নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

াহো

াহো › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিদিন ৪১ জন করে হত্যা করার তথ্য সে সময়ের দেশি-বিদেশি এমনকি জাসদের নিজেদের মুখপত্র গণকণ্ঠেও নাই।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩৬

জাসদের প্রতিষ্ঠার এক বছর বাদ দিলে বাদবাকি দু’বছর অর্থাৎ ৭৩০ দিনে ৩০,০০০ কর্মী হত্যা মানে প্রতিদিন ৪১ জন করে হত্যা



করার তথ্য মিলে যা সে সময়ের দেশি-বিদেশি কোনও মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়নি এমনকি জাসদের নিজেদের মুখপত্র গণকণ্ঠেও নাই। ঘটনার পরম্পরা বাদে হঠাৎ করেই একদিন লেখা হলো, রক্ষীবাহিনী তাদের ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩৭

াহো বলেছেন: ৭৫ সালে মুজিব কর্তৃক বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেবার কাহিনী বলার আগে বলা দরকার যে, উল্লেখিত সাড়ে ৩ বছরে দেশের সবগুলো সংবাদপত্রই চালু ছিল এবং সংবাদ প্রকাশে কোনরূপ সেন্সরশীপই বলবৎ ছিল না, যা খুশি তাই লিখা যেতো বা লিখা হতো, ৭৫ সালের জুন মাসে ৪টি বাদে সকল সংবাদপত্র বলতে জামায়াতের সংগ্রাম, মুসলিম লীগের আজাদ, জাসদের গণকণ্ঠ ও জনপদ, পূর্বদেশ, সংবাদ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল আর মফস্বলের ১২২টি সাপ্তাহিক তখনও চালু ছিল। আর যখন এগুলোকে বন্ধ করা হয় ঠিক তার ২ মাসের মাথায় মুজিবকে হত্যা করা হলো। সেসব দিনের গণকণ্ঠ ও সাপ্তাহিক হলিডে’র পাতা উলটালে এখনো মনে হয়, তারা কীভাবে কত ন্যাক্কারজনক ঘৃণার্হ্য ভাষায় সরকারের সমালোচনা করতো যেভাষা এখন আর কাগজে লিখা হয় না। দৈনিক গণকণ্ঠের প্রচারণার ধরন ছিল জার্মান নাৎসি বাহিনীর গোয়েবেলসীয় কায়দায় যে মিথ্যা কিনা বার বার প্রচার করলে একদিন সত্য বলে মনে হয় - সেই রকম।

বিগত সরকারগুলোর আমলে ঘটা করে সিপাহী-জনতার বিপ্লব ৭ নভেম্বর পালন করা হয়, বলা হয় ওইদিন ১০ লাখ লোক সিপাহী-জনতাকে অভিনন্দন জানাতে রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু, আশ্চর্যজনক হচ্ছে, পরেরদিনই ওই ১০ লাখ লোক কীভাবে কোথায় গায়েব হয়ে গেলো, তার কোনও হদিসই পাওয়া গেলো না, কেন? এদেরকে আর কখনো রাস্তায় দেখা গেল না। কারণটা বলি, সেদিন মাত্র একদিনের জন্যই ছিল ওই কথিত সিপাহী-জনতার বিপ্লব, তারপর দিনের পর দিন বছরের পর বছর ধরে সব ধরনের সমাবেশ ও মিছিলের ওপর ছিল নিষেধাজ্ঞা আর রাতভর কারফিউ!

এখানে কর্ণেল এম.এ. হামিদের লিখা ‘তিনটি সেনা অভ্যত্থান’ বইয়ের কয়েকটি লাইনই বলে দেয় যে আসলে ওই মিছিলে কারা ছিল:
“আমরা জীপ নিয়ে শহরে ঘুরতে বের হলাম পরিস্থিতি দেখতে। যখন শাহবাগ মোড়ে পৌঁছলাম তখন বিপ্লবকে অভিনন্দন জানাতে আসা লোকজনের ভীড়ে হাইকোর্ট পর্যন্ত আর অগ্রসর হতে পারলাম না(ভীড়ের চোটে)। সেখানে আমাদের জীপ গাড়িটাকে ঘিরে নৃত্যরত হাজার হাজার লোকের মুখে তখন একটাই ধ্বনী ‘আল্লাহু আকবর’…
আমার তখন মনে হলো, জনতার প্রায় সবাই ইসলামপন্থী কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী। তারা বিরামহীভাবে ‘নারায়ে-তাকবির, আল্লাহু-আকবর’ বলে চিৎকার পাড়ছিল। ওই ভীড়ের মধ্যে আমি কোনও জাসদ সমর্থককে দেখলাম না”।

