![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘটনা১:
বিদেশে চাকুরী করে একটা ছেলে। ফেসবুকে পরিচয় হয় বাংলাদেশের একটি মেয়ের সাথে।অল্পঅল্প করে পরিচয় রুপান্তরিত হয় গভীর প্রেমে, তা গড়ায় পরিনয়েরদিকে। বিয়ের পূর্বে ছেলেতার গ্রামের নামঠিকানা সবই প্রকাশ করে, তবে জানায় সে অনাথ, তার গ্রামে কেউ নেই। লোভে পরে নাকি অতিবিশ্বাসে তা জানানেই, তবে মেয়ের পরিবার পূর্ণ পর্যবেক্ষন ছাড়াই বিয়ে দিয়ে দেয় ছেলের সাথে। যে ফেসবুকের মাধ্যমে ছেলেমেয়ের পরিচয়, সেই ফেসবুকেই একটি পোষ্ট যায় তাদের বিয়ের, সাথে ছবি। সৌভাগ্যবশত সেই ছবিদেখতে পান ছেলের আগের পক্ষের বউয়ের মামা। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বিষয়টির পূর্ণসত্যতা যাচাই করে বিয়ের পরদিন সকালে আগের পক্ষের (বউয়ের) মামা উপস্থিত হন নতুন বিবাহিত দম্পতির বাসায়। প্রথমে তার কথার কেউ পাত্তা দেয়না, এমনকি ছেলেও তাকে চিনতে অস্বীকার করে। পরবর্তীতে পূর্ণতথ্যউপাত্ত যেমন বিয়ের ছবি, উপস্থিত লোকজনের স্বাক্ষ্য ইত্যাদি মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, ছেলে পূর্বে একটিবিবাহ করেছিল এবং তার দুইটি সন্তান আছে। গ্রামের বাড়িতে যে বউ আছে সে বউ অবশ্য জানে বিদেশে তার স্বামীর চাকুরী নেইএবং সে বিভিন্ন ঝামেলার কারনে বিদেশ থেকে দেশে যোগাযোগ করাতে পারছেনা। কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে সে অন্য একজনের প্রেমেমত্ত হয়ে আছে, এমনকি তা বিয়ে পর্যন্ত গরায়, তার জানা ছিলনা। অবশেষে নতুন দম্পতির সেই সংসার টিকেনি। ঢাকায় যে মেয়েটিকে বিয়ে করেছিল সেই মেয়েই তাকে ডিভোর্স দেয়। তবে আমার দুঃখ শুধু এটুকুই ডিভোর্সই দিয়েই কেন শেষ হবে, আইনের আশ্রয় কেন নেয়া হবেনা? ছেলেটি অন্যায় করে ঠিকই রেহাই পেয়ে গেল।
ঘটনা ২:
এ লেভেল পাশ করা এক মেয়ের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার বিদেশ ফেরত ফুফাতো ভাইয়ের সাথে। মেয়ের বাবা নিশ্চিন্ত হয়ে বিয়ে দেন নিজের বোনের ছেলের সাথে। পারিবারিকভাবে বিয়ে, আত্মীয়ের ভেতর, সমস্যা হবার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বিয়ের পরের দিন থেকেই শুরু হয় বিচিত্র ব্যবহার। দিনের শুরুতেই মেয়েটা বুঝতে পারে তাকে আনা হয়েছে কেন। প্রথমদিনেই তাকে দুই/তিন বালতি কাপড় ধুতে দেয়া হয়, ঘরের যাবতীয় কাজ, রান্না, ঘর মোছা থেকে শুরু করে বাসায় একজন কাজের মেয়ে/ছেলে থাকলে যা যা করানো যেতো তার সবটাই করানো হয় তাকে দিয়ে। বিয়ের পাঁচ দিনের মাথায় স্বামী আবার বিদেশে চলে যায় বলে মেয়েটি ফিরে তার বাবার বাড়ি। বাবার বাড়িতে ফেরা মাত্রই মেয়ের স্বাস্থ্য/চেহারার অবনতি দেখে পরিবারের কাছে ঘটনাগুলো প্রকাশ পায়। জানি না শেষ পর্যন্ত মেয়েটি ওই স্বামীর সংসার করবে কি না, বা করলেও কিভাবে করবে বা যে ছেলে এ লেভেল পাশ করা মেয়েকে দেশেই কাজের মেয়ে বানিয়ে ফেলতে পারে বিদেশে নিয়ে গিয়ে তাকে কি করবে?
