যালো, প্রিয় স্বদেশ হয়ে গ্যালো হাঙ্গরের আবাস!

আচ্ছা, সত্যি করে বলুন তো, সত্যিই কি আমরা বেঁচে আছি?

না সব হেলুসিনেশন? যদ্দূর মনে পড়ে, আপনার শরীর থেকে

কুকুরের গন্ধ পেতে শুরু করার পর আপনাকে খুন করি।

কোনো সহজ স্বাভাবিক খুন নয়।

আপনার হাত দুটো বেঁধে গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম



পানিভর্তি একটা কলস, তারপর সলিল সমাধি।

যদিও পা দুটো বেঁধে রাখি নি, ধারণকৃত ভিডিওতে

দেখেছিলাম আপনার ছটফটানি!



আপনি বেঁচে উঠলেন কী করে? নাকি আপনি মরেন নি

কিংবা ভূত হয়ে ফিরে এসেছেন? আমার ঘাড় মটকে তারপর...

কী বললেন? একসময় আপনাকে ‘তুমি’ সম্বোধন করতাম?



আপনাকে ‘তুমি’ সম্বোধন করবো কেন?

আপনিই তো আমি; শরীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ছিলেন।

আমার রাত-বিহান আপনি ছাড়া কিছু ছিল না!

আবার খুনের কথা বলছেন? বললাম না একবার।

আপনার শরীর থেকে কুকুরের গন্ধ পেতে শুরু করেছিলাম।

তারপর... আপনি বুঝি...?



বাহ্ বাহ্! আপনার লেজুড়বৃত্তিকে এখনো ঠিক বলছেন?

আপনার এই তোষামুদে আচরণ ছিল আপনার মৃত্যুর কারণ।

কী বললেন? অন্যেরাও করছে, তারা বহাল তবিয়তে আছে!

তা থাকুক। ওদের আচরণ আমার ধর্তব্য নয়।

ওরা নিশ্চয় আমার শরীরের কলকাঠি নয়!



এই দেখুন আমার কঙ্কাল-আচ্ছাদিত শরীর।

দেখছেন, কেমন আপসহীন, নির্ঝঞ্ঝাট ...

সকালে খেয়ে কাজে যায় আর শেষ বিকেলে ঘরে ফেরে,

যা পায় তাতেই ওর চলে যায়। আপনি?

আপনি ছিলেন আমার পাঁজরের প্রোকোষ্ঠে,

আপনার ইচ্ছে-অনিচ্ছেয় ছিল আমার সকাল-বিকেল-রাত।

আপনার ইচ্ছেতে কালোরাত হতো গোলাপি,

ধূসর প্রান্তর হতো সবুজ। আপনার ইচ্ছের যোগসূত্রে গাঁথা হতো

আমার খামখেয়ালিপনার বৈকালিক অবকাশ, সুখ রোদ্দুর!



এতোকিছু মনে রেখছি কী করে? আপনাকে খুন করবার

আগে সব টুকে রেখেছিলাম ডায়েরির পাতায় কালো অক্ষরে।

মনে নেই? সেইদিন ব্যাংক পাড়া থেকে ফিরে সুইসাইড নোটে

টুকে রাখা মৃত্যুতান্ত্রিক নিয়মের অনুকরণ কেবল করেছি।

এই দেখুন রোবটিক জীবনের ধ্রুপদী আয়োজন!

ক্যামন হুলুস্থূল কেটে যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে...



আপনাকে প্রয়োজন কিনা? ছিলেন বৈকি। আমাকে

কবর দেয়ার পূর্বে! দু লক্ষ বছর যাবত কেবল শরীর

বয়ে বেড়াচ্ছি! যদি কখনো ঘুম ভেঙ্গে দেখেন পুবের

বাতায়নে রক্তাভ সূ্র্য প্রবেশ করছে কিংবা নিশুতি চন্দ্রিমা

ফুল হয়ে ফুটেছে তবে এসে দেখে যেতে পারেন!

আপনি ছাড়া, আপনাকে ছাড়া কতটা ভালো আছি!



জানি এখনি ঘুম ভেঙ্গে যাবে। আপনিও

চলে যাবেন! যাওয়ার আগে জেনে যাবেন, আত্মা বলে

কিছু নেই! শরীরটাই সব। দেখুন, আমার স্বাস্থ্য আগের

চেয়ে কতটা ভালো হয়েছে! এখন রোবটের মতো

করে যেতে পারি কাজ যতিচিহ্নবিহীন! সুখ সাগরে!



***



অপর্ণা মম্ময়

বিস্ময়কর রূপকল্প



বাসন্তী হাওয়ায় যখন উড়ে গেল

তোমার গঙ্গা-যমুনা শাড়ির আঁচল-

কপালের উপর আছড়ে পড়ল

তোমার বিবাগি চুল-

তুমুল সমর্পণে তখন মনে হল

তুমি যেন ঠিক একজন দেবী

মধ্যাহ্নের আকাশে মাধুকরী অবনি।



ঘাড়ের বাদামি তিলে

যখন তুমি তোলো কোনো বৈকালিক রাগ

তখন তোমার ভ্রূর ভাঁজে ভাঁজে

শুরু হয় অভিসারের গোপন কানাকানি।



মেয়ে তুমি

অমল প্রান্তরে ঘাসের আড়াল-

লুকিয়ে থাকা এক হীরকখণ্ড-

সারাদিনের মায়াময় রৌদ্রের নরম আলোতে রচিত

নীলিমার মমতা।



তুমি কি জানো

ভালোবাসি বলবার আগেই

ফুলের উষ্ণতায় শুনতে পাই ভ্রমরের গুঞ্জন

খুলে যায় প্রাসাদের অক্ষম স্থবির মরচে পড়া কপাট।



ভালোবাসার বিবিধ ফুলের তাপে

মালার সংহতি হও-

মলিন নৈঃশব্দ্যের একক সাগরে

নিভৃত ধ্যানমগ্নতায় প্রকাশিত হও-



তুমি আমার প্রস্ফুটিত বিশুদ্ধ কমলসোহাগি

জলের বুকে জলছবি

দীপশিখা আলোকিত ধূপসন্ধ্যার সিঁড়ি

করতলে রাত্রির, চিবুকছোঁয়া মায়াবিনী।



তোমার-আমার ভালোবাসায়

দূর হোক অন্ধকারের শাণিত বিষাদ।



***



আশরাফুল ইসলাম দূর্জয়

স্বীকারোক্তি



মাঝে মাঝেই নিজের আপস আর সয়ে যাওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা দেখে

নিজেই কয়েকবার ভিমড়ি খাই।

খুব করে নিজেকে বলতে ইচ্ছে করে, কী দুর্দান্ত মিথ্যুক এই ছেলেটা।

কিন্তু পারি না। না বলতে পারার মতো ভয়ানক কিছু দুর্বলতাও আছে।



চারদিকে যা ঘটে, তার তুলনায় এইসব সয়ে যাওয়া কি ছোটো মনে হয়?

কিংবা সয়ে গিয়ে বিশাল কম্পকে ছোটো করে দেই?

কিচ্ছুই জানি না। চোখ জলভারে নত হয়ে আসে। আমি মাথা নুয়ে থাকি।

কী ভীষণ লজ্জা কিংবা নির্লজ্জের মতো এ সয়ে যাওয়া।

কী ভয়ানক মিথ্যুক এই ছেলেটা, এই আমি।



বোধের সাম্রাজ্যে অস্ফুটে বলি, কী দরকার শব্দ করে। শব্দহীনতা ভালো।

এই আঁধার, এই দৃশ্যমান লজ্জায় চোখের ভেতর থেকে রক্তস্রোত।

আমি সব সয়ে যেতে অভ্যস্ত। শরীর মাড়িয়ে যাক ওপাড়ের বন্য শুঁয়োর।

অদৃশ্যের সেই জাদুকরি খেল দেখার গোপন ইচ্ছেতে আমি মাথা নুয়ে।

কী ভীষণ লজ্জা আর উপহাসের এই রেখাপাত, আঙুল এঁকে যাচ্ছে বিজিত

ইতিহাস, আমার, আমাদের। উত্তরাধিকের এ লজ্জা।



কী ভয়ানক মিথ্যুক আর কাপুরুষ আমি জন্মেছিলাম এখানে।



***



নস্টালজিক

শেখ রানা

সেই মানুষের সুখী হাসিমুখ...



শহরটা খুব শান্ত, চুপচাপ

নিয়ন আলোয় রোদমেশানো রং

শহরটা খুব নৈঃশব্দ্যের গান

রাত কুয়াশায় বিস্ময়ে বরং,



সবাইকে কেউ গান শুনিয়ে যাক...



গান শুনিয়ে যাক পাহাড়ি ফুল

গান শুনিয়ে চড়ুই পাখির দল

শহর বাতাস শিস কাটে, কোন সুর

অনেক দূরে থামছে কোলাহল,



শান্ত শহর স্মৃতিকাতর মন...



মন চলে যায় অশ্বত্থ, শীতকাল

মন চলে যায় উজান সে সব দিন

মন চলে যায় ভালোবাসার শব্দে

বাতাস হয়ে সুরের ভায়োলিন...



শহরটা খুব শান্ত, চুপচাপ

ফুটপাথ-রোড, ট্রাফিক অলস রাত

এমন রাতে একটা মানুষ একা

আকাশ উজাড়, শব্দ খোঁজে খুব-



সেই মানুষের সুখী হাসিমুখ।।



***



শাহেদ খান

অগাস্ট-শেষের গান



আমি ভয় পেয়ে পেয়ে ক্লান্ত, ওই গল্পেরা কি তা জানতো?

আজ ট্রাফিক পুলিশ নিখোঁজ তবুও চৌরাস্তাটা শান্ত!

কেউ ঘুম বেঁচে দিল সস্তায়, কারো স্বপ্ন হয়েছে ছিনতাই

চেনা সুখগুলো সব দ্রবীভূত বলে খারাপ যাচ্ছে দিন তাই



ওরা হারিয়েছে যারা ক্যান্টিনে বসে হেসে সিগারেট টানতো

আমি হারানোর ভয়ে ক্লান্ত- সেটা কবিতারা বুঝি জানতো?





আমি পবিত্র এই নগরে একা দাগ টেনে যাই কালিমার

কেউ রেগে যায় খুব সহজে, কেউ উল্লাসে বলে, ‘তালি মার’!

