নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দকবিতা : শব্দেই দৃশ্য, শব্দেই অনুভূতি [email protected]

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন অধ্যায়

১৪ ই মে, ২০২১ রাত ১২:০০

রুমা ইদের শপিং করছে। ব্যস্ত শপিং মল। সময় নিয়ে একেকটা শপিং মলে যায়। মায়ের জন্য, তিন বোনের জন্য, ভাগ্নে-ভাগ্নি, ভাতিজা-ভাতিজি সবার জন্য কেনাকাটা না করে তার শান্তি নেই। ইদের মরশুমে সবাইকে গিফট করা তার পবিত্র কর্তব্য। ভাইবোনেরা তাকে সবার উপরে স্থান দিয়ে থাকে। কেনাকাটা শেষে বাসায় ফেরার পথে উৎস বলে, ‘মা-বাবার জন্য কিছু কেনার দরকার না?’ রুমা লজ্জিত হয়। মৃদু ভর্ৎসনা করে বলে, বড্ড ভুলোমনা তুমি। একটু মনে করিয়ে দিবে না?
আবার মার্কেটে ফিরে যায়। সারাদিনের ধকলে শরীর খুব ক্লান্ত। বেশি দূরে নয়, ঢাকা কলেজের উলটো দিকের মার্কেটে ঢোকে তারা। রুমার জন্য আরো কিছু লজ্জার বিষয় ছিল। টাকা প্রায় শেষের দিকে। এ টাকায় ভালো কিছু পাওয়া সম্ভব নয়। কী করা যায়, রুমা মনে মনে ভাবতে থাকে। বুড়ো মানুষ। তারা তো আর নতুন জামা পরে বাচ্চাদের মতো নাচানাচি করবে না। শরীর ঢাকতে পারলেই যথেষ্ট। তা ছাড়া, তাদের জামা তো আছেই। গত বছর শ্বশুরকে কিনে দেয়া পাঞ্জাবিটা এখনো ঝকঝকে নতুনের মতো। শুধু শাশুড়ির জন্য একটা কাপড় না কিনলেই নয়। তাকে আনেকদিন কোনো পরনের কাপড় দেয়া হয় নি।


বসুন্ধরা শপিং মল। ইদের শপিং করতে এসেছে সালেহা। একের পর এক দোকান ঘুরে জামাকাপড়, কসমেটিকস, ইত্যাদি কিনলো। তারপর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে আসরের একটু পরে সে বাসায় ফিরলো। ইফতারি বানালো, যথাসময়ে ইফতার করলো তারপর শাশুড়িকে নিয়ে কেনাকাটা দেখতে বসলো।
দেবর, ননদ, সবার পোশাক দেখানোর পর সবচেয়ে অভিজাত ও দামি শাড়িটা শাশুড়ির হাতে দিয়ে বললো, ‘মা, এটা হলো আপনার। পছন্দ হয়েছে কিনা বলুন। পছন্দ না হলে পালটে আনা যাবে।’
মিসেস রুমা বেগম কাপড়টি হাতে নিয়ে বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে একটু অস্বস্তি বোধ করে।
‘তোমার মায়ের জন্য কিনো নাই?’ অস্ফুট স্বরে রুমা বেগম বলে। সালেহা শুনতে পায় না। সে বলে, ‘কী মা, তাকিয়ে আছেন কেন? পছন্দ হয় নি?’
রুমা বেগমের গলা ধরে আসে। সে যখন কথাগুলো বলতে থাকে, তার কণ্ঠ কাঁপতে থাকে। ‘তোমার মা আর বাবার কাপড় কই?’ সালেহা ফিক করে হেসে দেয়। বলে, ‘কী যে বলেন না মা, আমার মা আর বাবা তো আপনিই। নাকি আমাকে পরের মেয়ে মনে করেন?’
রুমা বেগম মাথা নীচু করে থাকে। সালেহা বলতে থাকে, ‘আমার ভাইয়েরা আছে না? আমার চার ভাই যে কাপড়-চোপড় কিনবে, তার উপর আমার মা আর বাবা জাজিম বানিয়ে শুতে পারবে।’
রুমা বেগমের চোখ ভিজে ওঠে। সে বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে কিছু একটা বলবে সেই শক্তি খুঁজে পায় না।


গল্পের দ্বিতীয় অংশটুকু নিছক কল্পনা, যাকে উইশফুল থিঙ্কিং বলা যেতে পারে। আদতে নতুন অধ্যায়ে নিয়মানুযায়ী যা হবার কথা ছিল, হয়েছিল ঠিক তাই।
ছেলেকে বিয়ে করানোর পর রুমা বেগমের জীবনটা পালটে যেতে থাকলো। কোনোকিছুই তার নিজের ইচ্ছেতে বা নিজের ইচ্ছেমতো হয় না। নিজের ছেলে মায়ের নাম ভুলে যেতে বসেছে। স্ত্রৈণ বলতে যা বোঝায়, ছেলেটা পুরোপুরি তা হয়ে গেছে।
ইদের কাপড়চোপড় কিনে আনার পর নিজের ভাইবোনদের জন্য ভাগ-বাটোয়ারা শেষে শাশুড়ির হাতে একটা অতি সাধারণ মানের পরনের কাপড় ধরিয়ে দিয়ে বললো, ‘মা, কাপড়টা কিন্তু খুব দামি। ইদের দিন পরবেন।’
রুমা বেগমের যদি সেই তেজ আর শক্তি থাকতো, তাহলে এই কাপড়খানা সালেহার মুখ বরাবর ছুঁড়ে মেরে বলতো, ‘আমি কি তোর কাজের বুয়া যে, আমাকে তোর খয়রাতি কাপড় পরতে হবে?’

