নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অপেক্ষার পালা শেষ-----

http://vutoo.blogspot.com

ফিউজিটিভ

জাতিসংঘের কোন এক সংস্থায় কর্মরত। [email protected]

ফিউজিটিভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিহিমুমু-৩

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:০২

সংসদ ভবনের সামনের রাস্তায় সাইকেল চালাচ্ছি। গিয়ার নামক প্যাঁচযুক্ত সাইকেল। রুপা অনেকটা জোর করেই আমাকে গছিয়ে দিয়েছে সাইকেলটা!
তবে ভালোই লাগছে সাইকেল চালাতে। হাটাহাটির চেয়ে সাইকেল চালানো মনে হচ্ছে অনেক সুবিধাজনক! তাছাড়া সাইকেলটার ঢংও কমনা! ইয়া মোটা এক একটা টায়ার!! রাজা বাদশাহরা কখনো সাইকেল চালিয়েছে বলে শুনিনি। তবে এটা চালানোর সময় নিজেকে রাজা বাদশাহই মনে হচ্ছে।
আমি সাইকেল নিয়ে হেলতে দুলতে আগাচ্ছি। সংসদের সামনে লোকজনের সমাগম শুরু হয়েছে। সামনে গাড়ির বেশ বড়সড় একটা জটলা। যতই বিকাল গড়িয়ে সন্ধা হচ্ছে ভীড় ততই বাড়ছে।
আমি সজোরে একটা গাড়ীর পেছনে ধাক্কা মেরে দিলাম। ইদানিং আমার মদ্ধে কিছুটা হিউমেনিটেরিয়ান দোষাবলি দেখা দিয়েছে। গাড়ীর পেছনে সাইকেলের কাঁদামাটি লেগে যাওয়ায় মনে মনে কিছুটা আনন্দ বোধ করলাম আমি।
সেকেন্ডের মদ্ধেই গাড়ীর দরজা খুলে পেছনে তাকাল ড্রাইভার; ওর এক পা রাস্তায় আর অন্য পা গাড়ীতে!
আমি কাঁচুমাচু হয়ে বললামঃ
"স্যার ভুল হয়ে গেছে, সাইকেলের বেরেক ঘুরাইতে পারি নাই... "
ব্যাস এতেই কাজ হোলোঃ
"শালা খা*** পোলা খাইছি তোরে!"-
বলে দুই হাত উঠিয়ে তেঁড়ে আসতে গিয়ে ধরাম করে উবু হয়ে পড়ে গেলো সে রাস্তায়! দু সেকেন্ডের মদ্ধে রক্তের রেখাও দেখা গেল মাথার পাশে।
এবার গাড়ীর পেছনের দরজা খুলে বের হয়ে এলো বেঁটে খাটো সানগ্লাস পড়া এক লোক! প্যান্ট পড়ার স্টাইলটা হাস্যকর! পুরাই ড. মাহফুজ!!
"এই কি হইসে? ওরে কি করছো?"
"বাইর হইতে গিয়া আছাড় খাইছে স্যার। এখনি উইঠা পড়বো চিন্তা কইরেন না স্যার।" - আমি অভয় দিলাম।
লোকটা আমার দিকে তাকালো।
"তোমাকে চেনা চেনা লাগে!" - সানগ্লাস নামিয়ে ভালো করে তাকালো সে। - "আরে!! তুই হিমু না?"
"জি স্যার।"
"স্যার স্যার করস কেন? আমারে চিনোস নাই?"
"জি স্যার চিনছি আগেই। আপনে চো্.. মানে চাকলাদার ছামাদ।"
"তা, কি করস, কই থাকোস এখন? সাইকেল চালাস কেন?"
"ডেলিভারি ম্যানের চাকরি করিতো স্যার তাই সাইকেল চালাই।"- আমি শেষ প্রশ্নের উত্তর দিলাম শুধু।
"তুই এখনো স্যার স্যার করতেছস কেন?"
"কি করবো স্যার! সবাইরে বলতে বলতে অভ্যাস হয়ে গেছে। বাড়ির বৌরে পর্যন্ত স্যার বলি!"
"ওও-- তাই। তা কি ডেলিভারীর কাজ করস?"
"এই থানায় থানায় মাল ডেলিভারী করি আরকি!"
"তাই নাকি! কি মাল ডেলিভারী করস?"
"একটু পরেই বুঝবেন স্যার।"
"মানে?"
"আরে বাদ দেন্! আপনে কি করেন স্যার?"
"আমিতো হাউজিং এর চীফ ইন্জিনিয়ার!" - বেশ গর্বের সাথে উত্তর দিলো ছামাদ।
"ওরে বাপরে!"
"হ, দেশের নামি দামি অনেক লোকজন আমার পরিচিত। এরা সবাই আমার কাছে আসে; কাজের জন্য - তদবিরের জন্য। "
হ সেইটা গাড়ী দেখেই বুঝছি স্যার।"
"কিন্তু তুইতো দেখি আগের মতই আছোস! পুরা ভাদাইম্মা! বিয়া টিয়া করছস? বউ কিছু করে?"