তবু নির্জন এই জনপদে একা চাঁদ নেমে আসে রাস্তায়

তুমি ফিসফিস করে কথা বলো, আমি জেদ ধরে রাখি আস্থায়



আর জোনাকিরা এসে ফুটপাতে বসে ঘুমিয়ে পড়ে- কী শান্ত!

আমি ক্লান্তির ভারে ক্লান্ত- আর জোনাকিরা সেটা জানতো।





একা নীল শার্ট ঝোলে হ্যাঙ্গারে, আর ইনবক্স জুড়ে হাহাকার

আর ধুলো জমা পরে তারাশংকরে, অগাস্ট বোঝে না- তাহা কার!

তবু ঘুম বেঁচে আমি স্বপ্ন কিনেছি, সাথে ‘সব হারানোর ভয়’

ওই ভয় না আমায় কুরে খেয়ে ফেলে- গল্পের বুকে সংশয়



দেখে জোনাকিরা সব হেসে ফেলে- যারা স্বপ্ন কুড়িয়ে আনতো

তুমি চট করে খুব হেসে ওঠো, আর বোকা আমি উদ্‌ভ্রান্ত!





তুমি সিঁড়িঘরে থাকো দাঁড়িয়ে, আমি দেয়ালের গায়ে চুপচাপ

আর ছলছল চোখ এতো কথা বলে? থাই কাঁচে পড়ে জলছাপ

একা চকলেট ছোটে বনপথে, চেনা রাস্তায় ফের যানজট

যে-ই সিংহটা পড়ে ঘুমিয়ে, তুমি লুকিয়ে ফেলো সাগরতট



হেসে রংধনু বলে, ‘এই মেয়েটা তো গল্প বলতে জানতো!’

যাক, সব জানাজানি হয়ে যাক; আজ গল্পটা হোক ক্লান্ত...





তুমি হাত ধরে বলো, ‘চুপ থাকো, সোনা!’ আমি চুপচাপ। শান্ত।





[এবার উৎসর্গ করি। আমার টমেটো, তোমাকেই। আলাদা করে না বললেও আমার সব গান তোমাকেই, তবু এখানে শুধু ‘তোমাকে’ বললে পুরোটা হচ্ছে না। এটা ‘অগাস্ট-শেষের সন্ধ্যায় ঐ সিঁড়িঘরে আর বারান্দায় একা দাঁড়িয়ে থাকা তোমাক’' দিলাম। যার নীচে দাঁড়িয়ে আমার চিৎকার করতে ইচ্ছা হত:



It is the east, and Juliet is the sun.

Arise, fair sun, and kill the envious moon...



(নিজে থেকে কী বলবো? গভীর ভাবের কথা সব তো শেকস্পিয়াররাই বলে গেছেন...)



আরেকটা অগাস্ট শেষের পথে। পরের অগাস্টে কী হবে জানি না... তুমি জানো?



একটা সময় আমরা থাকবো না। আমাদের গল্পটাও থাকবে না। আমাদের গানগুলো থাকুক...]



***



ইনকগনিটো

গোপন কথা



সেদিন আর কথা হলো না।

অতি সাধারণভাবে ভেঙে যাচ্ছে গোলাপ। গোলাপের পাতা।

তুমি ঘুমোলে, আর আমি তো একটুখানি

রাত জাগলেই

দুপুর।

সময়েরা পালক হয়; কিন্তু সাদা পায়রা হওয়ার আগেই ঝরতে শুরু করে। ওরা ঝরে এমনভাবে- যেন ক্ষয় হওয়ার জন্য

এর চেয়ে উপযুক্ত কোনো পথ নেই।

অথচ সময়েরা ঝরে তোমার কথা ভেবে।

এসব কিছুই জানো না। তোমার সাথে কালেভদ্রে টুকটাক কথা হয়।

আজকাল তোমার দেখাও পাওয়া যায় না তেমন। শুধু লুকিয়ে থাকতে দেখি আমার কবিতায়।



***



অদিতি মৃণ্ময়ী

অবিকল



এইসব এলোমেলো দিনে- সন্ধ্যাকালীন রাতের সাথে জানালার কাঁচের তীব্র অসম্পৃক্ততা থাকে। ল্যাম্পপোস্ট থেকে যত দূরে আলো চলে, তত দূর গা ঢাকা দিতে ইচ্ছে করে।



উড়ে আসছে যত ড্রিমলাইট নিশ্বাস আর মৃদু বাতাসের ম্যালোডি।

কাগজের টুকরোয় গুঁড়ো গুঁড়ো সুখ ছড়ানোর দৃশ্য যত সেঁতারের সুরের মত।

অবিকল।

আর সবকিছু মিশে যাচ্ছে-

দীর্ঘশ্বাসে।



কিছু চাঁদ দেখা সুখ টেনে নেওয়ার কৌশলের বিস্তৃতি মস্তিষ্কের মহাকাশ জুড়ে।

অতঃপর-

আহ্! দুঃখবিলাস!



এভাবে মেঘ থেমে আকাশ হেঁটে যাচ্ছে।

ল্যাম্পপোস্ট জোছনা এবং আমাদের চোখ ছিঁড়ে যতসব নিস্তেজ খারাপ লাগা-

সব উড়ে যাচ্ছে।



***



অন্যমনস্ক শরৎ

দোয়েল, অনন, রেণু তোমরা কোথায়?



আমি আমার স্ত্রীকে লুক্সেমবার্গের কফিশপে কালো স্কার্ট পরা দেখছি

গেল বিশ্বযুদ্ধে ওর হারানো পা দুটো কাঠের এখন

একটু ভারী, তবে মসৃণ মেহগনি, চকচকে পলিশ

ওর বুক-পকেটে ছোট্ট গোলাপ, আমার মেয়ের দেয়া

ওর নাম ভুলে গেছি, খুব সম্ভবত দোয়েল

পাখিদের নামে নাম তো, তাই ভুলে যাই

উড়ে যায় তারা পাখির মতন

আমার মা, আমার দোয়েল, মা, কোথায় তুমি?

তোমাদের মাকে আমি খুঁজে পেয়েছি

ও কালো কফির দিকে তাকিয়ে আছে কেবল

কফিটা ঠাণ্ডা হচ্ছে।



আমার বোকা ছেলেটাও এই তো সেদিনই, যেমন উড়ে গেছে

ফুটবলে লাথি দিতে গিয়ে

ওটার নীচে ছিল লুকানো মাইন,

৭১-ই হবে হয়ত, বাঁশখালির মাঠে; বিকেলে।

কী জানি খুব ঝাপসা লাগে এখন

তোমরা কেন এত দ্রুত হারাও?

তোমরা কেন এত দ্রুত বড় হও?

তোমাদের খুঁজে খুঁজে আমি হয়রান।



তোমাদের মাও চঞ্চল ছিল খুব, রেণু

রেণু তোমাদের মায়ের ডাকনাম

কী অদ্ভুত! শাড়ি পরে ছুটে বেড়ানো মেয়েটা এখন তাকিয়ে আছে

কালো কফির দিকে

কালো স্কার্ট, কালো স্কার্ফ।



তোমাদের মা কাঁদছে

নিঃশব্দে কাঁদছে

দোয়েল, অনন তোমরা কোথায়

বুকে আসো বাবা, ছুটে আসো প্লিজ

এখুনি

সময়ে সময়ে, দেশে দেশে ঘুরে ক্লান্ত আমি খুব

তোমাদের ছিন্নভিন্ন দেহগুলো খুঁজে পাচ্ছি না কোথাও

তোমরা কি প্যালেস্টাইনে, সিরিয়ায়, সাঁথিয়ায়

তোমরা কি ঢাকার রাস্তায়, পুড়ছো?

তোমরা কোথায়

আমাদের নয়নের মণি, তোমরা কোথায়

চলো, তোমাদের মায়ের কাছে যাই

তোমাদের মা কাঁদছে

আমি জানি না ওর নাম কী এখন

জানি না ও বোরকা পরে কিনা এখন

বহুদিন কাঁদি না আমরা

আবার ছিন্নভিন্ন হবার আগে আসো আমরা একসাথে হই

আবার বিস্মৃত হবার আগে আসো আমরা একসাথে হই

দোয়েল, অনন, রেণু তোমরা কোথায়?



*শরৎ চৌধুরী, দুপুর ২টা তিরিশ, ২০/১১/১৩, গুলশান, ঢাকা



***



হনলুলু

সায়মন

আমার বামহাতটা কব্জির নীচ থেকে উড়ে গিয়েছিল...



আমার বামহাতটা কব্জির নীচ থেকে উড়ে গিয়েছিল

দু দুটো বুলেটের আঘাতে পায়ের উরুতে অঙ্কিত হয়েছিল দুটো গভীর ক্ষতচিহ্ন...

দীর্ঘদিন অনাহারে ছিলাম বলে খুব বেশি রক্ত ঝরতে পারে নি,

অথবা ঝরলেও আমি তা বুঝতে পারি নি;

অর্ধমৃত অবস্থায় সঙ্গাহীন পড়ে ছিলাম তিনদিন...

অতঃপর তিনদিন পর যখন জ্ঞান ফিরে আসে

তখন বামহাতের কব্জির নীচের অংশটার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ..

আমার একবিন্দু আফসোস হয় নি, অনিরুদ্ধ বাষ্পে চোখের কোনাও ভিজে ওঠে নি...

বরং জানোয়ারের বাচ্চাগুলোর প্রতি এক দুর্নিবার ক্রোধে বুকের ভেতরটা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছিল...



ক্যাম্পে পর্যাপ্ত খাবার থাকতো না বলে প্রায়ই না খেয়ে থাকতাম,

কখনো কখনো ক্ষুধার জ্বালা অসহ্য হয়ে উঠতো।

তখন একটুকরো মাংসের জন্য নির্মম আকাশে উড়তে থাকা শকুনগুলোর সাথে নিজের

কোনো পার্থক্য খুজেঁ পেতাম না...

তখনও আমার তেমন একটা কষ্ট হয় নি,

চোখদুটোও বরাবরের মতোই শুকনো ছিল...

যেমন শুকনো ছিল আমাদের ভবিষ্যত...।



সবকিছু প্রায় গুছিয়ে এনেছিলাম

বর্ডার ক্রস করে নতুন একটা দল আগামীকাল এসে পৌছুবে...

সাথে নিয়ে আসবে সারি সারি আগ্নেয়াস্ত্র, তাঁজা গোখরো সাপের মতো বিষাক্ত গ্রেনেড ... মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের মতো দুর্বার সিক্সটি মিলিমিটার মর্টার...।

প্রতিশোধের স্পৃহায় সারারাত আমার ঘুম হয় নি...

