নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দকবিতা : শব্দেই দৃশ্য, শব্দেই অনুভূতি [email protected]

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমর্ত্যের সুর

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৩৮

একদা এক গায়িকা ছিলেন। তিনি দেখতে সুন্দর ছিলেন না; অর্থাৎ, তার গায়ের রঙ ফরসা এবং চিত্তাকর্ষক ছিল না। কিন্তু তার গলায় ছিল অমর্ত্যের গান। সে-গানে সারা পৃথিবী দুলতো। ভোরের পাখিরা তার ঘরের বাগানে এসে ভিড় করতো, বাতাস থেমে যেত। নদীরা স্থির হয়ে থাকতো তার গান শোনার জন্য।

তার নামডাক চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে একদিন কিছু লোক এসে গায়িকাকে শহরে নিয়ে গেলেন। বিরাট হলঘরে মানুষ থইথই করছে। ঝলমলে আলোতে চোখ ঝলসে যায়। গায়িকাকে মঞ্চে উঠানো হলো। তিনি গান ধরলেন। কিন্তু মানুষের উল্লাস আর উচ্ছ্বাস ধীরে ধীরে স্তিমিত হতে থাকলো। মানুষের মন উতলা হলো না। আসর জমলো না।

শহুরে লোকগুলো তবু থামলেন না। আরেকদিন অনেক বড়ো এক খোলা ময়দানে তারা গানের আয়োজন করলেন। বহু ডাকসাঁইটে শিল্পীরা গান গাইলেন। গাইলেন না, বলা চলে তারা নাচলেন। শরীর দোলালেন। কোমর দোলালেন। গলা ফাটালেন। চিৎকার করলেন। লাফালাফি করলেন। বিচিত্র অঙ্গভঙ্গিতে দর্শকরা মুগ্ধ ও উন্মাতাল হলেন। আনন্দ উথলে উঠলো আকাশে বাতাসে। সবশেষে আমাদের গায়িকাকে মঞ্চে তোলা হলো। মেয়েটা খুব সাধাসিধে ছিলেন। তিনি জানতেন না কীভাবে শরীরের কসরৎ দেখিয়ে দর্শকহৃদয়ে দোলা দিতে হয়। তিনি শুধু জানতেন দু চোখ আধো-নিমীলিত করে নিগূঢ় কণ্ঠে সুর তুলতে। তিনি গান ধরলেন। স্থির দাঁড়িয়ে মাইক্রোফোন হাতে একমনে গান গাইতে থাকলেন। কিন্তু এবারও দর্শকরা সাড়া দিলেন না। তাদের মন ভরলো না মোটেও। কোনো উত্তেজনার ঢেউ নেই কোথাও। সবকিছু নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। তারা একসময় জেগে উঠলেন এবং ‘হিন্দি চাই হিন্দি চাই’ বলে তুমুল শোরগোল করলেন।

আয়োজকরা বিমর্ষ হলেন। তারা খানিকটা উষ্মা প্রকাশ করে বলেই ফেললেন, ‘আপনি দেখতে সত্যিই একটা ‘ক্ষ্যাত’। আপনি কি কিচ্ছু বোঝেন না?’ এটা গায়িকাকে খুব আহত করলো। তার রূপ নাই তিনি জানেন। তিনি চটপটে, সপ্রতিভ নন, তাও জানেন। তিনি আরো জানেন, তার মোহনীয় অঙ্গসৌষ্ঠব নেই, যা মানুষের নজর কাড়ে। কিন্তু তিনি জানেন তার একটা কণ্ঠ আছে, যা খুব মন্দ নয়; এ ব্যাপারে তিনি খুব আত্মবিশ্বাসী। তিনি নীরবে মাথা নীচু করে মঞ্চ থেকে নেমে গেলেন।

গায়িকা তার প্রিয় জন্মগ্রামে চলে এলেন। তিনি আর শহরের মঞ্চে যান না। কীজন্য তাকে আলোর শহরে নেয়া হয়েছিল, সে রহস্য তিনি জানেন না। তিনি করেন মাটির গান। তার মাটির শরীরের প্রতিটি পরতে মাটির সুর গেঁথে আছে। এ সুরে মাটির হৃদয় দোলে। এ সুরে মাটির মানুষ দোলে। যাদের জন্য তিনি মঞ্চে উঠেছিলেন, তারা কেউ মাটির মানুষ ছিলেন কি?
জন্মভিটায় বসে নীরবে গায়িকা কাঁদেন। নিরবধি কাঁদেন। তার গলা খুব উচ্চমার্গীয় নয়, এ নিয়ে তাকে গালমন্দ করলে তার খুব কষ্ট হবার ছিল না। কিন্তু তিনি দেখতে একটা ‘ক্ষ্যাত’, তিনি চৌকষ বা সুদর্শনা নন- এটা তাকে খুব আহত করলো। পৃথিবীতে সুরের কি সত্যিই কোনো মূল্য নেই? শরীরের ঝকমকিই কি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু? তিনি নিজে কোনোদিন রূপের কাঙাল ছিলেন না, ছিলেন সুরের কাঙাল। তিনি চান সুর। তিনি চান গান। তার কাছে গানই হলো সব সুন্দরের আধার।

