![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অসৎ আনন্দের চেয়ে সৎ বেদনা অনেক ভাল।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, ধৈর্যে প্রতিযোগিতা কর। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২০০)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ- আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। আর তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫৫)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ- নিশ্চয় ধৈর্যশীলদের অপরিমিত পুরস্কার দেয়া হবে। (সূরা যুমার, আয়াত: ১০)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ- অবশ্য যে ধৈযর্ ধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয়, নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পেরই কাজ। (সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ৪৩)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ- হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫৩)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ- আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, যতক্ষণ না আমি জেনে নেই তোমাদের মধ্যে জিহাদকারী ও ধৈর্যশীলদেরকে এবং আমি তোমাদের ব্যাপারে পরীক্ষা করি। (সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩১)
এ সকল আয়াত ছাড়াও ধৈর্য ও তার গুরুত্ব সম্পর্কে আরো অসংখ্য আয়াত রয়েছে পবিত্র আল-কুরআনে।
এ আয়াতসমূহ থেকে আমরা যা শিখতে পারিঃ-
১- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ধৈর্য ধারণ করেতে হুকুম দিয়েছেন।
২- তিনি ধৈর্য ধারণে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করতে বলেছেন। তাই নিজেকে সকলের চেয়ে বেশী ধৈর্যশীল হিসেবে তৈরী করা প্রয়োজন।
৩- ঈমানদার সকল প্রকার বিপদ-আপদকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা হিসাবে গ্রহণ করবে। আর এতে ধৈর্য ধারণ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে থাকবে শুভ সংবাদ।
৪- আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পুরস্কার ও প্রতিদান দেবেন বিনা হিসাবে।
৫- ধৈর্য ও ক্ষমাকে আল্লাহ দৃঢ় সংকল্পের কাজ বলে প্রশংসা করেছেন।
৬- আল্লাহ তাআলা বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ ও সালাতের মাধ্যমে তারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
৭- ধৈর্যশীলদের সাথে আল্লাহর সাহায্য থাকে।
৮- আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন বিপদ-আপদ, বালা-মুসীবত, সমস্যা-সংকট দিয়ে পরীক্ষা করে প্রকাশ্যে প্রমাণ করতে চান যে, কে আল্লাহর পথে জিহাদ করতে প্রস্তত আর কে ধৈর্য ধারণ করতে পারে।
ধৈর্য বা সবরের সংজ্ঞাঃ- "সবর" আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল আটকে রাখা।
শরয়ী পরিভাষায় তিনটি বিষয়ে নিজেকে আটকে রাখার নাম সবর বা ধৈর্য।
প্রথম বিষয়ঃ- আল্লাহ তাআলার আদেশ-নির্দেশ পালনে নিজেকে আটকে রাখা।
দ্বিতীয় বিষয়ঃ- আল্লাহ তাআলা যা নিষেধ করেছেন তার দিকে যেতে নিজেকে আটকে রাখা বা বিরত রাখা।
তৃতীয় বিষয়ঃ- যে সকল বিপদ-আপদ আসবে সে সকল ব্যাপারে অসঙ্গত ও অনর্থক বা ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা থেকে নিজেকে আটকে রাখা।
এ বিষয়ের হাদীসসমূহঃ-