পশ্চিমা বাহিনীর পরাজয়ের স্বপ্নে চোখদুটো আমার অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করে উঠেছিল...

কিন্তু ভোরে যখন খবর পেলাম কয়েকটা বিশ্বাসঘাতকের জন্য...

মাত্র কয়েকটা বিশ্বাসঘাতকের জন্য নতুন দলটা ধরা পড়ে গেছে তখনও খুব একটা অবাক হই নি...

শুধু প্রচণ্ড ক্রোধে আমার ডান হাতের একমাত্র মুষ্ঠিটা বজ্রের মতো শক্ত হয়ে উঠেছিল...



তারপর কয়েকটা দিন যেন দুঃস্বপ্নের মতো পার হয়ে গেলো



দুদিন পর আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম হানাদার ক্যাম্পে

বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ওরা আমার ডান চোখটা তুলে নিয়েছিল

পায়ের আঙুলগুলো রাইফেলের বাঁটের আঘাতে থেঁতলে গিয়েছিল বহু আগেই...

ওরা আমাকে কষ্টের শেষ সীমানায় পৌঁছে দিয়েছিল যদিও...

আমি তখনও কাঁদি নি...।

শুধু সামনে দাঁড়ানো শান্তিবাহিনীর লিডার শরাফত আলীকে দেখে ঘৃণায় আমার চোখের নীচটা দ্বিতীয়বারের মতো কুঁচকে উঠেছিল...



আমায় দেখে শরাফত দেঁতো হাসি দিয়ে শূকরের মতো চারপায়ে এগিয়ে আসে...

‘... খুব তো খেল দেখাইলা মুক্তির বাচ্চা! বাম হাতটা দেখি উড়াইয়া দিছে , চোখটাও তুইলা ফালাইছে... তোমার পরীবানু অবশ্য এতোটা কষ্ট পায় নাই, দুই রাইত স্যারের লগে কাটাইয়াই গলায় দড়ি দিছে...’



...পরীবানু !... তবে কি ওরা পরীকে!!!!!!????

আমি আর বাকিটুকু শুনতে পেলাম না...



...দীর্ঘ চারমাসের একটানা ক্লান্তিহীন যুদ্ধ,

আহত সহযোদ্ধার আর্তনাদ!

গ্রামকে গ্রাম উজাড় করা বধ্যভূমি,

বধ্যভূমিতে গলিত লাশের গন্ধ...

বেয়নেটের আঘাতে থেঁতলে যাওয়া চোখ...

এসব কিছু ছাপিয়ে আমার মুখের সামনে পরীর নিস্পাপ চেহারাটা ভেসে ওঠে...



তখন প্রথমবারের মতো... হ্যাঁ, প্রথমবারের মতো আমার একটিমাত্র চোখ বেয়ে টুপটাপ করে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে...



আর আমি কব্জিহীন হাতটা দিয়ে সেই জল মোছার চেষ্টা করি, বার বার...

বার বার... বারবার ........



***



নাজনীন খলিল

কখনো আমি কেউ ছিলাম না



আমি কেউ নই। কখনো আমি কেউ ছিলাম না।



সমুদ্রের ফেনায়িত মদে ভাঙে প্রবাল-প্রাচীর



আমি তার কিয়দংশ;

মৃত;

ভঙ্গুর;

সামান্য।



রক্তস্রোতের মাঝে আদিমতম যাযাবর নেশা

তরঙ্গ-স্পন্দনে শিরায় শিরায় মাদলের বোল বেজে ওঠে; তবু

নিবিড় সমুদ্র-দর্শনে ব্যর্থ

তিন ঢেউ পেরুনো হয় না

প্রবল জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে বালুকাবেলায় ফিরে আসি

বার বার।

ছুটে চলা কেবল গন্তব্যে পৌঁছানো নয়; অভ্যস্ত পদক্ষেপ।

মধ্যাহ্নের খররোদে অনায়াস-রপ্ত পদযাত্রা শেষে

ছায়াবীথি

অশ্বত্থের মূলে ঠাণ্ডা ঘাস

তরুছায়ে বৃন্তচ্যুত দু’একটি বর্ণগর্বী পারিজাত;



কেউ অপেক্ষায় থাকে না।



আমি কিছু নই। কিছুই হতে চাই নি।

না বাজির রেসের ঘোড়া

না ইতিহাসের পাতায় লেখা এক নাম

লোকশ্রুত-কিংবদন্তি; কিছু নয়।



একক-বিশুদ্ধ আমাকে চেয়েছি

আমি

শুদ্ধতম-বিশুদ্ধতায় আমি



কোনটি সত্য ছবি...

লহর-মগ্ন জলের অস্থির কারুকাজ?

দর্পণের ক্ষীণ দোদুল্যমানতা?



নাকি দেয়ালের ফ্রেমে ঈষৎ হাসিমাখা স্থিরচিত্রের উদ্ভাস;

দ্বন্দ্ব ঘোচে না...



আমি নেই...

না আয়নায়;

না জলে;

না স্থিরচিত্রে...।



***



ফয়সল নোই

আমাদের প্রাণ গ্রামে এফডিআর করে রাখা



জ্যোৎস্নার ঘ্রাণে ঘ্রাণে যে কোনো পূর্ণিমায় আমরা গ্রামে চলে যাবো। আমাদের প্রাণ গ্রামে এফডিআর করে রাখা। এই ষড়যন্ত্র এখনো বাইরের কেউ জানে না।



জীবন উচ্ছিষ্ট করে দিয়ে, ওরা যতই কারখানার বর্জ্য ভাবুক আমাদের, যতই ক্লান্ত মানুষের ঢেউ নামুক সন্ধ্যার রাস্তায়, ঘরমুখী হোক। যতই গার্মেন্টসকর্মী হই রানা প্লাজায়! যতই আমাদের রক্তে ছাপা হয় টাকার বান্ডিল।



... ক্ষুধা পেটে ভোর ভোর ফুটে ওঠে আমাদের পিতৃ-মাতৃহীন শিশু সন্তান। আমরাও জেগে উঠবো নিশ্চয় প্রশ্ন শুনে! নিজস্ব নদীতে বয়ে যাবো মায়ের হাসির স্মৃতি জড়ানো গ্রামে। মৌ মৌ আদিম ফুলের জংলায়। স্বজনের করোটির পাশে আরো এক একটি পরিচিত করোটির আনন্দ উপেক্ষা ও ঘৃণা পাঠাবে দূরে।



অংকশায়িনীর গুপ্ত কেশের মতোন ঝলমলে খাড়া বহুতল ভবনের আলো যতই বণিকের নজর কাড়ে কাড়ুক, আমরা ফিরেও তাকাবো না।

৭/৪-২৬/৪/২০১৪



***



মাহী ফ্লোরা

কাঠগোলাপের ঘুম



জাগতিক বিষণ্ণতা শেষে কেবলই বাড়ে স্মৃতিকাতরতা, কাঠগোলাপের ঘুম! ছবির দেশে কবিতার দেশে সারাদিন বৃষ্টি শেষে যেমন বাড়ে অন্ধকার। এখনই চাঁদ উঠবে। সমস্ত কোলাহল এক বগিতে চেপে ছুটে যাবে ট্রেন। দরজায় মুখ নিয়ে দাঁড়াবে ঘুমের শেষে জলপিঁপে তারা।

জাগতিক বিষণ্ণতা কেবলই নীল রোগা পারিন্দে। শুশ্রূষার পরে সেই বৃষ্টির দিনে যে বলেছিল

আমাকে এখনি একবার বুকে নাও!



জল বেড়ে গ্যালে বাড়ে ঢেউ। এলোতা মেলোতা ঘুমে সবুজ পাতারা!



***



নক্ষত্রচারী

অতঃপর শূন্য



বিভ্রান্ত কালপঞ্জিতে সময় শূন্যের বৃন্তে ঝুলে থাকে

শূন্য থেকে শুরু। তারপর একে একে অপরিণত ব্লুজম; শৈশবের মিনিট সেকেন্ড, কৈশোরের ঘণ্টা দিন, যৌবনের ত্রৈমাসিক, প্রৌঢ় প্রজন্ম এবং মুমূর্ষু জয়ন্তী।

তারপর সাদাকালোর প্রত্যাবর্তন...



জান্তব আর্তনাদ, বুলেটের তীক্ষ্ণ শিস

নির্মল সন্ধ্যা উগলে দেয় বিষ।

পরিবাহী অক্সিজেনে ভাগ বসায়

রাজ্যের ইউক্যালিপটাস,

সংকীর্ণ কাঁটাতারে আটকে থাকে

অদম্য সাহস আর আত্মবিশ্বাস।

ছুটন্ত দেহে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ভেদ করে যায়, তবু

অসময়ের বেড়ে ওঠা এই অরাজকতা নাশকতায়

বনসাই দেহমন প্রাঙ্গণে জ্বলে ওঠে সংগ্রাম।



অদৃশ্য দেয়ালে ঝুলে থাকে সাময়িক পেন্ডুলাম

নেশাগ্রস্ত ধারালো তুলির স্পেকট্রাম

রাত্রের গভীর অন্ধকারকে পুঁজি করে

রক্তপাত ঘটায় প্রতিটি সাইটোপ্লাজমে।

এ যেন অজন্তির বিভীষিকাময় তীব্রতার ফ্রেস্কো

যন্ত্রণাহীন নিস্তব্ধ একেকটি মুখে।



অতঃপর সব শূন্যে মিলিয়ে যায়!



উৎসর্গ: প্রজন্ম চত্বর ।



***



অনাহূত

প্রলাপ



০১.

তুমি সচেতনভাবে ভুলে গেলেও

আমার অসংখ্য নিদ্রাহীন রাতের হিসেব লেখা আছে

সিগারেটের অক্ষত টিপিং পেপারে।



০২.

অভিধান থেকে ঘুম হারিয়ে গেলে

আমাকে রাতভর পাহাড়া দেয়

অটিস্টিক স্বপ্ন আর অনিদ্রাবতী।



০৩.

খুব ইচ্ছে করে খুন করে দিতে

অপেক্ষা, রাত, জ্যোৎস্না আর জোনাকিদের;

... সত্যিই একদিন খুনি হব।



০৪.

আমি খুব কম আসি

খুব খুব কম

মধ্যরাত গ্রাস করে যেভাবে সকাল আসে,

আমি তার চাইতেও ধীরে, বহুপথ ঘুরে, এখানে আসি ...