কর্ণেল হামিদের ওই বই যারা পড়েছে তারাই জানে যে, কর্ণেল হামিদ ছিলেন জেনারেল জিয়া’র একজন ঘনিষ্ট বন্ধু ও ক্লাসমেট এবং সিপাহী-জনতার অভ্যূত্থানের সামনের কাতারের একজন বীর। তবে তিনি শেখ মুজিব বা আওয়ামী লীগের বন্ধু কখনোই ছিলেন না।

ছবি (বাম থেকে): ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ, মেজর এটিএম হায়দার, কর্ণেল তাহের, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান।

যাইহোক, অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দলগুলোর মতই দেশের বিভিন্ন আর্থসামাজিক সমস্যা জনগণের কাছে তুলে ধরে জাসদ। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কম্যুনিষ্ট লীগের ছাত্রফ্রন্ট বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে ১৯৭২-৭৩ সালের বার্ষিক কার্যবিবরণীতে তৎকালীন জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বসমূহের বিশ্লেষণ করে জাতীয় বিপ্লবকে বিজয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে দ্বন্দ্বগুলোর অবসান ঘটানোর জন্য বিপ্লবের বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে দলিলে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। বাংলাদেশ কম্যুনিষ্ট লীগ সমাজতন্ত্রে উত্তরণে তিনটি ধাপ নির্ণয় করে বলে, “স্বাধীনতা সংগ্রামের তৃতীয় ধাপের পরিসমাপ্তি ঘটবে আওয়ামী লীগ ও তাদের সাম্রাজ্যবাদী এজেন্টদের সাথে সর্বহারাদের রক্তক্ষয়ী ভবিষ্যত সংগ্রামের মাধ্যমে।” সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে স্বার্থান্বেষী মহলের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হাতিয়ার হিসাবে বর্ণনা করা হয়। গ্রামের সামন্তবাদীর অবশেষ, মধ্যস্বত্ত্বভোগী এবং উঠতি মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে সর্বহারাদের শ্রেণীশত্রু বলে আখ্যায়িত করা হয় সেই দলিলে। দলিলে এও বলা হয়, জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে সর্বহারার শাসন কায়েম হওয়ার আগপর্যন্ত জনগণ বহিঃশোষণের শিকারে পরিণত হবে কারণ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদীদের পদানত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশ কম্যুনিষ্ট লীগের তত্ত্ব অনুযায়ী সাম্রাজ্যবাদী শোষণ পরিচালিত হবে মূলতঃ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ঋন ও অনুদানের মাধ্যমে। তবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে শোষিত হবে রুশ ও ভারতের দ্বারাও। এজন্য প্রয়োজনীয় শোষণমূলক অর্থনৈতিক সম্পর্কের নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। রিপোর্টে উদাহরণস্বরূপ বলা হয়, যুক্তিহীন এবং অন্যায়ভাবে ঢাকার পরিবর্তে দিল্লীতে ইন্দো-বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে(?)। এ সম্পর্কে বাংলাদেশ কম্যুনিষ্ট লীগ মনে করে কোন এক পর্যায়ে গণচীন বাঙ্গালীদের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবে। এই প্রেক্ষিতে যদিও কম্যুনিষ্ট লীগ নিজেদেরকে আর্ন্তজাতিক কম্যুনিষ্ট আন্দোলনের দ্বন্দ্বের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। তথাপি চীনপন্থী অন্যান্য সাম্যবাদী দলগুলো সম্পর্কে বন্ধুসুলভ মনোভাব পোষণ করার সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হয়েছিল রিপোর্টে। জাসদ মুক্তিযোদ্ধাদের ভেতর থেকে দলীয় সদস্য রিক্রুট করতে থাকে। সেনাবাহিনীর মধ্যেও তাদের প্রকাশনী লাল ইশতেহার এর মাধ্যমে গোপন সেল গঠনের উদ্যোগ নেয়।