জীবনচক্র এমনই। এ চক্র ছিন্ন করে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করবে এমন সদাশয়া কে আছেন?

২৯ জুলাই ২০১৪

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৫৩

মা.হাসান বলেছেন: কোনো কোনো শাশুড়ি যৌবনে বউদের উপর যা করেছেন তার কর্মফল ভোগ করছেন।
কোনো কোনো ছেলের বউ এখন যা করছেন তার কর্মফল পরে ভোগ করবেন।

দুর্ভাগা তারা যারা বউ হয়েও কষ্ট পেয়েছেন, শাশুড়ি হয়েও পাচ্ছেন।

সব মায়েরা ছেলে মেয়ে মানুষ করার সময় কিছু নৈতিকতা শিক্ষা দিলে পরিস্থিতি হয়তো কিছুটা ভালো হতো।

২য় অংশের অনেকখানিই অবাস্তব। মহিলারা শপিং করে এসে ইফতার বানায় এমনটা কি বাস্তবে ঘটে? রাত এগারো-সাড়ে এগারোটার আগে শপিং শেষ হবার কথা না।

তবে শাশুড়িকে মায়ের মতো মর্যাদা দেয় এমন পুরুষ-নারীর সংখ্যা কম হলেও আছে।

১৪ ই মে, ২০২১ রাত ১:০৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রথম দু বাক্যে গল্পের সারাংশ বলে দিয়েছেন।

দুর্ভাগা তারা যারা বউ হয়েও কষ্ট পেয়েছেন, শাশুড়ি হয়েও পাচ্ছেন। দারুণ একটা কথা। এটা ঘটে তাদের জন্য, যারা বউ হিসাবে যেমন নির্দয় থাকেন, আবার শাশুড়ি হয়েও সেই ডাঁট বজায় রাখতে সক্ষম। অসম স্টেটাসের স্বামী-স্ত্রীদের ক্ষেত্রে এমনটা সম্ভব।


সব মায়েরা ছেলে মেয়ে মানুষ করার সময় কিছু নৈতিকতা শিক্ষা দিলে পরিস্থিতি হয়তো কিছুটা ভালো হতো। আমার সাধারণ অবজারভেশন হলো- মা-বাবারা নৈতিক শিক্ষা দেয়ার যথেষ্ট চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু সন্তান নানা কারণে, যেমন অসৎ সংসর্গ, পারিপার্শ্বিকতার কারণে সেই শিক্ষাটা কার্যকর ভাবে গ্রহণ করতে পারে না।

২য় অংশের অনেকখানিই অবাস্তব। মহিলারা শপিং করে এসে ইফতার বানায় এমনটা কি বাস্তবে ঘটে? রাত এগারো-সাড়ে এগারোটার আগে শপিং শেষ হবার কথা না। :) :) প্রথমে বলতে চাইছিলাম, 'আমারে আর কান্দাইয়েন না, হাসাইয়েনও না।' পরে মনে হইল, আপনার কথাটা সিরিয়াসও তো হইতে পারে :) হ্যাঁ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই অবাস্তব হতে পারে, তবে, খুব কাছ থেকে একজনকে দেখা, অর্থাৎ আমার গৃহবান্ধবীর ক্ষেত্রে এটা অবাস্তব না :)


তবে শাশুড়িকে মায়ের মতো মর্যাদা দেয় এমন পুরুষ-নারীর সংখ্যা কম হলেও আছে। একমত। আমিও এমন এক নারীকে চিনি।

সুন্দর বিশ্লেষণমূলক কমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ প্রিয় মা হাসান ভাই।

ইদ মোবারক।



২| ১৪ ই মে, ২০২১ রাত ১:৩৯

ঢুকিচেপা বলেছেন: বাবা-মায়ের হাসি ছাড়া ঈদের আনন্দ করতে চাওয়া সন্তান হলো প্রতিবন্ধী।
সময় হলে ঠিকই রিটার্ন পাবে।

অটঃ অন্য সব বানান মেনে নিলেও এই “ঈদ” আমার শৈশব, কৈশর, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ। এই বানানেই আমার সব ঈদ।

২৩ শে মে, ২০২১ বিকাল ৫:১২

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ঢুকিচেপা বলেছেন: বাবা-মায়ের হাসি ছাড়া ঈদের আনন্দ করতে চাওয়া সন্তান হলো প্রতিবন্ধী। সময় হলে ঠিকই রিটার্ন পাবে। ঠিক বলেছেন। একমত।

৩| ১৪ ই মে, ২০২১ রাত ২:০০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

সুন্দর গল্পটি সম্পর্কে পরে আমার মন্তব্য করে যাব ।
এখন রইল

২৩ শে মে, ২০২১ রাত ৯:৪৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনাকেও ইদের শুভেচ্ছা প্রিয় আলী ভাই। ইদ মোবারক। দেরিতে রিপ্লাই দেয়ার জন্য দুঃখিত।

৪| ১৪ ই মে, ২০২১ রাত ২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: জীবন বড় মর্মান্তিক।

২৩ শে মে, ২০২১ রাত ৯:৪৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ঠিক।

৫| ১৪ ই মে, ২০২১ সকাল ৯:৪৮

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: যার যার কর্মফল তাকে ভোগ করতেই হবে। সুন্দর গল্প। ইদের শুভেচ্ছা রইলো ভাই।

২৩ শে মে, ২০২১ রাত ৯:৪৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: যার যার কর্মফল তাকে ভোগ করতেই হবে।

ইদ মোবারক তমাল ভাই।

কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।

৬| ১৪ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৪৩

জটিল ভাই বলেছেন: 'তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম'

২৩ শে মে, ২০২১ রাত ৯:৪৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ইদ মোবারক জটিল ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.