![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি শুধু আমার না । আমার ভালভাবে বেঁচে থাকার উপর নির্ভর করে অনেকের ভালভাবে বেঁচে থাকা। তাই সৎ ভাবে বেঁচে থাকতে চাই, আমার প্রিয় মানুষ গুলোকে সারা জীবন প্রিয় রাখতে চাই ।
এটা কি করে সম্ভব? কোথাও কি কোন ভুল হচ্ছে? না!! আমার দীর্ঘ ২৭ বছরের ক্যারিয়ারে তো এই রকম কোন ভুল হয়নি? ডাঃ সাহেব বিস্ময়ের সাথে রফিকের দিকে তাকিয়ে আছে । কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না । রফিক আবেগের দৃষ্টি নিয়ে ডাঃ এর দিকে তাকিয়ে আছে, ডাঃ কি বলে সেটা শোনার অপেক্ষায় । কিন্তু ডাঃ সাহেব কি বলছে না । রফিকের মনে সন্দেহ আস্তে আস্তে ঘনীভূত হচ্ছে । নিশ্চয় তার কোন বড় ধরনের রোগ হয়েছে । নয়লে ডাঃ এমন নির্বাক হয়ে গেল কেন?
ইদানিং মাথাটা খুব বেশি ঝিমঝিম করে । পেটের ভিতরটায় কেমন যেন অসহ্য যন্ত্রনা হয় । কোন কিছুই ভাল লাগে না রফিকের । জীবন থেকে ছুটি নিতে ইচ্ছে করে । কিন্তু পারে না । তাই সারাক্ষণ একটা দুঃশ্চিন্তার চাপ তার কপালে লেগেই থাকে । মানসিক অশান্তি থাকলে কোন কিছুই ভাল লাগে না । একটুতেই সব কিছু অসহ্য হয়ে উঠে ।
যাক শেষ মেষ ডাঃ সাহেব মুখ খুললেন । কিন্তু মুখ খুলে যা বললেন তা কিন্তু বিশ্বাস করার মতো না । যে কেউ শুনলে আকাশ থেকে পড়বে । রফিকেরও তাই হলো । কিন্তু আকাশ থেকে পড়লনা । শুধু ডাঃ কে একটা কথায় জিঙ্গেস করলো " কোথাও কোন ভুল হচ্ছে না তো?" । ডাঃ এক কথায় যা বলল তাতে রফিকের বেচে থাকার ইচ্ছাটা আরো প্রবল হয়ে উঠল । কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? এই রকম অসম্ভব অলৌকিক ঘটনা কি পৃথিবীতে ঘটেছে?
আজ ঋতুকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু কোথায় পাবে সে ঋতুকে? সব কিছু য়ে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে । আর মাত্র ৭ দিন । এর পরে ঋতুও আর তার থাকবে না । অচেনা অজানা কোন একজন হয়ে যাবে । এই অলৌকিক সংবাদটি যদি আর কিছু দিন আগে আসতো, তাহলে তো আর ঋতুকে হারাতে হতো না । রফিকের কাছে জীবনটাকে এক অজানা রহস্যের মতো মনে হতে থাকে । তার জীবনে যে সব কিছু শেষ প্রান্তে গিয়ে আবার থমকে দাড়ায় ।
ঋতুকে ডিবোর্স দিতে হয়েছে ফ্যামিলির চাপে । ৫ বছরের সংসার । চুড়ান্ত ডিবোর্স কার্যকর হতে আর মাত্র ৭ দিন বাকী । এই ৭ দিনকে রফিকের জীবনে অনেক মূল্যবান বলেই মনে হচ্ছে । কি করবে, কিছুই ভেবে পাচ্ছে না । রিকশা থামিয়ে সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে একটু দাড়াতে ইচ্ছে করছে । যেখানে তাদের ১ম দেখা হয়েছিল ।
মনের গহীন থেকে ভেসে আসছিল কত স্মৃতি । এই গাছটার নিচে সেই দিন দাড়িয়ে ছিল ঋতু । কারও জন্য অপেক্ষা নয় । ভয়াতুর চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল । কি করবেব এখন কিছুই বুঝতে পারছিল না । সব হারিয়ে শুধু বেচেঁ থাকার আশায় একটা আশ্রয় খুজছিল । ক্লাশ ১০ এ পড়ুয়া একটি মেয়ে নদী ভাঙনে সর্বশান্ত হয়ে শহরে এসেছিল । কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে সড়ক দূর্ঘটনায় হারায় বাবা মাকে । সেই মেয়েটির দায়িত্ব নিয়েছিল রফিক । যদিও পরিবার থেকে অনেক আপত্তি এসেছিল, তারপরও সবাই ঋতুকে মেনে নিয়েছিল । কিন্তু নিয়তি যে তার পিছু ছাড়ছিল না ।
রফিক বাসায় গিয়ে যখন তার সমস্যার কথাটা খুলে বলল, তখন হাসা-হাসির একটা রোল পড়ে গেল । কে কত হাসতে পারে । রফিক খুব লজ্জা পাচ্ছিল । কি করবে কিছুই করার নেই । রফিকের মা রেগে গিয়ে বলল, তোর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোথাও ভুল হয়েছে । চল আমার সাথে । রফিক বলল কোথায়? ডাযাগনস্টিক সেন্টারে । বাধ্য হয়েয় আবার যেতে হলো । একদিন পর যখন রিপোর্ট এল তখন প্রমাণ হয়ে গেল আগের টেস্ট গুলোতে সত্যিই কোন ভুল হয়েছে । কিন্তু এত নাম করা একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, যার ২৭ বছরের ইতিহাসে কোন ভুল নেই , সেই প্রতিষ্টানের ভুল কি করে হয়? রফিকের মা কোন কিছু না ভেবে সরাসরি আদালতের সরনাপন্ন হল । বাস খেলা এবার শুরু ।
পুলিশ: আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে।
ডাঃ আমার অপরাধ?