হাদীস- ১. আবু মালিক হারেস ইবনে আসেম আল-আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ- পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক। আর "আল-হামদুল্লিল্লাহ" আমলের পাল্লা পূর্ণ করে দেয়। ছুবহানাল্লাহ ও আল-হামদুলিল্লাহ উভয়ে আকাশসমূহ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ করে দেয়। নামাজ হল জ্যোতি। দান-সদকা হল প্রমাণ। সবর-ধৈর্য হচ্ছে আলো। আল-কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ হবে। প্রত্যেক মানুষ সকালে উঠে নিজেকে বিক্রি করে দেয়। এরপর সে নিজেকে মুক্ত করে অথবা ধ্বংস করে। বর্ণনায়ঃ- মুসলিম
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ- ১- পবিত্রতা মানুষের বাহ্যিক দিক। অন্তরের বিশ্বাস হল অপ্রকাশ্য বিষয়। বাহ্যিক ও অপ্রকাশ্য দুটো বিষয় নিয়েই ঈমান। সে হিসাবে পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধাংশ।
২- তাসবীহ (ছুবহানাল্লাহ) ও তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) এর ফজিলত। আমলের পাল্লায় এর রয়েছে অনেক গুরুত্ব।
৩- সালাত বা নামাজ ঈমানদারের অন্তরকে ও চেহারাকে উজ্জল করে। এমনিভাবে তা কবর ও হাশরে তার জন্য আলোকবর্তিকা হবে।
৪- দান-সদকা ও আল্লাহর পথে ব্যয় করা সঠিক ঈমানের একটি প্রমাণ। মুনাফিকরা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না।
৫- ধৈর্য-সবর হল ঈমানদারদের জন্য আলো স্বরূপ। এ আলো সুর্যের আলোর মত। যেমন এ হাদীসে এ আলোকে "জিয়া" বলে অভিহিত করা হয়েছে। আর "জিয়া" বলতে আল কুরআনে সুর্যের আলোকে বুঝানো হয়েছে। যা মানুষকে আলো দেয় ও তাপের মাধমে শক্তি যোগায়। ধৈর্য - সবর এমন বিষয় যা মানুষকে আলোকিত করে ও শক্তিশালী করে। ধৈর্য সংক্রান্ত হাদীসের এ অংশের সাথেই বিষয় শিরোনামের সম্পর্ক রয়েছে।
৬- যদি কেহ আল-কুরআনকে জীবনের পাথেয় হিসাবে গ্রহণ করে তাহলে আল-কুরআন তার পক্ষে প্রমাণ হবে। আর যদি কেহ আল-কুরআনকে বর্জন করে তাহলে বিচার দিবসে আল-কুরআন তার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়ে যাবে।
৭- সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রত্যেক মানুষই নিজেকে কাজ-কর্মের জন্য বিক্রি করে দেয়। কেহ ভাল কাজ করে নিজেকে মুক্ত ও স্বাধীন রাখে। আর কেহ খারাপ কাজ করে নিজের ধ্বংস ডেকে আনে।
হাদীস- ২. আবু সায়ীদ সাদ বিন মালেক বিন সিনান আল-খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, আনসারী সাহাবীদের মধ্য থেকে কিছু লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে সাহায্য চাইল। তিনি তাদেরকে দান করলেন। তারা আবার সাহায্য চাইল। তিনি আবার দান করলেন। শেষ পর্যন্ত যা কিছু তার কাছে ছিল সবই শেষ হয়ে গেল। যখন সবকিছু দান করে দিলেন তখন তিনি তাদের বললেন, "আমার কাছে যা কিছু সম্পদ আসে তা আমি তোমাদেরকে না দিয়ে জমা করে রাখি না। যে ব্যক্তি মানুষের কাছে চাওয়া থেকে মুক্ত থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে মুক্ত রাখেন। যে ব্যক্তি কারো মুখাপেক্ষী হতে চায় না, আল্লাহ তাকে ধনী বানিয়ে দেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করতে চায়, আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীল বানিয়ে দেন। ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ব্যাপক-বিস্তৃত সম্পদ কাউকে দান করা হয়নি।"
বর্ণনায়ঃ- বুখারী ও মুসলিম
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ-
১- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে কেহ কিছু চাইলে তাকে ফেরত দিতেন না। যতক্ষণ তার কাছে সম্পদ থাকত ততক্ষণ দান করতে থাকতেন। নিজের জন্য কখনো কিছু রেখে দিতেন না।
২- যে পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র থাকতে সামর্থ দান করেন। যে মানুষের কাছে হাত পাতা থেকে মুক্ত থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে মুক্ত থাকতে তাওফিক দান করেন।
