![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
('ডা. জাকির নায়েক ও আমরা' শীর্ষক আমার লেখা বইয়ের ৩য় সংস্করণে সংযোজিত বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর প্রিয় ব্লগারদের জন্য শেয়ার করা হলো। কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ঐতিহাসিক জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া সাত মসজিদ মুহাম্মাদপুর মাদ্রাসা ঢাকা, মারকাযুল উলূম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা ঢাকা, শাইখুল হাদীস মুফতী মুহাম্মাদ জসীমুদ্দীন রাহমানী এবং মুফতী শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী)
প্রশ্ন- ১ : ‘ডা. জাকির নায়েকের বক্তব্য শুনা যাবে কিনা?’
উত্তর: “ডা. জাকির নায়েক একজন সাধারণ গবেষক ও ইসলাম প্রচারক। তিনি নিয়মতান্ত্রিক কোন আলেম নন। বিধর্মীদের মাঝে তার বক্তব্য অত্যন্ত কার্যকরী দেখা গিয়েছে। তবে মাসাআলা বর্ণনা করার েেত্র হক্কানী উলামায়ে কেরামের মত ও পথ থেকে কিছুটা ভিন্নতা তার মধ্যে পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য শুনতে কোন সমস্যা নেই, তবে তার থেকে মাসআলা মাসায়েল জানতে চাওয়া ও তার দেওয়া মাসআলার উপর কোন হক্কানী আলেমের সমর্থন ছাড়া আমল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।” (-উত্তর প্রদান: রহমানিয়া ফতোয়া বিভাগ।)
প্রশ্ন:- ২ : ‘ডা. জাকির নায়েক থেকে এখন পর্যন্ত কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো বক্তব্য পাওয়া গেছে কি?
উত্তর: ডা. জাকির নায়েকের বক্তব্য যতটুকু শুনেছি তাতে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী এমন কোনো বক্তব্য পাইনি যাতে করে তাকে গোমরাহ, বাতিল, বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী, ফিতনাবাজ অথবা অমুসলিমদের দালাল ইত্যাদি বলা যায়। বরং এগুলো বর্জন করে আজ আমাদেরকে মহান আল্লাহর নিম্নোক্ত ঘোষণার উপর আমল করা উচিত।
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (২)
অর্থ: “আর তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ব্যাপারে পরস্পরে একে অপরের সহযোগিতা করো। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।” (সূরা মায়িদা, আয়াত ০২) (-উত্তর প্রদান: মারকাযুল উলূম আল ইসলামিয়া, ফতোয়া বিভাগ।)
প্রশ্ন- ৩ ঃ ‘ডা. জাকির নায়েক বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থ দিয়ে ইসলাম সত্য প্রমাণ করেন’ নবীজি ও সাহাবাগণ কি তা করেছেন?”
উত্তরঃ হ্যাঁ, কুরআন ও সুন্নাহ তথা নবীজি (সা.) ও সাহাবায়ে কিরামের আমল দ্বারা তা প্রমাণীত আছে। (হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা....)
প্রশ্ন- ৪ ঃ “ডা. জাকির নায়েক বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে ইসলাম ও ইসলামের বিভিন্ন বিধানকে সত্য ও সঠিক বলে প্রমাণ করেন’ নবীজি ও সাহাবাগণ কি তা করেছেন?”
উত্তরঃ যুক্তি দিয়ে ইসলামের সত্যতা প্রমাণ করা কুরআন এবং সুন্নাহ তথা নবীজি (সা.) ও সাহাবায়ে কিরামের আমল দ্বারা তা প্রমাণিত আছে। (মাক্কী সূরা সমূহ দ্রষ্টব্য)
একইভাবে যুক্তি দিয়ে ইসলামের বিভিন্ন বিধানাবলীকেও সঠিক প্রমাণ করা কুরআন ও সুন্নাহ তথা নবীজি (সা.) ও সাহাবায়ে কিরামের আমল দ্বারা তা প্রমাণীত আছে। এমনকি অনেক শীর্ষ আলেমও এটি করেছেন। উদাহরণঃ (১) হাকীমুল উম্মাত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) লিখিত কিতাব আশরাফুল জাওয়াব ও (২) সুন্নাত ও বিজ্ঞান।
প্রশ্ন- ৫ ঃ ‘ডা. জাকির নায়েক টেলিভিশন দেখা জায়েজ বলেছেন’ এটা কি সঠিক?
