নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাবুই পাখি

Footprint of a village boy!

ফারজুল আরেফিন

আমার ভার্চুয়াল ঘর, যেমন ইচ্ছে তেমন সাঁজাই। অতিথিকে স্বাগতম।

ফারজুল আরেফিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্বাচিত কবিতা সমগ্র - ১

২২ শে আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:৫৪

ওটা কিছু নয় - নির্মলেন্দু গুণ

এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব? পাচ্ছো না?

একটু দাঁড়াও আমি তৈরী হয়ে নিই ।

এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব? পাচ্ছো না?

তেমার জন্মান্ধ চোখে শুধু ভুল অন্ধকার । ওটা নয়, ওটা চুল ।

এই হলো আমার আঙ্গুল, এইবার স্পর্শ করো,–না, না, না,

-ওটা নয়, ওটা কন্ঠনালী, গরলবিশ্বাসী এক শিল্পীর

মাটির ভাস্কর্য, ওটা অগ্নি নয়, অই আমি–আমার যৌবন ।

সুখের সামান্য নিচে কেটে ফেলা যন্ত্রণার কবন্ধ–প্রেমিক,

ওখানে কী খোঁজ তুমি? ওটা কিছু নয়, ওটা দুঃখ;

রমণীর ভালোবাসা না-পাওয়ার চিহ্ন বুকে নিয়ে ওটা নদী,

নীল হয়ে জমে আছে ঘাসে,–এর ঠিক ডানপাশে, অইখানে

হাত দাও, হ্যাঁ, ওটা বুক, অইখানে হাতা রাখো, ওটাই হৃদয় ।

অইখানে থাকে প্রেম, থাকে স্মৃতি, থাকে সুখ, প্রেমের সিম্পনি;

অই বুকে প্রেম ছিল, স্মৃতি ছিল, সব ছিল তুমিই থাকো নি ।





সেই গল্পটা - পূর্ণেন্দু পত্রী

আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।

শোনো।

পাহাড়টা, আগেই বলেছি

ভালোবেসেছিল মেঘকে

আর মেঘ কী ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে

বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকরা

সে তো আগেই শুনেছো।

সেদিন ছিল পাহাড়টার জন্মদিন।

পাহাড় মেঘেকে বললে

আজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে।

মেঘ পাহাড়কে বললে

আজ তোমাকে স্মান করিয়ে দেবো চন্দন জলে।

ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী

পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ।

সেইভাবেই মেঘ ছিল পাহাড়ের আলিঙ্গনেরআগুনে

পাহাড় ছিল মেঘের ঢেউ-জলে।

হঠাৎ,

আকাশ জুড়ে বেজে উঠল ঝড়ের জগঝম্প

ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে ছিনতাইয়ের ভঙ্গিতে ছুটে এল

এক ঝাঁক হাওয়া

মেঘের আঁচলে টান মেরে বললে

ওঠ্ ছুড়ি! তোর বিয়ে।

এখনো শেষ হয়নি গল্পটা।

বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে গেল ঠিকই

কিন্তু পাহাড়কে সে কোনোদিনই ভুলতে পারল না।

বিশ্বাস না হয় তো চিরে দেখতো পারো

পাহাড়টার হাড় পাঁজর,

ভিতরে থৈ থৈ করছে

শত ঝর্ণার জল।







মানুষ - নির্মলেন্দু গুণ

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,

হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,

মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ।

আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,

গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।

সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না,

অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না ।

কী করে তাও বেঁচে থাকছি, ছবি আঁকছি,

সকালবেলা, দুপুরবেলা অবাক করে

সারাটা দিন বেঁচেই আছি আমার মতে । অবাক লাগে ।

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে জুতো থাকতো,

বাড়ি থাকতো, ঘর থাকতো,

রাত্রিবেলায় ঘরের মধ্যে নারী থাকতো,

পেটের পটে আমার কালো শিশু আঁকতো ।

আমি হয়তো মানুষ নই,

মানুষ হলে আকাশ দেখে হাসবো কেন ?

মানুষগুলো অন্যরকম, হাত থাকবে,

নাক থাকবে, তোমার মতো চোখ থাকবে,

নিকেলমাখা কী সুন্দর চোখ থাকবে

ভালোবাসার কথা দিলেই কথা রাখবে ।

মানুষ হলে উরুর মধ্যে দাগ থাকতো ,

বাবা থাকতো, বোন থাকতো,

ভালোবাসার লোক থাকতো,

হঠাৎ করে মরে যাবার ভয় থাকতো ।

আমি হয়তো মানুষ নই,

মানুষ হলে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা

আর হতো না, তোমাকে ছাড়া সারাটা রাত

বেঁচে থাকাটা আর হতো না ।

মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ;

অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই,

অবহেলায় মানুষ ভেবে জাপটে ধরি ।





অপেক্ষা - দিব্যেন্দু পালিত

অন্যমনে একদিন ভালোবাসা কড়া নেড়ে যাবে;

অপেক্ষায় থেকো।

পদশব্দে মনে হবে বাতাসের নিষ্ঠুর শাসানি

বহুদূরে শাণ দিচ্ছে ভয়ানক কৌতুকের থেকে।

তোমার দু’পাশে রাস্তা, সাজানো হর্ম্যের

অলিন্দ থম্কে আছে, চারিদিকে আলোর চাতুরি

স্বপ্নের ভিতর কিংবা মৃত্যুর ভিতর কিংবা

জাগরণে, সূর্যের ভিতর

একাকী, নিঃসঙ্গ, এই আত্মঘাতী শোকের ভিতর

থেক, তবু অপেক্ষায় থেকো।





ফেরীঅলা - হেলাল হাফিজ

কষ্ট নেবে কষ্ট

হরেক রকম কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট !

লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট

পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,

আলোর মাঝে কালোর কষ্ট

‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট ।

ঘরের কষ্ট পরেরর কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট

দাড়ির কষ্ট

চোখের বুকের নখের কষ্ট,

একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট ।

প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট

অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,

ভুল রমণী ভালোবাসার

ভুল নেতাদের জনসভার

হাইড্রোজনে দুইটি জোকার নষ্ট হবার কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট ।

দিনের কষ্ট রাতের কষ্ট

পথের এবং পায়ের কষ্ট

অসাধারণ করুণ চারু কষ্ট ফেরীঅলার কষ্ট

কষ্ট নেবে কষ্ট ।

আর কে দেবে আমি ছাড়া

আসল শোভন কষ্ট,

কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন

আমার মত ক’জনের আর

সব হয়েছে নষ্ট,

আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট ।





প্রস্থান - হেলাল হাফিজ

এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো৷

এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তাল পাখাটা

খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিয়ো৷

ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিত

ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিয়ো৷

কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে

কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ভাসতে বলে প্রেমের বানে

পত্র দিয়ো, পত্র দিয়ো৷

আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেয়ো, আপত্তি নেই৷

গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে?

আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,

নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে

পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়?

এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,

এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে!







ইচ্ছে ছিলো - হেলাল হাফিজ

ইচ্ছে ছিলো তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো

ইচ্ছে ছিলো তোমাকেই সুখের পতাকা করে

শান্তির কপোত করে হৃদয়ে উড়াবো।

ইচ্ছে ছিলো সুনিপূণ মেকআপ-ম্যানের মতো

সূর্যালোকে কেবল সাজাবো তিমিরের সারাবেলা

পৌরুষের প্রেম দিয়ে তোমাকে বাজাবো, আহা তুমুল বাজাবো।

ইচ্ছে ছিলো নদীর বক্ষ থেকে জলে জলে শব্দ তুলে

রাখবো তোমার লাজুক চঞ্চুতে,

জন্মাবধি আমার শীতল চোখ

তাপ নেবে তোমার দু’চোখে।

ইচ্ছে ছিল রাজা হবো

তোমাকে সাম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো,

আজ দেখি রাজ্য আছে

রাজা আছে

ইচ্ছে আছে,

শুধু তুমি অন্য ঘরে।







যাতায়াত - হেলাল হাফিজ

কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো।

কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না

রাত কাটে তো ভোর দেখি না

কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না কেউ জানেনা।

নষ্ট রাখীর কষ্ট নিয়ে অতোটা পথ একলা এলাম

পেছন থেকে কেউ বলেনি করুণ পথিক

দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও,

কেই বলেনি ভালো থেকো সুখেই থেকো

যুগল চোখে জলের ভাষায় আসার সময় কেউ বলেনি

মাথার কসম আবার এসো

জন্মাবধি ভেতরে এক রঙিন পাখি কেঁদেই গেলো

শুনলো না কেউ ধ্রুপদী ডাক,

চৈত্রাগুনে জ্বলে গেলো আমার বুকের গেরস্থালি

বললো না কেউ তরুন তাপস এই নে চারু শীতল কলস।

লন্ডভন্ড হয়ে গেলাম তবু এলাম।

ক্যাঙ্গারু তার শাবক নিয়ে যেমন করে বিপদ পেরোয়

আমিও ঠিক তেমনি করে সভ্যতা আর শুভ্রতাকে বুকে নিয়েই দুঃসময়ে এতোটা পথ একলা এলাম শুশ্রূষাহীন।

কেউ ডাকেনি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালোবাসি।







অমিমাংসিত সন্ধি - হেলাল হাফিজ

তোমাকে শুধু তোমাকে চাই, পাবো?

পাই বা না পাই এক জীবনে তোমার কাছেই যাবো।

ইচ্ছে হলে দেখতে দিও, দেখো

হাত বাড়িয়ে হাত চেয়েছি রাখতে দিও, রেখো

অপূণতায় নষ্টে-কষ্টে গেলো

এতোটা কাল, আজকে যদি মাতাল জোয়ার এলো

এসো দু’জন প্লাবিত হই প্রেমে

নিরাভরণ সখ্য হবে যুগল-স্নানে নেমে।

থাকবো ব্যাকুল শর্তবিহীন নত

পরস্পরের বুকের কাছে মুগ্ধ অভিভূত।







দুই বিঘা জমি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই আর সবই গেছে ঋণে।

বাবু বলিলেন, "বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কিনে।'

কহিলাম আমি, "তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই।

চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো-জোর মরিবার মতো ঠাঁই।'

শুনি রাজা কহে, "বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখান

পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা--

ওটা দিতে হবে।' কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি

সজল চক্ষে, "করুণ বক্ষে গরিবের ভিটেখানি।

সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া,

দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া!'

আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে,

কহিলেন শেষে ক্রূর হাসি হেসে, "আচ্ছা, সে দেখা যাবে।'





পরে মাস দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে--

করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে।

এ জগতে, হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি--

রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।

মনে ভাবিলাম মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে,

তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে।

সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য

কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য!

ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি

তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে সেই দুই বিঘা জমি।

হাটে মাঠে বাটে এই মতো কাটে বছর পনেরো-ষোলো--

একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়ই বাসনা হল।





নমোনমো নম সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি!

গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি।

অবারিত মাঠ, গগনললাট চুমে তব পদধূলি,

ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।

পল্লবঘন আম্রকানন রাখালের খেলাগেহ,

স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল-- নিশীথশীতল স্নেহ।

বুকভরা মধু বঙ্গের বধূ জল লয়ে যায় ঘরে--

মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে।

দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে প্রবেশিনু নিজগ্রামে--

কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি রথতলা করি বামে,

রাখি হাটখোলা, নন্দীর গোলা, মন্দির করি পাছে

তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে আমার বাড়ির কাছে।





ধিক্ ধিক্ ওরে, শতধিক্ তোরে, নিলাজ কুলটা ভূমি!

যখনি যাহার তখনি তাহার, এই কি জননী তুমি!

সে কি মনে হবে একদিন যবে ছিলে দরিদ্রমাতা

আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া ফল ফুল শাক পাতা!

আজ কোন্ রীতে কারে ভুলাইতে ধরেছ বিলাসবেশ--

পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ!

আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি গৃহহারা সুখহীন--

তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী, হাসিয়া কাটাস দিন!

ধনীর আদরে গরব না ধরে ! এতই হয়েছ ভিন্ন

কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ সেদিনের কোনো চিহ্ন!

কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ি, ক্ষুধাহরা সুধারাশি!

যত হাসো আজ যত করো সাজ ছিলে দেবী, হলে দাসী।





বিদীর্ণ হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি--

প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে, সেই আমগাছ একি!

বসি তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা,

একে একে মনে উদিল স্মরণে বালক-কালের কথা।

সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম,

অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম।

সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা-পলায়ন--

ভাবিলাম হায় আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন!

সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে,

দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে।

ভাবিলাম মনে বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা,

স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা।





হেনকালে হায় যমদূত-প্রায় কোথা হতে এল মালী,

ঝুঁটি-বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি।

কহিলাম তবে, "আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব--

দুটি ফল তার করি অধিকার, এত তারি কলরব!'

চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে কাঁধে তুলি লাঠিগাছ--

বাবু ছিপ হাতে পারিষদ-সাথে ধরিতেছিলেন মাছ।

শুনি বিবরণ ক্রোধে তিনি কন, "মারিয়া করিব খুন!'

বাবু যত বলে পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ।

আমি কহিলাম, "শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয়!'

বাবু কহে হেসে, "বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়।'

আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে--

তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!







বাতাসে লাশের গন্ধ - রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ

আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই

আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি

ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে...

এ দেশ কি ভুলে গেছে সোই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?

বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে

মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ ।

এই রক্তমাখা মাটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধে ছিলো ।

জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আঁধার ,

আজ তারা আলোহিন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায় ।

এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জার আড়ষ্ট কুমারী জননী,

স্বাধীনতা-- একি হবে নষ্ট জন্ম ?

একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল ?

জাতির পতাকা আজ খামছে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন ।

বাতাসে লাশের গন্ধ

নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দোলে মাংশের তুফান ।

মাটিতে রক্তের দাগ--

চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড় ।

এ চোখে ঘুম আসেনা । সারারাত আমার ঘুম আসে না-

তন্দ্রার ভেতর আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,

নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচালাশ

মুন্ডুহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বীভৎস শরীর

ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে- আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি

ঘুমুতে পারিনা...

রক্তের কাফনে মোড়া - কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে

সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা ।

স্বাধীনতা, সে- আমার স্বজন- হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন-

স্বাধীনতা- আমার প্রিয় মানুষের রক্তের কেনা অমূল্য ফসল ।

ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত পতাকা ।







নিঃসঙ্গতা - আবুল হাসান

অতটুকু চায়নি বালিকা!

অত শোভা, অত স্বাধীনতা!

চেয়েছিল আরো কিছু কম,



আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে

বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল

মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!



অতটুকু চায়নি বালিকা!

অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম!

চেয়েছিল আরো কিছু কম!



একটি জলের খনি

তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল



একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!







অমলকান্তি – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

অমলকান্তি আমার বন্ধু,

ইস্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়তাম।

রোজ দেরি করে ক্লাসে আসতো, পড়া পারত না,

শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে

এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতো যে,

দেখে ভারী কষ্ট হত আমাদের।

আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।

অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি।

সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!