ক্ষয়িষ্ণু পায়ে; ছায়াহীন।



০৫.

প্রিয় হারানো চোখ

রক্তাক্ত এই আঙুলের ডগায়

শুধু আর একবার দৃষ্টিচুম্বন দাও।



০৬.

এতোটাই যদি ঘৃণা

তবে কেন একই ছাদের নীচে

একই রাতের নকশী কাঁথায় আবারো আমরা দু’জন?



০৭.

হঠাৎ সেদিন অডিটোরিয়ামে ঢুকে

কৌতুহলবশত পেছনের সারির চেয়ার দুটোতে

চোখ রাখতেই দেখি- আমি এখনো এই ভাঙা হাতলেই আটকে আছি;

ডুবো শহরের ব্যস্ততা থামিয়ে

কানের কাছে প্রতিফলিত হয়-

‘তোমার চোখের নীচে সন্ধ্যার ঘ্রাণ এতো তীব্র কেন?’



আরেকটু গভীরভাবে তাকালেই বুঝতে

শুধু চোখের নীচে নয়-

মুখের ভেতর, বুকের ভেতর বিরতিহীন মিছিল করে

অন্ধকারের মশাল।



***



ফারজুল আরেফিন

ভালোবেসে গোপনে



পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণের সঙ্গী হলো প্রিয় ক্ষয়িষ্ণু স্মৃতিরা

পকেট হাতড়ে বোঝা গেলো–লাইটার পড়ে আছে অগোছালো টেবিলে

ভ্রমণে আরো সঙ্গী হলো এক প্যাকেট অস্পৃশ্য সিগারেট।

ঢুলোঢুলো আলোর কামরায় বিদ্রূপের হাসি হাসছে প্যাকেটটি

আঙুলে শিহরণ উত্তাল যৌবনের,

কামনার তৃষ্ণায় সংকুচিত দুটি ঠোঁট।

খুঁজে ফিরি একটি জাদু অথবা দেয়াশলাই বাক্স

অপেক্ষা মিলনের, আঙুলে ছন্দিত পেষণের।



সিগারেটের ঘ্রাণে ভরা মাতাল বাতাস, ট্রেনের দরজা ঘেঁষে

উত্তরে দক্ষিণে ডানে বামে ঘুরতে ঘুরতে

পৌঁছে গেছে এক সময়ের চিরচেনা চৌকাঠে;

ঘুমন্ত তোমার চোখ দুটি ছুঁয়ে শুদ্ধ হয়েছে প্রেমে।

এতো বছরে বদলে গেলো না কিছু স্থির বিন্যাসে

নিশ্চুপ মাঝরাতে চুপি চুপি বলে গেলো বাতাস

ভালোবাসি তোমায় আজও একাকিত্বে খুব গোপনে।



সিগারেটের প্যাকেটটি খালি হতে বেশি দেরি নেই

ভোরের ম্রিয়মান আলো চোখের সামনে,

তুমি হয়তো আছো এখনো ঘুমে!

ট্রেন থেমে গেছে,

খালি প্যাকেটটিতে স্মৃতি ভরে অযত্নে ছুঁড়ে ফেলি সমান্তরাল লাইনে

একটু পরেই হারিয়ে যাবো জীবনের চাষাবাদে

পড়ে থাকবে শুধু প্লাটফর্মের কাছে স্মৃতিভরা সিগারেটের প্যাকেট

তোমার মুখখানি ভালোবেসে খুব গোপনে।



***



মাসুম আহমদ ১৪

হরিণশিশুরা আনমনে খেলেছে সাপেদের ছায়ার সাথে



একটা শহর জেগে উঠে আমার শার্টের কলার চেপে ধরে বলেছিল বিপ্লব চাই অথবা মৃত্যু। তখন আমি স্কুলবয়, ফুলের অসুস্হতা তেমন বুঝতাম না। বাগানভরা প্রজাপতি থোকায় থোকায় ঝুলে থাকত। ন্যাংটা শিশুরা অন্ধ পাখিদের খসে পড়া পালক কানে ঝুলিয়ে বিষণ্ণ বৃষ্টিতে শাওয়ার নিত। শিশুদের দুই হাত দুইদিকে প্রসারণ করে মাপা হতো মুক্তির পরিধি।



জটধরা চুলের ওঝারা ঝাড়ফুঁক দিয়ে নগরীর মেডিসিন ল্যাবগুলো অকেজো করে দিয়েছিল। দিগন্তঘেরা সবুজ বন ছোটো হতে হতে হারিয়েছিল তার বিশালতা, বুড়ো গাছগুলো বিবর্ণ হয়ে বস্ত্রহীন হয়ে পড়েছিল। তবুও হরিণশিশুরা আনমনে খেলেছে সাপেদের ছায়ার সাথে। চৌধুরী কটেজের উঠোন থেকে ভেসে এসেছে বিদ্রোহী কোরাস।



অতঃপর কত উতলা সময় কাটিয়েছি বসন্তের পর বসন্ত। কিন্তু শহরকে আর কখনো জেগে উঠতে দেখি নি, বিপ্লব দেখি নি কিংবদন্তির কণ্ঠে। শুধু ঝাঁকে ঝাঁকে মৃত্যু দেখেছি শহর, বাগান, প্রজাপতি আর অন্ধ পাখিদের।



***



অদৃশ্য

বাকী অরিন্দম

তোর পাশে দাঁড়ালেই আমি অসহায়



কাল যেতে যেতে দেখি প্রিয় চরটা ডুবু ডুবু প্রায়, আমার তৃণসবুজ প্রহরীর দেহগুলোও যায় যায়, এখন ওখানে প্রিয় কুটির আমার বাঁধন ছিঁড়তে শুরু করেছে...



শুধু আমি পারি নি রে যমুনা, তোর বুকে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে

তোর সুতীব্র ছোটা ঢেউয়ের উত্থান ও পতনের ব্যবধানে নিজের জায়গা করে নিতে,



অথচ তোর পাশে দাঁড়ালে আমার হৃদফাটা গুঞ্জনে চারিদিক হাহাকার করে, স্রোতের টানে শতশত স্থলজ অকালে মরে, তোর পাশে দাঁড়ালেই আমি অসহায়...



কোনো এক জোছনা রাতে তোর যৌবনস্রোতে

আমার ভ্রূণ ছেড়ে দেব,

বহু প্রতীক্ষার অবসানে যমুনা তোকে

একান্তই আমার করে নেব।।

***



নোমান নমি

ইশতেহার



আমি রাষ্ট্রপ্রধান হলে

সেনাবাহিনী যাবে প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে, কারফিউ জারি হবে বিরোধী এলাকায়

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উচ্চ কণ্ঠে জানিয়ে দিব-

‘তোমাদের যা কিছু আছে, তা নিয়ে প্রেমিকাকে কাছে টেনে নাও, রাষ্ট্রপ্রধান সাথে আছে’

আমি রাষ্ট্রপ্রধান হলে

নির্বাচন হবে এভাবে- ‘তুমি আমাকে ভালোবাসো?

ভোট দিতে পারবে, কেবল দুটি অপশনে

হ্যাঁ এবং হ্যাঁ!

আমি রাষ্ট্রপ্রধান হলে

অফিস-আদালত, স্কুল সব জায়গায় বাধ্যতামূলক তোমার ছবি ঝুলবে

দেশ চলবে ‘বেণুরেখাবিধানে’

প্রতি শুক্রবার ক্রোড়পত্র বের হবে তোমার চিঠি

প্রেম শিখুক আমজনতা, ভালো থাক সুখে থাকাথাকি

আমি রাষ্ট্রপ্রধান হলে

প্রেসক্লাবে জমবে অভিসার, পত্রিকার শিরোনাম হবে ‘প্রেমিকার মন খারাপ’

মন খারাপ বিষয়ক শোক দিবসে রাষ্ট্রপতি কবিতা লিখে দিবেন পত্রিকায়

সেদিন কেউ কারো হাত ধরবে না, বায়না ধরবে না চুমুর

অর্ধনমিত থাকবে চোখের ইশারা!

আমি রাষ্ট্রপ্রধান হলে

ষড়যন্ত্রের সুযোগ পাবে না বিরোধী দল কিংবা ভালোবাসাবিরোধীরা

ভয় পেয়ে চলে যাবে হনলুলু কিংবা আফ্রিকার জঙ্গলে

বিমান বন্দরে আটকে দেয়া হবে পাচার হওয়া ভালোবাসা।

১৪৪ ধারা জারি হবে বিরহী প্রেমিক-প্রেমিকার মনে

কোথাও কোনো বিরহ চলবে না!



আমি রাষ্ট্রপ্রধান হলে

ক্রসফায়ারে পড়বে সকল চরিত্রহীন প্রেমিক-প্রেমিকা

হোক মানবাধিকার লঙ্ঘন, স্বৈরাচারী বলে বন্ধ হোক

সকল বৈদেশিক প্রেম-ভালোবাসা সাহায্য,

তোমার মন ব্যতীত আর কোনো কিছুই গুরুত্বপূর্ণ না!

আমি রাষ্ট্রপ্রধান হলে

প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে,

হাইকোর্টকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিতে হবে

যথাযথ কারণের অভাবে ঝুলতে হতে পারে ফাঁসিতেও!

গণভবন কিংবা বঙ্গভবন হবে ভালোবাসার মিলনায়তন

আমি রাষ্ট্রপ্রধান হলে

পার্লামেন্ট শুরু হবে প্রেমের কবিতায়, আলোচনা চলবে হৃদয়ের মন খারাপ নিয়ে

হৃদয় মন্ত্রণালয় সমাধান করে দিবে, আবেগ মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যে

পার্লামেন্টেই পাশ হবে এক একটি বিয়ের অনুমোদন!

আমি রাষ্ট্রপ্রধান হলে

প্রেস রিলিজ দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে প্রতিটি অনুভূতি

জাতীয় ফুল লাল গোলাপ বাগানে হবে রাষ্ট্রীয় বৈঠক

রাষ্ট্রীয় সাংস্কৃতি কর্মী প্রজাপতিরা উড়ে যাবে

তীব্র শীতে ভাবেলশহীন এক চাদরে কপোত-কপোতী।

পার্লামেন্টে উপস্থাপিত হবে বার্ষিক ভালোবাসার খতিয়ান

আমি রাষ্ট্রপ্রধান হলে

আইন করে নিষিদ্ধ করা হবে ছলনা, একটি বিষণ্ণ প্রেমিকও রাত জাগবে না

বিষণ্ণতা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে

ছলচাতুরী করলেই ফৌজদারি মামলায় সোজা জেলখানা!

