নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

paharer khatha

[email protected]

ফুরামন ২

[email protected]

ফুরামন ২ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারো অশান্ত হয়ে উঠতে পারে ----বঙ্গবন্ধু, বাঙ্গালী, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ,সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল রায়

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৪৯

পার্বত্য চট্টগ্রাম আবার অশান্ত হয়ে পড়বে



স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্র বিদ্রোহ শুরুর মূল কারণ ছিল ১৯৭২ সালে প্রণীত আমাদের সংবিধানে এদেশের সকল নাগরিকের জাতীয় পরিচয় হিসাবে বাঙ্গালী নির্ধারণ করা। অন্য সবাই কম-বেশি বিতর্ক করে বাঙ্গালী পরিচয়কে মেনে নিলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় নগণ এটা মেনে নিতে রাজি হয়নি। কেননা তারা মনে করেছিল এতে তাদের আত্মপরিচয় বিলূপ্ত হয়ে যাবে। কাজেই তারা তখন তাদের আত্মপরিচয় টিকিয়ে রাখতে গঠন করেছিল শান্তিবাহিনী। এই শান্তিবাহিনীর আক্রমণে হাজার হাজার বাঙ্গালী জনগণ এবং সরকারের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের The Proclamations (Amendment) order,1978-এ Citizenship-এর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, “The citizens of Bangladesh shall be known as Bangladeshis.” এটি ১৯৭৮ সালের ২য় ঘোষণাপত্র আদেশ নম্বর ৪-এর ২য় তফসিল বলে মূল ৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তে সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগণ সহ যাদের মধ্যে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ নিয়ে অসন্তোষ ছিল তাদের সে অসন্তোষ প্রশমন হয়। যদিও এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের সশস্র বিদ্রোহ বন্ধ হয়নি। কেননা ততদিনে সেখানের পরিস্থিতি আর শুধু মাত্র উপজাতীয় নেতাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এর সাথে জড়িয়ে গিয়েছিল আন্তর্জাতিক একাধীক শক্তি।

কিন্তু সম্প্রতি আলোচিত হাইকোর্টের দেয়া ৫ম সংশোধনী বাতিল রায়ের সামারির ২১ ধারায় মূল সংবিধানের ৬ নং ধারা অবিকৃত রাখতে বলা হয়েছে। তাছাড়া রায়ের অন্যান্য অংশের স্পিরিট অনুযায়ী একথা নিশ্চিত করে বলা যায়, রায় অনুযায়ী আমাদের রাষ্ট্রীয পরিচয় বাংলাদেশীর পরিবর্তে বাঙ্গালী হবে।

এতে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর বাসিন্দারা ক্ষুদ্ধ হতে পারেন। কারণ সংবিধান প্রণয়ন ও পাশের কালেই উপজাতীয় জনগোষ্ঠী নিজেদের রাষ্ট্রীয় পরিচয় বাঙালী বলে স্বীকার করেননি এবং তাদের দাবী সরকারীভাবে অস্বীকৃত হওয়ায় দাবী প্রতিষ্ঠার নামে পার্বত্য উপজাতীয় জনগোষ্ঠীরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে সে সময়কার সংসদের কার্যবিবরণীর দিকে নজর দেয়া যেতে পারে:

১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর সংবিধান বিলের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদর পরিবর্তে সংসদ সদস্য আবদুর রাজ্জাক ভুঁইয়া জাতীয় সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব আনেন এভাবে: ‘৬. বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে; বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙ্গালী বলিয়া পরিচিত হইবেন।’ এই বিলের উপর উপজাতীয় নেতা ও সংসদ সদস্য শ্রী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বলেন, ‘মাননীয় স্পীকার, ... আমি যে অঞ্চল থেকে এসেছি, সেই পার্বত্য চট্ট্রগামের অধিবাসীরা যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে বাস করে আসছে। বাংলাদেশের বাংলাভাষী বাঙ্গালীদের সঙ্গে আমরা লেখাপড়া শিখে আসছি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সবদিক থেকেই আমরা একযোগে বসবাস করে আসছি। কিন্তু আমি একজন চাকমা। আমার বাপ দাদা চৌদ্দপুরুষ কেউ বলেন নাই, আমরা বাঙ্গালী। আমার সদস্য-সদস্যা ভাইবোনদের কাছে আমার আবেদন, আমি জানিনা আজ আমাদের এই সংবিধানে আমাদেরকে কেন বাঙ্গালী বলে পরিচিত করাতে চায়---।

এ পর্যায়ে স্পীকার তাকে প্রশ্ন করেন, ‘ আপনি কি বাঙ্গালী হতে চান না’?

উত্তরে শ্রী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বলেন: ‘মাননীয় স্পীকার সাহেব, আমাদিগকে বাঙ্গালি জাতি বলিয়া কখনো বলা হয় নাই। আমরা কোনো দিনই নিজেদের বাঙ্গালী বলিয়া মনে করি নাই। আজ যদি এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য এই সংশোধনী পাস হয়ে যায়, তাহলে আমাদের চাকমা জাতির অস্তিত্ব লোপ পেয়ে যাবে। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা আমাদেরকে বাংলাদেশী বলে মনে করি এবং বিশ্বাস করি। কিন্তু বাঙালী বলে নয়।’

এর আগে ১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল গণপরিষদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে স্বাাৎ করে তাদের আত্মপরিচয় ও শাসনতান্ত্রিক অধিকারের দাবীর কথা উত্থাপন করেন। শেখ মুজিবুর রহমান তাদের দাবী অস্বীকার করে বলেন: ‘তোরা সব বাঙালী হযে যা’। শ্রী এম এন লারমা এর প্রতিবাদ করলে শেখ মুজিব বলেন, ‘লারমা তুমি কি মনে করো, তোমরা ৫/৬ লাখ আছো। বেশী বাড়াবাড়ি করো না। চুপচাপ থাকো। বেশী বাড়াবাড়ি করলে তোমাদের অস্ত্র দিয়ে মারবো। প্রয়োজনে চার ৫- ১০ লাখ বাঙালী অনুপ্রবেশ করায়ে তোমাদের উৎখাত করবে, ধ্বংস করবো’। এর প্রতিক্রিয়ায় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বলেন, ‘আমি একজন চাকমা। একজন মারমা কখনো চাকমা হতে পারে না। একজন চাকমা কখনো মুরং হতে পারে না। একজন চাকমা কখনো বাঙালী হতে পারে না। আমি চাকমা । আমি বাঙ্গালী নই... ... আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। বাংলাদেশী। আপনারাও বাংলাদেশী। তবে জাতি হিসাবে আপনারা বাঙ্গালী। উপজাতীয়রা কখনো বাঙালী হইতে পারে না।’

সংসদে এম এন লারমার দাবী সেদিন উপেক্ষিত হওয়ায় তিনি শান্তি বাহিনীর জন্ম দেন- যা বাংলাদেশের জন্য আজও একটি বড় সমস্যা হিসাবে চি‎িহ্নত হয়ে আছে। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সংযোজিত হওয়ার ফলে পার্বত্য উপজাতীয়দের বহু দিনের দাবীর বাস্তবায়ন হয়। কিন্তু সেই পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে আবার বাঙালী জাতীয়তাবাদ সংবিধানে পুণঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগোষ্ঠী আত্মপরিচয়ের সন্ধানে আবারো আন্দোলনে নামতে পারে। ফলে অশান্ত হয়ে উঠবে পার্বত্য চট্টগ্রাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +৪/-১

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.