১৯৭৪ সালের ২০ জানুয়ারী জাসদ, বাংলাদেশ কম্যুনিষ্ট লীগ এবং জাতীয় শ্রমিক লীগ (জাসদপন্থী) যৌথভাবে বাংলাদেশের উপর রুশ, ভারত ও আমেরিকান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যের বিরোধিতা করে এক হরতালের ডাক দেয়। হরতালের সময় নেতারা শিক্ষক এবং শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি জানান। তারা বাংলাদেশের সর্বপরিসরে দুর্নীতি, বিশেষ জরুরী আইন, সরকারের স্বজনপ্রীতি এবং বিশেষভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে পারমিট লাইসেন্স বিতরণের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দেশব্যাপী সেদিন পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। ১৭ মার্চের মধ্যে সরকার তাদের দাবি না মানলে তারা ঘেরাও কর্মসূচীর হুমকি দেন। ১৭ মার্চ জাসদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করতে গেলে পুলিশের সাথে স্বশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সেদিন পুলিশের গুলিতে ৩জন নিহত ও বেশ কিছু আহত হন। মেজর জলিল, আসম রব গ্রেফতার হন। গোপন সংগঠনের অন্যান্য নেতাদের সাথে সিরাজুল আলম খান সেদিন ঢাকা থেকে পালিয়ে গ্রামাঞ্চলে গিয়ে শেল্টার নেন এবং পল্লী এলাকায় জনমত গঠনে ব্রতী হন। সেদিনের ঘটনাকে অনেকে চরম হঠকারী প্ররোচণা বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। জনাব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জাসদ সম্পর্কে তার ‘স্বাধীনতার স্পৃহা সাম্যের ভয়’ নামক গ্রন্থে লেখেন, “মুসলিম লীগের ঘর ভেঙ্গে একদা আওয়ামী লীগ বের হয়ে এসেছিল। অনেকটা একই পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে বের হয়ে এসেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। এরা নিজেদেরকে বলছে র্যাডিকেল-চরমপন্থী। তাদের তরুণ ও বিরাট কর্মী বাহিনী যে সমাজতন্ত্রের ডাকেই এই দলে এসে যোগ দিয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু নেতৃত্বে যারা ছিলেন তারা মনে হয় সমাজতন্ত্রী ছিলেন না। শর্ষের মধ্যেই ছিল ভূত। তাদের ইচ্ছা ছিল শেখ মুজিবকে নিয়ে বিপ্লবী সরকার গঠন করবেন। কিন্তু শেখ মুজিব তাদের আস্ফালনে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি বা পাত্তা দেননি। ফলে এরা এগিয়ে গেছেন নিজেদের পথ ধরে। এদের দলের নামকরণের সাথে ‘জাতীয়’ শব্দটিকে আসলে আপতিক ঘটনা ছিল না। এদের সাথে বরং অন্যান্য জাতীয়তাবাদীদের নামের ও লক্ষ্যের হুবহু মিল পাওয়া যায়। নিজেদের শ্রেণীগত স্বার্থই দেখছিলেন (যার সঙ্গে তাদের নিজেদের ভবিষ্যত ছিল ওতপ্রোতভাবে জড়িত)। কিন্তু শ্রেণী সংগ্রামের আওয়াজ দিয়েছেন যাতে লোক জড়ো করা যায়, নায়ক হওয়া যায় নতুন প্রজন্মের ও নতুন বাংলাদেশের। শেখ মুজিব যদি আর না ফেরেন তাহলে বামপন্থীদের কি করে মোকাবেলা করা যাবে তার আগাম ব্যবস্থা হিসেবে এরা ‘৭১-এ মুজিব বাহিনী গড়েছিলেন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তাদের রাজনীতি ছিল বুর্জোয়াদের রাজনীতিই। যদিও তাদের আওয়াজগুলো ছিল ‘বিপ্লবী।’

