নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আপনারে দীপ করে জ্বালো\' (\'অত্তদীপ ভব\')

গৌতমী সাময়িকী

নীড় ছাড়ার গন্ধ শরীরে যার!

গৌতমী সাময়িকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রামণী গৌতমীর সাথে: সেঁজুতি বড়ুয়া

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:২৬



প্রত্যেকের জীবনে নানা ধরনের স্বপ্ন থাকে, যার মধ্যে কিছু পূরণ করা সম্ভব আর কিছু কখনো পূরণ হবার নয়, এমনটাই ধরে নেয়া হয়। তেমনই কিছু স্বপ্নের মধ্যে আমার একটা স্বপ্ন ছিলো, কোনো একদিন চলে যাবো সেই পুণ্যস্থান বুদ্ধগয়া। তবে সেই ভ্রমণে যদি এমন কারো সঙ্গে যাওয়া যায়, যাকে হৃদয়ের খুব গভীর থেকে ভালোবাসি তবে মন্দ হয় না।

এই পছন্দের মানুষটির সাথে পরিচয় হয়েছিলো হঠাৎ। যদিও পরিচয় হয়েছিলো হঠাৎ তবে আমার বাবার মুখে অনেক আগে থেকে শুনতাম সেই মানুষটির কথা। তখন থেকেই খুব ইচ্ছে ছিলো, একদিন ওনার সাথে দেখা হলে মনভরে আমার ভালো লাগার কথা বলবো, তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধার কথা বলবো। একদিন সেই বহুপ্রতীক্ষিত সময়টি আসলো। পরিবারের সাথে গিয়েছিলাম ভাবনা কোর্সের শেষদিন ছিলো ঐ দিন। আমিও গেলাম। দেখা হলো! কথা হল! সেইদিন যে নিজেকে কি ভাগ্যবান মনে হচ্ছিলো বলে বোঝাতে পারবো না।

যাই হউক! ধীরে-ধীরে আরো কথা হলো। মানুষটির সাথে যতই কথা বলতাম ততই মুগ্ধ হতাম। বাংলাদেশের মত একটি দেশে অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাংলাদেশ শ্রামণী সংঘ প্রতিষ্ঠিত হলো ওনার নিরলস প্রচেষ্টায়। হ্যাঁ! আমি ভিক্ষুণী গৌতমীর কথা বলছি। যাক! এবার ফিরে আসি ভ্রমণের কথায়।

একদিন ফোন করে শ্রামণী গৌতমী বললেন ইণ্ডিয়া যাবার কথা। শুরু হয়ে গেলো ভিসার কাজ। এই যাওয়াটা খুব একটা সহজ হবে না আগে থেকেই জানতাম। তাই মনের মধ্যে একটা শঙ্কা ছিলো যে আসলে কি এই প্রিয় মানুষটির সাথে যেতে পারবো সেই পুণ্যস্থানে? এই শঙ্কার কারণ ছিলো, আমাদের সমাজের কিছু মানুষ যারা কিছু জিনিস নিয়ে একটু বেশীই খুঁতখুঁতে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো আমার বাবা ঐ দলের মানুষ নন। কিছু প্রতিকূলতা থাকলেও অবশেষে যাওয়ার দিন ঠিক হলো। মনে হচ্ছিলো আমি কি আসলেই যাচ্ছি! শ্রামণী গৌতমীর সাথে!

বুদ্ধগয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, পৌঁছে গেলাম সেখানে। ভোর হতেই শ্রামণীর সাথে চলে গেলাম মহাবোধি টেম্পলে। বিহারে পা রাখতেই কেমন একটা শিহরণ অনুভব করলাম। খুশীতে কিছুক্ষণ ভুলে গিয়েছিলাম কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, কোথা থেকে এসেছি। শ্রামণী গৌতমীর সাথে সম্পূর্ণ বিহার ঘুরে দেখলাম। ওনার যেনো সেই বিহারে সবকিছু অতি পরিচিত। কোথায় কি আছে, কোন স্তম্ভের কি তাৎপর্য, সেখানকার মানুষগুলো সবই যেনো তাঁর চেনা।

চোখ বন্ধ করতেই মনে হলো; আহা! কী শান্তি এখানে! জীবনের অর্থ যেনো আজ প্রথম বুঝতে পারছি! কী এক অদ্ভুত অনুভূতি! তারপর কাটিয়ে দিলাম ছয়টা দিন বুদ্ধগয়াতে। সত্যি! শ্রামণী গৌতমী ছাড়া চিন্তাই করা যাচ্ছিলো না সেই কয়টা দিন। মা যেমন তাঁর সন্তানকে আগলে রাখে ঠিক সেভাবেই যেনো আমাকে আগলে রাখলেন তিনি। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা বিহারে যাওয়া, বরসম্বোধি ভিক্ষুর সাথে সাক্ষাৎ হওয়া, রাস্তায় একটু পরপর গেরুয়া বস্ত্র ধারণ করা ভিক্ষু-ভিক্ষুণীর দর্শন পাওয়া সবকিছু কেনো জানি স্বপ্ন মনে হচ্ছিলো। একটা অন্যরকম রুটিন হয়ে গিয়েছিলো ঐ কয়টা দিনের।

থেকে যেতে ইচ্ছে করছিলো ওখানেই। দেশে ফেরার মনই যেনো ছিলো না। এই ভ্রমণ কখনো এতটা ভালো লাগতো না যদি সঙ্গে শ্রামণীর মত একজন মানুষ না থাকতো। কি মায়া ওনার মধ্যে! ছয়টা দিন এক সাথে থেকে মনে হচ্ছিলো এই মানুষটাকে ছেড়ে কীভাবে থাকবো দেশে ফিরে! খুব ফাঁকাফাঁকা লাগছিলো। তবুও সেই স্মৃতি, বোধিবৃক্ষের দর্শন পাওয়া, সেই প্রিয় মানুষটির সাথে কটা-দিন থাকতে পারা, ওনার কাছ থেকে কথাচ্ছলে জানতে পারা বিভিন্ন কথা, ধর্মীয় দেশনা কিছুই যেনো ভুলার নয়।

আমার অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হলো অবশেষে। এই ভ্রমণের কথা কখনো ভুলতে পারবো না। এখনো প্রায় স্বপ্ন দেখি; আমি বুদ্ধগয়া গিয়েছি শ্রামণীর সাথে, বোধিবৃক্ষের সামনে বসে বন্দনা করছি, হেঁটে হেঁটে চারপাশ দেখছি আর চোখ বন্ধ করে সেই জায়গা অনুভব করছি।

ইণ্ডিয়া থেকে ফেরার কিছুদিন পরেই জানতে পারলাম খুব শীঘ্রই শ্রামণী গৌতমীসহ আরো চারজন শ্রামণী শ্রীলংকায় যাচ্ছেন ভিক্ষুণী হতে। হয়ে চলেও আসলেন কিছুদিন আগে। সত্যি মন থেকে চাই বাংলাদেশ ভিক্ষুণী সংঘ আরো অনেক দূর এগিয়ে যাক। সঙ্গে থাকবো ওনাদের আর ওনাদের এই পথ চলাতে...

-------------------------------------------------------
লেখাটি গৌতমী সাময়িকী ভিক্ষুনীসংখ্যা থেকে নেয়া।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.