![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাবতে অবাক লাগে সময় কি করে এত দ্রুত চলে যায়, এখনও চোখ বন্ধ করে পুরানো সব বন্ধুদের চেহারা যখন মনের আয়নাতে ভাসে আর ভাবি "আহ আবার যদি সেদিনে ফিরে যেতে পারতাম"। আব্বু সরকারী কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে কলোনীতেই শৈশব কৈশর পার করেছি অনাবিল আনন্দ নিয়ে।
আজ আমি আমার সেইছেলেবেলার প্রিয় বন্ধুদের মুখগুলোকে চেষ্টা করব আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার। আমরা যখন আড্ডা দিতাম তখন কিন্তু এত সুদ্ধ উচ্চারনে কথা বলতাম না, কেউ যদি আমাদের মাঝে ভূলেও ওইভাবে কথাবলত তাহলে সারাদিন তার উপর ঘূর্ণিঝড় প্রবাহিত হত।
আমরা আমাদের বন্ধুদের কেউই তাদের নিজস্ব ডাকনামে ডাকতাম না সবারই তার নিজস্ব গুনাগুনের উপরে ভিত্তি করে টাইটেল(ছদ্দনাম) দেয়া হত। কৈশরে যখন নতুন নতুন সিগারেট খাওয়া ধরলাম পকেটে আর কতইবা টাকা থাকত নিজেদের মধ্যে বুদ্ধি করে সমঝোতা করলাম কেউ একটা সিগারেট ধরালে চুক্তি অনুযায়ী তার প্রথম চুক্তিবদ্ধ বন্ধুদের দিতে হবে যদি তারা উপস্থিত না থাকে তাহলে ফাস্টবুক সেকেন্ডবুক অনুসারে সিগারেট বণ্টন হত, যার যত চুক্তি সেই তত সিগারেটএ ভাগ বসাতে পারত। তখন কেউই একটা সিগারেট টানত না শেষ একটাবুক ছিলো পুক্টিবুক মানে লাস্টটান।
সুজন-সখি আমার খুব কাছের একজন, আমি আমার নিজেকে যতটা না চিনি আমার মনে হয় আমার এই বন্ধুটা আমাকে আমার চেয়ে ভাল বুঝতে পারে, তার ছদ্দনাম ভণ্ড, আমাদের মধ্যে ওই নামাজ কলমার জন্য সবাইকে পীড়াপিড়ী করত, আমার প্রতি তার বিশেষ ভালবাসার জন্য সেই একটু আমার জন্য একচোখা নীতি অবলম্বন করত, যেমন আমি বন্ধুদের আড্ডাতে খারাপ হয়ে যাব এই চিন্তায় তার মাথা খারাপ হয়ে যেত, আমাকে কিকরে আড্ডা থেকে বের করা যায় তা নিয়ে তার চিন্তার কমতি ছিলনা সে শুধু চাইত আমিই শুধু তার সাথে আড্ডা দেই, আমার কিছু বন্ধুদের মাঝে আবার স্কুল পালানোর ব্যারাম ছিলো, তো আমার বাসাই ছিলো স্কুলপালানো বন্ধুদের বেষ্টপ্লেস, ত আমার এই প্রানের বন্ধুটা আমাকে সহ আমার অন্যান্য স্কুলপলাতক বন্ধুদের শিক্ষা দেয়ার জন্য স্কুলের স্যারের কাছে নালিশ করল, স্যার ওইদিনই একশনে এলেন এবং আমার ১২ জন বন্ধুকে ধরে নিয়ে গেলেন, আমার বাসায় আড্ডা শেষ, বেশকিছুদিন পর যখন সুজন-সখির এই কীর্তি প্রকাশ পেল কেউ চিন্তাও করে নি সুজন-সখি এই কাজ করতে পারে যাক আমার আড্ডা বন্ধের জন্য তার এই মহান কর্মের পুরস্কারসরূপ তার নাম আমাদের মাঝে ভণ্ড নামে ব্যপক পরিচিতি লাভ কর, আমি কক্ষনো ভূলেও তারে এই নামে ডাকতাম না।