জাসদ ও মুজিব বাহিনীর জন্মবৃত্তান্ত থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে উঠে আর তা মূলতঃ দু’টো সুদূরপ্রসারী কারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তা হচ্ছে:
১. স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে পাকিস্তানের উচ্ছিষ্ট শক্তিসমূহের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করা।
২. ভারতের ক্ষমতা বলয়ের একাংশের সমর্থন ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গড়ে ওঠা এ বাহিনীর মাধ্যমে মুজিব ও তার সরকারকে রক্ষার কাজে আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানো। কিন্তু জাসদের মূল্যায়ন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে যেভাবেই করা হোক না কেন একটি সত্যকে কোন ঐতিহাসিকই অস্বীকার করতে পারবেন না যে, নতুন দেশের নতুন সরকারকে অস্থিতিশীল ও চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিতে সেদিন জাসদের কোনও জুড়ি ছিল না। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালনে তৎকালীন জাসদের অনীহা, এমনকি অস্বীকৃতির বিষয়টিও ছিল লক্ষ্য করার মত। জনযুদ্ধের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশটিতে সেদিন জাসদ যে তাণ্ডব সৃষ্টি করেছিল, তার পেছনে কোন শক্তি ইন্ধন ও অর্থ জুগিয়েছিল, সেটি পাকিস্তান নাকি ভারত, আমেরিকা নাকি রাশিয়া তা এখনও সামাজিক গবেষণার বিষয় হয়ে আছে। সেসব অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে জাসদের সেদিন কতটুকু লাভ বা লোকসান হয়েছে সেই হিসেব আজ আর না করলেও চলবে। তবে এটুকু বলা যায় যে, জাতীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি অপপ্রচারের বেড়াজাল তৈরিতে জাসদের সেদিনের ভুমিকা জিয়া-রশীদ-ফারুক চক্রের মুজিব হত্যার ক্লু তৈরিতে বিরাট ভুমিকা পালন করেছিল। জাসদ যেভাবে মুজিববাদী অপশাসনের দোহায় দিত, বাকশালকে ঘৃণার চোখে দেখতো আজকের জামায়াত-বিএনপি’ও তাই। যে ৩০ হাজার (কোথাও কোথাও এই সংখ্যা ৬০ হাজার আবার কোথাও বা এক লাখ ৩০ হাজার উল্লেখ পাওয়া যায়। এই সংখ্যা সর্বনিম্ন ৩০ হাজার ধরে হিসেব করলেও দেশের ৪৬৪টি থানা এলাকার প্রত্যেকটিতে গড়ে ৬৫ জন করে, ৬০ হাজার হলে ১৩০ জন আর ১,৩০,০০০ হলে ২৮০ জন নিহতের তথ্য থাকার কথা। তাছাড়া রক্ষীবাহিনীর ১৬ হাজার সদস্য মাত্র দুই বছরের মাথায় প্রত্যেকে গড়ে ২ জন করে জাসদকর্মী হত্যা করার কথা এবং জাসদের প্রতিষ্ঠার এক বছর বাদ দিলে বাদবাকি দু’বছর অর্থাৎ ৭৩০ দিনে ৩০,০০০ কর্মী হত্যা মানে প্রতিদিন ৪১ জন করে হত্যা করার তথ্য মিলে যা সে সময়ের দেশি-বিদেশি কোনও মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়নি এমনকি জাসদের নিজেদের মুখপত্র গণকণ্ঠেও নাই। ঘটনার পরম্পরা বাদে হঠাৎ করেই একদিন লেখা হলো, রক্ষীবাহিনী তাদের ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। মুজিব ৩০ লাখ মানুষের হত্যাকারীদের রেহাই দিয়ে শুধুমাত্র রাজনীতি করার অপরাধে নিজ দেশের ৩০ হাজার বা এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ হত্যা করেন - যে রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি নিজেই ১৩ বছর জেল খেটেছেন; তার পক্ষে এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর সে সময় দেশের মানুষ তাকে ভালোবেসে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধী দিতে গেলে তিনি দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়েই ওই উপাধী ধারণে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিলেন, ‘এখন ওসব করার সময় নয়, দেশের মানুষ না খেয়ে আছে; যেদিন সকলের মুখে হাসি ফোঁটাতে পারবো সেদিন তোমরা এসো।‘ যে জনগণ তাঁকে জাতির পিতা বলে মেনে নিয়েছিল সেই জনগণের উপর তিনি ওই রকম নির্দয় ও খড়গ হস্ত হতে পারেন না, আর এমনও নয় যে তিনি বিরোধীদলীয় রাজনীতি সম্পর্কে কিছু বুঝতেন না। গণহত্যা চালিয়ে ক্যান্টনমেন্টে থাকার নিয়ম, কিন্তু তা না করে তিনি ৩২ নম্বরের নিজ বাড়িতে কেন থাকতে গেলেন ঝুকি নিয়ে? এসব প্রশ্নের উত্তর প্রয়োজন। আবার জাসদ এমন কোনও অলৌকিক ক্ষমতাবলে জন্মলাভ করেনি যে, প্রতিষ্ঠার সঙ্গেই সঙ্গেই সারাদেশে সমভাবে রুটলেভেল পর্যন্ত বিস্তারলাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। বরং দেশের প্রায় অর্ধেক জেলাতেই জাসদের কোনও কার্যক্রমই ছিল না এবং বর্তমানেও নেই) জাসদ কর্মী হত্যার কথা বলা হয় তা জাসদ যতটা না গত ৩৬ বছর ধরে বলেছে বিএনপি বলেছে জাসদের পক্ষ হয়ে তার চেয়ে বেশি। এই নিহতের সঠিক পরিসংখ্যান কোথাও নেই, কেননা ব্যাপারটা একেবারেই মনগড়া এবং মিথ্যার বেসাতি মাত্র। আর স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের শহীদ হবার কথা জাসদ বা বিএনপি কোন দলই স্বীকার করেনি, জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেছে ২৬ হাজার; বরং তারা ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগকে যতোটা পারা যায় খাটো করার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে '৭৫ সালের পর থেকে অব্যাহতভাবে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বিজিত অস্ত্র, বিভিন্ন সূত্র ও পথ থেকে আলাদাভাবে সংগ্রীহিত অস্ত্র, পাক সেনাদের এদিক-সেদিক ছুঁড়ে ফেলে দেয়া অসংখ্য অস্ত্র, রাজাকারদের অস্ত্র, অন্যান্য নামী-বেনামী চরমপন্থী সংগঠনগুলোর সংগ্রীহিত অস্ত্র, চোর-ডাকাতদের অস্ত্র মিলিয়ে দেশে অবৈধ অস্ত্রের পরিমাণ ছিল পাহাড় সমান যার এক-চতুর্থাংশ অস্ত্রও তৎকালীন বাংলাদেশ স্বশস্ত্রবাহিনীর অস্ত্রভান্ডারে ছিল না। কাজেই ক্ষুদ্রসংখ্যক রক্ষীবাহিনী বা সেনাবাহিনী দিয়ে ওই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যাপারটিও ছিল চরম অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকিপুর্ণ। ‘৭৪ সালে রক্ষীবাহিনীর অস্ত্রউদ্ধার অভিযানে নরসিংদীর ন্যাপ(ভাষানী) নেতা আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া(পরবর্তীতে বিএনপি’র মহাসচিব)’র গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকেই উদ্ধার করা হয়েছিল এক ট্রাক অস্ত্র ও গোলাবারুদ। দেশব্যাপী অবৈধ অস্ত্রউদ্ধার অভিযানে রক্ষীবাহিনী শুধু যে জাসদকেই টার্গেট করেছিল সেটাও সত্য নয়; দলমত নির্বিশেষে যাদের কাছেই অস্ত্র ছিল তারাই ধরপাকড়ের শিকার হয়েছিল, আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রলীগও বাদ যায়নি।