ক্ষান্তবর্ষণ কাক-ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর,

জাম আর জামরুলের পাতায়

যা নাকি অল্প-একটু হাসির মতন লেগে থাকে।

আমরা কেউ মাষ্টার হয়েছি, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।

অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।

সে এখন অন্ধকার একটা ছাপাখানায় কাজ করে।

মাঝে মধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে;

চা খায়, এটা-ওটা গল্প করে, তারপর বলে, “উঠি তাহলে।”

আমি ওকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।

আমাদের মধ্যে যে এখন মাষ্টারি করে,

অনায়াসে সে ডাক্তার হতে পারত,

যে ডাক্তার হতে চেয়েছিল,

উকিল হলে তার এমন কিছু ক্ষতি হত না।

অথচ, সকলেরই ইচ্ছেপূরণ হল, এক অমলকান্তি ছাড়া।

অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।

সেই অমলকান্তি–রোদ্দুরের কথা ভাবতে-ভাবতে

ভাবতে-ভাবতে

যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।





আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে – রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে,

আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।

ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম।

তেমনি তোমার নিবিঢ় চলা, মরমের মূল পথ ধরে।

পুষে রাখে যেমন কুসুম, খোলসের আবরণে মুক্তোর ঘুম।

তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া, ভিতরের নীল বন্দরে।

ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।

দিয়ো তোমার মালাখানি, বাউলের এই মনটারে।

আমার ভিতরে বাহিরে………

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪০

মিথী_মারজান বলেছেন: কবিতাগুলো অসাধারণ সুন্দর।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১:১২

ফারজুল আরেফিন বলেছেন: সত্যিই তাই।

২| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:৫০

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
প্রতিটি কবিতা ই প্রিয়।

১০ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:৪৫

ফারজুল আরেফিন বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। :)

৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৭

রাজিব১১৩৯ বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম। ভাই, পূর্ণেন্দু পৈত্রীর " কৃষ্ণকলি কেউ বলেনা থাকে না তাকে" - এই কবিতাটি আপনার সংগ্রহে থাকলে দিবেন । উপকৃত হব। ধন্যবাদ।

১০ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:৪৮

ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
এরকম কোন কবিতা পড়েছি বলে মনে পড়ছে না। কবিতার নাম বললে খুঁজে বের করতে পারতাম।

শুভকামনা রইলো।

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:২৯

অপরিনত বলেছেন: দুই বিঘা জমি....অনেকদিন পর পড়ে অন্যরকম লাগলেঅ...

৩০ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪১

ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অসাধারণ সৃষ্টি।

অশেষ ধন্যবাদ।

৫| ০৬ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৯:২৪

রাখালছেলে বলেছেন: ভাল লাগা কবিতা গুলো একসাথে পেয়ে যে আনন্দ পেলাম তার জন্য ধন্যবাদ

০৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১২:৪০

ফারজুল আরেফিন বলেছেন: আপনার আনন্দ আমাকেও ছোঁয়েছে। :)

ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।

৬| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৩

অভি৯১৭৫ বলেছেন: প্রিয়তে নিতে বাধ্য হলাম

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৮

ফারজুল আরেফিন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। :)

৭| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:২২

কথালিজা বলেছেন: ভীষন ভাল লাগলো,আমি তো কবর কবিতাটা একটু খুজছিলাম,ওটা পেলে আরো ভাল লাগতো।।

২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৪৩

ফারজুল আরেফিন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

ভালোলাগা পূর্ণ হোক, আপনার কবর কবিতা -

কবর - জসীমউদ্দীন


এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।
এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,
সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা।
সোনালী ঊষায় সোনামুখে তার আমার নয়ন ভরি,
লাঙ্গল লইয়া ক্ষেতে ছুটিতাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।
যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত,
এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোর তামাশা করিত শত।

এমন করিয়া জানিনা কখন জীবনের সাথে মিশে,
ছোট-খাট তার হাসি-ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।
বাপের বাড়িতে যাইবার কালে কহিত ধরিয়া পা,
আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।
শাপলার হাটে তরমুজ বেচি দু পয়সা করি দেড়ী,
পুঁতির মালা এক ছড়া নিতে কখনও হতনা দেরি।
দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,
সন্ধ্যাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুর বাড়ির বাটে !
হেস না–হেস না–শোন দাদু সেই তামাক মাজন পেয়ে,
দাদী যে তোমার কত খুশি হোত দেখিতিস যদি চেয়ে।
নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া, ‘এতদিন পরে এলে,
পথপানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেঁদে মরি আঁখি জলে।’

আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন করিয়া হায়,
কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝ্ঝুম নিরালায়।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ্ দাদু, ‘আয় খোদা, দয়াময়,
আমার দাদীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নাজেল হয়।’

তার পরে এই শুন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি,
যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি।
শত কাফনের শত কবরের অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি
গনিয়া গনিয়া ভুল করে গনি সারা দিনরাত জাগি।
এই মোর হাতে কোদাল ধরিয়া কঠিন মাটির তলে,
গাড়িয়া দিয়াছি কতসোনা মুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে।
মাটিরে আমি যে বড় ভালবাসি, মাটিতে লাগায়ে বুক,
আয় আয় দাদু, গলাগলি ধরে কেঁদে যদি হয় সুখ।