ভালোবাসার ইশতেহার পূরণে ব্যর্থরা যাবে নির্বাসন।

আমি রাষ্ট্রপ্রধান হলে

জনমত জরিপে সমাধান হবে খণ্ডকালীন মনমালিন্য

বিশ্বের সুখী জাতির খাতায় এক নম্বরে নাম লেখাবে

এই রাষ্ট্র এবং এই সংসার।

আমি রাষ্ট্রপ্রধান হলে

মৃত্যূর পর তোমার আমার ছবি থাকবে তরুণ-তরুণীদের টি-শার্টে

মানিব্যাগের ফাঁকে, প্রেমিক-প্রেমিকাদের হৃদয়ে

এবং রাষ্ট্রের জন্ম বিষয়ক ইতিহাস বইয়ে!



***



অরণ্য

যে বেলুনগুলো রংহীন



মৃত্যুযন্ত্রণা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাচ্ছে মায়াবী বেলুন...

যারা আজ তুলেছে সুর কুঠারের ঐ ঝড়ের বাগানে

আমি তাদের বলছি সৈনিক

বিদঘুটে উল্কি ভালবেসেও হেসেছে

কোথা থেকে উড়ে আসে এইসব অসংখ্য নীল-মাছি

যে তুমি হাত বাড়ালেই এখনও নেমে আসে আকাশের সিঁড়ি

সে তুমি জানো না কীভাবে নিজেরই লাশ কাঁধে

দাঁড়িয়ে থাকে মূর্তির শরীর

বোবা-উল্কি সেও কেঁদে ওঠে ত্বকের গভীরে

তোমাকে শুধু আজ এই বলতে পারি

পোষা বেড়ালটা এখন ইঁদুর মারতে শিখেছে

আমি তাকে কিনে দিয়েছি জাদুর দাঁত, অলৌকিক ছুরি

রাত কত উজ্জ্বল হয়ে হেসে ওঠে ওর চোখের তারায়

আর আমি কারও অচেনা নিশ্বাসের পাশে শুয়ে থেকে

হয়ে উঠি বিরাট অজগর সাপ



***



বর্ষণ মাহি

মনে পড়বে না সেই অস্তিতহীনকে



মনে পড়বে কি তাকে?



তখনো স্নিগ্ধ সকালবেলার কমলা আলো

গাছের পাতার ফাঁক গলে

পড়বে ভাঙা বেঞ্চটার উপর।

তখনো হালকা মিষ্টি হাওয়া

দুঃখ মুছতে ব্যাকুল হবে

স্রোতহীন পুকুরের জলটুকুর।

তখনো বৃষ্টি ছুঁয়ে যাবে,

ছুঁয়ে যাবে মাটি - গাছ,

পিচঢালা রাস্তা আর ব্যস্ত শহর।

তখনো কর্মব্যস্ত মানুষ ছুটে চলবে,

জীবনের মাঝে খুঁজে ফিরবে

কোনো ক্লান্ত দুপুর।



অস্তিত্বহীন কোনো মানুষের খোঁজ কি পড়বে তখন,

যে-মানুষ স্নিগ্ধ সকালবেলার কমলা রোদ গায়ে মেখেছিল!

কিংবা দেখেছিল স্রোতহীন পুকুরের মেকি স্রোত!

হয়ত ঝমঝম বৃষ্টি একদিন ছুঁয়েছিল তাকে।

একদিন কর্মব্যস্ত মানুষগুলোর ভিড়ে

সেও খুঁজে ফিরত একটু ছুটি!



এখন সে মুক্ত!

এখন তার ছুটি!



মাঝি এখনো নৌকো ভাসায় নদীর বুকে।

শিল্পী কণ্ঠ দেয়-

‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,

আমি বাইব না-

আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে।’



সত্যি! তার তরী আর ওই ঘাটে ভেড়ে না।



ভিড়বে না!

মনে পড়বে না কারো!



মায়া করে যতদিন ছিলে,

হে অস্তিতহীন,

আজ কেউ মনে রাখে নি তোমাকে।



তুমি একা ছিলে,

আজ যেমন তুমি একা।



হ্যাঁ, তোমাকে বলছি-

একদিন তোমার সব ছিল।

আজ তোমার কিছুই নেই।



কেউ আসবে না তোমার ঘরের চাবি ভেঙে তোমায় নিয়ে যেতে।



তুমি একা,

হে অস্তিতহীন, তুমি একা,

হে মৃত, তুমি একা।



কেউ মনে রাখে নি তোমাকে।



মনে রাখে না।



***



আরজুপনি

পোড়া মন!



তুমার লাইগ্যা মনডা এমন পোড়ায় ক্যান?

ক্যান পোড়ায় কইতে পারো?

বেইন্যে থাইক্কা বৈকাল পার কইরা

গতর খাইট্টা কাম কইরা

কাহিল হইয়া এট্টু চক্ষু বুজলেই

তুমি আইস্যা চক্ষু জুইড়া বসো...

পোড়ার গন্ধ পাও না?

আমার অন্তরডা পুইড়া বিরান হইয়্যা যাইতেছে!



চক্ষু বুজলেই যদি তুমারে দেহা যায়

তয়, কত দূরে যাইয়্যা তুমি চক্ষের আড়াল হইবা ...?



***



শাকিলা তুবা

কোথাও বাজছে বিরাগে রাগ মেঘরঞ্জনী



গ্রীক দেবতাদের মতো কিছুটা মেয়েলি সৌন্দর্যে ভরা

যুবকটি জানালো, সেলাইকর্মে সে যথেষ্ট নিপুণ।

একটু ঝুঁকে ফুলতোলা সালোয়ারের পাঁপড়িটি খুলে নিল সে

টুপ করে চাবিটা ঠিক তখুনি পড়ে গেল নীচে।



জানালাম, আমি জিগোলো চাই নি

চওড়া হাড়ের কব্জিওয়ালা

একজন প্রেমিকপুরুষ খুঁজেছি এতকাল

যার নামে কোনো হুলিয়া জারি করা নেই।



তিনতলার রঙচটা ক্যাম্বিসের ইজিচেয়ার ফুলে ফুলে উঠছে

ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে অন্তঃপুরের

মেঝে থেকে মোচড়ানো সালোয়ার তুলে নিতে নিতে দেখলাম

তাবৎ রমণীকুলের চোখে ধনুষ্টংকার ঈর্ষা।



সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করলো কিংবা সবাই জানলো

বুনোফুল পরিচর্যা ছাড়াও দারুণ রূপ নিয়ে বাড়ে

চোর সদৃশ যে সুদর্শন পুরুষ এতক্ষণ ঘরে লুকিয়ে ছিল

তাকে আমি ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে দরজা লাগিয়ে দিলাম।



***



রোমেন রুমি

শারদ আকাশ মায়াবিকেল



শারদ আকাশ ছিল সেদিন;

ছিল তুলোর মত মেঘমালাদের অবিশ্রান্ত লুটোপুটি।

তুমি-আমি; শুধু আমরা দুজন বসে ছিলাম

বিকেলের সোনারোদ চুমু-খাওয়া জলের ধারে।



কী অদ্ভুত নির্লিপ্ত দুটি হৃদয়;

তুমি-আমি আমরা দুজন পাশাপাশি।

স্থির দৃষ্টির গহিনে পৃথিবীর তাবৎ পিপাসা-

কত শতকথা- স্বপ্নকথা, ভিড় করেছে মনের কোণে;

হয়ত তোমারও।



শান্ত সেই পুকুরের জল কান পেতেছে;

কান পেতেছে পাড়ে দাঁড়ানো সারি সারি বৃক্ষরাজি-

যেখানে পাতা ঝরে পড়ার মর্মর ধ্বনিতে চকিত হয় পথিক;

নীরবতা-মোড়ানো অখণ্ড সেই মায়াবিকেল।

একজোড়া শালিক খুব সন্তর্পণে দিয়েছে উঁকি

পাতার আড়াল থেকে-

রাতের ঝিঁ ঝিঁ পোকারা এসেছে দল বেঁধে;

এসেছে জ্যোৎস্নার জোনাকিরা।



নিঃশব্দে আসা শব্দরাশি নিভৃতে বেঁধেছে বাসা কণ্ঠনালির নীচে;

তবু ভাঙ্গে নি নীরবতা।

না তুমি না আমি।

বিভোর গভীর স্বপ্নবৃষ্টিতে ভিজেছে হৃদয়;

যেন কেটেছে অনন্ত প্রহর!





মৃদু বাতাসে শিরশির দেহে সবুজ পাতাদের অবনত মুখ।

ভীষণ প্রসন্ন সেই শারদ আকাশ ছিল সেদিন।



না, তোমার কপালে ছিল না কোনো টিপ;

না কোনো সাজ-সরঞ্জাম।

বিন্দু বিন্দু ক্লান্তিঘাম; কী ভীষণ গর্বে ফুটেছে-

মেতেছে নিজেদের অস্তিত্ব দীর্ঘায়িত করার প্রতিযোগিতায়।

আমার ভেতরে বয়েছিল যৌবনা ব্রহ্মপুত্রের শান্ত প্রবাহ;

কী মায়া মেখেছে প্রকৃতি তোমার ওই মুখে!

যেখানে বড় অসহায় আমার শব্দভেলা;

এ যেন নিজের মাঝে আপন হাতে গড়া মায়াদ্বীপে

কাশফুলেদের নরম আদর ছোঁয়া।



তোমার আজন্ম কাজলমাখা চোখজোড়া;

যে চোখে তাকিয়ে কেটে যেতে পারে সহস্র শতাব্দী-

যেখানে নিঃশঙ্ক চিত্তে রাখতে পারি জমা

আমার এই এক জীবনে সঞ্চিত সকল দুঃখমালা।



***



রাগ ইমন

মৃত্যু, এসো চির আলিঙ্গনে, আর তোমাকে ফেরাবো না অলীক স্বপ্ন বুনে



খুব শীঘ্রই তোমার কোমল দু’হাত আমায় ছোঁবে

খুব যতনে মাটির বাসর গড়বে ভুবন

আমার গায়ে প্রিয় রঙের শুভ্র বসন

আলিঙ্গনে আলতো করে শুইয়ে দিও।



জন্ম হওয়ার আগেই আমি মৃত ছিলাম ভবে

খুব আক্রোশে মরলো যখন ছোট্ট দেহ

বাঁচায় নি কেউ। অন্ধ ছিল মাতৃস্নেহও।

তোমাকে তাই দোষ দেব না। প্রেমটা নিও।



চোখ মৃত তো! তাই বুঝি নি, আমি কী বীভৎস

লাশের ভেতর ডেভিল থাকে, আগলে রাখে

সাপ-খোপ আর নেকড়ে যখন পায় আমাকে

বিদায় নিত! অভয় পেলে তোমার, প্রিয়!