মুজিব হত্যার পর ১৯৮০ সালে চৌধুরী খালেকুজ্জামান ও মাহবুবুল হক জাসদ থেকে পদত্যাগ করে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) গঠন করেন। আর মেজর জলিল জাসদ ত্যাগ করে গঠন করেন ইসলামী দল ‘জাতীয় মুক্তি আন্দোলন’ (অক্টোবর, ১৯৮৪)যে কিনা জাসদে থাকাকালীন নিজেকে মার্ক্সবাদী বলে দাবি করতেন এবং এই মতবাদের ওপর বিশ্লেষণাত্বক কিছু বইপুস্তকও রচনা করেন।
মেজর জলিল জাসদ ত্যাগের পর এই দলটি দুই উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে, একপক্ষ আসম রব-এর নেতৃত্বে এবং অপরপক্ষ শাজাহান সিরাজের নেতৃত্বে। সেসময় উপজেলা চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে অন্তর্দ্বন্ধই ছিল এই বিভক্তির কারণ। সিরাজুল আলম খানের সহযোগিতায় আসম রব চাচ্ছিলেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আর শাজাহান সিরাজ ও তার অনুসারীরা চাচ্ছিলেন নির্বাচন বর্জন করে ১৫ দলীয় ঐক্যজোটে যোগ দিতে। রব পরে এরশাদের ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে বিরোধীদলীয় নেতা হন। আর এভাবেই ‘জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’এর সব মিথ্যা এক সময় সত্যে প্রমানিত হয় আর তা হচ্ছে, তারা বিপ্লবীও ছিলেন না, সমাজতন্ত্রীও ছিলেন না; একশ্রেনীর সমালোচকের ভাষায় তারা ছিলেন ‘জারজ সন্তান দল’ আর ৩০ হাজার নেতাকর্মী হত্যার তথ্য সেরকমই একটি অপপ্রচার যার পুরোটাই মিথ্যা দিয়ে সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক।