ঘটনা ৩:
ঘটনাটি আজ থেকে অনেক অনেক বছর আগের। ঢাকায় থেকে এইচ.এস.সি পাশ করা (ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া) এক মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়া হয় এইচ.এস.সি পাশ করা বিদেশ ফেরত এক ছেলের সাথে। ছেলের বাবার অনুরোধে মেয়ের বাড়ির লোকজন গ্রামে গিয়ে বিয়ে দিয়ে আসে। ছেলের বাড়িতে (গ্রামের বাড়িতে) বিয়ে হয় মেয়েটির। তারপর শুরু হয় আর দশটা মেয়ের মত সংসার। বাবার ঘরে আদরে পালিত মেয়েটির মাথায় চাপিয়ে দেয়া হয় অনেক অনেক দায়িত্ব। যারা লেখাপড়া নিয়ে সময় ব্যায় করে তারা সংসারের কাজে পারদর্শী হবে না এটাই স্বাভাবিক, তবুও চেষ্টার কোনও কমতি রাখেনা মেয়েটি। বাড়তি ঝামেলা হিসেবে দেখা দেয় ছেলের সন্দেহ বাতিক। বাড়ির বাহিরে কারও সাথে কথা বলা যাবে না, এমনকি পাশের বাড়ির লোকদের সাথেও না, এমনকি মেয়ে নিজের বাবার বাড়িও আসতে পারবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। তৎকালীন সময়ে মেয়েদের যা যা সহ্য করতে হতো মেয়েটির কপালেও তাই জুটলো। শ্বাশুড়ীর আবদার পূরণ করা, এটা করা - সেটা করা ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপরও মেয়ের এই সমস্যা, সেই ত্রুটি, এটা ভালো না, সেটা মন্দ ইত্যাদি ইত্যাদি চলতেই থাকে। এর মাঝেই মেয়ে দুই দুইবার অন্ত:সত্ত্বা হয়েও গর্ভপাতের স্বীকারহয়। মেয়ের বাড়ির লোকজন বারবার দেখতে আসে মেয়েকে, চেষ্টা করে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে কিন্তু মেয়ে যেতে পারেনা, ওই যে বারন আছে । মেয়েটি তৃতীয়বার যখন অন্ত:সত্ত্বা হয় তখন মেয়ের মা অনেক কষ্টে বুঝিয়ে শুনিয়ে মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ততদিনে ছেলেটি বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। মেয়ের পরিস্থিতি তখন এমন যে কতদিন টিকবে তা বলা যায় না। কোনও ডাক্তারই তার চিকিৎসা করতে অপারগতা জানায়। অনেক চেষ্টা করে, পরিচিত লোক ধরে ডাক্তার প্রফেসার ওয়াদুদকে দেখানো হয়। মেয়ের অবস্থা দেখে, ডাক্তার মেয়ের বাবার দিকে মেয়ের ফাইলপত্র ছুড়ে মারেন এবং বকাঝকা করেন, জিজ্ঞাসা করেন মেয়ের বাবা মেয়েকে মেরেফেলতে চান কিনা। অনেক ঝড়ঝাপ্টা পার হয়ে মেয়ের কোল আলোকিত করে আসে একটা পুত্রসন্তান। ছেলেটিকে জানানো হয় পুত্রসন্তানটির কথা। যে ছেলেটি, মেয়েটিকে শ্বশুড়বাড়ি থেকে বাবার বাড়িয়ে নিয়ে আসার পর একবারও যোগাযোগ করেনা, মুহূর্তেই যোগাযোগ বাড়িয়ে দেয়। ছেলে পক্ষের লোক আসে বাচ্চাটিকে দেখতে, কত আদর আপ্যায়ন। পুত্রসন্তানটির যখন আনুমানিক দশমাস বয়স তখন ছেলেটি আসে বিদেশ থেকে। অনেক ঘটনা, অনেক পরিস্থিতির পর ছেলে আর মেয়ের মাঝে সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ছেলেটি মেয়েটিকে পুত্রসন্তানসহ আবারও নিজের গ্রামের বাড়ি নিয়ে যায় এবং ছেলেটি বিদেশে না যাওয়ারআগ পর্যন্ত