খ্যাশিয়ার- আমার বন্ধুর ছদ্দনাম, এই বন্ধুটি আ্মার খুব হিসাবী, তার হিসাবী স্বভাবের জন্য তার টাইটেল নেইম ছিল খ্যাশিয়ার, আমাদের মধ্যে খুব ভালো ফুটবল খেলত, নিজের নামের সাথে নামকরা এক ফুটবলার নামের মিল ছিলো বলেই কিনা কে জানে, একটু খাটো, খুব চাপা স্বভাবের, আমার এই বন্ধুটির নানাবাড়ীতে যেকদিনই বেড়াতাম মন চাইত না যে আবার ঢাকা আসি, এই বন্ধুটির জেদ ছিলো খুব বেশী, সে একবার বাসা থেকে রাগ করে গ্লাসদিয়ে হাত কেটে সোজা আমার বাসায়, ওকে নিয়ে জীবনের প্রথম পালানো ঢাকা থেকে সুজন-সখির গ্রামের বাড়ী, সাথে ছিল আমার আরেক মজার বন্ধু ও-হাসান(ছদ্দনাম)।
আখকাঠা- আমার এই বন্ধুটির সাথে পরিচয় আমার স্কুলজীবনেরও আগে থেকে, হিন্দুদের ত আর খতনা হয় না তাই তার ছদ্দনাম আখকাঠা, খুব প্রতিভাবান ক্রিকেট খেলোয়াড়, আমাদের মধ্যে অপেনিন ব্যাটসম্যান, তার নামডাক ছিল আশেপাশের এলাকাগুলোতে, একটি এক্সিডেন্টে তার খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি ঘটে। এখনো মনেপড়ে তার রক্তের প্রয়োজনে আমাদের সবার সেই সময়ে হাসপাতালে ছুটে চলা , তার আবার ও নেগেটিভ, আমাদের মধ্যে শুধুমাত্র একজনেরই ছিল ও নেগেটভ, ওই সময় বুঝলাম বিনামূল্যে রক্তদানের সুফলতা, এরপর থেকে আমি নিজে প্রতি ৪ মাস পরপর কোয়ান্টামে গিয়ে রক্তদান করতাম।
খ্যাশিয়ার আর আখকাঠা ছিল আমার সিগারেট চুক্তিতে অর্থাৎ আমি বিড়ি ধরালে প্রথম এই দুইজনকে দিতে হবে আর এরা না থাকলে তখন আমার সিগারেট বিলি হই ত ফাস্টবুক সেকেন্ডবুক এর মাধ্যমে।
চুইঙ্গাম- আমার এইবন্ধুর বাসায় যে আমি কতরাত কাটাইছি তা মনে হয় আমি আমার আত্মীয়স্বজনদের বাসায়ও কাটাইনি, ছেলেখুব ভদ্র তাইবলে গালি দিত এইভাবে তোর মায়েরে চুইঙ্গাম, ওই থেকে নাম চুইঙ্গাম। ওর বাসার ৩টা জিনিষ আমি পাইতাম যা আমি আমার বাসায় পাই না, ৫তলা বাড়ীতে ওই ৫তলা থাকত, ওর ঘরে কম্পিউটার, বিড়ি খাওয়ার স্বাধীনতা, মাঝরাতে ছাদেশুয়ে থাকার যে মজা তা আজও অন্যবন্ধুদের সাথে পাই না, আমি যে কি পরিমাণ আমার এই বন্ধুটারে পছন্দ করি তা ভাষায় লিখতে পারব না, আমার জীবনের আনন্দময় প্রায়সব গুলো ট্যুরে আমার সঙ্গী।
ভোটকা- ছেলেবেলাতে খুব মোটা ছিল বলে এই নাম, আমাদের আড্ডার প্রাণ, কোনকথা দিয়েই তারে আমরা সাইজ করতে পারতাম না, হাজ্জোজল প্রাণোবন্ত বন্ধুটি আড্ডাতে থাকলে আমাদের হাসতেহাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যেত, রসে ভরা তার কথামালা।
