নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দকবিতা : শব্দেই দৃশ্য, শব্দেই অনুভূতি [email protected]

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

অ’স’ফ’ল’ আর এ’কে নিয়ে একটা সরল গল্প : নিষ্ঠুর ছেলেমানুষি

১০ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:২৬


এটা তোর জীবনের এমন এক ট্র্যাজেডি, যা কেবল আমার আত্মতুষ্টির জন্য ঘটেছিল। এটি একপক্ষে এক মর্মন্তুদ নিষ্ঠুরতার কাহিনি, অপরপক্ষে নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের কিসসা, যা কেউ কোনওদিন শোনে নি, এমনকি স্বপ্নেও ভাবে নি।
এটা কোনও মেয়ে কোনোদিনই করে নি তার প্রেমিকের জন্য, তুই ছাড়া। অথচ এ গল্প আমাকে কাঁদায় না। তোর এ বলিদান আমার অহমকে আরো ক্ষুরধার ও বিধ্বংসী করে তোলে। তোর অন্তর্নিহিত বেদনা পাঠকের মর্ম স্পর্শ করে না। পাঠকের কাছে এটি দূরবর্তী এক নির্জনতম বটবৃক্ষের মতো নিয়ত দুর্বোধ্যতর হয়ে উঠতে থাকে। এতে লুকায়িত আছে এমন এক রহস্য, সাধারণের কাছে যে-স্বাদ সহজলভ্য নয়। তবে যে-রাতে কোনও নিবিষ্ট পাঠকের কাছে এ গল্পের মর্ম উন্মোচিত হবে, তিনি তোর জন্য কাঁদবেন, আর আমার জন্য অবিরাম বর্ষিত হতে থাকবে অভিশাপ।

২৯ মার্চে তুই পারলারে গিয়েছিলি।
আর কোনওদিনই চুল ছাঁটবি না, আমার ইমোশন দেখে এ কথা বলেছিলি- জুনের এক ঝিমধরা বিকেলে ক্যান্টিনের নিরিবিলি কোনাটাতে মুখোমুখি বসেছিলাম, আমাদের চায়ের কাপ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। আমার চোখে পানি ছিল। পরের বছর সেই জুনেই অ’কে নিয়ে তোর সাথে দেখা করতে গেলে আমার সন্দিহান চোখ কুঞ্চিত হয়- দেখি, তোর চুল ছাঁটা, আর ভ্রু প্লাক করেছিস। আমি আশ্চর্য হই। সেদিনও আমার চোখে পানি আসে; তুই কথা রাখলি না!
প্রথমে অস্বীকার করলি, পরে চাপের মুখে বললি, অ’র চেয়ে সুন্দরী আর স্মার্ট দেখাবে তোকে, সেজন্য এটা করেছিস। হায়, যদি আমাকে বলে করতিস! আমি কি ধরে নিতে পারি না, অন্য কোনও উদ্দেশ্যে এটা করেছিলি!
তুই চুল ছাঁটবি, এ কথার প্রতিবাদ না করে বরং আমি সর্বমোট চারবার কেঁদেছিলাম তোর সামনে। তুইও তোর মৃত্যুর কসম খেয়ে বলেছিলি, জীবনে আর কোনওদিনই চুল ছাঁটবি না। সেই তুই আমার অবর্তমানে- যখন ২৮ দিন ধরে অভিমানে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছিলাম- সেই সময়ে পারলারে গিয়ে চুল ছেঁটে এলি। আমার বিশ্বাস ছিল, এ কাজটা তুই করতে পারিস না। তুই বলেছিলি- ‘আমার মৃত্যুর পর এসে দেখে যাস্ পাখি, আমি আর কোনওদিন চুল কেটেছিলাম কিনা।’ আমার আবেগ তুঙ্গে ছিল- সেই তুই এ কাজটা করলি! চোখের পানির কোনও দামই দিলি না! তুই বললি, ‘মোবাইল বন্ধ রেখেছিলি বলে রাগ করে চুল ছেঁটেছি, স’ সাক্ষী।’ রাগ করে চুল ছেঁটে সুন্দরী না সেজে পুরো মাথাটাই ন্যাড়া করে ফেলতিস- ক্ষোভের সঙ্গে আমি এ কথাটা বলেছিলাম।