গায়িকা কাঁদেন। নীরবে গুমরে কাঁদেন। সৃষ্টিকর্তা তাকে রূপ দেন নি – সেজন্য কাঁদেন না, তিনি কাঁদেন মানুষ কেন বোঝে না এই রূপ তার নিজের ইচ্ছেতে হয় নি। নিজের ইচ্ছেমতো রূপ সৃষ্টি করা গেলে এই পৃথিবীতে রূপের জন্য কোনো হাহাকার হতো না, রূপের কোনো মূল্যও থাকতো না।
আরো তিনি কাঁদেন এজন্য যে, মানুষের কাছে সুরের কোনো কদর নেই, শরীরের সম্ভারই মানুষের মূল্যবান সম্পদ, যা তাকে সবার কাছে দামি ও আকর্ষণীয় করে তোলে।
গায়িকা কাঁদেন; নিভৃতে তার হৃদয় পুড়ে যায়, কুরে কুরে ক্ষয় হয়।
কিন্তু আদতে তিনি কাঁদেন না। তার কণ্ঠে নিঃসৃত হয় করুণ সঘন সুর। সেই সুরে নদীর কান্না গর্জন করে ওঠে। পাখিরা কূজন ভুলে গিয়ে তার বাড়ির চারপাশে এসে গাছে গাছে ডালে ডালে ভিড় করে বসে। ফুলেরা সেই সুরে কান্নায় ভিজে যেতে থাকে। তারা তন্ময় হয়ে শোনে; গায়িকার অন্তরক্ষয়ী গানের মূর্ছনায় সারা পৃথিবী দুলতে থাকে। পৃথিবীটা যেন একটা স্বর্গোদ্যান। শুধু সুর আর সুর, যার গভীরে রূপের কোনো অস্তিত্ব নেই, নেই কোনো বাহ্যিক চাকচিক্য। সেখানে এই সুরটাই হলো সমগ্র সৌন্দর্যের মূল রহস্য।

অমর্ত্য থেকে মৃত্তিকার মর্ত্যে এ সুর ঝরে পড়ে, আর সুরপিয়াসী মানবহৃদয় এ সুরের সৌন্দর্যে মাতোয়ারা হয়। সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম।

২ মার্চ ২০২০

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:০৫

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আমি তো শিরোনাম দেখে ভাবলাম, ভারতের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের কথা বলছেন। ভাবলাম, ভদ্রলোক গানও গাইতে পারে!! বিরাট মাল্টি-স্কীলড পার্সোনালিটি!!!! পরে দেখি, না..........ঘটনা ভিন্ন। =p~

বর্তমানে একটা কথা প্রচলিত..........আগে দর্শনদারী, পরে গুনবিচারী!! এখন শিল্পীদের খালি গুন থাকলেই চলবে না, তাদের সেক্স অ্যাপিলও থাকা চাই; বিশেষ করে মেয়েদের। লতা মঙ্গেশকারদের দিন শেষের পথে। এটাই বাস্তবতা। লেখাটা চমৎকার লাগলো। কোথাও থেকে কপি করেন নাই তো!!! :P

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:

আমি তো শিরোনাম দেখে ভাবলাম, ভারতের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের কথা বলছেন। ভাবলাম, ভদ্রলোক গানও গাইতে পারে!! বিরাট মাল্টি-স্কীলড পার্সোনালিটি!!!!