উত্তরঃ যে সকল দৃশ্য বাস্তবে দেখা জায়েজ, সে সকল দৃশ্য টেলিভিশনে দেখাও জায়েজ। অর্থাৎ কোন দৃশ্যের সরাসরি দেখার হুকুম যা, সে দৃশ্য টেলিভিশনে দেখার হুকুমও তাই। (এ প্রসঙ্গে সৌদী আরবের গ্রান্ড মুফতী বিন বায (রহঃ) এর ফাতওয়া দ্রষ্টব্য)
প্রশ্ন- ৬ ঃ রেডিও টেলিভিশনে প্রচারিত নির্দোষ অনুষ্ঠানমালা শোনা ও দেখা জায়েয কি না?
উত্তরঃ রেডিও বা টেলিভিশনে কুরআন হাদীস থেকে যা কিছু শোনানো হয় সেসব শোনা, কল্যাণকর কথা শোনা, গুরুত্বপূর্ণ খবর শোনা দোষণীয় নয়। কুরআন হিফয সম্পর্কিত অর্থাৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালা শোনাও জায়েয। নিয়মিত এ ধরণের অনুষ্ঠান শোনার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। (আধুনিক জিজ্ঞাসার জবাব, শাঈখ আবদুল আজিজ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে বা’য (রহঃ), পৃষ্ঠাঃ ১৬৯)।
প্রশ্ন- ৭ ঃ ‘ডা. জাকির নায়েক এর অনুষ্ঠানে মহিলাগণ বেপর্দা (মুখ খোলা) অবস্থায় অংশগ্রহণ করেন’ এর হুকুম কি?
উত্তরঃ ইসলামী শরীয়াহ মতে পর্দা (ছতর ও হিজাব) পালন করা ফরয; কিন্তু ফিকহের মাসআলাহ হিসেবে চেহারা ছতরের অন্তর্ভুক্ত কি না? এ নিয়ে ফকীহ ও মুফাসসিরীনগণের বিভিন্ন মত রয়েছে; কারণ এ বিষয়ে সাহাবায়ে কিরামেরও দ্বিমত আছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্য তাফসীরের বিভিন্ন কিতাবও দেখা যেতে পারে। সুতরাং অনুরূপ েেত্র পারিপার্শিক অবস্থা ও ফলাফলের উপর মাসআলাহ নির্ভর করবে।
প্রশ্ন- ৮ ঃ ‘ডা. জাকির নায়েক ও তার প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আই.আর.এফ.) কে ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা নাকি অর্থায়ন করে’ এটা কতটুকু সত্য?
উত্তরঃ এ ব্যাপারে সন্দেহ ও অনুমানের ভিত্তিতে কিছু বলা ঠিক হবে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ
অর্থ: “হে ঈমানদ্বার গণ! তোমরা কেবলমাত্র ধারণাপ্রসূত ও অনুমান নির্ভর বিষয় হতে বেঁচে থাকো। কেননা, অধিকাংশ ধারণা ও অনুমানই পরিশেষে গুনাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ০৬)
তবে যতদূর জানা যায়, মুম্বাই ভিত্তিক একটি ইসলামী (আহলে হাদীস) সংগঠন এর অর্থায়ন করে। এছাড়াও সউদী আরবের বিখ্যাত সব আলেম এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের সাথে ডা. জাকির নায়েকের আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি আমাদের দেশের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ীও ডা. জাকির নায়েকের ভক্ত।
আর কোন একজন বিখ্যাত ব্যক্তির কোন কথা নিজের মতের সাথে পুরোপুরি না মিললে তাকে ঢালাওভাবে ‘ভ্রান্ত ও ইহুদী-খৃষ্টানদের সহযোগী’ বলাটা অনেকের কাছে একটি প্রথা ও কালচারে পরিণত হয়েছে। এই মানসকিতা পরিহার করা আবশ্যক।
প্রশ্ন- ৯ ঃ ডা. জাকির নায়েক কে কেউ কেউ বলেন- গোমরাহ, পথভ্রষ্ট, ভ্রান্ত ও জাহেল ইত্যাদি; এসব বলা কি ঠিক?