৩- মানুষের কাছে যা আছে এর থেকে যে ব্যক্তি মুখাপেক্ষীহীন থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে সর্বদা মানুষ থেকে মুখাপেক্ষীহীন থাকতে সাহায্য করেন।
৪- যে ব্যক্তি নিজেকে ধৈর্যশীল বানাতে চায় আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীল হতে সাহায্য করেন।
৫- অভাবে পড়ে মানুষের কাছে না চাওয়া, নিজের অভাবের কথা প্রকাশ না করা ধৈর্যের অন্তর্ভূক্ত।
৬- যত চারিত্রিক সম্পদ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কার্যবরী হল ধৈর্য বা সবর। যাকে এ গুণটি দান করা হয়েছে সে অনেক মুল্যবান সম্পদ অর্জন করেছে।
হাদীস- ৩. আবু ইয়াহইয়া সুহাইব বিন সিনান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "ঈমানদারের বিষয় নিয়ে আমি খুব আশ্চর্য বোধ করি। তার সকল কাজেই আছে কল্যাণ। ঈমানদার ছাড়া অন্য কোন মানুষের এ সৌভাগ্য নেই। তার যদি আনন্দ বা সুখকর কোন বিষয় অর্জিত হয়, তাহলে সে আল্লাহ শোকর করবে, ফলে তার কল্যাণ হবে। আর যদি তাকে কোন বিপদ-মুসীবত স্পর্ষ করে, তাহলে সে ধৈর্য ধারণ করবে। এতেও অর্জিত হবে তার কল্যাণ।" বর্ণনায়ঃ মুসলিম হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ-
১- এ হাদীসে ঈমানদারের দুটো বড় গুণ "সবর ও শোকর" এর আলোচনা এক সাথে এসেছে।
২- সকল মানুষদের মধ্যে ইসলাম অনুসারীদের এ এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। মানুষ হয়তো সুখী হবে কখনো, অথবা কখনো থাকবে অসুখী। কোন অবস্থাতেই ঈমানদার ব্যক্তির ক্ষতি নেই।
৩- সুখ-সম্পদ, নেয়ামত পেয়ে আল্লাহর শোকর আদায় করতে এ হাদীস ঈমানদারদের নির্দেশ দেয়।
৪- কোন ধরনের বিপদ মুসীবত আসলে তাতে ঈমানদার ভেঙ্গে পড়বে না, হতাশ হবে না। ধৈর্য অবলম্বন করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাবে।
হাদীস-৪. আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রোগে ভারী হয়ে গেলেন, রোগ যন্ত্রণা তাকে বেহুশ করতে লাগল তখন ফাতেমা রা. দুঃখের সাথে বললেন, "উহ! আমার আব্বার কি কষ্ট হচ্ছে! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা শুনে বললেন, "আজকের পর তোমার আব্বার কোন কষ্ট নেই। যখন তিনি ইন্তেকাল করলেন তখন ফাতেমা রা. বললেন, হায় আমার আব্বা! তিনি প্রভুর ডাকে সাড়া দিলেন। হায় আমার আব্বা! জান্নাতুল ফেরদাউস তার ঠিকানা। হায় আব্বা! জিবরীলকে মৃত্যুর খবর দিচ্ছি। যখন তাঁর দাফন শেষ হল, তখন ফাতেমা রা. লোকদের বললেন, তোমাদের মন কি চেয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর মাটি রাখতে?"
বর্ণনায়ঃ- বুখারী
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ-
১- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন অন্যান্য মানুষের মত রক্ত মাংসে গড়া মানুষ। সাধারণ মানুষ যেমন দুঃখ, কষ্ট রোগ-যন্ত্রণা, মৃত্যু কষ্টে ভোগে তাকেও তা বরদাশত করতে হয়েছে।
২- অন্যান্য মানুষ যেমন মৃত্যু বরণ করে, তিনিও তেমনি মৃত্যু বরণ করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা তাকে বলেছেনঃ- তুমি মৃত্যু বরণ করবে আর তারাও মৃত্যু বরণ করবে। (সূরা যুমার, আয়াত ৩০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ- আমি তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমন ভুলে যাই।” (বর্ণনায়ঃ বুখারী ও মুসলিম)
৩- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করার জন্য ও উম্মতকে ধৈর্যের আদর্শ শিক্ষা দেয়ার জন্য তাকে মৃত্যু যন্ত্রণা দেয়া হয়েছে। উম্মত যেন এ কথা মনে না করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মহা সূখী মানুষ আমরা তাকে কিভাবে অনুসরণ করি?