:) :) :)

আমারে আর হাসাইয়েন না মফিজ সা'ব :)

তবে, অমর্ত্য সেন যেদিন নোবেল প্রাইজ পেলেন, সেদিন কোনো এক খবরে দেখছিলাম জনগণের অনুভূতি/প্রতিক্রিয়া। অমর্ত্য সেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ভালোবাসতেন। আমার ঠিক মনে পড়ছে না, অমর্ত্য সেন, নাকি কোনো এক ভক্ত কয়েক লাইন রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শুনিয়েছিলেন।

বর্তমানে একটা কথা প্রচলিত..........আগে দর্শনদারী, পরে গুনবিচারী!! এখন শিল্পীদের খালি গুন থাকলেই চলবে না, তাদের সেক্স অ্যাপিলও থাকা চাই; বিশেষ করে মেয়েদের।


সর্বসাধারণের কাছে এটাই চিরন্তন সত্য। তবে, গুণিজনেরা বলে গেছেন, এখনো বলেন- মানুষের সৌন্দর্য তার বাহ্যিক চাকচিক্যে নয়, মনে। মননশীলতাই সৌন্দর্য। এ সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন জনৈক ---- নামটা এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না যে :)

লেখাটা চমৎকার লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ।

কোথাও থেকে কপি করেন নাই তো!!! :P

সবাই কোথাও না কোথাও থেকে কপি করেন। আমিও কপি করেছি - আমার মগজ থেকে :) তবে, গল্পটার পেছনে আমার বেশকিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা জড়িয়ে আছে। মানুষ আসলেই নর্তন-কুর্দনই অধিক পছন্দ করে, গান বা সুর ততটা না।

কমেন্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় মফিজ ভাই। শুভেচ্ছা নিন।


২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:০৫

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: চমৎকার গল্প দাদা। সেদিন ভারতে একটা ভিডিও দেখলাম। শিল্পী গান গাচ্ছে, সঞ্চালক গানের মাঝে থামিয়ে দিয়ে, শিল্পী থেকে স্টিকার কেড়ে নিলেন। পরে সেই শিল্পী এমন আচরণের প্রতিবাদ করলে, কেউই পাত্তাও দেয়নি। লেখাটা পড়ার সময় সেই ঘটনাটা মনে পড়ে গেলো...

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: শুভেচ্ছা নিন নয়ন বড়ুয়া।

আসলে শিল্পীদের শত্রু শিল্পীরা। একজন শিল্পীর প্রতি বেশি ঈর্ষান্বিত থাকেন তার সহশিল্পীরাই। ঐ শিল্পীর সাথে এমন বিরূপ আচরণের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল সহশিল্পীদেরই। অন্যায়টা তারাও করেছেন।

কমেন্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৫৮

সুপান্থ সুরাহী বলেছেন: জৌলুস আর রোবটিক এই যুগে নিরেট গুণের কদর কে করে! যারাও করে তাদেরকে লোকে বোকাই ভাবে। তবুও এই বোকারাই পৃথিবীটারে রাঙায়।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১২

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কিছুদিন আগে একবার একঝলক দেখেছিলাম ব্লগে, বেশকিছুদিন বিরতির পর আবার এলেন। হয়ত আবারও চলে গেছেন লম্বা বিরতিতে :(

যাই হোক, সুন্দর একটা কমেন্ট পেয়ে ভালো লাগলো সুরাহী ভাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা রইল।

৪| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:১১

মিরোরডডল বলেছেন:




তিনি চান সুর। তিনি চান গান। তার কাছে গানই হলো সব সুন্দরের আধার।
সেখানে এই সুরটাই হলো সমগ্র সৌন্দর্যের মূল রহস্য।


তাইতো হওয়া উচিত।
গান হচ্ছে শোনার, এর সাথে গায়িকা দেখতে কেমন তার সম্পর্ক নেই।
ইভেন যদি স্টেইজ পারফর্মেন্স করে, সেখানেও আগে গান, তারপর পারফর্মেন্স।

সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম।

absolutely!
তাহলে আমরা এখন সুরের মাঝে হারিয়ে যাই।
গুডনাইট ধুলো।






১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ৩ নাম্বার কমেন্টের রিপ্লাই দেয়ার আগেই এ মিউজিকটা শুনেছিলাম। খুবই সুন্দর সুর। তন্ময়তা সৃষ্টি করে এ সুর।

উদ্ধৃতিসহ কমেন্ট করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৫| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৬:১৫

শায়মা বলেছেন: খুবই সুন্দর লেখা!

তবে তার জন্মগ্রামের লোকজন নিশ্চয় তার গান ভালোবাসে। এটা লিখলে আর একটু শান্তি হত! :)

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: তার জন্মগ্রামের লোকজন নিশ্চয় তার গান ভালোবাসে।

আরো দু-চারটা কথা মাঝে মাঝে যোগ করতে হবে, মনে আছে। আপনার কথাটাও জায়গামতো বসানো যায় কিনা, গভীরভাবে ভাবছি।


খুবই সুন্দর লেখা!


অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।

৬| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৮:৫৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় কবি সেলিম আনোয়ার ভাই+

৭| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:০৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



সুর আর রূপ নিয়ে তুলনামুলক বিশ্লেষনী আসাধারণ একটি লেখা । লেখাটি পাঠে মনোমধ্যে জেগে উঠে সেকালে
কেমন ছিল সুর আর রূপের প্রয়োগ সংগীত পরিবেশনায় । সে কথা ভাবতে গিয়ে কেবলি ভাবি সংগীতের সঙ্গীত
জগতের ক্রমবিবর্তনের ধারাকে মোটামুটিভাবে যে পাঁচ পর্যায়ে চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে সেই আদিম ও
প্রাক-বৈদিক বা সিন্ধু সভ্যতার যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০) বৈদিক যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০)
বৈদিকোত্তর বা পৌরাণিক যুগ (খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০- ১২০৬ খ্রিষ্টপূর্ব) মধ্যযুগ (১২০৭ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ১৭৫৭ খ্রিষ্টপূর্ব)
বর্তমান বা আধুনিক যুগ (১৭৫৮ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে চলমান ) শুরু হওয়ার পরেও প্রায় তিন শত বছর ধরে সুর ও গান
গেয়েই সংগীত শিল্পীগন ছিলেন পরিচিত আপন মহিময় সর্বত্র। নব্য অধুনিক যুগে এসে যত বড় নামী দামী সংগীত
শিল্পীই তিনি হন না কেন তাদের অনেককেই এমনকি লতা মুঙ্গেশকর . সন্ধা মুখোপধ্যায় . হেমন্ত, মান্নাদের মত
অনেককেই চলে যেতে হয়েছে প্লে বেক সিংগার হিসাবে খুবসুরত ওয়ালা নায়ক নায়িকাদের অন্তরালে । তাদের
ঠোটের নরন চরন আর অঙ্গ ভঙ্গীতেই দর্শক শ্রোতাদের হৃদয়ে ধরে কাপন ( অবশ্য ঐসকল গুণীশিল্পিরা তাঁদের
সুরের মুর্ছনায় মঞ্চও কাপিয়েছেন)। কিন্ত এখন যুগ পাল্টিয়েছে ,যার একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন বিবরণ দিয়েছেন এই
পোষ্টের লেখাটিতে ।
সত্য যুগে সংগীতে কি হাল ছিল তা সবিশেষ জানিনা তবে এ কথা বলাই যায় যে সেই দ্বাপর যুগেও সংগীতের
সাথে যুক্ত ছিল সুন্দর মুরতী ।

সকল রাজমহলেই থাকত সুন্দরী রূপসি বাইজি , তার পরে নাট্য মঞ্চে থাকত খুব সুরত নট নটি যারা সকলেই
নৃত্য গীত সহযোগেই করতেন সংগীত পরিবেশন । যাহোক, সময়ের তালে দৃশ্যপট পরিবর্তীত হলেও সুরের মুর্ছনা
দানকারী গুণী শিল্পীগন যাবেন না হারিয়ে।

যেমনটি এ পোষ্টে হয়েছে বলা গায়িকা তার প্রিয় জন্ম গ্রামে চলে গেলেন। তিনি করেন মাটির গান। তার মাটির
শরীরের প্রতিটি পরতে মাটির সুর গেঁথে আছে। এ সুরে মাটির হৃদয় দোলে। এ সুরে মাটির মানুষ দোলে। যাদের
জন্য তিনি মঞ্চে উঠেছিলেন, প্রশ্ন উঠে তারা কেউ মাটির মানুষ ছিলেন কি?

জন্মভিটায় বসে নীরবে গায়িকা কাঁদেন। নিরবধি কাঁদেন। তিনি নিজে কোনোদিন রূপের কাঙাল ছিলেন না, ছিলেন
সুরের কাঙাল তিনি চান সুর, তিনি চান গান।তার কাছে গানই হলো সব সুন্দরের আধার। এই গায়িকাকে অবলম্বন
করে কি সুন্দরভাবেই না বলে গেলেন -
কিন্তু আদতে তিনি কাঁদেন না। তার কণ্ঠে নিঃসৃত হয় করুণ সঘন সুর। সেই সুরে নদীর কান্না গর্জন করে ওঠে।
পাখিরা কূজন ভুলে গিয়ে তার বাড়ির চারপাশে এসে গাছে গাছে ডালে ডালে ভিড় করে বসে। ফুলেরা সেই সুরে
কান্নায় ভিজে যেতে থাকে। তারা তন্ময় হয়ে শোনে; গায়িকার অন্তরক্ষয়ী গানের মূর্ছনায় সারা পৃথিবী দুলতে থাকে।
পৃথিবীটা যেন একটা স্বর্গোদ্যান। শুধু সুর আর সুর, যার গভীরে রূপের কোনো অস্তিত্ব নেই, নেই কোনো বাহ্যিক
চাকচিক্য। সেখানে এই সুরটাই হলো সমগ্র সৌন্দর্যের মূল রহস্য।