উত্তরঃ সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া কাউকে দোষারোপ করা বা উক্তরূপ অভিধায় অভিহিত করা ঠিক নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (১১)
অথ “আর তোমরা কাউকে মন্দ অভিধায় অভিহিত করো না, ঈমান আনার পর এটি খুবই ঘৃণিত অপরাধ। (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১১)
প্রশ্ন- ১০ ঃ ডা. জাকির নায়েক নাকি নাসিরুদ্দীন আলবানীর মুকাল্লিদ, এতে কোন তি আছে কি না?
উত্তরঃ যারা কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা কোন বিষয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সম তাদের বলা হয় মুজতাহিদ; আর যারা এতে সম নয় তারা এদের কারো অনুসরণ করতে হয় এদের বলা হয় মুকাল্লিদ। নাসিরুদ্দীন আলবানী একজন বড় আলেম সুতরাং কেউ যদি তার মুকাল্লিদ (অনুসারী) হয় তাহলে কোন তি নেই।
আর আসলে নাসিরুদ্দীন আলবানী যেহেতু হাদীস শাস্ত্রের উপর অনেক কিতাব লিখেছেন, সহীহ-যয়ীফ হাদীস বিষয়ে বিশাল গবেষণা করেছেন তাই তার এই গবেষণাকে অনেকে কাজে লাগান। তার সংকলিত ও লেখা কিতাব থেকে হাদীসের উদ্ধৃতি দেন। জাকির নায়েকও তার অনেক হাদীসের েেত্র নাসিরুদ্দীন আলবানীর কিতাবের উদ্ধৃতি দেন। এটা খুবই প্রাসঙ্গিক। এজন্য তাকে মন্দ বলার কোন সুযোগ নেই।
প্রশ্ন- ১১ ঃ ডা. জাকিন নায়েক নাকি ‘লা মাযহাবী’-‘আহলে হাদীস’, এটা নাকি ‘ভ্রান্ত মতবাদ’ আর তিনি নাকি তা প্রচার করেন; আসলে কি তাই?
উত্তরঃ ‘লা মাযহাবী’ অর্থ যিনি প্রসিদ্ধ চার মাযহাব এর কোনটি অনুসরণ করেন না; ‘আহলে হাদীস’ অর্থ যিনি হাদীস অনুসরণ করেন; তাই ‘লা মাযহাবী’ ও ‘আহলে হাদীস’ প্রায় সমার্থক; এদের ‘সালাফী’ও বলা হয়। এ অর্থে ডা. জাকির নায়েক ‘লা মাযহাবী’ ও ‘আহলে হাদীস’; আর এটি ‘আহলুছ ছুন্নাহ ওয়াল জামাআতেরই একটি অংশ। সুতরাং এটাকে ভ্রান্ত মতবাদ বলা ঠিক হবে না; যেহেতু এটি ভ্রান্ত মতবাদ নয় তাই এর প্রচার করাও দোষনীয় নয়।
প্রশ্ন- ১২ ঃ ডা. জাকির নায়েক ‘আহলে হাদীস হলে’ কোনো কোনো আহলে হাদীসও বিরোধীতা করেন কেন?
উত্তরঃ আহলে হাদীস এর মধ্যেও ফিকাহ এবং ইজতিহাদ (গবেষণা) নিয়ে বিভিন্ন উপদল রয়েছে; তাই কোন উপদল অন্য উপদলের বিরুদ্ধে বলা বিচিত্র নয়। (এর বহু নজীর রয়েছে)।
প্রশ্ন- ১৩ ঃ ডা. জাকির নায়েক নাকি বলেন- (১) এক সাথে তিন তালাক দিলে এক তালাক হয়, (২) তারাবীহ নামায আট রাকাআত, (৩) তারাবীহ নামায আর তাহাজ্জুদ নামায একই, (৪) মহিলা ও পুরুষের নামাযে কোন পার্থক্য নাই, (৫) নামাযে পুরুষেরা মেয়েদের মত বুকের উপর হাত বাঁধবে। (৬) নামাযে সূরা ফাতিহার পর ‘আমীন’ জোরে বলতে হয়, (৭) নামাযে প্রত্যেক উঠা-বসায় ‘রফে ইয়াদাঈন’ (উভয় হাত উত্তোলন) করতে হয়, (৮) জুমু‘আর খুৎবাহ সহ সকল খুৎবাহ স্থানীয় ভাষায় দিতে হয়, (৯) কারো উছিলা দিয়ে দুআ করা যায় না, (১০) ইকামাতে বাক্যগুলো একবার করে বলতে হয়, (১১) টুপী ছাড়া নামায পড়া যায়, (১২) বিত্র নামায এক রাকআত, (১৩) শবে বরাত নেই, আছে শবে কদর, (১৪) ঈদের নামায বার তাকবীর, (১৫) সাগরের (পানির) সকল প্রাণী হালাল, (১৬) অজু ছাড়া কুরআন শরীফ ধরা যায়, (১৭) মুনাজাত নামাযের অংশ নয়, (১৮) তিনি মাযহাবের সমালোচনা করেন; (১৯) তার মতামত জমহুরের খেলাফ।
প্রশ্ন হলোঃ তার এসব কথা কি সঠিক?
