![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অরুচি
(উৎসর্গঃ বন্ধু “পশ পার্পল” কে)
এ কথা কে না জানে, মিথ্যেবাদি তারাই যারা দুর্ভাগ্য বশতঃ লেখক হতে পারেনি। আমি ছিঁচকে মিথ্যবাদি, আর লেখক হবার অপবাদ নেবার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছি। তাই,স্মৃতি হাতড়ে কিছুটা কল্পনায় আপনাদের সামনে নিবেদন করি মাত্র।
কিন্তু ,আমার স্মৃতিশক্তি খুবই ক্ষীণ। নিজের চেহারাই মনে থাকেনা-সেভ করার সময় নিত্যি নিত্যি আয়না দেখতে হয় ।আপনারা দয়া করে স্মৃতি নির্ভর লেখা গুলো কে বিশ্বাস করার থেকে রস আরোহণ কে প্রাধান্য দিবেন।
চলুন, আজকে আমরা পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের(ষষ্ট ব্যাচ) আলম ভাইয়ের সাথেই কাটাই
শোককে শক্তিতে পরিনত করার কথা আকসারই শোনা যায়।
দুনিয়া পেরেশানির যায়গা। যত পেরেশানই আসুক, টিকে থাকতে হলে শোক কে শক্তিতে পরিনত না করলে হারিয়ে যেতে হয়।তাই মৃতের চল্লিশার খাবারদাবারের আয়োজন বিয়ে বাড়ির আয়োজন থেকে বোধকরি কম নয় ।এ খাবারের ষোল আনা হক্ক রাখা অভাজনদের, মাঝে মাঝে বাগড়া দেয়ার বিষয়টা উপেক্ষা করলে, ঘৃতলবনতৈলতণ্ডুল সহযোগে উপাদেয় খুশবাই বিরিয়ানি তে ক্যালরি তথা শক্তি অর্জনের প্রয়াস দেখে আন্দাজ করতে কষ্ট হয়না, মৃতের নিকটজনেরা শোক কে শক্তিতে পরিনত করতে কতটা মরিয়া।
কিন্তু ,শক্তি যদি শোকে রূপ নেয়? ঘটনাটা খুলেই বলিঃ
প্রতিদিনের বৈকালিক জলখাবার সারতে বাবর ভাই, রাজুভাই,তুষার ভাই,প্রদিপ ভাই তাঞ্জিনা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট কে বেছে নিয়েছিলেন।
বৃষ্টির দিনে কমলাপুর রেল স্টেশনে যেমনটা হয়। বৃষ্টি যেভাবেই হউক না কেন, তা টেরচা কি খাড়া- আপনি ভিজবেনই।(আর্কিটেক্ট যে দেশের ,ঐ দেশে বাংলাদেশের মতো সুন্দর আর বৈচিত্র্যময় বৃষ্টি হয়না বলে ,এ ভুল টা হয়েছে)। তাঞ্জিনার যে খাবরই খান না কেন, আপনার পেটে মোচড় দিবেই। মিষ্টান্নের কথায় পরে আসছি , অন্য সকল খাবারে তেল, ঝাল আর লবন ব্যাতিত অন্য স্বাদ পেতে আপনার যে পরিমান মেধা খরচ করতে হয় সে পরিমান মেধা দিয়ে আধা ডজন তাজমহল বানানো সম্ভব। ওখানকার মিষ্টির ব্যাপারে এমনও বলতে শুনেছি- এক জন রেগে গিয়ে আরেকজনকে বলছে,” বাড়াবাড়ি করলে তাঞ্জিনার মিষ্টি দিয়া ঢিল মাইরা মাথা ফাডাইয়া ফেলুম”।
তবুও সবাই যেত। কারন একটাইঃ
বারোমাস ফ্লানেলের শার্ট পড়া আনোয়ার মামু, স্টুডেন্টদের অত্যাধিক স্নেহ করতেন- একদম নিখাদ।এদের মধ্যে উক্ত চার জন ভদ্র বলে একটু বেশিই খাতির পেতেন।পাকস্থলির উপর আস্থা কম থাকায়,উনারা খেতেন অতি অল্প- এ নিয়ে আনোয়ার মামু রীতিমতো বিদ্রুপ করতেন।মামুর গঞ্জনা সইতে না পেরে এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে আনোয়ার মামুকে সায়েস্তা করতে উনারা আলম ভাইয়ের শরণাপন্ন হলেন। আলম ভাইয়ের সেইদিন ১০২ জ্বর আর অরুচি। কিছুই খেতে ভাল লাগেনা। সব শোনার পর আলম ভাই এ অসুস্থ শরীর নিয়ে চারজন সহ তাঞ্জিনা তে হাজির হলেন।
বাবর ভাইঃ”মামু, এরে নিয়া আসছি,এরে যতো খুশি খাওয়ান”
মামুঃ(অবহেলাভরে, আলম ভাইয়ের জ্বর কাতর চেহারা জরীপ করে)”এহ!কি আর খাইব? এতো বেরাইম্মা আর আলাক!!”
রাজুঃ”বাজি লাগলে লাগেন?আউয়াজ কম “
মামু (আলম ভাইয়ের পাশে দু চক্কর লাগিয়ে ঈষৎ ঠোট বাকিয়ে, কাচের আলমিরা দিকে আঙ্গুল তুলে)ঃ” আমার এ খানে দুই কেজি লাল মিষ্টি আছে, খাইতে পারলে তাঞ্জিনাতে আপনাদের পাঁচ জনের আজীবন ফ্রি , না পারলে ২ কেজির দাম দিবেন”
আলম ভাই(জ্বরের ঘোরে কাচু মাচু হয়ে অসহায় ভঙ্গিতে)ঃ “মামু এগুলো তো বাসি মিষ্টি!”
মামুঃ(ভিলেন হাসি সহকারে)ঃ”পারবেন না, সাহস নাই কইলেই হয়। হ এগুলা সাত দিনের বাসি। পারবেন না , খালি ফডর ফডর!”
আলম ভাই আর যাই হোক বাজির কথায় পেছানোর লোক না।
একটা একটা করে মিষ্টি ধরে, বড় করে হা করে গলার কাছে নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন আর ক্যোঁৎ করে গিলে ফেলছেন- জ্বিহবায় স্বাদ যথা সম্ভব কম স্পর্শ করে। পাছে জ্বিহবা বিদ্রোহ ঘোষণা না করতে পারে।
মন খারাপ করে দুই কেজি মিষ্টি খেয়ে নিলেন। মাঝখানে একটু লবন খাবার জন্য থেমেছিলেন।
উদভ্রান্ত আনোয়ার মামুর তখনকার চেহারা হয়েছিল, মাঝ নদীতে ফেরির মাঝে কোট পাতলুন পড়া বাথরুমের বেগ আটকে রাখা কেতাদুরস্ত ভদ্রলোকের মতো, ময়লা হয়ে যাবার ভয়ে টয়লেটেও যেতে পারছেন না,আর বেগ সামলাতেও পারছেন না, আবার টয়লেটের প্রবল জনপ্রিয়তার কারনে সিরিয়ালও পাচ্ছেন না।
সে রাতে ওনার এক বন্ধুর বোনের বিয়ে ছিল। না যেয়ে উপায় ছিলনা।
©somewhere in net ltd.