![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গেলবার বুদ্ধ গয়ায় গিয়ে আমার বাবা,আমি ও আমার বড় ছেলে দীপ একসাথে শ্রমন হয়েছিলাম গুরু বরোসম্বোধী ভিক্ষুর কাছে। তখন আমার মেঝে মেয়ে মৌনী আমাকে প্রশ্ন করে, বাবা দাদা বলছে আমি নাকী পাপী, এই জন্যে নাকী আমি মেয়ে, বাবা আমি কী দাদার মতো শ্রমন হতে পারবো না,? দাদা বলছে পাপীরা শ্রমন হতে পারে না, বাবা আমিও দাদার মতো শ্রমন হবো, তুমি বল দাদা মিথ্যা বলছে। মেয়েকে কথা দিয়েছিলাম ওকেও দাদার মতো শ্রমন বানাবো, ওঁকে বলেছিলাম তোমার দাদা ও তুমি একই পৃথিবীর সব আলো বাতাসের সমান উত্তর সূরী, আচ্ছা বলতো বুদ্ধের মা কী তাহলে পাপী ছিলেন,? তোমার মা কী পাপী,? যাও দাদা কে গিয়ে বল। উদার আকাশে মেলে ধরা পাখোয়াজে ভর করে কন্যা আমার সেদিন দিগন্তে ভেসেছিল। আমার পিতৃহৃদয় সববোধ আর চেতনায় কন্যার আলোক রশ্মি ছুঁয়েছিল। সেই আলো ও দিগন্তের রথের ভেলা চোখের সামনে মুক সমাজের সাথে যুদ্ধ রত আজকের শ্রামনী সংঘ।
শ্রামনী সংঘের আজকের প্রেক্ষাপটে, আমাদের ভাবনাটা অন্যজায়গায়, তার আগে কিছু কথা বলি আমি প্রথমত মানুষ তারপর নারী বা পুরুষ। মুক্তির পথ কোন কানুন বা নির্দেশ দ্বারা, বানী দ্বারা, বা ধর্ম প্রথায় বাঁধা দেয়া অন্তত মানুষ কে যায় না, সে তার পথ নিজেই করে নেয়। এমন কী বুদ্ধ যদি ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে কোন বিধান দিয়ে থাকেন, তবে সময় কাল এর প্রেক্ষাপটে তা বুদ্ধের ব্যঘপজ্য সূত্র অনুসারেই পরিত্যজ্য। যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন কালের পরিক্রমার যদি আমি বুদ্ধ বলেছি বলে হলেও কোন পন্থার অচলায়তন তৈরী হয়, মানবের জন্য অকল্যানকারী হয় তবে তা তৎক্ষনাত পরিত্যজ্য। সুতরাং শ্রামনীদের নিয়ে কে কী বলল তা, আমার মতো অনেকের কাছে মোটেই গুরুত্ব পূর্ন নয়, ধর্মের ব্যাখ্যাগুলোও হাস্যকর মনে হয়, আমার জন্যেই ধর্ম ,ধর্মের জন্যে কী আমি? নারী বিষয়ক অনেক আপত্তি কর শাস্ত্রীয় কথা যদি কোন বুদ্ধ বলে থাকেন, আমি ও আমরা সেই বুদ্ধকেও ঈশ্বরের ন্যায় অস্বীকার করি, খুঁজি নিজের মনের আলোয় জলন্ত নিজ প্রদীপ শিখায় প্রজ্বলিত বুদ্ধকে, সুতরাং আমরা নিশ্চিত মানবিক শিক্ষার মহান গুরু বুদ্ধের পক্ষে মানুষের জন্যে অবমাননাকর বানী প্রদান অসম্ভব ।