উত্তরঃ উল্লেখিত বিষয়গুলো মাযহাবী (ফিকহী) ইখতিলাফ (মতভেদ) এর বিষয়; আহলে হাদীস মতানুসারে এসব তিনি বলেন; আমাদের হানাফী মাযহাব অনুসারে এগুলোর সাথে আমরা কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস এর দলীলের ভিত্তিতে ভিন্ন মত পোষণ করি।
প্রশ্ন- ১৪ ঃ ডা. জাকির নায়েক আসলে কি সঠিক নাকি বেঠিক?
উত্তরঃ প্রত্যেক মানুষের মধ্যে এমন কিছু বিষয় থাকে যা নানান ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। সুতরাং পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারো কাজের ব্যাখ্যা ভালো বা মন্দ করা যায়। (এর বহু দৃষ্টান্ত আছে)।
প্রশ্ন- ১৫ ঃ কোন কোন আলেম ডা, জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ফাতওয়া দিয়েছেন; তা কি সঠিক?
উত্তর: ফাতওয়া অর্থ মতামত, যিনি যে ফাতওয়া বা মতামত দেন তা তার নিজের জন্য অবশ্যই সঠিক; কিন্তু সে বিষয়ে অন্যদের ভিন্ন ফাতওয়া বা ভিন্ন মত থাকতে পারে এবং তাও তাদের জন্য সঠিক।
(বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত তথা উপমহাদেশে এর নমুনা অনেক)।
প্রশ্ন- ১৬ ঃ ডা. জাকির নায়েক কি দাওয়াত ও তাবলীগ (আহ্বান ও প্রচার) এর কাজ করতে পারেন?
উত্তরঃ হ্যাঁ, অবশ্যই পারেন; কারণ একাজ সকল মুসলমানের ফরয দায়িত্ব। রাসূলে কারীম (সা.) বলেছেন:
بَلِّغُوْا عَنِّىْ وَ لَوْ ايَةً.
অর্থ: “তোমরা আমার একটি কথা হলেও পৌঁছে দাও।” (বুখারী ও মুসলিম)।
সুতরাং বুঝা গেল দাওয়াত ও তাবলীগ করার জন্য আলেম-উলামা বা শিতি-জ্ঞানী হওয়া শর্ত নয়; বরং যিনি যতটুকু জানেন তিনি ততটুকু তার সামর্থ অনুযায়ী প্রচার করবেন। এটাই তার কর্তব্য।
প্রশ্ন- ১৭ ঃ ডা. জাকির নায়েক যে পোষাক পরেন (কোর্ট-প্যান্ট-টাই) এটা জায়েজ কি না? সুন্নাতের খেলাফ কি না?
উত্তরঃ পোষাক সম্পর্কে প্রথমে ৪টি প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে, তারপর পোষাকের সুন্নাত কি তা বুঝতে হবে।
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি নবুওয়াত প্রকাশের পর স্বীয় পোষাক পরিবর্তন করেছিলেন?
২. সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) কি ইসলাম গ্রহণের পর পোষাক পরিবর্তন করেছিলেন?
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আজীবন একই রঙের পোষাক পরেছেন?