চামলা- খুব চামবাজ টাইপের, পাড়ার কোনো বড়ভাইর পকেট থেকে কিছু খসানোর জুরি নাই তার, অথবা কোনোবন্ধুর পকেট হাল্কা করতেও তার জুরি মেলা ভার, ওয়ারফেজ সব গান ছিল তার মুখস্ত, কোরাস করে তার সাথে গান গাইতাম।
ভোন্দা- চেহারাটাই ছিল এমন যে ভাজা মাছ উল্টাইয়্যা খাইতে পারে না, কিন্তু চালাকের ১নং, ওর বিল্ডিংয়ের ছাদেই আড্ডাবাজির হাতেখড়ি, বিড়ি ও খেতাম, কার্ড খেলতাম, আমরা কিছু না কিছু নিয়া অরে খোচাইতাম, কিছু বলে না বলে না ধুম করে এমন কথার প্যাচে ফেলত, অইখান থেকে উদ্ধার হইতে জান তেনাতেনা, জেমস এর খুব ভক্ত, জেমসের-অনন্যা গানটা ওর সাথে গলা ছেড়ে গাইতাম।
ও-হাসান -কি যেন একটা ফর্মফিলাপ করতে গিয়ে এইনাম বিপত্তি, ফর্মটির শেষে লিখা ছিল নাম ও সাক্ষর, সে তার নাম লিখার পর এমনভাবে ও-হাসান লিখল যে আমাদের মধ্যে এইনাম নিয়ে এখনো বেচে আছে। পড়ালেখায় একটূ দুর্বল হলেও আমাদের আড্ডার প্রাণ ছিল, খুব হাসিখুসি টাইপ ছেলে, তার জীবনের প্রথম প্রেমে পড়া ও তার প্রোপজ স্টাইল আজো মনের কোণে ভেসে উঠে, চাইনিজ স্টাইলে মাথাকে ঝুকিয়ে একহাতে গোলাপফুল বাড়িয়ে ধরা।
চাম্পু- সিঙ্গেলহাড্ডি নাম থেকে পরিবর্তিত পরিশোধন হয়ে চাম্পু নামে বিলিন হয়েছে, সব খেলাতে তার পারদর্শিতা ছিল।
বস্তি- আমার এই বন্ধুটা এখন আর দুনিয়াতে নেই, তোরে সবাই খুব মিস করে রে, যেখানে থাকিস ভাল থাকিস দোস্ত, ওর মুখ প্রচন্ডরকমের খারাপ, এমন এমন সব গালি জানত ও দিত, যে খাইত তার ২~৪টা লোম শহীদ হয়ে যেত, বস্তির পোলাপাইন গুলাও ওর এই স্টক জানত কিনা কে জানে।
হিজুদা- আমরা মজা করে বলতাম তোর ক্রোমজম ১টা কম, ও নাকি সুরে গান গাইত বলে, মেয়েদের মত কথায় কথায় অভিমান করত বলে ২২ নামে ডাকতাম, বহুবিবর্তন এর পরে হিজুদা নামে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
নুরা-পাগলা- ধুম করে রেগে যেত মাথা হয়ে যেত ফ্রটিনাইন বলে এইনাম করন।
আমি হ্যাজাক নামে পরিচিত বন্ধুমহলে, অনেক সময় আমাকে ২বার করে বুঝাতে হয় সহজে বুঝি না বলে, টীউবলাইট নামেই প্রথম আত্তপ্রকাশ করি, পরে সময়ের প্রয়োজনে হ্যাজাক নামধারণ করি।
বহুবছর আগে কফিহাউজ গানটির মত আমরাও নিজেদের নিয়ে গান লিখেছিলাম মজা করে, তখন বুঝিনি গানের ব্যাথা, আজ কিছু সুখ-দুখের স্মৃতি শেয়ার করলাম। আমি নতুন লেখক তাই মনের কথাগুলো হয়ত সুন্দরভাবে লিখে যেতে পারলাম না।
©somewhere in net ltd.