নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আপনারে দীপ করে জ্বালো\' (\'অত্তদীপ ভব\')

গৌতমী সাময়িকী

নীড় ছাড়ার গন্ধ শরীরে যার!

গৌতমী সাময়িকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভেঙ্গে যাক অনাচারের শৃঙ্খল: _নীলকান্ত

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:২৯




মানবতার উর্দ্ধে গিয়ে কোন ধর্ম নাই। ধর্ম মানব কল্যানে সৃষ্ট, ধর্ম মানবতার বাইরে কথা বলে না। তবে তথাকথিত কিছু হীনমনষ্ক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি দ্বারা রচিত সীমানায় বুদ্ধের জ্ঞান, চরিত্র আর জীবদ্দশা বর্ননা মানুষকে রোবট বানিয়ে ফেলে।

বুদ্ধ তাঁর সারাটি জীবন ব্যয় করেছেন বিশ্বমানবতার সেবায়, অসাম্প্রদায়িক ও অলৈঙ্গিক সমাজ ব্যবস্থা নির্মানে। যেখানে থাকবে না কোন সাম্প্রদায়িক পরিচয়, থাকবে না কোন শ্রেনী বৈষম্য, থাকবে শুধু ভাতৃত্বের সম্প্রীতি।
আমি ভিক্ষুনী প্রসঙ্গে আলোচনা করছি......

বুদ্ধের প্রদর্শিত পথ, তার আকাশচুম্বী অর্জিত জ্ঞানের রক্ষণ এবং সে জ্ঞান প্রবাহমান করার জন্য কিছু ভিক্ষুর প্রয়োজন মনে করেছিলেন। তাই তিনি ভিক্ষু তৈরী করেন এবং তাদের সে সংঘবদ্ধতার নামাকরণ করেন ভিক্ষুসংঘ। আমরা সকলে জানি যে, বুদ্ধের সময় অর্হৎ ভিক্ষুর মত অর্হৎ ভিক্ষুনীর সংখ্যাও ছিল উল্লেখযোগ্য।

তবে আমাদের দেশে কেন ভিক্ষুনীসঙ্ঘকে বৃহৎ পরিসরে দেখতে পাচ্ছি না উন্নত রাষ্ট্রগুলোর মতো...? তার কারন এই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সমাজ ব্যবস্থায় ভিক্ষুনীসঙ্ঘের ভালো কোন পৃষ্টপোষক নেই। এই সংঘের ধারা প্রবাহের জন্য চাই ভালো পৃষ্টপোষকতা, উন্নত চিন্তা মননের ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোক এবং সামাজিক সার্বিক সহযোগীতা। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, ভিক্ষুনীসঙ্ঘের পেছনে কোন সহযোগীতার উন্নত মননের লোক নেই, কেউ এগিয়ে আসছে না, সবাই অন্ধত্বের বেড়াজালে সীমাবদ্ধ।

তারপরও এই ভিক্ষুনীসঙ্ঘের আত্মপ্রয়াসে যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তা আসলেই সাধুবাদের চুড়ান্ত পর্যায়, এতে কোন সন্ধেহ নেই।

আজকালকার সমাজ ব্যবস্থা আদিম পৌরাণিকবাদী, পুরষতান্ত্রিক আর প্রভাবশালীর প্রভাবে প্রভাবিত অনবরত, প্রতিনিয়ত। এখানে বৈষম্য রয়েছে, রয়েছে কাল্পনিক মনগড়া রীতিপ্রথার অনুসরণ। প্রত্যেকটি অনৈতিক বাক্য নৈতিক বলে জবরদখলদারীত্ব ফলানো হয় এখানে। এখানে আজীবন বৈষম্য রয়েছে, আছে, থাকবেও। যতদিন মানুষের মধ্যে বৈষম্যবিহীন চেতনার উদ্ভব ঘটবে না, ততদিন ধর্মের নামে কুপ্রথার প্রচলন প্রচলিত থাকবে। বুদ্ধ কখনো শ্রেনী বৈষম্য, নারী - পুরুষ, সুচি - অসুচি এসব হীনমন্যতা তার জ্ঞানে ও চরিত্রে নিজেও চর্চা করেন নি, অন্যকেও বারন করেছেন।

তবে এরা কারা...? এরা কারা বুদ্ধের শিক্ষাকে আমাদের এতোটা বিকৃত করে দেখায়...? এরা কারা বুদ্ধের শিক্ষা বাদ দিয়ে লৈঙ্গিক শিক্ষা দেয়, নারী - পুরুষের কার্যক্রম নির্ধারণ করে দেয় আমাদের...? আমাদের সীমাবদ্ধ করে।
বুদ্ধ কখনোই এমন শিক্ষা দেন নি, তিনি পৃথিবীময় মানুষের রাজ্য চেয়েছিলেন, তিনি নারী - পুরুষ দেখেন নি, মানবতার স্বপ্ন দেখেছিলেন, এমনভাবে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার মত বর্বরতার শিক্ষা তিনি দেন নি।
তাহলে এরা কারা নিজেদের বৌদ্ধ দাবী করে...? যেখানে আরো শোনা যায় যে, বুদ্ধের চীবর কোন নারী স্পর্শ করতে পারবে না, কোন নারী সে চীবর ধারন করতে পারবে না। তাহলে এ কেমন নীতিকথা যা ওনারা বলছেন...? যেখানে বুদ্ধ কখনো লিঙ্গ বিচার করেন নাই, লিঙ্গ দ্বারা মানুষ নির্বাচন করেন নাই, সেখানে এইসব নারীর সীমাবদ্ধতা রচনা করে দেওয়ার এনারা কে...?