৪. বর্তমানে প্রচলিত ডিজাইনগুলো (বর্তমান ডিজাইনের পোষাকগুলো) কি সাহাবায়ে কিরামের সময় ছিল?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, অনেক আরব মুহাক্কিকীন পোষাকের সুন্নাত কবুল করেন নি; তারা এটাকে ‘লেবাসে ইসলাম’ নয় বরং ‘লেবাসে আরব’ (আরবদের পোষাক) বলেন।
লেবাসের সুন্নাত নিয়ে উলামায়ে কিরামের মধ্যে বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
(১) কেউ বলেনঃ জামা গোল হতে হবে, লম্বায় কমপে নিছফ ছাক (হাঁটু ও গোড়ালীর মাঝামাঝি) হতে হবে। তাদের দলীল হলো- নবীজি (সা.) কখনো একমাত্র জামা গায়ে নামায আদায় করেছেন। এখান থেকে বুঝা যায়, তা কমপে নিছফে ছাক পরিমাণ লম্বা ছিল এবং গোল ছিল। তাই এটাই সুন্নাত।
(২) কেউ বলেনঃ জামা অবশ্যই নিছফ চাক (হাঁটু ও গোড়ালীর মাঝামাঝি) হতে হবে; তবে ফাঁড়া হলেও চলবে। তাদের দলীল হলো- নবীজি (সা.) কখনো জামা গায়ে ঘোড়ার পিঠে চড়লে, দেখা গেছে জামার কোনা বাতাসে উড়ছে; এতে বুঝা গেল তা ফাঁড়া ছিল। তাই এতেও সুন্নাত আদায় হবে। (৩) কেউ কেউ আবার উভয় মতের সমন্বয়ের জন্য হাঁটুর নিচ পর্যন্ত সেলাই করা ও নিচে সামান্য ফাড়া রাখেন। (৪) কেউ বলেনঃ জামায় ১টি মাত্র বুতাম হবে এবং কলার হবে না। (৫) কেউ বলেনঃ একাধিক বুতামও দেয়া যাবে এবং কলার থাকলেও তি নেই। (৬) কেউ বলেনঃ যে এলাকায় যেটাকে মানুষ ইসলামী পোষাক মনে করে তাতেই হবে। মূল কথা হলো- পোষাক সম্বন্ধে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
يَا بَنِي آَدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآَتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آَيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ (২৬)
অর্থ: “হে আদম সন্তান! নিশ্চয় আমি তোমাদিগকে পোষাক দান করেছি, যাতে তোমরা তোমাদের লজ্জা নিবারণ করতে পারো এবং শোভা হিসেবেও; আর তাকওয়ার পোষাক- সে-ই তো উত্তম। এ হলো আল্লাহর নিদর্শনসমূহ হতে, আশা করা যায় তারা উপদেশ গ্রহণ করবে।” (সূরা আ’রাফ, আয়াত: ২৬)।
যা বিধর্মীদের (ধর্মীয়) পোষাক নয়, তা পরিধান করা জায়েজ; আর যে পোষাক পরিধান করলে ইসলামিক বা ধার্মিক মনে হয় সে পোষাক পরিধান করা উত্তম। এখানে প্রশ্ন হলোঃ কোর্ট, প্যান্ট ও টাই বিধর্মীদের (ধর্মীয়) পোষাক কি না?
কেউ কেউ মনে করেন এসব বিধর্মীদের (ধর্মীয়) পোষাক, বিশেষত: টাই ক্রুশের চিহ্ণ। তবে কোর্ট, প্যান্ট ও টাই বিধর্মীদের (ধর্মীয়) পোষাক বলে প্রমাণিত হয় না। কারণ কোন ইয়াহুদী ধর্মযাজক (রাহেব ও রাব্বী) কখনো এ পোষাক পরেন না; অনুরূপ কোন খৃষ্টান ধর্মযাজক (পাদ্রী ও পোপ) কখনো এ পোষাক পরেন না; এমনকি হিন্দু ধর্মযাজক (ঠাকুর ও ব্রাক্ষ্মন) এবং বৌদ্ধ ধর্মযাজক (ভিু ও পুরোহিত) তারাও এ পোষাক পরেন না। এতে বুঝা গেল এসব তাদের কারোই ধর্মীয় পোষাক নয়; বরং ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের ধর্মীয় পোষাক মুসলিম আলেম-ইমামদের পোষাকেরই মতো (আলখেল্লা ও টুপী) এবং হিন্দু ও বৌদ্ধদের ধর্মীয় পোষাক মুসলিম হাজীদের ইহরামের পোষাকের মতো (ধূতী ও ছাদর)।
শেষ কথা হলো যদি কেউ কোন পোষাককে সুন্নাত মনে করেন; কিন্তু অনিহা বসত তা আমল না করেন বা কোন পোষাককে সুন্নাতের খেলাফ মনে করেন তথাপি বিলাসিতা ও সৌখিনতা বসত তা পরিধান করেন; তাহলে তিনি সুন্নাত তরককারী হিসেবে গণ্য হবেন; অন্যথায় নয়।
প্রশ্ন- ১৮ ঃ যারা ডা. জাকির নায়েকের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করেন তাদের বিষয়ে কি বলা যাবে?