সেখানেই থাকে। ছেলেটি যখন আবার বিদেশে চলে যাবে তখন মেয়েটিকে মেয়ের বাবার বাড়ি রেখে যায় এবং বলে যায় তিন মাসের মাধ্যে ভিসা পাঠিয়ে দিবে যাতে মেয়েটি ছেলেটির কাছে সন্তানসহ চলে যেতে পারে। এর মাঝে সব স্বাভাবিক চলতে থাকে। একসময় মেয়েটি জানতে পারে সেআবারও অন্ত:সত্ত্বা হয়েছে। ছেলেটিকেও জানানো হয়সে কথা। তারপর ছেলেটির পক্ষ থেকে সবযোগাযোগ আবারও বন্ধ করে দেয়া হয়। এরই মাঝে মেয়েটির কোল আলোকিত করে আসে আরও একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তান। ছেলেটিকে জানানো হয় সেইখবর। শুরু হয় নতুন করে যোগাযোগ। তবে সেই যোগাযোগ বেশিদিন টিকেনা। মেয়েটি যখন সন্তানদের খরচ দেবার কথা বলে আবারও ডুব দেয় ছেলেটি। এরপর কয়েক মাস বাদে মেয়েটির কাছে আসে একটি উকিলনোটিশ, যাতে লেখা থাকে মেয়েটি ছেলেটির বাসা থেকে বাচ্চা এবং মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে পালিয়েছে। উকিল নোটিশ পেয়ে মেয়েটি অবাক ও স্তব্ধ হয়ে যায়। বিষয়টা আসলে কি ঘটলো তা বুঝে উঠার আগেই উকিল নোটিশের মাসখানেক পর আসে ডিভোর্স লেটার। দুই সন্তান নিয়ে মেয়েটির মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। শুরু হয় মেয়েটির দুই সন্তান নিয়ে নতুন যাত্রা। ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারতো, এমনও হতে পারতো যে কষ্ট করে হলেও মেয়েটি তার দুটি সন্তানকে নিয়ে কষ্টে হাসি আনন্দে দিন পার করছে। কিন্তু বাস্তবতা তেমন ছিল না। ছেলেটি ডিভোর্স দিয়েই ক্ষান্ত হয় না। শুরু হয় অন্যরকম যন্ত্রনা। ছেলে ও ছেলের পরিবার বিশেষ করে ছেলের বোন, বোনের স্বামী এই বলে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে যে, তাদের পুত্র সন্তানদের তারা নিয়ে যাবে নিজেদের কাছে। এক যন্ত্রনা কাটিয়ে উঠতে না উঠতে মেয়েটি সম্মুখিন হয় আর এক যন্ত্রনার। যে মেয়েটি স্বামী ও স্বামীর পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া সকল প্রকার অত্যাচার, যন্ত্রনা এমনকি প্রতারনাও, মেনে নিয়ে আবারও নতুন করে জীবন শুরু করতে চাইছিল ছেলেদের মুখের দিকে তাকিয়ে, তার মাথায় যেন আরও একবার আকাশটা ভেঙ্গে পড়লো। মেয়েটি তার সন্তানদের কিছুতেই দিবে না, কোলছাড়া করবে না নিজের। এদিকে ছোটে, তার কাছে যায়, কি করা যায়, কি করণীয় তা জানতে। সবার কথা শুনে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়, এতো ছোট সন্তানদের মায়ের বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ না। তবে একটা ভয় মেয়েটির কিছুতেই কাটছিলনা। মা মুরগী যেমন বাচ্চা ফুটার পর সব সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে, কখন চিল ছোবল দিয়ে বাচ্চা তুলে নিয়ে যাবে এই চিন্তায়, সেই মেয়েটিও প্রতিটি মুহূর্ত চোখে চোখে রাখতে লাগলো তার সন্তানদের। এই বিভিষিকাময় যাত্রায় মেয়েটির পাশে বটগাছের মত শক্ত হয়ে