(সমাপ্ত)

-প্রথম অধ্যায়
---------------------------------------
সহায়ক লিংক দ্রষ্টব্য:
- Probe News Magazine
- The Journal of Asian Studies
- http://www.mukto-mona.com
- http://www.banglapedia.org
- Google Books
- Maoism in Bangladesh: In Case of the Sarbohara Party
- Encyclopaedia of Bangladesh (Set Of 30 Vols): Discontent and Background of Liberation War
- Bangladesh: An unfinished revolution? (By Prof. Maniruzzaman, Dept. of Political Science, RU and DU)
-------------------------------------

Click This Link

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৫৮

াহো বলেছেন:
প্রথম অধ্যায়
৩০ হাজার জাসদকর্মী হত্যা রহস্যের সন্ধানে
২২ শে জুন, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০০ |
Click This Link

২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৫৮

বাংলার হাসান বলেছেন: ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ এর আগ পর্যন্ত জাসদের কর্মী হত্যা করা হয়েছৈ ১০০০০ হাজারের মত।

জিয়ার আমলে এর চাইতে অধিক সংখ্যায় জাসদ কর্মীকে হত্যা করা হয়।

একটু খোজ-খবর করুন পেয়ে যাবেন কথার সত্যতা।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০১

াহো বলেছেন: স্বাধীনতার পরের তিনবছরে ৬০০০ হাজারের ও বেশী রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ঘটে ।

সহিংসতা সারাদেশব্যাপি ছড়িয়ে পরার আশংকা তৈরী হলে মুজিব রাষ্ট্রীয় জরুরী অবস্থা ঘোষনা করেন । চরমবাম ও চরম ডানপন্থী সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করা হয়, পত্রিকাগুলোকে নিয়ে আসা হয় সরকারী নিয়ন্ত্রনে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয় ।
এ উদ্যোগগুলো বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে গৃহীত হলেও অনেকেই সমালোচনামুখর হয়ে উঠেন । সমালোচকদের উদ্দেশ্যে মুজিব তার স্বভাবসুলভ ভংগীতে বলেনঃ-'ভুলে যেওনা আমি মাত্র তিনবছর সময় পেয়েছি । এই সময়ের মধ্যে তোমরা কোনো দৈব পরিবর্তন আশা করতে পারোনা' ।
যদি ও শেষ সময়ে তিনি নিজেই হতাশ ও বিরক্ত হয়ে কোন দৈব পরিবর্তন ঘটানোর জন্য অধৈর্য্য হয়ে পড়েছিলেন ।
source -আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন US সাময়িকী 'টাইম'-এ USA আগষ্ট ২৫,১৯৭৫

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১৬

াহো বলেছেন: source -আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন US সাময়িকী 'টাইম'-এ USA আগষ্ট ২৫,১৯৭৫

৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫২

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: এসব পুরনো অপলিপ্সা ধন্ধ
গৃহযুদ্ধের শিকার
লাগিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল
ক্ষতি সাধনে ব্যস্ত ছিল রুখতে স্বাধীনতা বাংলার ।
এরাই বানায় ইরাক , আফগান কঙ্গু
লুটে নিতে সম্পদ অধিকার
হে গনতান্ত্রিক শক্তি
সাবধান এখনই দরকার এক হওয়ার ।
সবাই হও সবার আপন
ভেঙে দাও সাম্রাজ্য বাদি যুলুমের অন্ধ সঞ্চালন
বৈরি মনোভাব উগ্র ধর্মান্ধতা
করে পরিহার
এস হয়ে ফিরায়ে আনি
শান্তির নিশান ওরায়ে
বাংলার মুক্তি জনতার ।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:০১