৪- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যু যন্ত্রণায় এতটা কাতর হওয়া সত্বেও ধৈর্যের সর্বোত্তম আদর্শের দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। অস্থিরতা বা হতাশা প্রকাশ করে, এমন কোন বাক্য তাঁর মুখ থেকে বের হয়নি। ফাতেমা রা. ব্যাকুল হয়ে পড়লেও তাকে শান্তনা দিয়ে বললেন, "আজকের এ কষ্টের পর তোমার পিতার আর কষ্ট নেই।"
৫- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তেকালে সময় ফাতেমা রা. ছিলেন তার একমাত্র সন্তান। পিতার মৃত্যুতে তিনি কতখানি শোকে কাতর ছিলেন তা অনুভব করানো যাবে না। তা সত্বেও অধৈর্য প্রকাশ পায় বা আল্লাহর প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ পায়, এমন কোন বাক্য তার মুখে শোনা যায়নি। তার যে কথাগুলো এ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে তা ছন্দ ও অর্থের দিক দিয়ে চমৎকার অভিব্যক্তি। এতে যেমন তার দুঃখ প্রকাশ পেয়েছে তেমনি প্রকাশ পেয়েছে তার ধৈর্য।
৬- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবদ্দশায় আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতা জিবরীল সর্বদা রাসূলের কাছে অহী নিয়ে আসা যাওয়া করতেন। রাসূলের ইন্তেকালের পর আর তিনি আল্লাহর বাণী নিয়ে পৃথিবীতে আসবেন না। এ কথাটি ব্যক্ত করার জন্য ফাতেমা রা. বলেছেন, "আমি জিবরীলকে তার মৃত্যু সংবাদ দিচ্ছি।"
৭- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাফন শেষ হলে ফাতেমা রা. শোকে মুহ্যমান অবস্থায় বললেন, "আল্লাহর রাসূলের উপর মাটি রাখতে কি তোমাদের মন সায় দিল?" এর উত্তর হলো "হ্যাঁ", কারণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা চেয়েছেন, যা করতে বলেছেন তাতে আমাদের মন অবশ্যই সায় দেয়। তাতে যদি মনে ব্যথা পাই বা দুঃখ লাগে তবুও সায় দিতেই হয়।
হাদীস - ৫. আবু যায়েদ উসামা ইবনে হারেস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কন্যা খবর পাঠালেন যে, আমার ছেলে মৃত্যুদ্বারে উপস্থিত, তাই আপনি একটু আমাদের দেখে যান! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খবর দাতাকে বললেন, যেয়ে সালাম বলো, আর বলবে যা তিনি নিয়ে গেছেন তা আল্লাহর জন্যই । তিনি যা দিয়েছেন তাতো তাঁরই ছিলো। তাঁর কাছে প্রত্যক বস্তুর একটা নির্ধারিত মেয়াদ আছে। যেন সে ধৈর্য ধারন করে ও আল্লাহর কাছে পুরস্কারের আশা করে। ইতিমধ্যে আবার কসম দিয়ে তাঁর কাছে লোক পাঠালেন তাকে আসতে বলে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রওয়ানা হলেন। সাথে ছিলেন, সাআদ বিন উবাদা, মুআজ বিন জাবাল, উবাই বিন কাআব, যায়েদ বিন সাবেত প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম। তারপর বাচ্চাটিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে দেয়া হলো, তিনি তাকে নিজ কোলে বসালেন। এ সময় বাচ্চাটি মৃত্যুর হেচকি দিচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দু চোখ দিয়ে পানি বের হতে লাগল। এ দেখে সাআদ বললেন, হে রাসূল এটা কী (আপনি কাঁদছেন)? তিনি বললেন, "এটা রহমত, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে রেখেছেন।" অন্য এক বর্ণনায় আছে তিনি বলেছেন, "আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে চান তার অন্তরে এ রহমত দিয়ে দেন। আর আল্লাহ তার দয়ালু বান্দাদের প্রতি দয়া করেন।"
বর্ণনায়ঃ বুখারী ও মুসলিম
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েলঃ-
১- কাউকে কোথাও পাঠালে সালাম প্রেরণ করার প্রচলন শরীয়ত অনুমোদিত।
২- কারো আপন জনের ইন্তেকালে তাকে সান্তনা দেয়া সুন্নাত। এমনিভাবে ধৈর্য ধারন করার জন্য উপদেশ দেয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ।
৩- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সান্তনা প্রদানের ভাষা কত চমৎকার। যেমন তিনি বলেছেন, আল্লাহ যা নিয়ে গেছেন তা তারই ছিলো। তিনি যা দিয়েছেন তাও তাঁরই ছিলো। তাঁর কাছে প্রত্যক বস্তুর একটা নির্ধারিত মেয়াদ আছে।
৪- সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রাসূলের সান্নিধ্যের কত মূল্য দিতেন, যেমন আমরা এ হাদীসে দেখতে পাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের নাতিকে দেখতে গেছেন, সাথে তার সাহাবাগণ সতস্ফুর্তভাবে সঙ্গ দিয়েছেন।
৫- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দয়া-মমতার প্রকাশ। তিনি শিশুটির ইন্তেকালে কেঁদেছেন। সাথের সাহাবাদের ধারনা ছিলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাঁদবেন কেন? কান্নাকাটি করা ধৈর্যের পরিপন্থী। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ধারনা দূর করে দিলেন, বললেন, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের বহিঃপ্রকাশ। তাই কারো ইন্তেকালে দুঃখে শোকে চোখের পানি ফেলে কাঁদা দোষের কিছু নয়। বরং এটা মানব প্রকৃতি, যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তবে চিৎকার করা, শশব্দে আহাজারী করা ধৈর্যের পরিপন্থী।
((চলবে..........।))
©somewhere in net ltd.