এইখানে তোর বাপ্জী ঘুমায়, এইখানে তোর মা,
কাঁদছিস তুই ? কি করিব দাদু, পরান যে মানে না !
সেই ফাল্গুনে বাপ তোর এসে কহিল আমারে ডাকি,
বা-জান, আমার শরীর আজিকে কি যে করে থাকি থাকি।
ঘরের মেঝেতে সপ্ টি বিছায়ে কহিলাম, বাছা শোও,
সেই শোওয়া তার শেষ শোওয়া হবে তাহা কি জানিত কেউ ?
গোরের কাফনে সাজায়ে তাহারে চলিলাম যবে বয়ে,
তুমি যে কহিলা–বা-জানেরে মোর কোথা যাও দাদু লয়ে?
তোমার কথার উত্তর দিতে কথা থেমে গেল মুখে,
সারা দুনিয়ার যত ভাষা আছে কেঁদে ফিরে গেল দুখে।
তোমার বাপের লাঙল-জোয়াল দু হাতে জড়ায়ে ধরি,
তোমার মায়ে যে কতই কাঁদিত সারা দিন-মান ভরি।
গাছের পাতারা সেই বেদনায় বুনো পথে যেত ঝরে,
ফাল্গুনী হাওয়া কাঁদিয়া উঠিত শুনো মাঠখানি ভরে।
পথ দিয়ে যেতে গেঁয়ো-পথিকেরা মুছিয়া যাইতো চোখ,
চরণে তাদের কাঁদিয়া উঠিত গাছের পাতার শোক।
আথালে দুইটি জোয়ান বলদ সারা মাঠ পানে চাহি,
হাম্বা রবেতে বুক ফাটাইত নয়নের জলে নাহি।
গলাটি তাদের জড়ায়ে ধরিয়া কাঁদিত তোমার মা,
চোখের জলের গহীন সায়রে ডুবায়ে সকল গাঁ।
উদাসিনী সেই পল্লীবালার নয়নের জল বুঝি,
কবর দেশের আন্ধার ঘরে পথ পেয়েছিল খুঁজি।
তাই জীবনের প্রথম বেলায় ডাকিয়া আনিল সাঁঝ,
হায় অভাগিনী আপনি পরিল মরণ-বীষের তাজ।
মরিবার কালে তোরে কাছে ডেকে কহিল, ‘বাছারে যাই,
বড় ব্যথা রল দুনিয়াতে তোর মা বলিতে কেহ নাই;
দুলাল আমার, দাদু রে আমার, লক্ষ্মী আমার ওরে,
কত ব্যথা মোর আমি জানি বাছা ছাড়িয়া যাইতে তোরে।’
ফোঁটায় ফোঁটায় দুইটি গণ্ড ভিজায়ে নয়ন-জলে,
কি জানি আশিস্ করি গেল তোরে মরণ-ব্যথার ছলে।

ক্ষণ পরে মোরে ডাকিয়া কহিল, ‘আমার কবর গায়,
স্বামীর মাথার ‘মাথাল’ খানিরে ঝুলাইয়া দিও বায়।’
সেই সে মাথাল পচিয়া গলিয়া মিশেছে মাটির সনে,
পরানের ব্যথা মরে না কো সে যে কেঁদে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে।
জোড়-মানিকেরা ঘুমায়ে রয়েছে এইখানে তরু-ছায়,
গাছের শাখারা স্নেহের মায়ায় লুটায়ে পড়েছে গায়ে।
জোনাকি মেয়েরা সারা রাত জাগি জ্বালাইয়া দেয় আলো,
ঝিঁঝিরা বাজায় ঘুমের নুপুর কত যেন বেসে ভাল।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু,’রহমান খোদা, আয়,
ভেস্ত নাজেল করিও আজিকে আমার বাপ ও মায়ে।’

এইখানে তোর বু-জীর কবর, পরীর মতন মেয়ে,
বিয়ে দিয়েছিনু কাজীদের ঘরে বনিয়াদী ঘর পেয়ে।
এত আদরের বু-জীরে তাহারা ভালবাসিত না মোটে।
হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে।
খবরের পর খবর পাঠাত, ‘দাদু যেন কাল এসে,
দু দিনের তরে নিয়ে যায় মোরে বাপের বাড়ির দেশে।
শ্বশুর তাহার কসাই চামার, চাহে কি ছাড়িয়া দিতে,
অনেক কহিয়া সেবার তাহারে আনিলাম এক শীতে।
সেই সোনামুখ মলিন হয়েছে, ফোটে না সেথায় হাসি,
কালো দুটি চোখে রহিয়া রহিয়া অশ্রু উঠিত ভাসি।
বাপের মায়ের কবরে বসিয়া কাঁদিয়া কাটাত দিন,
কে জানিত হায়, তাহারও পরানে বাজিবে মরণ-বীণ!
কি জানি পচানো জ্বরেতে ধরিল আর উঠিল না ফিরে,
এইখানে তারে কবর দিয়াছি দেখে যাও দাদু ধীরে।

ব্যথাতুরা সেই হতভাগিনীরে বাসে নাই কেউ ভাল,
কবরে তাহার জড়ায়ে রয়েছে বুনো ঘাসগুলি কালো।
বনের ঘুঘুরা উহু উহু করি কেঁদে মরে রাতদিন,
পাতায় পাতায় কেঁপে ওঠে যেন তারি বেদনার বীণ।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু,’আয় খোদা দয়াময়!।
আমার বু-জীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নাজেল হয়।’

হেথায় ঘুমায় তোর ছোট ফুপু সাত বছরের মেয়ে,
রামধনু বুঝি নেমে এসেছিল ভেস্তের দ্বার বেয়ে।
ছোট বয়সেই মায়েরে হারায়ে কি জানি ভাবিত সদা,
অতটুকু বুকে লুকাইয়াছিল কে জানিত কত ব্যথা।
ফুলের মতন মুখখানি তার দেখিতাম যবে চেয়ে,
তোমার দাদীর মুখখানি মোর হৃদয়ে উঠিত ছেয়ে।
বুকেতে তাহারে জড়ায়ে ধরিয়া কেঁদে হইতাম সারা,
রঙিন সাঁঝেরে ধুয়ে মুছে দিত মোদের চোখের ধারা।