গতকাল দুপুরে তুই ফোন দিলি। ঢেউহীন সমুদ্রের মতো শান্ত ছিল তোর কণ্ঠ। বললি, ‘আজ আমি একটা কাজ করবো।’

আজকের কথা। মোবাইল ঘরে রেখে আমি তখন বাইরে। এসে দেখি তোর আর স’র শ খানেক মিস্‌ডকল, গুটি কতক মেসেজ। স’র কল ধরতেই ক্ষিপ্ত ও বিস্মিত স্বরে বলে, ‘এটা তুই কী করলি? ও যে মাথা ন্যাড়া করে ফেললো! কাজটা কি ঠিক করেছিস?’
আমি মহান ভালোবাসার অনেক গল্প শুনেছি, আজ নিজের জীবনেই ঘটতে দেখছি- এমন ভালোও বাসতে পারে কেউ!
স’র হাত থেকে মোবাইল তুলে নিয়ে তুই বললি, হাসতে হাসতে- ‘কী রে, তোর ভালো লাগছে না? আমার কিন্তু খুব ভালো লাগছে!’
আমার মুখে কথা সরে না।
আমি অবশ্য তখনো পুরোটা বিশ্বাস করি নি। তবে কাজটি যে তোর দ্বারা ঘটানো সম্ভব তা আমার মন জানতো।

বুড়ি, তোকে আমি খুব খুব খুব ভালোবাসি...


একটা কনফারেন্সে যাবো বলে খুব তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছিলাম, তুই পাগলের মতো আমাকে কল করছিস। তোর ওপর রেগে ছিলাম। কারণ, গতরাত থেকে তুই বড্ড অপরাধ করছিস। নিয়ম ভাঙার চেয়ে বড় কোনো অপরাধ নেই আমার আদালতে। তোর উচিত ছিল আমাকে জানানো, অতঃপর অনুমতি নেবার প্রয়োজন ছিল। এ ব্যাপারে আমি আপসহীন তা তুই জানিস।

সকাল ৯টায় কল দিলি। আমি বললাম, ‘দুই মোবাইলে দুই সিম ইউস করছিস যে! তোর সাহস দেখে অবাক হই!’
তুই বললি, ‘গতরাতে ভাঙা সেটটা সারিয়ে এনেছি। তুই-ই তো বলেছিলি দুটো সিম ইউস করতে মানা নেই!’
‘ইউস করবার আগে আমি কেন জানলাম না? জানিস না, আমার অনুমতি ছাড়া এটা তুই পারিস না?’
‘তাহলে কোনটা বন্ধ রাখবো?’
‘এক কাজ কর, পুরোনো ভাঙা সেটটা, বাকি সিমগুলো, তোর ন্যাড়া মাথার চুল আর ছবিগুলো আজ বিকেলে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দে। পারবি না?’
তোর ইগোতে খুব লেগেছিল। হুট করে রেগে গিয়ে বলে উঠলি, ‘আমার সার্টিফিকেটগুলো আজই ফেরত দে।’
আমার জন্য তোর সমগ্র অর্জনকে বিসর্জন দিতে তোর কোনো দ্বিধা হয় নি কোনোদিন। যেদিন প্রচণ্ড জেদ করে বলেছিলাম, হাইকোর্টের দিকে তুই আর এক কদম পা বাড়াবি না, তোর আর কোনো বন্ধু থাকতে পারে না আমি ছাড়া, দু দিনের মাথায় ১০০ গ্রাম ওজনের যে কুরিয়ারটি টেবিলের উপরে দেখতে পেলাম সকালবেলা অফিসে ঢুকেই, তার ভিতরে ছিল তোর ভার্সিটির মূল সার্টিফিকেটের কপি, হাইকোর্টের আইডি, বাড়তি কয়েকটা মোবাইল সিম। কোনো দীর্ঘ চিঠি ছিল না বরাবরের মতো, ক্ষুদ্র চিরকুটে লিখেছিলি - এগুলো পুড়িয়ে ফেল বাবুসোনা, আমি শুধু তোকেই চাই।