এখন মুল ভাবনাটা বলি, আমাদের মতো অপ্রতিরূপ দেশে শ্রামনীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাবা উচিত। এমন কী পুরুষ বৌদ্ধ সন্যাসীদের কাছেও শ্রামনীরা কতটুকু নিরাপদ,? সেখানে সংঘ তৈরী হলে এতো বিরাট সংখ্যক সন্ন্যাসীনীদের রক্ষা করার ক্ষমতা আমাদের পরস্পর বিচ্ছিন্ন ক্ষয়িষ্ণু বাঙ্গালী বডুয়া বৌদ্ধদের কতটুকু আছে ভাবা দরকার। একক ভাবে শ্রামনী রুনা আমাদের বডুয়া বৌদ্ধ সমাজের অহংকার, তার মতো জানা শোনা চলমান ধর্মগ্রন্থ ও বিদর্শন সাধিকা এই সমাজের জন্যে মহামূল্যবান রতন । তাকে রক্ষা করাই প্রকৃত সমাজ সেবা। কিন্তু যখন বহু সংখ্যক হবে ,তখন তাদের ছোট্ট একটি দূর্ঘটনার কারনে যে উদ্ভূত পরিস্তিতির উদ্ভব হতে পারে , তা শুধু আবেগ নয় দূরদর্শী চিন্তায় ভাবতে হবে, ভূলে গেলে চলবে না , খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পর্যন্ত অনেক নানকে বিপর্যয়ের মুখে পরতে হয়েছে। তা ছাড়া এক জায়গা হতে দূরবর্তী কোথাও গমন করলে শ্রামনীরা কোথায় থাকবেন, আমরা মনে করি না শ্রামনীদের জন্যে কোন বিহার নিরাপদ। মনে রাখতে হবে ঋষি একশত বছরের ধ্যান সাধনার যবনিকাপাত করেছিলেন। তাই বই ঘেটে পুরুষ সন্যাসীর নানা বাক্য বানের উত্তর প্রদানের চেয়ে শ্রামনী সংঘের ব্যাপতি ও ভবিষৎ কাঠামো সমাজের কাছে উপস্থাপন জরুরী। কারন শ্রামনী রুনার মতো মানসিক শক্তি ও ধ্যান শক্তি অন্যদের মাঝে নাও থাকতে পারে। ফলে ধারা তৈরী হলো কিন্তু শ্রামনী রুনার বিয়োগের পর এই সংঘ সমাজের বোঝা হয়ে গেল, তখন কী হবে, অর্থাৎ নিরোপমা দেবী তৈরী করতে হবে, প্রতি পদক্ষেপে ভবিষ্যত আঁকা জরুরী। সমাজের কাছে উপস্থাপনের কথা এই জন্যেই বলছি কারন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা যেমন আমাদের ভাই , চাচা, দাদা থেকে তৈরী হয়েছে, তেমনি শ্রামনীরা আমাদের বোন, দিদি, মাসী, পিশি থেকেই তৈরী হবে। উভয়ের জন্মাবার আতুর ঘর এই বৌদ্ধ সমাজ । তাই গৃহত্যগী সন্যাসীরা নয় , সিদ্ধান্ত নেবে সমাজ, শ্রামনী সংঘ কেন দরকার?
আমার ছোট কন্যার বুদ্ধগয়ায় আমাকে করা প্রশ্ন, এই সমাজের সব কন্যার । তাই বাবা হিসেবে এর উত্তর দেবার দায় আমাদের সবার। তেমনি এই সমাজের সব বাবাকেই তার কন্যার উত্তর দেবার জন্যেই শ্রামনী সংঘ প্রয়োজন। এখন ভাবতে হবে এর সুরক্ষা নিয়ে, প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি কীভাবে দেয়া যায়, আসুন ভাবি। কীতাব তো মানুষ বানায়, চলুন কন্যার জন্যে , ভালোবাসার জন্যে, একটি মানবিক পৃথিবীর জন্যে বিংশ শতাব্দীর একটি নতুন কিতাবের মালিক হই।
লেখক:প্রকৌশলী
বারীধারা,ঢাকা
©somewhere in net ltd.