দেহ গেছে, হৃদয় মৃত, আত্মাটুকুই ছিল

কেউ পায় নি কণামাত্র তার অধিকার

আত্মাটুকুই সেধেছিলাম প্রেম উপহার

নিতেই হবে, শর্ত তো নাই, তা বুঝিও।



জন্ম বোধ হয় পাওয়ার জন্য হয় নি আমার, তবে

দেওয়ার মতো ভালোবাসা ছিল আমার।

দিয়েই গেছি। চেয়েছিলাম এই একবার...

এই জন্যই হারতে হলো আত্মাটিও!



বড়দের এই বিশ্ব খেলায় কে জিতেছে কবে?

আমি শিশু, নিয়মকানুন জানি না, তাই

বিদায় নেব। আর হবো না ঘুড্ডি নাটাই।

তোমার যোগ্য কেউ তো নয়। নই আমিও!



কষ্ট শুধু, জেনেছিলাম, মরতে আমায় হবে

শত্রু হলে, খুব সাহসে দিতাম রুখে

তুমিই যখন মারলে ছুরি আমার বুকে

তোমায় আমি বাধা দেব, কল্পনীয়?



কেউ ছিল না তোমার আগে, আর কেউ না হবে

এ সত্যটা চিরকালীন সত্য জেনো

বিদায় দিলে, আর এখানে থাকবো কেন?

প্রেম না দাও। বিদায়বেলায়, একটু ছুঁইও।



০২ রা আগস্ট, ২০০৬

মন্তব্য ১০৩ টি রেটিং +১৪/-০

মন্তব্য (১০৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫৯

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


ভাই আপনাকে আবারও টুপি খোলা সালাম জানিয়ে গেলাম। অনেক পরিশ্রমী একটা কাজ করছেন। আপনার সকল প্রকার মঙ্গল কামনা করি।

০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:১০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ কান্ডারি ভাই। ভালো থাকবেন।

২| ০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:০৫

বৃতি বলেছেন: মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম ভাইয়া। পরে সময় করে সবার কবিতা পড়ব।

০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:১১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মুগ্ধ হয়েছেন জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ আপু।

৩| ০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:০৫

বৃতি বলেছেন: মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম ভাইয়া। পরে সময় করে সবার কবিতা পড়ব।

৪| ০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:০৬

বৃতি বলেছেন: মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম ভাইয়া। পরে সময় করে সবার কবিতা পড়ব।

৫| ০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:০৮

বৃতি বলেছেন: এতগুলো কমেন্ট হল কিভাবে? একটা রেখে বাকিগুলো মুছে দিলে খুশি হব।

০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:১৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এতগুলো কমেন্ট হবার কারণ হতে পারে- আপনার স্পিড স্লো ছিল, ১ম কমেন্ট পোস্ট হয় নি মনে করে আরও কয়েকবার বাটন প্রেস করেছেন। তা ছাড়া ব্লগের নিজস্ব অগুনতি বাগ রয়েছে, যার কারণে এটা হতে পারে।

৬| ০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: পরিশ্রমী উদ্যোগের সফল সমাপ্তি। সুন্দর ভাললাগা নিবেন সুপ্রিয় কবি ও সংকলক।

০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:১৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কবি সেলিম আনোয়ার ভাই।

৭| ০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৬

মামুন রশিদ বলেছেন: কাজটা নিঃসন্দেহে কষ্টসাধ্য, ডেডিকেশন না থাকলে এই ধরনের কাজ করা প্রায় অসম্ভব । তবে দিনের শেষে নিজের কাছে এটা যে কত উপভোগ্য আর আনন্দময়, তা সবাই বুঝতে পারেনা ।


এই পর্বে ব্লগের সম্ভাব্য সেরা কবিদের কবিতা এসেছে । কবি মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা সংযোজন পর্বটিতে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে ।

ভালোলাগা++

০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:২০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ব্লগারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই আমাকে এ কাজটি করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। জীবনে যে-সব কাজ করে অপরিসীম তৃপ্তি ও আনন্দ পেয়েছি, এ সংকলনটি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।

মলয় রায়চৌধুরীর অমায়িকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাঁর এ কবিতাটি কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি আমাকে লিংক দেন, কিন্তু লিংক ওপেন হয় না। তিনিও অনেক কষ্ট করেন সঠিক লিংকটি দেয়ার জন্য। তবে আমাকে নিজ হাতে টাইপ করতে হয়েছে অনেকখানি ;)

আপনার ভালোলাগা আমার উদ্দীপনার উৎস।

অনেক ধন্যবাদ প্রিয় মামুন ভাই।

৮| ০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৭

সুমন কর বলেছেন: প্রচ্ছদ অসাধারণ !!
এবারের পর্বে কবিগুলো দেখছি মহারথি। কবিতাগুলো পরে সময় করে পড়তে হবে। সাথে আছি।

০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:২১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন ভাই। ভালো থাকবেন।

৯| ০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৭

সুমন কর বলেছেন: প্রচ্ছদ অসাধারণ !!
এবারের পর্বে কবিগুলো দেখছি মহারথি। কবিতাগুলো পরে সময় করে পড়তে হবে। সাথে আছি।

১০| ০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:২৪

নস্টালজিক বলেছেন: কবিতার জন্য আপনার ভালোবাসা নিখাদ!


শুভেচ্ছা নিরন্তর!

০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:২২

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অংশগ্রহণের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রিয় রানা ভাই। ভালো থাকবেন।

১১| ০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:৫৬

স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:

পোষ্ট সরাসরি প্রিয়তে......


সফল ভাবে এই কাজটি শেষ করার জন্য শুভেচ্ছা।
সুন্দর প্রচ্ছদের জন্য কা_ভা ভাইকে ধন্যবাদ।

০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:২৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ স্নিগ্ধ শোভন ভাই। ভালো থাকবেন।

১২| ০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:০২

ডি মুন বলেছেন: সবগুলো পড়া হয়নি তবে যেগুলোতে চোখ বুলালাম.। দুর্দান্ত :) :)

১০ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৪৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ ডি মুন।

১৩| ০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:৩০

রোমেন রুমি বলেছেন:
এতজন ব্লগারকে এক সুতোয় বাঁধার এই কষ্টসাধ্য প্রয়াস নিঃসন্দেহে সফল ; সোনা ভাই ও কাল্পনিক ভালবাসার জন্য ভালোবাসা ।

এখানে আমার যে লেখাটা স্থান পেল সেটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটা সময়কে ধারন করে তাই এটাই আমার নিজস্ব পছন্দ ছিল :)

এত সুন্দর ও নান্দনিক এতগুলো লেখার মাঝে আমিও আছি; এটা নিখাদ ভাল লাগা।

১০ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৫০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: বিনয়, জোরাজুরি, ইত্যাদি সহযোগে ব্লগারদের কাছ থেকে তাঁদের শ্রেষ্ঠ লেখাটি যে আদায় করে নিতে পেরেছি, সেজন্য নিজেকে খুব কৃতার্থ মনে হচ্ছে।

ধন্যবাদ রোমেন রুমি ভাই। ভালো থাকবেন।

১৪| ০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৭:০৪

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
এক পলকে দেখে আসলাম...
সব ভিআইপি কবি শেষ পর্বে... :)


কবিতা নিয়ে পরে কথা বলার ইচ্ছা আছে।


অসাধারণ কর্ম, সোনাবীজ ভাই। আপনার পরিশ্রম ও কবিতার প্রতি আপনার প্রেমকে শ্রদ্ধা জানাই। কৃতজ্ঞতা জানাই টিমের সকলকে :)

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:০৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ‘অসাধারণ কর্ম’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রিয় মাঈনউদ্দিন ভাই। ভালো থাকবেন।

১৫| ০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৭:১৫

মিনুল বলেছেন: অনেক কষ্ট করে ও সময় দিয়ে গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। শুভেচ্ছা থাকলো ভাই।

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:১৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ মিনুল। ভালো থাকবেন।

১৬| ০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৪১

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: বাহ! চমৎকার কর্মযজ্ঞ।

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:১৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ শরৎ দা।

১৭| ০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৩২

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: চমৎকার সব কবিতা দিয়ে সাজিয়েছেন পোস্ট --- এত সুন্দর সব কবিতা !!

গুরু দায়িত্ব পালন করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:১৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন।

১৮| ০৯ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:১৯

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: দুর্দান্ত একেকটা কবিতা ! আহ !
সরাসরি প্রিয়তে গেল ! আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা !

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৩৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ অভি ভাই। ভালো থাকুন।

১৯| ০৯ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৪৮

ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: আমার ব্রাউজারে পুরো পোস্ট পাচ্ছি না! দারূন সব কবিদের দারূন সব লেখা এক জায়গায় পাওয়া গেল! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: পর পর ২দিন ব্রাউজার রি-ইনস্টল করলাম। আজ সকালে রি-ইনস্টল করার পর সবকিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম। সন্ধ্যার পর থেকে আবার আগের মতো হয়ে গেছে।

ধন্যবাদ ইফতি ভাই। ভালো থাকবেন।

২০| ০৯ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:১৪

সোনালী ডানার চিল বলেছেন:
(প্রিয় সব কবিদের ভিড়ে এই অকবির উকি, দারুণ এক অপার্থিব অনুভূতি এনে দিল।)
যারা কবিতার জন্য বুকে তৃষা চেপে রাখে, আপনার এই সংকলন সিরিজ তাদের জন্য অলৌকিক বারিধারা ছিল!