পুলিশঃ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মিসেস. রওশন আরা বেগম মামলা করেছেন । আপনি তার ছেলের (রফিকের) টেস্টে ভুল করেছেন ।
ডাঃ আপনার কাছে কোন প্রমান আছে ।
পুলিশঃ এই যে আপনার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ।
ডাঃ চলুন ।
মামলা আদালতে গড়িয়ে ছাড়ল । অনুসন্ধান চলছে, কিভাবে এত বড় একটা ভুল হল । রফিকের মা আদালতে সমস্ত রিপোর্ট এর কপি জমা দিল । আসামী পক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা করছে সত্য উদঘাটন করতে । ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডিউটিতে সেইদিন কে কে ছিল তা উদঘাটন করার পর ডাক্তার, টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ড বয় আর আয়াদের জেরা-পাল্টা জেরা শুরু হয়েছে । সবাই নিজেকে নিদোর্ষ প্রমাণ করতে পারলেও শুধু পারলনা সর্বশেষ যে মেয়েটি (আয়া) কাঠগড়ায় দাড়াল । একে তো অনভিজ্ঞ তারপর আবার বয়স খুব বেশি না । মেয়েটিকে দেখেই থমকে গেল রফিক । যাকে সে এতদিন ধরে খুজছে, সে এই রকম একটা মামলায় ফেসেঁ যাবে কল্পনা করতেও কষ্ট হয় । কি হয়েছিল সেদিন? ঋতুর সরল স্বীকারোক্তি ছিল এই রকম .....
স্বামীর সংসার থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর বেচেঁ থাকার তাগিদে ঋতু কিছু একটা করার চেষ্টা করছিল । কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না । সৌভাগ্য ক্রমে একটা চাকরি জুটলো এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে । অনভিজ্ঞতার দরুন সব কাজ বুঝে উঠতে কষ্ট হচ্ছিল । তারপর আবার ভুল হলেই বকা-ঝকা আর চাকরি চলে যাওয়ার ভয় । একে তো পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই, আবার বাচ্চা না হওয়ার কারণে স্বামীর সংসার থেকে হতে হয়েছে বিতাড়িত । সব সময় দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ কপালে লেগেই থাকত । এই চাকরিটা গেলে নদীতে ঝাপ দেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই ।
ঘটনার দিন আমার ডিউটি ছিল । আমি খুব দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম । তাই টেকনোলজিস্টের নির্দেশে ইউরিন টেস্টের জন্য টেস্ট টিউব আনতে গিয়ে একটা টেস্টটিউব আমার হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে যায় । কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ।
স্যারকে বললে যদি চাকরি চলে যায়? এই ভয়ে আরেকটা খালি টেস্ট টিউব নিয়ে আমার ই্উরিন নিয়ে ভাঙ্গা টেস্ট টিউবের লেভেল লাগিয়ে দেয় ।
এরপর আর আমি কিছু বলতে পারবনা । খুশিতে ততক্ষণে রফিকের চোখ ছলছল করছে ।
অর্ডার আসল ঋতুর ইউরিন টেস্ট করা হোক । ইউরিন টেস্টে প্রমাণিত হল ঋতুই প্রেগনেন্ট ।
ঋতু আর রফিকের ডিভোর্স কার্যকর হ্ওয়ার জন্য এইদিনটাই বাকী ছিল । তাই ঋতুকে ঘরে তুলে নিতে আর রফিকের কোন ঝামেলা পোহাতে হয়নি । উপর ওয়ালার অশেষ মেহের বানীতে কৃতজ্ঞ হয়ে রফিক ডাক্তার এর উপর থেকে মামলা তুলে নিল ।
২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৮
ফররুখ আহমেদ রািজব বলেছেন: ভাল লাগাই হলো গল্পের স্বার্থকতা । বাস্তবে এমনটি কি ঘটতে পারে না?
৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:১১
শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: সুন্দর গল্প...ভালো লাগল
৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৯
হারান সত্য বলেছেন:
সুন্দর গল্প।
মাঝে মাঝে মনে হয় এই জগতটাই একটা গল্প, যা লিখছেন নেপথ্যের কেউ, আর আমরা সবাই সেই গল্পের পাত্র-পাত্রি!
৫| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৪২
ফররুখ আহমেদ রািজব বলেছেন: একদম সত্য কথা বলেছেন । আসলে বাস্তবতাকে ঘিরেই তৈরী হয় গল্প আর অবাস্তব কোন কিছুকে নিয়ে তৈরি গল্পই হচ্ছে রূপকথা।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৮
মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্ বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন!! ভাল লাগলো!!! কিন্তু গল্প বলেই হয়ত ভালো লাগার মত করে সাজানো সম্ভব। বাস্তবে যা সচরাচর হয় না।