"হ বিয়া করছি! বউ-" আমি কিছুটা ইতস্তত ভংগিতে জবাব দিলাম- "চা বিস্কুট নিয়া রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে..."
"ছিছি বলিস কি? তারমানে রাস্তাঘাটে চা বেঁচে? এই তোদের অবস্থা? আমি আগেই জানতাম তোরে দিয়া কিছু হবে না। কিন্তু তাই বলে... "
- ছামাদ এদিক ওদিক তাকাতে শুরু করলো। পাছে কেউ শুনে ফেলে! মনে হচ্ছে আমার সাথে কথা বলতে এখন তার প্রেস্টিজে লাগছে!
আমি দুইহাতে জোরে জোরে নিজের মাথা চুঁলকাতে থাকলাম। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মাথা চুলকানোটাই মনে হচ্ছে একমাত্র যৌক্তিক কাজ!
"তুই আমার অফিসে আসিস।" - কিছুটা ফিসফিসিয়ে বললো ছামাদ। - "ভালো কাজের ব্যবস্থা করবো তোদের জন্য--"
আমিও আরো ফিসফিসিয়ে জবাব দিলামঃ
"সে সুজোগ তো আর পাবেন বলে মনে হয় না স্যার!"
"কিই? কি বললি??"
আমি কিছু একটা বলতে যাবো ঠিক তখনি কালো রংরের ঢাউস গাড়িটা এসে থামলো আমাদের পাশে!
"হিমু আমি কি দেরি করে ফেলেছি?" - গাড়ীর কালো কাঁচ নামিয়ে কথা বলছে রুপা।
"আরে না স্যার! আমিওতো এই মাত্রই এলাম!"
"আমি তোমার জন্য নিজ হাতে চা বানিয়ে এনেছি। তুমি রাস্তাঘাটের চা খাও এটা আমার পছন্দ না! "
রুপা প্রকান্ড একটা চায়ের ফ্লাস্ক হাতে গাড়ি থেকে নামলো।
"আমার বউ স্যার! চা বিস্কুট নিয়া আসছে আমার জন্য!!" - আমি ছামাদকে চোখ টিপে রুপার দিকে এগিয়ে গেলাম।
ছামাদ কিছু বলতে যাবে এমন সময় চার পাঁচজন লোক ঘিরে ধরলো ওকে।
"ছামাদ সাহেব আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।"
"যেতে হবে মানে? কে আপনারা? কি চান??"
"কিছু চাইনা। আমাদের সাথে চলুন! গেলেই বুঝবেন।''
"আপনারা জানেন আমি কে?"- ছামাদ বেশ জোর গলায় কথা বলার চেষ্টা করলেও তার কন্ঠস্বর বেশ ভীত মনে হলো!
"জি জানি। আমাদের কাছে তথ্য প্রমান রয়েছে। আপনি সামান্য বেতনের সার্ভেয়ার হলেও আপনার রয়েছে কয়েকশত কোটি টাকার সম্পত্তি..."
আমার আর শোনার আগ্রহ হোলো না। রুপা ইতিমদ্ধে চা রেডি করে ফেলেছে। আমি রুপার হাত থেকে চায়ের কাপ নিলাম!
স্কুলে পড়াকালিন সময়ে ছামাদের ছিঁচকে চুরির অভ্যাস ছিলো। সেজন্য চাকলাদার ছামাদ থেকে ওর নাম হয়েছিলো চোরা ছামাদ। একদিন বই এর ভেতর থেকে টাকা চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরে ফেলেছিলাম আমি।
সেবার ওকে বন্ধুদের মারের হাত থেকে বাঁচালেও এবার সেরকম কোন ইচ্ছে হোলো না আমার। আমার মদ্ধে কি দোষ ঢুকতে শুরু করছে! হিউমেনিটেরিয়ান দোষ!!??
তাছাড়া রুপার ব্যাপারেও ওকে আমি মিথ্যা বলেছি। রুপাকে আমার বউ বলে পরিচিত করেছি। কারন ইদানিং রুপাকে আমার বউ ভাবতে ভালোই লাগছে...
আমি মনে হয় আসলেই হিউমেনিটেরিয়ান হিমু হয়ে যাচছি...

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: সব কিছু মিলিয়ে সুখে থাকলেই হলো।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৩

ফিউজিটিভ বলেছেন: তাতেও যে ভুতে কিলানোর ভয়!

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৪০

ইমু সাহেব বলেছেন: হিমুর রেপ্লিকা .... বাহ !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.