সমসাময়িক কবিতার এ এক অনন্য সংগ্রহ! প্রচ্ছদ আলাদাভাবে প্রশংসার দাবি রাখে।

আপনাকে অন্তর থেকে নিরন্তর শুভকামনা।

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এ প্রচ্ছদটা আমারও খুব ভালো লেগেছে।

সংকলনের জন্য কবিতা খুঁজতে গিয়ে কবিতার খনি পেয়েছি। এটা আমার জন্য এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল।

অনেক ভালো থাকবেন প্রিয় কবি।

২১| ০৯ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৮

সোমহেপি বলেছেন: কবিতাগুলো কয়েকটা পড়েছি যেগুলো ছোট । সবগুলোই পড়ব সময় করে।


আপনার আন্তরিকতায় মুগ্ধ।

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আন্তরিকায় মুগ্ধ হয়েছেন জেনে খুশি হলাম। ভালো থাকবেন ইমন ভাই।

২২| ০৯ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৯

অন্য কথা বলেছেন: অবশেষে সফল ভাবে .... দুর্দান্ত ... তাই প্রিয়তে ।

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হ্যাঁ, অবশেষে সিরিজটি শেষ করলাম। নিজেকে খুব কৃতার্থ মনে করছি। ধন্যবাদ অংশগ্রহণের জন্য।

২৩| ০৯ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৩

আরজু পনি বলেছেন:

:| :( :((

মজিলা, ক্রোমো একাধিক ব্রাউজার থেকে চেষ্টা করলাম পুরো পোস্ট দেখতে পারছি না...পিডিএফই ভরসা ।

শেষের বেশ কয়েকটা কবিতা অন্ধকার হয়ে গেছে :(


তবে পিডিএফ-এ কিছু দেখলাম মনে হয় :!> শ্রেষ্ট কবিতার নামে নিজের ভালো লাগা একটা কবিতা দিতে পেরে ভালোই লাগছে :#>

আমার কবিতা পরে কেউ মনে মনে গালি দিলেও কিছু মনে করবো না 8-|


তবে একটা বিষয় খেয়াল করলাম, শ্রেষ্ট কবিতার আকার সাধারণত বেশ বড় হয়... :D

আপনার খাটুনি কতোটুকু সফল হয়েছে জানি না...তবে এই সুযোগে আমি কবি হয়ে গেলাম :P

টুপি খোলা সালাম রইল ।।

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:২২

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: টুপি খুলে সালাম নিলাম :)

গত বছর আমার আরেকটা পোস্টে আপনি বলেছিলেন, শেষের দিকে পোস্ট অন্ধকার হয়ে গেছে। সেদিন ঐ কথার অর্থ আমি অন্যভাবে নিয়েছিলাম- শেষের দিকটা হয়তো নেগেটিভ টার্ন নিয়েছে :) আজ ব্যাপারটা বোধগম্য হলো :)

আমি আজ সকালেও ব্রাউজার রি-ইনস্টল করেছিলাম। সারাদিন পুরো পোস্ট দেখতে পেয়েছি। সন্ধ্যার পর থেকে আবার আগের মতো হয়ে গেছে। তবে অনেকেই যেহেতু পুরো পোস্ট দেখতে পাচ্ছেন, এজন্য মনে হচ্ছে নিজস্ব ব্রাউজার বা পিসিতেই সমস্যা রয়েছে, বা ব্লগেও থাকতে পারে।

যাই হোক, পিডিএফটা দেখতে পেয়েছেন জেনে ভালো লাগছে।

ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন।

২৪| ০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৩৬

মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: অসাধারণ একটা কাজ করেছেন! কবিতার প্রতি আপনার এই ডেডিকেশন সত্যি মুগ্ধ হওয়ার মত!

পোস্ট প্রিয়তে!

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:২৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আশা করি আপনি খুব ভালো আছেন মাসুম ভাই। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

২৫| ০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৪৯

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ধন্যবাদ দিবু না।

দায়ীত্ব কেউ না কেউ নিতেই হয় নিজের গরজে। সবাই আগাইয়া না আসলেও কেউ কেউ আসে। আপনিও তাদের একজন।

আর বলতেই হয় যে, শেষতক কবিদের দলেও ঠাঁই হইল আমার!

হায়, কৃতজ্ঞতা জানাই তাই- সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই! :)

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:২৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার প্রতিও কৃতজ্ঞতা রইল প্রিয় জুলিয়ান ভাই। আপনারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন বলেই সংকলনটা সার্থক হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

ভালো থাকবেন সব সময়।

২৬| ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:১২

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
এতো এতো কবিতা তিনটি পর্ব জুড়ে, এত এত কবি; এটাই দূর্দান্ত।
আর প্রিয় কবিতার সন্নিবেশ টা দেখতে, পড়তে আনন্দময় ঠেকছে।
আর এই পর্বে এত সব সত্যিকার কবির পাশে এই নগন্য আমাকে দেখাটা উৎসাহ আর আনন্দের। এই সিরিজের কথা কখনো সামনে এলে, নিজের নামটাও কোনভাবে আসবে ভেবে গর্ব অনুভব করছি।

ধন্যবাদ ভাই।

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রিয় কবিতার সংকলন শেষ করতে পেরে আমারও খুব ভালো লাগছে। এ কাজগুলো করে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি। আপনারাও খুশি হয়েছেন জানতে পেরে খুব ভালো লাগছে।

ধন্যবাদ আশরাফুল ভাই। ভালো থাকবেন।

২৭| ১০ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৫২

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
দারুন একটা জার্নি সফলভাবে শেষ করায় অভিনন্দন কবি সাহেব :)

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫২

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ঘূণপোকা।

২৮| ১০ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:০৭

জুন বলেছেন: অভিনন্দন আপনাকে দারুন একটি কাজের সফল সমাপ্তির জন্য ছাই ভাই।
নিরলস পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের অসাধারন পরিসমাপ্তি । সত্যি আপনি দেখালেন বটে।
কিন্ত আপনি আমার পচা ছবিগুলো কখন দিলেন জানি না তো । যাই হোক তারপর ও আপনার অসাধারন এই সংকলনে সেসবের ঠাই হওয়ায় আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা দেশী ভাই।
+

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার ছবিগুলো সংকলেন যুক্ত করে আমি নিজে খুব আনন্দ পেয়েছি। প্রিয় কাউকে সারপ্রাইজ দেয়ার মধ্যে অনেক আনন্দ। আমার উদ্দেশ্য ছিল আপনাকে সারপ্রাইজ দেয়া :)

ভালো থাকুন আপু।

২৯| ১০ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৪

সোমহেপি বলেছেন: আরজুপনি, মরার আগে আর হবে বলে মনে হয় না।

সুন্দর কবিতায় +

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ ইমন ভাই।

৩০| ১০ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০২

সোমহেপি বলেছেন: জুনাপো , আপনি আমাকে যে কবিতাটা লিখে পাটিয়েছিলেন সেটাই শ্রেষ্ঠ কবিতা বলে প্রতীয়মান হত ।

নিচে কবিতাটি দিয়ে দেব নাকি?

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনাকে যেটা পাঠানো হয়েছিল সেটা আপনার বিবেচনায় তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতা ছিল, আর এখানে যেটা দেখছেন এটা কবির বিবেচনায় তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতা ;) এ পোস্টের তাৎপর্য বোঝা যায় এখান থেকেই- পাঠক আর কবির চোখ এক জায়গায় না-ও পৌঁছতে পারে ;)

৩১| ১০ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪২

হাসান জাবির বলেছেন: চমৎকার এক কষ্টসাধ্য অসাধারন প্রয়াস ।

ভালো লাগে এসব ভালো লেখাগুলি একসাথে করে দেবার জন্য । অসাধারন প্রচেষ্টার সফল মিশন ।

ধন্যবাদ, খলিল ভাই ।

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান জাবির ভাই।

৩২| ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:১৮

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
আমি সামু ছাড়া অন্য কোনও ব্লগে লিখি না, পড়িও না !

আপনার পোস্টের মাধমে এই ব্লগের সাম্প্রতিক কবিদের
সমন্ধে পরিস্কার একটা রূপরেখা পেলাম যা অতি মূল্যবান !

পর্বগুলো কি ওয়াজ মাহফিলের বক্তাদের মতো করে সাজালেন !

ভালোলাগা আর কৃতজ্ঞতা নিরন্তর ।

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:০৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ স্বপ্নচারী গ্রানমা।

৩৩| ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৪৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আপনার আন্তরিকতা অবশ্যই প্রশংসনীয়।

শুভকামনা রইলো ভাইয়া

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:০৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আপু।

৩৪| ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫২

টয়ম্যান বলেছেন: অভিনন্দন সোনাবীজ ভাই +++++্

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:০৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ টয়ম্যান।

৩৫| ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৫

সাম্পানওয়ালা বলেছেন: ফেসবুকে পোষ্টে মেনশন আপনি বেশ কয়েকদিন কবিতা চেয়েছিলেন। আমি লজ্জা পেয়েছিলাম। কবিতো দুরের কথা ভালো একজন কবিতা পাঠকইতো এখনও হইনি।

তবে কবিতার প্রতি আপনার ভালবাসা মুগ্ধ করার মত। আপনার উদ্যোগ সফল হোক। শুভকামনা রইল।

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ;)

ধন্যবাদ সাম্পানওয়ালা। ফেইসবুকের নিক যে কোনটা তা কিন্তু ভুলে গেছি ;)

৩৬| ১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:৫২

আহসান জামান বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ কবি। চমৎকার উদ্দ্যোগ, অসাধারণ কাজ। একাজের নেপথ্যে যারা অংশ করেছেন, সবাইকে অভিনন্দন। ভালো থাকবেন সারাক্ষণ।

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কবি। ভালো থাকবেন।

৩৭| ১৩ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৭

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: অসাধারণ !
আমি মুগ্ধ । এই পর্ব ত অসাম । খাটি কবিরা সব এইখানে ।

যে কাজ করলেন তার কোন তুলনা হয় না । এটা ইতিহাস হয়ে থাকবে ।

সোজা প্রিয়তে ।

ছাই ভাইয়ের জন্য অনেক অনেক শুভকাময়ান রইল । এবং কাভা ভাইকেও ।

১৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৩৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কাজটা করে সত্যিকারের তৃপ্তি পেয়েছি। ব্লগারদের উৎসাহ ও সহযোগিতার জন্যই মূলত এটা করতে আমি বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছি।

অনেক ধন্যবাদ প্রিয় মাহমুদ ভাই। ভালো থাকবেন।

৩৮| ১৪ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৩০

আহমেদ জী এস বলেছেন: সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই ,




সংগ্রহে রাখলুম আগের গুলোর মতোই।

১৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৪৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ আহমেদ জী এস ভাই।

৩৯| ১৫ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪৯

এহসান সাবির বলেছেন: এই পোস্ট নিয়ে ব্লগে বেশি কথা আমি বলিনি, তবে সহ ব্লগাদের সাথে চা'য়ের আড্ডায় ঝড় তুলেছিলাম।

এপিক পোস্ট।


শুভ কামনা।



পোস্ট লোড হতে ঝামেলা হয়।

১৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৪৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: শুনে খুব ভালো লাগলো যে, চায়ের আড্ডায় এ পোস্ট নিয়ে ঝড় তুলেছিলেন। খুব আনন্দের কথা নিঃসন্দেহে। সেজন্য ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করতে চাই না, কিন্তু ধন্যবাদ না দিলে আবার মন ছটফট করে। অশেষ ধন্যবাদ এহসান ভাই।

মনে হয় স্পিড কম থাকলে লোডিঙের সমস্যা হয়।

ভালো থাকবেন।

৪০| ১৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫৫

আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
কি কমেন্ট করবো বুঝতে পারছি না। পোষ্টের সব কবিতা গত কয়েকদিন ধরে পড়েছি। এবং আবিষ্কার করেছি আমার কবিতায় একটা বানান ভুল আছে। :P

এই রকম একটা কষ্টসাধ্য কাজের জন্য সাধুবাদ। মোটামোটি সবাই আপনার কাজের জন্য সাধুবাদ দিচ্ছেন কিন্তু কেউ কি খেয়াল করেণনি সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই অথবা আমাদের প্রিয় কবি খলিল ভাইয়ের কবিতা এখানে নাই!!!

