নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গাজী মিজানুর রহমান

গাজী মিজানুর রহমান

আমার প্রোফাইলে আপনাকে স্বাগতম। আমি গাজী মিজানুর রহমান, ৩৫ বিসিএসের একজন ক্যাডার। যদিও এর আগে পূবালী ব্যাংক লিমিটেডে প্রায় এক বছর সিনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরি করেছি । আমার পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। আমার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞা থেকে বিসিএস ও ব্যাংকিং ক্যারিয়ার নিয়ে নিয়মিত ফেইসবুক ও ইন্টারনেটে লেখালেখি করি। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার উপর সাজেশনভিত্তিক একটি বই লিখেছি; বইটির নাম- BCS Preliminary Analysis

গাজী মিজানুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনে একটি সরকারি চাকরি পাওয়া আসলেই কি সোনার হরিণ?

২৯ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:০৬

আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত কথা আছে, "বাংলাদেশে চাকরি পাওয়া অনেক কঠিন; চাকরি সবার কপালে জুটে না। সরকারি চাকরি হলে তো আর কোনো কথাই নেই। সরকারি চাকরি তো বাংলাদেশে সোনার হরিণ।"
.
উপরের কথাটি আংশিক সত্য হলেও, পুরোপুরি নয়। আবার এই কথাটি সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য নয়।
আমার জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আপনারদের সাথে কিছু শেয়ার করি-
আমি তখন খুব সম্ভবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ি। আমার এক কাজিন অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে দীর্ঘদিন বেকার। আমার মা একদিন তাদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে, সে আমার মাকে বলল, "আন্টি, মিজানকে যে এতো কষ্ট করে পড়াচ্ছেন, কী লাভ হবে? দেশে তো চাকরি নাই। দেখেন না, আমি আজ অনেকদিন ধরে একটা চাকরি জন্য ঘুরে এখন পর্যন্ত একটা বড় চাকরি তো দূরের কথা, একটা ছোট চাকরিও পেলাম না!"
আমার মা পরবর্তীতে আমাকে একই কথা জিজ্ঞেস করলে, আমি উত্তরে বলেছিলাম, "আগে তো ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করি, তারপর দেখা যাবে কি করতে পারি না পারি। যদি ভালো করে পড়াশোনা করি আর কপালে যদি চাকরি থাকে, চাকরি একটা পাবোই ইনশাল্লাহ।"
.
সেদিন হয়তো আমার মা আমার কথায় আশ্বস্ত হলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেন নি।
এখানে বলে রাখি, আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ার থেকে একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি বিসিএসের জন্য টুকটাক পড়তাম। যেহেতু মাকে বলেছিলাম, ভালোভাবে পড়াশোনা করলে চাকরি একটা পাবোই। তাই সেই দিনের পর থেকে আরো সিরিয়াসলি পড়াশোনা করতে লাগলাম।