একদিন গেনু গজ্নার হাটে তাহারে রাখিয়া ঘরে,
ফিরে এসে দেখি সোনার প্রতিমা লুটায় পথের পরে।
সেই সোনামুখ গোলগাল হাত সকলি তেমন আছে,
কি জেনি সাপের দংশন পেয়ে মা আমার চলে গ্যাছে।
আপন হসেতে সোনার প্রতিমা কবরে দিলাম গাড়ি–
দাদু ধর–ধর–বুক ফেটে যায়, আর বুঝি নাহি পারি।
এইখানে এই কবরের পাশে, আরও কাছে আয় দাদু,
কথা ক’সনাক, জাগিয়া উঠিবে ঘুম-ভোলা মোর যাদু।
আস্তে আস্তে খুড়ে দেখ্ দেখি কঠিন মাটির তলে,
দীন দুনিয়ার ভেস্ত আমার ঘুমায় কিসের ছলে।

ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিছে ঘন আবিরের রাগে,
এমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে।
মজীদ হইছে আজান হাঁকিছে বড় সকরুণ সুর,
মোর জীবনের রোজকেয়ামত ভাবিতেছি কত দুর!
জোড়হাতে দাদু মোনাজাত কর্, ‘আয় খোদা, রহমান,
ভেস্ত নাজেল করিও সকল মৃত্যু-ব্যথিত প্রাণ!’

৮| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:১০

মোঃ জোবায়ের বলেছেন: ভাই আমাকেেএকটা কবিতা দিয়ে সাহায্য করবেন? কবিতার নাম বা কবির নাম কিছুই জানি না। তবে শেষের একটি লাইন মনে আছে। “ঘুমুসনে মা, ঘুমুসনে মা তুই, পোড়া দেশের ঘুম টুটে যাক তোর অভিশাপ লেগে”

২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:০৪

ফারজুল আরেফিন বলেছেন: শুভ দাশগুপ্তের কবিতা, নাম জানা নেই।
কবিতাটি কোথাও খুঁজে পাইনি।


আমিই সেই মেয়ে : শুভ দাশগুপ্ত

আমিই সেই মেয়ে।
বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন
যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি
আপনি রোজ দেখেন।
আর
আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন।
স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন।
আমিই সেই মেয়ে।

বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো
আপনার ধর্মে নিষিদ্ধ, আর রাতের গভীরে যাকে বস্তি থেকে
তুলে আনতে পাইক বরকন্দাজ পাঠান আপনি
আর সুসজ্জিত বিছানায় যার জন্য অপেক্ষায় অধীন হয়
আপনার রাজকীয় লাম্পট্য
আমিই সেই মেয়ে।

আমিই সেই মেয়ে- আসামের চাবাগানে ঝুপড়ি কামিন বস্তি থেকে
যাকে আপনি নিয়ে যেতে চান সাহেবি বাংলোয় মধ্যরাতে
ফায়ার প্লেসের ঝলসে ওঠা আলোয় মদির চোখে দেখতে চান
যার অনাবৃত শরীর
আমি সেই মেয়ে।

রাজস্থানের শুকনো উঠোন থেকে পিপাসার জল আনতে যাকে আপনি
পাঠিয়ে দেন দশ মাইল দূরে সরকারি ইঁদারায়- আর কুড়ি মাইল
হেঁটে কান্ত বিধ্বস্ত যে রমণী ঘড়া কাঁখে ঘরে ফিরলেই যাকে বসিয়ে দেন
চুলার আগুনের সামনে আপনার রুটি বানাতে
আমিই সেই মেয়ে।

আমিই সেই মেয়ে- যাকে নিয়ে আপনি মগ্ন হতে চান গঙ্গার ধারে কিংবা
ভিক্টোরিয়ার সবুজে কিংবা সিনেমা হলের নীল অন্ধকারে, যার
চোখে আপনি একে দিতে চান ঝুটা স্বপ্নের কাজল আর ফুরিয়ে যাওয়া
সিগারেটের প্যাকেটের মত যাকে পথের পাশে ছুঁড়ে ফেলে আপনার ফুল সাজানো
গাড়ি শুভবিবাহ সুসম্পন্ন করতে ছুটে যায় শহরের পথে-
কনে দেখা আলোর গোধুলিতে একা দাঁড়িয়ে থাকা
আমিই সেই মেয়ে।

আমিই সেই মেয়ে- এমন কি দেবতারাও যাকে ক্ষমা করেন না। অহংকার
আর শক্তির দম্ভে যার গর্ভে রেখে যান কুমারীর অপমান
আর চোখের জলে কুন্তী হয়ে নদীর জলে
বিসর্জন দিতে হয় কর্ণকে। আত্মজকে।
আমিই সেই মেয়ে।

সংসারে অসময়ের আমিই ভরসা।
আমার ছাত্র পড়ানো টাকায় মায়ের ওষুধ কেনা হয়।
আমার বাড়তি রোজগারে ভাইয়ের বই কেনা হয়।
আমার সমস্ত শরীর প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।
কালো আকাশ মাথায় নিয়ে
আমি ছাতা হয়ে থাকি।
ছাতার নিচে সুখে বাঁচে সংসার।