দাড়িয়ে থাকে মেয়েটির পরিবার। তখন সবার একটাই কাজ বাচ্চাগুলোকে চোখে চোখে রাখা। একটা সন্তান যখন হাটতে শিখে, এদিকে সেদিকে ছোটাছুটি করে বেড়ায়, প্রতিটি পরিবার সন্তানদের ছোটাছুটিতে আনন্দে আত্মহারা হয়, কিন্তু মেয়েটির পরিবারের সবার চিন্তা বেড়ে যায় বহুগুণ। ছোট মানুষ, কখন কোথায় চলে যায়, কে তাকে নিয়ে যায়। একটা বড় চিন্তা মেয়ের পরিবারের মাথা থেকে কখনই যায় না, যদি ছেলেটির পরিবারের কেউ বা অন্য কেউ বাচ্চাদুটোকে অথবা যে কোনও একটাকে চোখের অগোচরে তুলে নিয়ে যায়, তবে সেই সন্তানকে ফিরিয়ে আনা মেয়েটি বা মেয়েটির পরিবারের পক্ষে কখনই সম্ভব হবে না। ছেলেটি যেমন বিত্তশালী তেমন ক্ষমতাবান। একবার বাচ্চা নিজের হাতে করতে পারলে আর ফেরত পাবার উপায় নেই। এভাবেই চলতে থাকে, ক্ষনে ক্ষনে চিল হানা দেয় আর মুরগী তার সমস্ত শক্তি দিয়ে আগলে রাখে তার সন্তানদের। যারা ইতিমধ্যে মেয়েটার খুত ধরা শুরু করেছেন তাদের জ্ঞাতার্থে জানাই, মেয়েটিকে দুই সন্তান সহ ডিভোর্স দেবার পর ছেলেটি আবারও অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে (যে মেয়ের আগে একটি বিয়ে হয়েছিল এবং যে মেয়েটি ওই ছেলের আপন খালাতো/মাসতুতো বোন, যতটুকু জানি বড়ুয়াদের মাঝে আপন খালাতো ভাই বোনদের মাঝে বিয়ে হয় না, অবশ্য পয়সাওয়ালা ও ক্ষমতাবানদের জন্য বিষয়টা ভিন্ন)। অন্যদিকে অল্প বয়সী একটা মেয়ে, যে আবারও বিয়ের পিড়িতে বসার যোগ্যতা রাখে, নিজের সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে সমস্ত জীবনটা পার করে দেয় সন্তানদের ভবিষ্যত গড়ায়। এই যাত্রায় মেয়েটি সবচেয়ে বেশি পাশে যাকে পায়, সে আর কেউ না, তারই ছোট বোন, যে নিজের জীবনের সমস্ত সুখ আকাঙ্খা বিসর্জন দেয় বোন আর বোনের ছেলেদের জীবন রচনায়। এর মাঝে একটু একটু করে বড় হতে থাকে সন্তানগুলো। মেয়েটা তার সন্তানদের কাছে কিছুই লুকায় না, তাদের বাবা কোথায়, কেন নেই, কোথায় আছে, কার সাথে আছে সব জানায়। সত্য যতই জানুন না কেন পাশের বন্ধুটির বাবা যখন তাকে সাইকেল কিনে দেয় তখন তাদের জানা কথাগুলো কষ্টের সাগরে হারিয়ে যায়। এর মাঝে বাচ্চাগুলোর দাদু (মানে ছেলেটার বাবা) মারা যায়। মারা যাবার আগে মেয়েটা শ্বশুড়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য বাচ্চাগুলোকে নিয়ে যায় দেখাতে। গ্রামের বাড়িতে বাচ্চাগুলোকে সবাই দেখে, তারাও দেখে তাদের বাপের ভিটা। দাদু মারা যাবার পর বাচ্চাদুটো শ্রমণও হয়। অনেকটা সময় কাটায় দাদা বাড়িতে। এরপর এক সময় দাদা বাড়ি থেকে বিদায় নেবার পালা। ছেলেটার বাবা মারা গেলেও ছেলেটা দেশে ফেরে না, ফলে বাচ্চাগুলোর এবারও তাদের বাবাকে নিজের চোখে দেখা হয় না। বাবাকে না দেখার অভাব বুকে নিয়েই তারা গ্রামের বাড়ি থেকে ফেরত আসে। এরপর অপেক্ষার প্রহর শুরু, কবে আসবে সন্তানগুলোর বাবা। একবার এসে দেখা দিয়ে যাবে। কিন্তু বিধিভাম, সেই