এরই মাঝে অনার্স শেষ হলো। ৩৪তম বিসিএসের সার্কুলার দিল। আমি ও আমার কয়েকজন বন্ধু একসাথে বসে এপ্লাই করলাম।
৩৪তম পরীক্ষার প্রিলি পরীক্ষার ডেট তখনো দেয়নি।
জীবনের প্রথম চাকরি ইন্টারভিউ দিলাম এসিস্ট্যান্ট রিজিওনাল ম্যানেজার হিসেবে "মাই ওয়ান ইলেক্ট্রনিক্স"-এ বনানী হেড অফিসে। প্রায় ২০০জন চাকরি প্রার্থী থেকে তারা মোট ১৯ জনকে নিলো। আমি সেকেন্ড হলাম। কিন্তু ভার্সিটির বড় ভাই ও বাবা নিষেধ করলেন যেন এখনই প্রাইভেট চাকরিতে জয়েন না করি। না হয় আমার আমার যে স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার তা হয়তো পূরণ নাও হতে পারে। কারণ প্রাইভেট জবে ঢুকলে পড়ার সময় খুব একটা পাওয়া যায় না। তাছাড়া মাস্টার্সের রেজাল্ট খারাপ হতে পারে।
.
জীবনের প্রথম চাকরি পেলাম; মাকে শোনানোর পর মা খুশি হলেও অনেক খুশি হতে পারেন নি (কারণ মায়ের স্বপ্ন ছিল তাঁর ছেলে একজন বিসিএস ক্যাডার বা ব্যাংকার হবে) । কিন্তু আমি প্রাইভেট চাকরিতে যোগদান করবো কিনা এই নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম- জীবনে প্রথম চাকরির ইন্টারভিউ, আর প্রথম চাকরি সেটায় জয়েন করবো না?
অবশেষে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম। কপালে যা আছে, হবে; এতো তাড়াতাড়ি প্রাইভেট চাকরিতে জয়েন করবো না। সরকারি চাকরির জন্য আগে ভালো করে চেষ্টা করে দেখবো ভাগ্যে কী আছে। তারপর না হয় কোনো উপায় না থাকলে প্রাইভেট চাকরি করতেই যদি হয় করবো।
.
জীবনের প্রথম বিসিএস ৩৪তম। জীবনের বড় স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার হবো। ৩৪তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার সিট পড়লো ঢাকা কলেজে। পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে বার বার গলা শুকিয়ে আসছিল। হাত-পা কাঁপছিল। তবে প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর আসতে আসতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলো। শেষে দেখলাম জীবনের প্রথম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষা ভালোই হলো।
আমার জীবনের প্রথম বিসিএসে প্রিলি, রিটেন, ভাইভা পাশ করলাম, কিন্তু কোনো ক্যাডার পেলাম না। নন-ক্যাডার পেলাম।
এর মাঝে পূবালী ব্যাংকে পরীক্ষা দিলাম। সিনিয়র অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেলাম।
আমার স্পষ্ট মনে আছে, ১৩ এপ্রিল ২০১৬ সালের রাতে রেজাল্টা দেখার সাথে সাথে আমি আনন্দে কেঁদে ফেলাছিলান। রেজাল্ট দেখার পর প্রথম ফোনটা মাকে দিয়েছিলাম। আমি শুধু মাকে ফোনে এইটুকু বলতে পেরেছিলাম, "মা, আমি পূবালী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরি পেয়ে গেছি।" মা আমার কথা শোনার পর কান্না করতে লাগলেন। আমিও কান্না করছিলাম, কেউ আর কোনো কথা বলতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ পর আমি কথা বলতে না পেরে ফোন রেখে দিয়েছিলাম।
এরপর ৩৪তম বিসিএসে পিএসসি নন-ক্যাডার সেকেন্ড ক্লাস পোস্টে আমাকে সুপারিশ করল, যেহেতু আমি পূবালী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে ফার্স্ট ক্লাস জবে ছিলাম তাই সেকেন্ড ক্লাস জবে জয়েন করিনি।
এরপর ৩৫তম বিসিএসে স্বপ্নের সেই বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম।
এরপর এডমিন ক্যাডার হওয়ার মনসে ৩৬তম ও ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রিলি, রিটেন, ভাইভা পাশ করলেও নন-ক্যাডার পাই। সর্বশেষ ৩৮তম প্রিলি দেই। সেখানেও পাশ করি। এই নিয়ে টানা ৫টি বিসিএস পাশ করি। তবে এবার আর ৩৮তম বিসিএস রিটেন দিব না ঠিক করেছি।
আসলে কোনো জিনিস পাওয়ার তীব্র সৎ আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য পরিশ্রম করলে সেটা কিছুদিন আগে বা পরে পাওয়া যায়।
.
আমার ক্যারিয়ার জীবনের ২টি স্বপ্ন ছিল- প্রথমত বিসিএস ক্যাডার হওয়া, দ্বিতীয়ত ব্যাংকার হওয়া। দুটিই আমি পেয়েছি। তবে প্রথমে ব্যাংকার পরে বিসিএস ক্যাডার।
.
একটা বিষয় খেয়াল করবেন, কেউ কোনো কোটা ছাড়াই অল্প পড়েও চাকরিত পেতে যায়, কেউ অনেক পড়েও টিকে না। আমার কেউ কেউ বার বার একটার পর একটা সরকারি চাকরি পায় আর ছাড়ে, কেউ আবার একটি সরকারি চাকরিও পায় না। আমার মতে, এর মূলে রয়েছে কৌশল ও পরিকল্পনা এবং ভালো করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। আপনি যখন প্রথমে একটা চাকরি পেয়ে যাবেন, এরপর দেখবেন একটার পর একটা চাকরি হয়ে যাচ্ছে। তখন কোনটা রেখে কোনটা করবে সেই নিয়ে চিন্তাই পড়ে যাবেন। তবে প্রথম চাকরি পাওয়াটা অনেক সময় অনেক কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
.

এজন্যই হয়তো নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, "It always seems impossible until it's done." অর্থাৎ, "কোনো কাজ সম্পন্ন করার আগ পর্যন্ত তা সবসময় অসম্ভব মনে হয়।"
কিন্তু আপনি যখন করে ফেলবেন তখন আর অসম্ভব মনে হবে না। তখন আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী ও নিন্দুক সবাই আপনার প্রশংসা করবে এবং আপনাকে বাহবা দিবে।
.
মনে রাখবেন, সমাজে নানা প্রতিকূলতা থাকবেই। সমাজের সকল মানুষ যেমন এক নয়, সকলে মন-মানসিকতাও এক নয়। কেউ আপনার ভালো কাজে উৎসাহ দিবে, কেউ বা আবার নিরুৎসাহিত করবে। এটাই স্বাভাবিক আর এটাই আমাদের সমাজের বাস্তবতা। সবাই আপনার ভালো কাজে কিংবা স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকবে এমন কখনো ভাববেন না। তবে আপনাকে আপনার লক্ষ্য পূরণে অটুট থাকতে হবে। লক্ষ্য পূরণে পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রম কখনো বিফলে যায় না। আল্লাহ সব সময় সৎ পরিশ্রমীদের সাথেই থাকেন।

.
*সকল সৎ পরিশ্রমীর জন্য শুভ কামনা রইল।
_________________________________
©©© গাজী মিজানুর রহমান
***৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার
***সাবেক সিনিয়র অফিসার (পূবালী ব্যাংক লিমিটেড)
***প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক: BCS টেকনিক (বিসিএস স্পেশাল প্রাইভেট প্রোগ্রাম)
© লেখক: BCS Preliminary Analysis (বাংলাদেশের প্রথম সাজেশনভিত্তিক প্রিলির পূর্ণাঙ্গ বই)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৬

আলআমিন১২৩ বলেছেন: ধন্যবাদ স্যার।আপনার সম্পর্কে কিছু নতুন তথ্য পেলাম।ব্লগে আপনার লেখা পেয়ে ভাল লাগলো।

২| ২৯ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৮

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: সফলতার মেইন সোপান হলঃ পরিশ্রম আকাঙ্খা আর কৌশল।
ভাল লেখা ছিল।

৩| ২৯ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: ্সরকারি চাকরি আসলে জমিদারি চাকরি।
আজ যদি আমার একটা সরকারি চাকরি থাকতো- তাহলে আমাকে আর পায় কে !!!

৪| ২৯ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫০

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আপনার মত ঘটনা সবার ক্ষেত্রে হয় না...

৫| ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:২৩

গাজী মিজানুর রহমান বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.