আপনি
আপনারা
আমার জন্য অনেক করেছেন।
সাহিত্যে কাব্যে শাস্ত্রে লোকাচারে আমাকে
মা বলে পুজো করেছেন।
প্রকৃতি বলে আদিখ্যেতা করেছেন- আর
শহর গঞ্জের কানাগলিতে
ঠোঁটে রঙ মাখিয়ে কুপি হাতে দাঁড় করিয়েও দিয়েছেন।
হ্যা, আমিই সেই মেয়ে।
একদিন হয়ত
হয়ত একদিন- হয়ত অন্য কোন এক দিন
আমার সমস্ত মিথ্যে পোশাক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
আমিই হয়ে উঠবো সেই অসামান্যা !
খোলা চুল মেঘের মত ঢাকবে আমার খোলা পিঠ।
দু চোখে জ্বলবে ভীষণ আগুন।
কপাল-ঠিকরে বেরুবে ভয়ঙ্কর তেজরশ্মি।
হাতে ঝলসে উঠবে সেই খড়গ।
দুপায়ের নুপুরে বেজে উঠবে রণদুন্দভি।
নৃশংস অট্টহাসিতে ভরে উঠবে আকাশ।
দেবতারাও আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বলতে থাকবেন
মহামেঘপ্রভাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাং
কালিকাং দক্ষিণাং মুণ্ডমালা বিভুষিতাং।

বীভৎস দাবানলের মত
আমি এগোতে থাকবো ! আর আমার এগিয়ে যাবার পথের দুপাশে
মুণ্ডহীন অসংখ্য দেহ ছটফট করতে থাকবে-
সভ্যতার দেহ
প্রগতির দেহ-
উন্নতির দেহ-
সমাজের দেহ

হয়ত আমিই সেই মেয়ে ! হয়ত ! হয়ত বা।

৯| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:১০

মোঃ জোবায়ের বলেছেন: ভাই আমাকেেএকটা কবিতা দিয়ে সাহায্য করবেন? কবিতার নাম বা কবির নাম কিছুই জানি না। তবে শেষের একটি লাইন মনে আছে। “ঘুমুসনে মা, ঘুমুসনে মা তুই, পোড়া দেশের ঘুম টুটে যাক তোর অভিশাপ লেগে”

২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:১১

ফারজুল আরেফিন বলেছেন: নেই আমার কাছে।

জন্মদিন -শুভ দাশগুপ্ত
আজ পয়লা শ্রাবণ।
খোকন, আজ তোর জন্মদিন।
তুই যখন জন্মেছিলি, আমরা তখন যাদবপুরে
নতুন গড়ে ওঠা কলোনীর টালির ঘরে
তোর ইস্কুল মাস্টার বাবা
সেই হ্যারিকেনের আলো জ্বলা ঘরেই
আনন্দে আর খুশিতে ঝলমলে হয়ে উঠেছিলেন
তুই আসার পর। তোর নাম রেখেছিলেন- সুকল্যাণ।
মানুষটার মনটা ছিল শিশুর মতন
অভাবে অনটনে, বেঁচে থাকার নানা দুর্বিপাকেও
ভেঙ্গে পড়তেন না কখনও। সকলের ভাল চাইতেন মন থেকে।
বলতেন দেখো একদিন এই দেশের মানুষ
ঠিক খুঁজে পাবে মুক্তির পথ। শোষণ থেকে মুক্তি
দারিদ্র থেকে মুক্তি অশিক্ষা থেকে মুক্তি...

আজ পয়লা শ্রাবণ
খোকন, আজ তোর জন্মদিন।
ছোটবেলায়, তোর মনে আছে? আমাদের ভাঙ্গা মেঝেতে
বাক্স থেকে বার করা মেজো-মাসীর হাতে তৈরি আসনটা
পেতে দিতাম। সামনে রাখতাম ঠাকুরের আসনের প্রদীপখানা।
তুই বসতিস বাবু হয়ে চুপটি করে।
তোকে আমরা একে একে ধান দুব্বো মাথায় দিয়ে আশীর্বাদ করতাম।
বাবা বলতেন বড় হও মানুষ হও।
তোর বাবার সেই বন্ধু-ঘোষ কাকা তিনি বলতেন
বেঁচে বর্তে থাকো।
তুই জিগ্যেস করতিস-মা, বর্তে মানে কি মা?
আমি শুধু তোর মাথায় ধান-দুব্বোই দিতাম।
বলতাম না কিছুই। শুধু মনে মনে বলতাম
ঠাকুর, আমার খোকনকে মস্ত বড় মানুষ করে তোলো
আমার খোকন যেন সত্যিই মানুষ হয়।
ওর যেন কখনো কোনো বিপদ না হয় ঠাকুর।
অভাবের সংসারে ওই একটা দিন-পয়লা শ্রাবণ
কষ্টের পয়সায় একটু বাড়তি দুধ নিতাম।
পায়েস রান্না করে দিতাম তোকে।
তুই খুব ভালবাসতিস পায়েস খেতে।
তোর বাবা বাসস্টান্ডের দোকান থেকে নিয়ে আসতেন
তোর প্রিয় মিষ্টি ছানার গজা।
সামান্য ইস্কুল মাস্টারিতে কীই বা আয় হত;
ঘরে বসে ছাত্র পড়িয়ে আসতো কিছু।
দাউ দাউ অভাবের আগুনে সে রসদ পুড়তে সময় লাগত না।
তোর বাবার জামা সেলাই করতাম আর বার বার বলতাম
আসছে মাসে একটা জামা বানিয়ে নিও।
উনি হেসে উঠে বলতেন; বাদ দাও তো, খোকন বড় হচ্ছে।
ওর জন্য ভাবছি দুধ রাখতে হবে আরো আধসের-
দুধে শক্তি বাড়ে। বুদ্ধি বাড়ে। শক্তি আরে বুদ্ধি না হলে
তোমার খোকন মস্ত বড় মানুষ হয়ে উঠবে কি করে?
ভাবছি আরো দুটো টিউশনি নেব।