সোনাভাই, আপনার কবিতা এখানে অন্তর্ভুক না করার কারণ কি??

১৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:২৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এমন আন্তরিক কমেন্টে সত্যিই মন ভরে যায়, আরও কিছু করার জন্য প্রাণ উতলা হয়। অনেক ধন্যবাদ প্রিয় আলাউদ্দিন ভাই।

আরও দু-চার জন অবশ্য আমার প্রিয় কবিতার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিলেন ;) জবাবও দিয়েছিলাম। পোস্ট অতিশয় দীর্ঘ হওয়াতে নিজের কবিতা যোগ করা থেকে বিরত থেকেছি বলতে পারেন।

তবে সময় থাকলে এ স্টেটাসটা পড়ে দেখবেন ;)

ভালো থাকবেন আলাউদ্দিন ভাই।

৪১| ১৭ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৬

শাবা বলেছেন: এত বড় আয়োজন, আমি ঘুর্ণাক্ষরেও জানতে পারলাম না। আমার কবিতাও দেয়া হলো না।
যাক, বেশ কষ্টসাধ্য এ আয়োজন। এ জন্য খলিল ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

১৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:২৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনাকে মিস করে খারাপই লাগছে। তবে ভবিষ্যতে কাছে পাবো এ প্রত্যাশা থাকলো।

ধন্যবাদ শামিউল ভাই।

৪২| ১৮ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪৫

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: এত চমৎকার একটা উদ্যোগ নেবার এবং তা সফল করবার জন্য অনেক অনেক সাধুবাদ রইল ভাইয়া। একদিক থেকে পড়া শুরু করছি।


পোস্ট প্রিয়তে।


ভাল থাকুন। অনেক অনেক শুভকামনা রইল :)

২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:৩৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার। ভালো থাকবেন।

৪৩| ২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ১১:৪৬

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: আফসোস ! আমি কবি নই!
বাতাসের কচি পাতার সাথে মৃদু স্বরের কানাকানি
আমি অক্ষরবৃত্তে বন্দি করতে পারি না

আফসোস! কিংবা পারি না বিশাল ছায়াবিথীর শেকড় চুম্বন করে
দুরন্ত গ্রাম্যশিশুর প্রবল জলরাশির সাথে একাত্নতাকে ছন্দ মিলিয়ে নিতে
গরুর গাড়ি কি ধানের শীশের ভাষা,
কিংবা নাগরিক কোলাহল,
ইটের , যান্ত্রিক পাঁজরের , আকাশের বুকে চুম্বনের স্পর্ধাকারী জড় কাঠামোর
বা স্রেরেফ দু'পেয়ের ধুকপুকে টুকটুকে হৃদপিন্ডের,
সঙ্গত ধমনী শিরার গতিবিধি
ততোধিক অসঙ্গত মনোগতির
-আনন্দের- বেদনার- হাসির- কান্নার -
অসীম হালহলিকত সাদা পাতা জোড়া আদিগন্ত অসম্ভবের সীমানায়
আনতে অক্ষম-

কলঙ্ককালো সুচিসূক্ষ ছোঁয়ায়
অন্ধকারও আলোয় কেমন বদলে যায়!

তবুও কবিদের - যারা পারে
শ্বাশত শব্দের কারিগরদের
চন্দ্রবিধৌত তাজমহলের চেয়েও অবিশ্বাস
সৌকর্যে যারা গ্রন্থকে স্রেফ
সাদাকালোর মুক্তোয় অপরূপা মোহনীয়া করে তোলে
তাদের প্রতি অকুন্ঠ প্রশংসা
আমার নিতান্ত সাদামাটা
অক্ষমের কলম থাকে
নিতান্ত ততোধিক শৌখিন এক
আ- আ - ক- খর হাতেখড়ির
আঁকাবাঁকা কিছু অস্ফুট বাক্যাবলী
বুঝে নিলে স্নেহাতুর জননীর মতো-
অর্থবহ হয়ে উঠবে ..হয়তো, হ-য়-ত


আপনার চমৎকার কষ্টসাধ্য উদ্যোগে নিতান্ত অকবি হয়েও অনেক অনেক শুভকামনা থাকলো। দারুন কাজ হয়েছে+

২৮ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৪৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:

শৌখিন এক
আ- আ - ক- খ'র হাতেখড়ির
আঁকাবাঁকা কিছু অস্ফুট বাক্যাবলী
বুঝে নিলে স্নেহাতুর জননীর মতো-
অর্থবহ হয়ে উঠবে ..হয়তো, হ-য়-ত


বাহ, চমৎকার! নিজেকে অ-কবি বলছেন, অথচ এক অনবদ্য কবিতা রেখে গেলেন আমার পোস্টে! আমি খুব মুগ্ধ হলাম।

আশা করি শীঘ্রই আপনার কাছ থেকে আমরা কবিতাও পেতে থাকবো।

শুভ কামনা আপনার জন্য।

৪৪| ০৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:০৯

সুপান্থ সুরাহী বলেছেন: এই পর্বটা সবচেয়ে সমৃদ্ধ।

০৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৩৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ সাইফ সিরাজ ভাই।

৪৫| ০৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:০৭

কুহক' বলেছেন: করপুটে অশ্বখুরে দলিত কিছু গোলাপের নেহাল ছিলো। -ছিলো বলাটা এখানে বোধকরি আর যৌক্তিক নয়। আছে ও থাকবে। অনেক অনেক শুভ কামনা। ভূমিকা বা ভান যা লিখেছেন তা খুবই অন্যরকম ইচ্ছে হয় বলি এটাকে আরেকটু পরিমার্জন করে কি দেবেন, আমি তা কবিতার প্রাক কথন হিসাবে ছেপে দিতে চাই। :)

০৯ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৫২

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সুদৃশ্য ফুলটির জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। মন্তব্য পড়ে মন ভরে গেলো।

আগের দু পর্বের ‘ভূমিকা’ অনেক পরিমার্জিত আকারে এখানে তুলে দেয়া হয়েছে। তার পরও কোন কোন অংশে আরও পরিমার্জন প্রয়োজন তা ফেইসবুক ইনবক্সে জানালে বাধিত হবো।

অনেক ধন্যবাদ কবি।

৪৬| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:২৯

একজন আবীর বলেছেন: পড়বো ধীরে ধীরে।আপাতত রাখলাম সংগ্রহে।

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ একজন আবীর। শুভেচ্ছা।

৪৭| ১৬ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৫৮

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: অনেক বড়ো কাজ করেছেন খলিল ভাই। ভালো লাগা আর শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলাম।

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ কামাল ভাই এভাবে মূল্যায়নের জন্য। ভালো থাকুন।

৪৮| ২২ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:০৭

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: পোস্টটা দেখেছিলাম তখনই, সংগ্রহেও রেখে দিয়েছিলাম, কিন্তু ঝামেলা আর ব্যস্ততায় মন্তব্য দেয়া হয়নি ....

অত্যন্ত চমৎকার এবং সাধুবাদ যোগ্য একটা প্রশংসনীয় সুচারু প্রচেষ্টা ....

এই কাজ ব্লগার এবং নতুন কবি ব্লগারদের ও অনেক অনুপ্রেরণা যোগাবে নিঃসন্দেহে ....

পোস্ট মাসসেরা সংকলনে যাচ্ছে অবশ্যই ....

আবারো ধন্যবাদ প্রিয় সোনাবীজ ভাই ....

সেই সঙ্গে শুভকামনা সবরকম ....

০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মুনতাসির নাসিফ ভাই। দেরিতে জবাব দেয়ার জন্য দুঃখিত।

ভালো থাকবেন।

৪৯| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:২১

বকুল০৮ বলেছেন:
অসাধারণ উদ্যোগের জন্য অনেক ধন্যবাদ। সেরা সব কবির সেরা কবিতাগুলি একসাথে পড়ার আনন্দই আলাদা। ভালো থাকুন। :)

০৭ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:২৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ বলুক০৮।

৫০| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:১৫

জাহিদ অনিক বলেছেন: এই পোষ্ট প্রিয়তে না রাখলে পাপ হয়ে যেত !

০৭ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:২৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ জাহিদ অনিক।

৫১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:১০

মলাসইলমুইনা বলেছেন: ওল্ড ইজ গোল্ড -আবার মনে হলো | আমি কিছুদিনের জন্য (চির দিনের জন্যও হতে পারে) কবিতা লেখা/চর্চা স্থগিত রাখলাম এই কবিতাগুলো পড়ে | খুবই ভালো লাগলো এই সংকলনের কবিতাগুলো | অন্যগুলো ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিত ভাবেই পড়বো | অনেক ধন্যবাদ কষ্টসাধ্য কাজের জন্য |

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ নাইমুল ভাই। অনেকদিন পর রেসপন্স করার জন্য দুঃখিত।

৫২| ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৮

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ডাউনলোড করেছি। পড়বো। ধন্যবাদ পুনরায় শেয়ার করার জন্য।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ জুনায়েদ ভাই।

৫৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
মনোমুগ্থকর সব কবিতা
প্রিয়তে তুলে রাখলাম ।
বার বার আসতে হবে ।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় আলী ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.