![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নারীর আত্মসম্মান এবং স্বাধীনতার প্রতি কতটুকু উদার, তার উপর চোখ রেখে পরিমাপ করা যায়, সমাজ-ধর্মবলয়ে চর্চিত সভ্যতা।
আমাদের পরিবার, সমাজ, ধর্ম ও রাষ্ট্র নারীকে যতদিন না পূর্ণমানুষের মর্যাদায় দেখতে সক্ষম, ততদিন মানুষ হিসেবে আমাদের অপূর্ণতা কাটিয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব।
জগতে সমাজ-ধর্মের উৎপত্তির আগে মানুষ এসেছে, এবং মানুষ তার প্রয়োজনে সমাজ-ধর্মের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে। তাই মানুষের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ না করে, সেই স্বাধীনতাকে বিকশিত করতে সহায়তা করাই সমাজ-ধর্মের কর্তব্য হওয়া উচিৎ।
'মহাপুরুষ' নয়, 'মহামানব' শব্দটিই বুদ্ধের সঙ্গে মানিয়ে যায়, কারণ তিনি ও তাঁর চৈতন্য লৈঙ্গিক- পরিচয়ের ঊর্ধ্বে, মনুষ্যস্তরে সর্বোচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত।
বুদ্ধ সবসময় বলতেন, 'মানবজন্ম দুর্লভ'। এখানে লক্ষণীয় বিষয়, পুরুষ-নারী-বৃহ্ননলার জন্মকে দুর্লভ না বলে বুদ্ধ মানবজন্মকে দুর্লভ বলেছেন।
তাহলে কেনো বুদ্ধের নাম দিয়ে মানুষের মাঝে বিভেদ-সৃষ্টি করে লৈঙ্গিক-বৈষম্যে ধর্মচর্চা করা?
বুদ্ধ তো ব্যক্তিবিশেষের জন্য তাঁর শিক্ষা বা ধর্ম প্রচার করেন নি। মানুষ ছাড়া তিনি মানুষের অন্যকোনো পরিচয়কে তেমন একটা গুরুত্ব দেন নি; তাহলে কেনো তার উল্টোদিকে সমাজ, ধর্মের এই নিদারুণ যাত্রা?
এখন আধুনিক, সভ্য মানুষের একমাত্র দাবী, নর-নারী-বৃহ্ননলা-নির্বিশেষে সবার মানুষ পরিচয় ও মানুষের স্বাধীনতা, সম্মান ও সমতা প্রতিষ্ঠা। এই দাবী থেকে দূরে আমাদের পরিবার, সমাজ, ধর্ম ও রাষ্ট্র পশ্চাৎপদ থাকবে কেনো?
বাংলাদেশ শ্রামণীসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা হয়েছে পাঁচ-বছর গত হয়েছে। এর মধ্যে নানা-বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়েও শ্রামণীসঙ্ঘ ভিক্ষুণীসঙ্ঘে রূপ লাভ করেছে। যা ঘটনা হিসেবে বৌদ্ধসমাজ-পরিমণ্ডলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, বাংলাদেশে ভিক্ষুণীসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা হওয়াতে, আমরা আরো কিছুটা অগ্রসর হয়েছি উন্নত সভ্যতার দিকে। অন্তত বৌদ্ধসমাজে নর-নারীপরিচয়কে বড় করে দেখা হচ্ছে না।
বৈচিত্রময় জীবনের আহ্বানে মানুষপরিচয় ও তার কর্মকে প্রধান্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি সবাই। এটা ভেবে আমার ভালো লাগছে। মানুষ হিসেবে এই ভাবনা আমাকে গৌরবান্বিত করছে।
বুদ্ধকে যদি সকল প্রাণীর হিতকামী হিসেবে ধরা হয়, তবে মানুষে মানুষে লেগে থাকা সমস্ত বিরোধের এখনই নিষ্পত্তি প্রয়োজন। বিশ্বের বুকে পরিপূর্ণ মাঙ্গলিক মানবসমাজ বিনির্মাণের জন্য শীল-সমাধি-প্রজ্ঞার বার্তা ছড়িয়ে দিতে এখনই ভিক্ষু-ভিক্ষুণী-উপাসক-উপাসিকা সম্মিলিতভাবে সাঙ্ঘিক কার্যক্রমে নেমে পড়ার সময়। আমি মনে করি এতেই সকল মানুষের মঙ্গল নিহিত আছে। আমাদের গুরুত্বসহকারে বোঝা উচিৎ_ সঙ্ঘের প্রতি বুদ্ধের সর্বোচ্চ নির্দেশনা ছিলো, 'বহুজনের সুখের জন্য, হিতের জন্য তোমরা দিকেদিকে ছড়িয়ে পড়ো।'
বুদ্ধের এই অভিপ্রায় থেকে কেনো নারীকে বঞ্চিত করা হবে? বুদ্ধ কি নারীকে বর্জন করে মানবসমাজ স্বীকার করেছিলেন? আমরা তো জানি, বুদ্ধ তাঁর জীবদ্দশায় বহু জ্ঞানী-গুণী ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীকে সাথে নিয়ে মানুষের কল্যাণে দিকনির্দেশনা দিতেন। বুদ্ধ যে অধিকার আড়াই-হাজার বছরেরও আগে স্বীকার করে গেছেন, তাকে অসম্মান করে আজ নারীকে হেয় এবং নানাভাবে বঞ্চিত করা কতটা শোভনীয়?
বৌদ্ধ-সমাজ-ধর্মের প্রতিনিধিদের কাছে আমার বিনীত জিজ্ঞাসা- সর্বজনীন প্রজ্ঞা ও প্রেমভিত্তিক ভ্রাতৃত্বের চর্চা উদারভাবে করা না হলে প্রচলিত সমাজ-ধর্মের দোহাই দিয়ে সংকীর্ণ ও স্বার্থপর পথে একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ জীবন-চর্চায় জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে কি? অথচ আমরা জেনেছি, বুদ্ধের সমগ্র জীবনের লক্ষ্যই ছিলো প্রজ্ঞা ও প্রেমশক্তি দিয়ে মানুষের জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা।
সকল প্রাণী সুখী হউক।
লেখাটি গৌতমী সাময়িকী ভিক্ষুণীসংখ্যা থেকে নেয়া।
লেখকঃ শিক্ষার্থী।
©somewhere in net ltd.