আমরা নানা সময়ে চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকাগুলোতে এবং এর বাইরেও দেখেছি পাহাড়ি নারীরা চীবর বুনন করছে, সে চীবর পরের দিন চীবরদানে ভিক্ষুদের দানও করা হচ্ছে। এখানে তো কোন পাপ নেই, এই চীবরতো কোন নারীর তৈরী ছিল। শুধু নারীরা পরিধান করলেই পাপ বিবেচনা হয়, এতটা হীনমন্য বিবেক।

সে গোষ্ঠিগুলোর ধ্যান - ধারনা সম্পূর্ন পুরুষতান্ত্রিক সভ্যপ্রতিবন্ধী। তারা ব্রাহ্মণ্যবাদী, পৌরাণিক ও পুরুষতান্ত্রিক গন্ডিবদ্ধ লোকাচারী প্রানী। এদের মনুষ্যত্ব মৃত, তাই এদের সদা নারী বিদ্বেষী মনোভাব থেকে সবল পৌরুষের আধিপত্য বিস্তার করানোর উদ্দেশ্য হাসিল করে মাত্র।

এখানে কোন বৌদ্ধিক চিন্তা, মনন, অনুধাবন বলতে কিছু নেই, শুধু বল প্রয়োগ। তাই বিভিন্ন সময় শুনে আসছি নারীরা শ্রামনী বা ভিক্ষুনী হতে পারেন না, নারীদের কারনে নাকি বুদ্ধের ২৫০০ বছর শাসনকাল নষ্ট হয়েছে, তারা সর্বদা গৃহিণী থাকবেন। খুব খারাপ লাগে তখন, যখন দেখি নিজেকে বৌদ্ধ দাবী করা এমন একজন ব্যক্তি এ কথা বলেন। বুদ্ধ যেসব শ্রেনী বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য এমন কিছু প্রথাগত নীলনকশার বিরুদ্ধে গিয়ে মানবকল্যানে জীবন ব্যয় করেছেন, বর্তমানে কিছু বৌদ্ধরা সে নীলনকশারই চর্চা করছেন। যেখানে বুদ্ধ সকল প্রানীর সুখের কথা বলেছেন, সকল প্রানীর শান্তির কথা বলেছেন, সেখানে একগোষ্টি শুধু পুরুষের কথাই ভেবে এসেছেন, তাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞানের চিত্র দেখিয়েছন।

বুদ্ধ যে পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিল এরা তার বিরুদ্ধে যাচ্ছেন, এর বিরুদ্ধে যাওয়া মানে কি বুদ্ধের বিরুদ্ধেও যাওয়া নয়...? হুম। তাহলে এসব কি ঘটছে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায়। আর এই কুপ্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে যখন কিছু নারী বুদ্ধের মত করে জীবন চর্চা করতে চাইছেন, তখনই অনেক বৌদ্ধদের মুখে তাদের নামে ভালো কিছু শুনি না। কিন্তু কেন...? এনারা বুদ্ধকে অনুধাবন করেছে বলে তাদের ভাগ্যে ভালো কিছু জুটছে না এই হীনমন্য সমাজে।

এই কুপ্রথার বিরুদ্ধে এগিয়ে এসে সমাজ সংষ্কারের আন্দোলন যারা শুরু করেছেন, আমি তাদের প্রতি চীর কৃতজ্ঞ, আমি তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা অনুভব করি। আমি তাদের মাঝেই আমার বুদ্ধকে দেখতে পাই, বুদ্ধ এমনি ছিলেন সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন, অনাচারের শৃঙ্খল ভেঙেছেন বুদ্ধ।

শ্রদ্ধার এমন স্থান থেকে বলছি - আমি এই ভিক্ষুনীসঙ্ঘের প্রতি অবনত। এমন উন্নত জ্ঞানের, চৈতন্যের প্রকাশ করেছেন যা আমাদের দেশে এই প্রথম কোন ভিক্ষুনীসঙ্ঘের করে দেখিয়েছেন। এই সংঘের এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছি, সে উজ্জ্বল আগামীর প্রত্যাশা এবং শ্রীবৃদ্ধির কামনা রেখে শেষ করছি।

♦ জগতের সকল প্রানী সুখী হোক ♦

লেখকঃ প্রাবন্ধিক।
লেখাটি গৌতমী সাময়িকী ভিক্ষুণীসংখ্যা থেকে নেয়া।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.