দিন আর আসে না। অপেক্ষা করতে করতে সন্তানগুলো একসময় ক্লান্ত হয়ে যায়, আশা ছেড়ে দেয়। দিন তো আর বসে থাকে না, পার হয়েই যায়। এক সময় ছোট্ট বাচ্চাগুলো বড় হয়, ধীরে ধীরে তাদের কাছে বাবার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। তারা একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। তারা জানতে পারে ১২ বছর কেউ যদি চোখের অগোচরে থাকে তবে তাকে মৃত ঘোষনা করা হয়, সেই হিসেবে ছেলেগুলো সারা জীবনে কখনও তাদের বাবার চেহারা দেখে নি, তাই তাদের কাছে তাদের বাবা জীবিত হতে পারে না। তারা স্বজ্ঞানে স্বেচ্ছায় নিজের বাবাকে মৃত ঘোষণা করে দেয় (সার্টিফিকেট ও মন থেকে)। যার অস্তিত্ব সমস্তজীবনে তাদের কাছে শুধু মুখে শোনা গল্প, সেই বাবাকে তারা নিজের হাতে হত্যা করে (সার্টিফিকেটে মৃত ঘোষনা করে, তবে সুযোগ থাকলে হয়তো বাবার নামটাই মুছে দিতো)। অনেকেই হয়তো এই নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা শুরু করে দিবেন, জীবিত বাবাকে নিজের সন্তান হয়ে কিভাবে মেরে ফেলে, তাদের উদ্দেশ্যে ছেলেগুলোর বক্তব্য - যে বাবা সমস্ত জীবনে তার নিজের সন্তানদের একবার দেখতে আসে না, কথা বলে না, সেই বাবা তাদের কাছে মৃত, এমন বাবা বা বাবার নাম থাকা না থাকা দিয়ে তাদের কিছু যায় আসে না। হয়তো ছেলেগুলোর তাদের বাবার মত অনেক টাকা ও ক্ষমতা নেই বলে, হয়তো স্বহস্তে গলা টিপে হত্যা করার সুযোগ ও মন মানসিকতা নাই বলে, শুধুমাত্র নিজেদের সার্টিফিকেটে বাবাকে হত্যা করে বছরের পর বছর নিজেদের বুকে দমিয়ে রাখা রাগ ক্ষোভ জ্বালা অপমান ও অপরাধের প্রতিশোধ নেয়। এখন হয়তো সবাই মিলে লেগে যাবে সন্তানগুলোর পেছনে, কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, ছেলেটির এত বড় অন্যায় এর আমাদের সমাজে কোন বিচার হয় না, বরং সমাজপতিরা ছেলের পরিবারকেই বাহবা দেয়। সেই ছেলের দুই ভাই আজ সমাজে নাম করা প্রতিষ্ঠিত ভান্তে (নাম বললে চিনবে না এমন লোক খুজে পাওয়া মুশকিল), তারা বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠানে অন্যদের ধর্মের উপদেশ দিয়ে বেড়ান কিন্তু ঘরে নিজের ভাই কতৃক নিজের ভাইয়ের ছেলেদের প্রতি, নিজের বৌদির প্রতি করা অধর্মকে প্রস্রয় দিয়ে যান। এ সমাজে টাকা আর ক্ষমতা থাকলে সব করা সম্ভব। আপনার অনেক টাকা আর ক্ষমতা থাকলে সমাজপতিরা থাকবে আপনার পকেটে। আপনার যা ইচ্ছা আপনি তাই করতে পারবেন। যত বিচার আচার সব দরিদ্র আর ক্ষমতাহীনদের জন্য। এ সমাজ শুধু শক্তিশালীদের পক্ষ নেয়, পক্ষ নেয় বিত্তবানদের।