ছাত্র পড়িয়ে পড়িয়ে মানুষটা দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে যেতেন।
বারান্দার ধার ঘেঁষে যখন রাতের অন্ধকারে জোনাকির ব্যস্ততা,
আর ঘরে তোর পড়া মুখস্থ করার একটানা সুর
আমাদের কলোনীর ভাঙ্গাচূড়া বাড়িটাকে জীবন্ত করে রাখতো-
তখন বলতেন আমায়; খাওয়া দাওয়া একটু করো- তোমার চেহারাটা
বড় ভেঙ্গে পড়ছে দিন দিন... শাড়িটাও তো দেখছি বেশ ছিঁড়েছে-
কালই আমি ফেরার পথে একটা শাড়ি নিয়ে আসব। ধারেই আনব।
আমি বলতাম-ধুর। সামনে খোকনের উঁচু ক্লাস-
কত বই পত্তর কিনতে হবে- কত খরচ।
উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে যেতেন।
জোনাকিরা নিঃশব্দ অদৃশ্য আলোর আলপনা আঁকত
উঠনের আগাছার ঝোপে।
আবহ সঙ্গীতের মত তুই ভেতরে বসে বসে পড়া মুখস্থ করতিস।
ইতিহাস, ভূগোল, গ্রামার।

ঈশ্বর আমাদের নিরাশ করেননি।
তুই কত বড় হলি।
সব পরীক্ষায় কত ভাল ফল হল তোর।
বাবা বললেন; আরও পড়। উচ্চ শিখাই উচ্চ সম্মানের
এক মাত্র পথ। তুই আরও পড়লি।

তারপর...

তোর চাকরি হল কত বড় অফিসে
মনে আছে খোকা? প্রথম মাসের মাইনে হাতে পেয়েই
তুই কত কী কিনে এনেছিলি?
তখন তো আমরা উঠে এসেছি শ্যামবাজারে।
দু'কামরার বেশ সাজানো ঘোচানো গোছানো বড় ফ্লাট।
তোর অফিস থেকেই তো দিয়েছিল।
সেই বাড়ি সেই ঘর সেই বেলকনি- কত স্মৃতি- কত ছবি!
ঐ বাড়িতেই তো
আশ্বিনের ঝড়ো বিকেলে- তোর মনে আছে খোকন?
তোর বাবা যেদিনটাতে চলে গেলেন- মনে আছে?
তুই বাবার বুকের ওপর পড়ে যখন কাঁদছিলি হাপুস নয়নে
সদ্য স্বামীহারা, আমি সেদিন তোর সেই অসহায় মুখ দেখে
আরো বেশি করে ভেঙ্গে পড়েছিলাম।
তোকে বুকে টেনে নিয়েছিলাম ছোটবেলার মত।
বলেছিলাম-
কাঁদিস না খোকা। আমিতো আছি।

আজ পয়লা শ্রাবণ
কলকাতা থেকে অনেক দুরে মফস্বলের এই বৃদ্ধাশ্রমে
আমি একেবারে একা, খোকন।
তোকে বড় দেখতে ইচ্ছে করছে রে।
তোকে, বৌমাকে আর ছোট্ট বিল্টুকে।
তোরা এখন কত দুরে-
সল্ট-লেকের মার্বেল বসানো ঝকঝকে বাড়িতে।
আজ তোর জন্মদিনের নিশ্চয়ই খুব বড় পার্টি হচ্ছে-
তাই নারে খোকন? লোকজন, হৈচৈ, খাওয়া-দাওয়া।
খুব ভাল, খুব ভাল।
খোকন, আজ পয়লা শ্রাবণ
আমার বড় মনে পড়ছে যাদবপুরের ভাঙ্গা ঘরে রাত্রে
তুই আমার পাশে শুয়ে মাঝে মধ্যে হঠাৎ খুব ভয় পেয়ে
জড়িয়ে ধরতিস আমাকে। আমি বলতাম, ভয় কী রে?
আমি তো আছি। মা তো আছে খোকনের। যার মা থাকে
তাকে কী ভুতে ধরে?
তুই নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তিস আমার বুক জুড়ে।
তোর আধুনিক সংসারে
এই বুড়িটার একটু ঠাই হল নারে?
প্রতিমাও তো মা। ওরও তো আছে আমার খোকনেরই মত
কোল আলো- করা এক চাঁদের টুকরো।
কিন্তু সময়ের কী আশ্চর্য পরিবর্তন!

খোকন!
তুই বোধহয় আর এখন পায়েস খাস না- তাই নারে?
তুই জানিস না খোকন
আজ আমি সকালে পায়েস রান্না করেছি। হ্যাঁ
তোরই পাঠানো টাকায়।
সারাদিন সেই পায়েসের বাটি সামনে নিয়ে বসে আছি রে।
এখানে এই বৃদ্ধাশ্রমে
আমার একলা ঘরে
আর কেউ নেই।
তুই একবার আসবি খোকন।
একবার.. শুধু
একবার।

১০| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:২৩

সামস্ সোহান বলেছেন: না কবিতা লেখার যোগ্যতা আছে...না হওয়ার.....এত মমত্ব নিয়ে পড়লাম...যে আমার ই কবিতা হওয়ার ইচ্ছা জাগল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.