নরম স্বরে বলি, ‘আমি এখন কক্সবাজার। বৃহস্পতিবারে ঢাকা গিয়ে শুক্রবারে পাঠাবো।’
‘সঙ্গে ফ’র দেয়া শাড়িটাও ফেরত পাঠিয়ে দিবি।’
আমি ঠান্ডা স্বরে স্বাভাবিক জবাব দিই, ‘ঠিক আছে। আর যা যা বললাম, সবই কিন্তু পাঠিয়ে দিবি আজকের মধ্যেই।’
‘তার কি আর দরকার আছে?’
‘কেন, ওগুলো দিয়ে তুই কী করবি?’
‘সার্টিফিকেটগুলো আজই পাঠিয়ে দে। খুব দরকার।’
‘শুক্রবারের আগে সম্ভব না। এখন রাখি। আমি জরুরি কাজে যাচ্ছি।’

লাইন কেটে দিই। এরপর তুই যথাস্বভাবে অনেকগুলো কল দিলি, পাগলের মতো। আমি চিরদিনের জন্য মোবাইল বন্ধ করে দিলাম।

বৃহস্পতিবার ঢাকা এলাম। ট্রাঙ্ক খুলে দেখি ফ’র দেয়া শাড়িটা নেই। এ’ নিয়ে গেছে। ওর সাথে রাগারাগি করলাম। বাসায় তোর দেয়া সর্বশেষ চিহ্ন একটা সাদা ফতুয়া ছিল। বের করলাম। তোর ভার্সিটির সার্টিফিকেট, হাইকোর্টের আইডি, তোর দুটো বাংলালিংক আর একটা গ্রামীণ ফোনের সিম- একদিন আমাকে পাঠিয়েছিলি- এসব পুড়িয়ে আকাশে ছাই উড়িয়ে দেব।
তোর আমানত, তোর দেয়া মায়াময় গিফ্‌টগুলো শনিবারে কুরিয়ারে ফিরিয়ে দিলাম।


২৬ এপ্রিলে তোর কুরিয়ার পাই। খুলতে গিয়ে এক্সাইটেড হয়ে গেলাম। তোর ছবি। পুরোটা মাথা, চোখের অর্ধেক, একপাশ থেকে তোলা; মুখের অংশ নেই। ছবি দেখে প্রথম ধাক্কায়ই মনে হলো, আমি তোর উপর খুব অত্যাচার করে ফেলেছি। আমি খুব নিষ্ঠুর, চোখের পানিতে মানলাম। সাথে সাথেই মোবাইল খুলে কল দিতে চেয়েছিলাম। যখন মনে হলো সার্টিফিকেটগুলো পেলে আমাকে আর খুঁজবি না, উৎসাহ হারিয়ে ফেললাম। তোর চুলগুলো প্যাকেটে ভরা, আমি ওগুলোর উপর হাত বুলিয়ে খুব আদর করলাম। তোর জন্য অনেক কাঁদলাম, অযথাই কষ্ট দিয়েছি তোকে- এ কারণে। তুই কি কোনওদিন আমার এই কান্নার কথা জানবি, আমার অন্তরের নিধি, পাগলি বুড়ি? কুরিয়ারে তোর চিঠি, প্রুডেক্স প্যাডের উপর লিখেছিস :

অনেক অপমান, অবহেলা, কঠিন সব শর্ত মেনে নিয়ে তোর সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু কী পেয়েছি?অনেক বেশি অপমান।
তুই বলেছিস, তোর কাছে বার বার ফিরে যাই বেহায়ার মতো... চলে যাচ্ছি, এ ন্যাড়া মাথা নিয়ে আর আসবো না। আমার খুব কষ্ট হবে রে! বুক ভেঙে যাবে। যতবার আয়নায় নিজেকে দেখবো, মনে হবে তোর দেয়া শাস্তি মনের শান্তি হিসাবে মেনে নিয়েছিলাম। প্রতিটা শাস্তি পার করতাম আর ভাবতাম- এটাই হয়তো শেষ। শুধু শাস্তিই দিয়েছিস, শাস্তির কখনো শেষ হয় নি। সার্টিফিকেটগুলোর দরকার, কারণ একটা চাকরি আমার না হলেই নয়। নয়তো আমার আমিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারছি না।
ভালো থাকিস।