তিনটি ঘটনায় শেষটা যেমন অনেক পুরাতন ঠিক তেমনি প্রথম দুটি ঘটনা সাম্প্রতিক। মেয়েরা যুগে যুগে নিজেদের দুর্বলতার কারনে অন্যের দ্বারা অত্যাচারিত নিপীড়িত হচ্ছে। সময় এসেছে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার। যে খাচায় আপনি যুগ যুগ ধরে বন্দি, তার সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে আপনাকেই উড়ে যেতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেই প্রাচীর ভাঙ্গা খুব সহজ কাজ নয়। যুগ যুগ ধরে যারা আপনাদের দমিয়ে রেখেছে তারা এতো সহজে কেন চাইবে আপনি মাথা উচু করে দাড়ান। তারা কখনও আপনাকে সমাজের দোহাই, কখনও ধর্মের দোহাই, কখনও ঐতিহ্যের দোহাই, কখনও মমতার দোহাই ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে আপনাকে সেই খাচায় বন্দি রাখতে চাইবে। সমাজে প্রচলিত একটা ধারনা আছে, যার স্বামী তার স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে দেয়, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন সমস্ত দোষ, দায় দায়িত্ব ঠিকই মেয়েটির মাথার উপরে এসে পড়ে। আপনারাও সেই বোঝা সুন্দর করে বয়ে বেড়াতে শুরু করেন। নিজের অধিকারের জন্য নিজে লড়ুন। সমাজ আপনাকে কিছু দিবে না, বরং সম্ভব হলে যা আপনি অর্জন করেছেন তা ছিনিয়ে নিবে। এ সমাজ শুধুই ক্ষমতাবানদের, বিত্তশালীদের। যে সমাজ আপনি দুই বেলা না খেয়ে থাকলে পরোয়া করে না, আপনাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে না আপনি ক্ষুধার্ত কি না সেই সমাজের কথা আপনি ভাববেন কি না বা ভাবলেও কেন ভাববেন তা আপনাকেই ভেবে দেখতে হবে। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বা বিভিন্ন পরিস্থিতি দেখে যা শিখেছি সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আপনার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যে সমাজ আপনার প্রতি পদক্ষেপে পদক্ষেপে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, অধিকার অর্জনে সক্ষম হলে সেই সমাজই আপনাকে নিয়ে বাহবা দিবে।
পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই, সমাজে আপনার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে সমাজ তার সিদ্ধান্ত শোনাবে। যেমন, যখন কোনও দূর্বল অত্যাচার বা অন্যায় বা নির্যাতনের সম্মুখিন হয় তখন বৌদ্ধদের ভাষায় সমাজপতিরা তাদের বোঝাতে চায় এটাই তাদের কর্মফল, অন্যরা বলে অদৃষ্ট বা ভাগ্য, তবে সবল বা অত্যাচারীদের বেলায় তা কেউ বলে না। কর্মফল বা ভাগ্য বা অদৃষ্ট বা কপালের লিখন যা বলেই আপনাকে ব্যাখ্যা করুক না কেন সিদ্ধান্ত আপনার আপনি তা মেনে নেবেন কি না। এই ক্ষেত্রে বুদ্ধের কালাম সূত্র আপনাকে পথ দেখাতে পারে। কালাম সূত্র আপনাকে অন্ধ বিশ্বাসী হওয়া থেকে মুক্ত করবে, চিন্তা ও যুক্তি দিয়ে ভাবতে শেখাবে। সময় এসেছে, যুগ যুগ ধরে চলে আসা অন্যায় অসত্যের প্রতিবাদ করার। নিজের প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন নাকি কর্মফল, ভাগ্য, অদৃষ্ট বা কপালের লিখন বলে মেনে নিবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনার। কালাম সূত্র আপনাকে পথ দেখাবে, কিন্তু পথ চলতে হবে আপনার নিজেরই।
লেখাটি গৌতমী সাময়িকী 'সপ্তম সংখ্যা' থেকে নেয়া।
©somewhere in net ltd.