াহো বলেছেন: আপনি বাংলাদেশ ​​পাকিস্তান করতে জাতীয় সংগীত পরিবর্তন চান

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:০২

াহো বলেছেন: আপনার পুরানো এক পোস্ট

৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১৮

জেনারেশন সুপারস্টার বলেছেন: সিরাজুল আলম খানের ব্যাপারে আরও বেশী বেশী জানা দরকার।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১০

াহো বলেছেন: সিরাজুল আলম খান মেধাবী ছাত্র হিসাবে শিক্ষায়তনে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পরবর্তীকালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৩-’৬৪ এবং ১৯৬৪-’৬৫ এই দুই বছর তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি বাঙালির ‘জাতীয় রাষ্ট্র’ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষে ১৯৬২ সনে গোপন সংগঠন ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করেন। নিউক্লিয়াস ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নমেও পরিচিত। এই উদ্যোগে তাঁর প্রধান সহকর্মী ছিলেন আবদুর রাজ্জাক এবং কাজী আরেফ আহমেদ। ১৯৬২-’৭১ পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন, ৬-দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার আন্দোলন, ১১-দফা আন্দোলন পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়ন করে এই ‘নিউক্লিয়াস’। আন্দোলনের এক পর্যযে গড়ে তোলা হয় ‘নিউক্লিয়াসে’র রাজনৈতিক উইং বি.এল.এফ এবং সামরিক ‘জয় বাংলা বাহিনী’। স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে ‘জয় বাংলা’ সহ সকল স্লোগান নির্ধারণ এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে “...এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” বাক্যসমূহের সংযোজনের কৃতিত্ব ‘নিউক্লিয়াসে’র। এইসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিরাজুল আলম খানের ভুমিকা ছিল মুখ্য। ’৬৯-’৭০ সনে গন-আন্দোলনের চাপে ভেঙে পড়া পাকিস্তানী শাসনের সমান্তরালে ‘নিউক্লিয়াসে’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠন করা হয় ছাত্র-ব্রিগেড, যুব-ব্রিগেড, শ্রমিক-ব্রিগেড, নারী-ব্রিগেড, কৃষক-ব্রিগেড, সার্জেন্ট জহুর বাহিনী। এদের সদস্যরাএ ভেঙ্গে পডা পাকিস্তানী শাসনের পরিবর্তে যানবাহন চলাচল, ট্রেন-স্টীমার চালু রাখা, শিল্প-কারখানা উৎপাদন আব্যাহত রাখা এবং থানা পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খ্লা রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করে। নিউক্লিয়াসের সদস্যদের দ্বারা এইসব দূরুহ কাজ সাম্পাদনের জন্য কৌশল ও পরিকল্পনাও ‘নিউক্লিয়াসে’র। ১৯৭০-’৭১ সন নাগাদ বি.এল.ইফ এর সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ হাজারে। এদের প্রত্যেকেই মুক্তি্যুদ্ধ চলাকালে উন্নত সামরিক ট্রেনিং প্রাপ্ত হন এবং ‘মুজিব বাহিনী’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্হ ১১টি সেক্টরের পাশাপাশি ৪টি সেক্টরের বিভক্ত করে বি.এল.এফ-এর সশস্ত্র সংগ্রামের পরিকল্পনা ও কৌশল ছিল কেবল ভিন্ন ধরনের নয়, অনেক উন্নতমানের এবং বিজ্ঞানসম্মত। বি.এল.এফ-এর চার প্রধান ছিলেন সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক, আব্দুর রাজ্জক এবং তোফায়েল আহমেদ। ১৯৭১ সনের ১লা মার্চ ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় উদ্বোধনী সভা স্হগিত ঘোষণার পর পরই ২রা মার্চ বাংলাদেশর প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারণসহ ৩রা মার্চ ‘স্বাধীন বাংলার ইশ্‌তেহার’ ঘোশণার পরিকল্পনাও ‘নিউক্লিয়াসে’র। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে এই দুটি কাজ ছিলো প্রথম দিকনির্দেশনা। আর এই দুই গুরুদায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে আ স ম আবদূর রব এবং সাজাহান সিরাজ। ১৯৭০ সনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের নির্বাচিত করার দায়িত্ব পালন করে বি.এল.এফ। নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণ-আন্দোলনে গড়ে ওঠা জনমতকে সাংবিধানিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে গণরায়ে পরিণত করার এই কৌশলও নির্ধারণ করে বি.এল.এফ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সানন্দে এই সিদ্ধান্ত মেনে নেন। আন্দোলন, নির্বাচন, সমান্তরাল প্রশাসন এবং আসন্ন সশস্ত্র সংগ্রামকে হিসাবে নিয়ে বিভিন্ন বাহিনী গড়ে তোলার কৃতিত্ব সিরাজুল আলম খানের।

