নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আড়ালে রাখা কিছু তিক্ত সত্য যা, আমরা কখনো প্রকাশ করি না।

ফেরদৌসী মাসুদ

আমি পরিশ্রমে বিশ্বাসী, বিনা পরিশ্রমে একমুঠো অন্ন‌ও জোটে না।

ফেরদৌসী মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাজীদের জন্য সতর্কতা

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ২:২৭

বৃহস্পতিবার, ২২ডিসেম্বার, ২০২২।

আপনি যদি হজ্ব বা ওমরা করতে ইচ্ছা পোষণ করেন ,তাহলে এই লেখাটি একান্তই আপনার জন্য।    অথবা,যদি আপনার পরিচিত কেউ হজ্ব বা ওমরা করতে ইচ্ছা পোষণ করেন তবুও এই লেখাটি আপনার জন্য।

বলে রাখা ভালো যে, আমি পবিত্র মক্কা নগরীর, মসজিদুল হারাম সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করি। সে সুবাদে, আমি ও আমার সহকর্মীদের অনেকেই জোহর ও আসরের নামাজ "মসজিদুল হারামেই" আদায় করে থাকি। এই অল্প সময়ের মাঝে অনেক বাংলাদেশী, পাকিস্তানি ছাড়াও অন্যান্য রাষ্ট্রের হাজী সাহেবদের সাথে কথা হয় ও একটি কথাই তারা জিজ্ঞেস করে, " এই হোটেল টি কোথায়? " অর্থাৎ তিনি তার হোটেলটি খুঁজে পাচ্ছেন না। যদি ঠিকানাটি পরিচিত হয় তাহলে বলে দেই  অন্যথায় দুঃখিত বলে চলে আসতে হয়।

কিন্তু আজ, বৃহস্পতিবার, ২২ডিসেম্বার, ২০২২ইং,  আমরা ৬/৭ জন , ইন্জিনিয়ার, ফোরকান, লিডম্যান সহ প্রজেক্টের বাহিরে (ইব্রাহীম খলিল রোডে) ডিউটিতে ছিলাম। এমতাবস্থায় একজন (বাংলাদেশী) ভদ্রমহিলা এসে একটি কার্ড দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "এই হোটেলটি কোথায় আপনারা চেনেন কিনা?) যেহেতু আমাদের ইন্জিনিয়ার, ফোরম্যান , লিডম্যান সাথে ছিলেন সেহেতু ইন্জিনিয়ার সাহেব নিজেই হোটেলের ঠিকানা বাহির করার চেষ্টা করলেন। ইন্জিনিয়ার সাহেব কার্ডে দেয়া নাম্বারে কল দিয়ে ঠিকানাটি জেনে নিলেন ও আমাদের লিডম্যানের সহযোগিতায় ভদ্রমহিলাকে নিদৃষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্হা করলেন।
এখানে আর একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। আমরা সকলেই কমবেশি জানি যে, মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে তাপমাত্রা তুলনা মূলক বেশিই হয়। এই দেশ গুলোতে কেউ খালি পায়ে হাঁটার কথা কল্পনাতেও চিন্তা করে না। আমাদের লিডম্যান তখন উক্ত মহিলাকে নিয়ে গন্তব্যের দিকে র‌ওয়ানা হবেন , ইন্জিনিয়ার সাহেব লক্ষ্য করলেন, ভদ্রমহিলার পায়ে কোন জুতা বা স্যান্ডেল নেই। ইন্জিনিয়ার সাহেব লিডম্যান কে 50 রিয়াল দিলেন ও একজোড়া জুতা বা স্যান্ডেল কিনে দেয়ার কথা বললেন।
ঘটনাটি এখানেই শেষ হলে পারতো , কিন্তু এর পরের বিষয় টি ছিলো আরো মর্মান্তিক যা জানা যায় , আমাদের লিডম্যান ফিরে আসার পর। আমি কৌতুহলী হয়ে , আমাদের লিডম্যান কে হোটেলের ঠিকানা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, "হোটেল টি কোথায়?" আমাদের লিডম্যান উত্তরে বললেন, "সেটা কোন সরকারি রেজিস্ট্রাট হোটেল নয়। এবং সেই হোটেলের সামনে কোন সাইনবোর্ড‌ও নেই, যা দেখে কেউ চিনতে পারবে যে , এটা কোন হাজীদের হোটেল বা ক্যাম্প। আমাদের লিডম্যান আরো বলেলেন , " সেখানে যাওয়ার পর কার্ডে দেয়া নাম্বারে কল দিলে হোটেল কর্তৃপক্ষ কল রিসিভ না করে হোটেলের সামনে খুঁজতে থাকে , কোন ব্যক্তি তাকে কল দিতেছে এবং সাথে কোন পুলিশ আছে কিনা"।

প্রিয় পাঠক, আপনি একবার চিন্তা করুন, এই এজেন্সি গুলো মিষ্টি কথা ব'লে, হাজ্বীদের উন্নত সেবা দেয়ার নাম ক'রে, তারা কিভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ।

আজকে, আরো একজন বৃদ্ধ হাজী সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ হল, যা পূর্বের ঘটনা থেকে আরো বেশি মর্মান্তিক। আমি ও আমার সহকর্মী ভাই লক্ষ্য করলাম, একজন বৃদ্ধ হাজী সাহেব এহরাম বাঁধা অবস্থায় (এহরামের সাদা কাপড় পরিধান) জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে, দুই পা ফোলা অবস্থায়, এক কোনায় বসে আছেন এবং রুটি খাচ্ছিলেন। আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ,
"হাজী সাহেব, আপনি এখানে এভাবে মলিন হয়ে বসে আছেন কেন?"
হাজী সাহেব বললেন, "আমি হোটেলের ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছি " । আমার সহকর্মী ভাই আবার জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনি কি একা এসেছেন? "  তিনি বলেন, না , আমার মেয়ে ও স্ত্রী আমার সাথে ছিল। আমি পানি আনতে গিয়েছিলাম, এরপর রাস্তা হারিয়ে ফেলি।
আমরা তার কাগজপত্র খুঁজে দেখলাম , তার পরিবারের কারো নাম্বার পাওয়ার আশায় কিন্তু সেখানে কোন উল্লেখযোগ্য কারো নাম্বার পাওয়া যায়নি। এবং তার কাগজ গুলো অধিকাংশ‌ই পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
আমরা হাজী সাহেব কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি এখানে কতক্ষন থেকে আছেন। তিনি বললেন, "দুই দিন"।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.