আরেকটা টকুরোয় :

আমি ভুল করেছি, তোর মতো মিথ্যাবাদীর কথা বিশ্বাস করে। তোর জন্য সব হারিয়েছি। তবু তোকে পথে আনতে পারি নি। তুই একটার পর একটা শর্ত দিয়েছিস, আমি মেনে নিয়েছি। আর আমাকে বোকা বানাতে পারবি না। আমি তোকে চিনে ফেলেছি।

বিঃ দ্রঃ তুই আমার সাথে প্রতারণা করেছিস।




ফুটনোট :

গল্পটা বুঝতে অসুবিধা হলে দয়া করে সিকোয়েল ১ আর ৩ আগে পড়ে নিতে পারেন।

অ’ স’ ফ’ ল’ আর এ’ হলো ৫টি নামের আদ্যাক্ষর। ইচ্ছেমতো নামগুলো পুরো করে নিন। লিঙ্গ নির্ণয়ের ভারও আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলাম।

গল্পে একটা ক্যারেক্টারের আদ্যাক্ষর উল্লেখ করা হয় নি। উৎসুক পাঠক সেটি নিজের গরজেই খুঁজে বের করবেন আশা করি।

৪ আগস্ট ২০১০ বিকাল ৫:৫১

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৩৯

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: দারুণ লিখেছেন তো ভাই! ভালোবাসলে এভাবেই বাসতে হয়, যাতে জীবনে আর কিছুরই প্রয়োজন থাকেনা।

ভালো লাগলো ভাই।

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:১১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
সে এক ক্ষণজন্মা পাখি, প্রতিটা গোপন সাঁঝে অরূপ পাথারে নেমে এসে
অলৌকিক সুর তোলে গানে। তারপর রাত্রি শেষে
ফিরে যায়, পেছনে রেখে যায় একগুচ্ছ পদছাপ, ও কয়েকটা পালক

মাটিতে করুণ দাগ কেটে একধ্যানে চেয়ে থাকে বিবাগী বালক


জীবনে ভালোবাসা পাওয়া যায় না। 'ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি। সারা বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা লালপদ্ম। তবু কথা রাখে নি বরুণা'।

ধন্যবাদ জাহাঙ্গীর ভাই। অনেকদিন পর ব্লগে এলেন মনে হয়। শুভেচ্ছা রইল।

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:


কি লিখেছেন আপনি জানেন; আমার কাছে ইমোশানেল কথার লিপি মনে হয়েছে

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:১২

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: তা তো বটেই, কী লিখেছি আমি জানি :) তবে আপনার কাছে যা মনে হয়েছে তা ভুল নয়।

ধন্যবাদ চাঁদগাজী ভাই।

৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০১

স্রাঞ্জি সে বলেছেন:
গল্পে এত মারপ্যাঁচ কেন রাখলেন গো।

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:১৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: একটু প্যাঁচ মেরেই দিলাম, অনেকেরই তো হবি থাকে প্যাঁচ খোলার :) দেখি তেমন কেউ আসেন কিনা :)

আপনার নামের অর্থ/রহস্যটা জানতে পারি কি?

৪| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: আমি সহ সরল জীবন যাপন করি। প্যাচ গ্যাচ ভালো লাগে না।

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৫৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
আমারও প্যাঁচগোছ ভালো লাগে না।

জীবনে প্রথম গোল কবে করেছিলেন?

৫| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:২০

জোহা প্রকাশন বলেছেন: আপনার লেখা গল্প থেকে নাটক সিনেমা বানালে ভাল হত। আপনি বেশ মজার লেখক।

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:০০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: জেনে ভালো লাগলো যে আমি বেশ মজার লেখক। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.