১৯৭১ সনে স্বাধীনতার পর আন্দোলন-সংগ্রামের রূপ ও চরিত্র বদলে যায়। গড়ে ওঠে একমাত্র বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। ১৯৭৫ সনের ৭ই নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ‘সিপাহী জনতার গণ-অভ্যুত্থান’ বাঙ্গালির জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। জাসদ গঠন এবং ‘সিপাহী জনতার গণ-অভ্যুত্থান’ এর নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল আলম খান। আর এই দুটি বৃহৎ ঘটনার নায়ক ছিলেন মেজর জলিল, আ স ম আবদুর রব এবং কর্ণেল আবু তাহের।

সিরাজুল আলম খান ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় ৭ বছর কারাভোগ করেন। সিরাজুল আলম খানের বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী অঙ্ক শাস্ত্রে হলেও দীর্ঘ জেল জীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজ বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর গড়ে উঠে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য এবং দক্ষতা। সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের অসকস বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬-’৯৭ সনে। আর্থ-সামাজিক বিশেষনে সিরাজুল আলম খানের তাত্বিক উদ্ভাবন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়। মার্কসীয় ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদে’র আলোকে বাংলাদেশের জনগণকে শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী হিসাবে বিভক্ত করে ‘রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক’ মডেল হাজির করেছেন সিরাজুল আলম খান। চিরাচরিত পার্লামেন্টারী ধাঁচের ‘অঞ্চল ভিত্তিক’ প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি শ্রম,কর্ম, পেশায় নিয়োজিত সমাজ শক্তি সমূহের ‘বিষয় ভিত্তিক’ প্রতিনিত্বের ব্যবস্থা সংবলিত ‘দুই কক্ষ’ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন, ফেডারেল সরকার ব্যস্থা প্রবর্তন, বাংলাদেশকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন এবং প্রাদেশিক সরকার গঠন, উপজেলা পর্যায়ে স্ব-শাসিত স্থানীয় সরকার পদ্ধতি চালু করার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ-পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক আইন ব্যবস'া ও শাসন কাঠামোর পরিবর্তে স্বাধীন দেশের উপযোগী শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মডেল উত্থাপন করেন তিনি। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা সমূহের স্বীকৃতির প্রয়োজনও তাঁর চিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশকে শিল্পায়ন করার লক্ষ্যে প্রবাসীদের অথায়নে ‘উপজেলা শিল্প এলাকা’ এবং ‘পৌর শিল্প এলাকা’ গঠন করার তাঁর প্রস্তাব ইতোমধ্যেই সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘মাইক্রো ক্রেডিট’ ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং ‘সামাজিক ব্যবসা’ (Social Business) এর সমর্থক তিনি। ৬৭ বছর বয়স্ক সিরাজুল আলম খান এখন দেশে-বিদেশে ‘রাজনৈতিক তাত্বিক ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে পরিচিত।

তাঁর দীর্ঘ ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে অসংখ্য ছাত্র-যুব নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক এক বিষ্ময়কর ব্যাপার। রাজনৈতিক তত্ত্ব উদ্ভাবন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন মডেল প্রণয়নে তাঁর প্রধান সহযোগীরা হলেন ড. জিল্লুর রহমান খান, প্রফেসর রাজিয়া আহমেদ এবং মহিউদ্দিন আহমদ।

ব্যক্তিগত জীবনে সিরাজুল আলম খান অবিবাহিত।

৫| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৭

মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেছেন: First +. Thank you. I always feel smoke in Bangladesh history between 1972-75.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.