উত্তরঃ কেউ যদি ইখলাস এর সাথে কারো সমালোচনা করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠিন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। যেমনঃ গ্রামের এক মসজিদের সামনে এক ব্যক্তি একটি খুঁটি মাটিতে প্রথিত করলেন এই চিন্তা থেকে যে, কেউ গরু-ছাগল নিয়ে আসলে এর সাথে বেঁধে রেখে নামায আদায় করতে পারবেন। অন্য এক ব্যক্তি এসে মসজিদের সামনে এমন খুঁটি দেখে তা তুলে ফেললেন এই জন্য যে, অন্ধকারে কেউ এলে এর সাথে হোঁচট খেতে পারেন। সুতরাং এই উভয় ব্যক্তিই নিজ নিজ নিয়াত অনুযায়ী বিনিময় প্রাপ্ত হবেন। কিন্তু তাদের কারো জন্যই একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা বৈধ হবে না।
একইভাবে ডা. জাকির নায়েকের আলোচনা-সমালোচনার এই ইস্যুকে নিজ ব্যক্তিগত স্বার্থে কিংবা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ব্যবহার করাও কারো জন্য বৈধ নয় বরং সম্পূর্ণ হারাম। যা নতুন আরেক ভাতৃঘাতি সঙ্ঘাত সৃষ্টি ছাড়া ভালো কিছুই দিতে পারবে না।
২| ১১ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৯:৫৭
তারেক০০০ বলেছেন: আপনার কিছু কিছু উত্তরের সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করছি।
যেমনঃ ১১ নম্বর প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রেঃ
আপনার যদি ইসলামের বিভিন্ন দলগুলোর সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকে,তাহলে আপনি নিশ্চয় জানেন,আহলে হাদীস বলে তাদেরকে যারা হাদীস সরাসরি অনুসরণ করে,বিশেষ করে বুখারী শরীফ।কিন্তু এমন অনেক হাদীস আছে যেগুলোর ব্যাখ্যা জানা প্রয়োজন,যা বিভিন্ন ইমামরা দিয়ে গেছেন।তাছাড়া একটি আরেকটির পরিপন্থী এরকম অনেক হাদীস পাওয়া যায়।সে ক্ষেত্রে আহলে হাদীসরা যে কোন একটি হাদীস অনুসরণ করে।আর হুযুরে পাক(সঃ) এর সব হাদীসে তার সুন্নত অনুসরণের কথা বলা হয়েছে,হাদীস অনুসরণের কথা নয়,আপনার জেনে রাখা উচিত হাদীস ও সুন্নতের মাঝে কিন্তু অনেক পার্থক্য আছে।আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ফতওয়া অনুযায়ী সাধারণ জনগণের জন্য চার মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাব অনুসরণ করা ওয়াজীব,কারণ সাধারণ জনগণ কোরআন হাদীস এর সঠিক ব্যাখ্যা জানার মত জ্ঞান অর্জন করতে পারে না।বুঝে উঠতে না পারলে বিস্তারিত লিখার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।ধন্যবাদ।
৩| ১১ ই মার্চ, ২০১২ সকাল ১০:৩১
৪| ১১ ই মার্চ, ২০১২ সকাল ১০:৩১
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৯:৪২
সত্যযুগের মানুষ বলেছেন: বেশিরভাগ উত্তরই ধোয়াটে, আসলে আমার মনে হয় এখানে মুসলমানদের মধ্যের বিভিন্ন দলের মধ্যে তুলনা করে একটা common solution এ আসার চেষ্টা করা হয়েছে। আরো ভালো generalization এর জন্য এই লিখাটি পড়তে পারেন।