অমর্ত্য থেকে মৃত্তিকার মর্ত্যে এ সুর ঝরে পড়ে, আর সুরপিয়াসী মানবহৃদয় এ সুরের সৌন্দর্যে মাতোয়ারা হয়।
সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম।
হ্যাঁ একেবারে খাটি সত্য কথা ।

এখানে এসে মনে বাজে সেই অনেক পুরানো দিনের কথা । আজ হতে প্রায় আটশত বছর আগে বৃন্দাবনের নিধুবন
নিকুঞ্জে একটি ছোটো কুটিরে সাধন-ভজন করেই সারাজীবন অতিবাহিত করেছিলেন এই উপমহাদেশের একজন
বিশিষ্ট সঙ্গিতানুরাগী ও সংগীত শিল্পী স্বামী হরিদাস একান্ত সাধারণ বেশে ।

তিনি সঙ্গিত জগতে যে শিষ্যগুলি তৈরি করেছিলেন, উত্তরকালে তারা সকলেই সংগীতের জগতে এক একজন
বিশিষ্ট সঙ্গিত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে তানসেনই ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। অন্যান্যদের মধ্যে
রাজা শৌরসে লিবাকর পতিত, সোমনাথ পক্ষিত, রামদাস, বৈজু বাওয়া, গোপাল লাল, মনন রায়। তারা সকলেই
সঙ্গিত জগতে কিংবদন্তী হয়ে আছেন ।

তেমনি ভাবে এই পোষ্টে নিভৃতচারিনী সংগীত শিল্পী তাঁর রূপ নয়, তাঁর সুরের গুণেই হয়ে থাকবেন সংগীত
জগতে একজন কিংবদন্তি ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
আমার এ সাধারণ গল্পটা পড়ে সঙ্গীত, সুর সাধনা ও 'সুন্দরের' প্রতি মানুষের আকর্ষণবোধের যে ইতিহাস তুলে ধরেছেন, তা অনবদ্য। আমার এ পোস্টকে করেছে মহিমান্বিত, আমিও অনেক ঋদ্ধ হয়েছি।

সত্য যুগে সংগীতে কি হাল ছিল তা সবিশেষ জানিনা তবে এ কথা বলাই যায় যে সেই দ্বাপর যুগেও সংগীতের
সাথে যুক্ত ছিল সুন্দর মুরতী।


মানুষের বাহ্যিক রূপের প্রতি যে আকর্ষণ, তা চিরন্তন। কিন্তু তা সত্ত্বেও 'সুরের' মাধুর্য ও মাহাত্ম্যের কাছে বাহ্যিক রূপও নগণ্য বা ম্লান হয়ে পড়ে প্রকৃত সুর-পূজারিদের কাছে। এজন্য সুরের সুধায় মত্ত সুর-পূজারির চোখ বুজে আসে, তিনি তন্ময় হয়ে ডুবে যান সুরের সমুদ্রে, যেখানে সুরই প্রেম, প্রেমই সুর।

তেমনি ভাবে এই পোষ্টে নিভৃতচারিনী সংগীত শিল্পী তাঁর রূপ নয়, তাঁর সুরের গুণেই হয়ে থাকবেন সংগীত
জগতে একজন কিংবদন্তি ।


সুন্দর, ইতিহাস-সমৃদ্ধ এ অমূল্য কমেন্টটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় আলী ভাই। শুভেচ্ছা আপনার জন্যও।

৮| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: পৃথিবী শুরু হয় সুর ও সংগীতের মাধ্যমে।
সুর মানুষকে আনন্দ দেয়। যারা আমাদের সুন্দর সুন্দর গান উপহার দেন তারা মহৎ হৃদয়য়ের মানুষ।

৯| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭

বিজন রয় বলেছেন: এরকম লেখায় অনেক সময় নিয়ে অনেক গভীরে যেয়ে কথা বলতে হয়।
যেমনটি বলেন প্রিয় ড. এম আলী ভাই।

কিন্তু সময়ের খুব অভাব।
তাই কিছু বললাম না।

লেখাটি আর ড. এম আলী ভাইয়ের মন্তবটি পড়ে চলে গেলাম।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
এরকম লেখায় অনেক সময় নিয়ে অনেক গভীরে যেয়ে কথা বলতে হয়।
যেমনটি বলেন প্রিয় ড. এম আলী ভাই।


অনেক কথা না বলেও অনেক কিছুই বলে গেলেন প্রিয় বিজন রয়। ধন্যবাদ এবং ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.