নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্ব: তিন
আগের দু'টো পর্বে আমরা দেখেছি আগুনকে নিয়ত্রণ করতে শেখা আদিম মানুষের অন্যতম সেরা আবিষ্কার হলেও তা বাঘ-সিংহকে সরিয়ে খাদ্য শৃঙ্খলের একেবারে শীর্ষে আসার জন্যে যথেষ্ট ছিলনা। আগুন মানুষকে বাস্তুতন্ত্রে খানিকটা ওপরে তুললেও বৃহৎ মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে একনায়কতন্ত্র কায়েম করা তখনো বহুদূর। তাছাড়া প্রতিটি মানব প্রজাতিই এই আগুনের সুবিধাটি ভোগ করে গেছে সার্থক ভাবে। একদম হোমো ডেনিসোভা, হোমো রূডলফেনিস, হোমো এরগাস্টার, হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস্ থেকে শুরু করে ইরেকটাস, নিয়ানডার্থাল এবং স্যাপিয়েন্স- সব্বাই। এখানে আরেকটি তথ্য দেওয়ার দরকার আছে যে অনেকেই এরকম ধারণা পোষণ করেন মানুষের একগাদা প্রজাতি নাকি একসাথে পৃথিবীতে ছিলনা। এই ধারণা সর্বৈব ভ্রান্ত। ওপরে যে প্রজাতি গুলি উল্লেখ করা হলো তারা একই সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছিল। স্যাপিয়েন্সরা যে সময় আফ্রিকায় রয়েছে, সেইসময় নিয়ানডার্থাল দাপিয়েছে ইউরোপ আবার ফ্লোরেস দ্বীপে বামনাকৃতি ফ্লোরেসিয়েনসিস্ রা। কিন্তু কথা হল এই সমস্ত মানব প্রজাতিই আগুনের ব্যবহার জানতো, তারা সবাই ছোটখাটো অস্ত্র তৈরি করতে পারতো, হাতকে তারা নিয়ন্ত্রণ করেছে আগেই, খাঁড়া হয়ে দাঁড়াতে শিখেছে। কিন্তু এই সব মানুষদের ও অন্যান্য ভয়ঙ্কর,হিংস্র, বিশালাকার প্রজাতিগুলোকে পরাজিত করে হোমোস্যাপিয়েন্সরা কিকরে হয়ে উঠলো পৃথিবীর অধীশ্বর?
যে কাজটা আগুন করতে পারেনি সেটাই করে দিল "উন্নত ভাষা"। প্রকৃতপক্ষে নিজস্ব ভাষাও সব প্রজাতিদেরই আছে। এমনকি কীট-পতঙ্গেরও নিজস্ব ভাষা আছে। তারা এই ভাষায় সাহায্যে অন্যকে দিতে পারে খাবারের খোঁজ, শত্রুর অবস্থান। সেরকম ভাষা ছিল নিয়ানডার্থালদেরও। কিন্তু সত্তর হাজার বছরেরও অনেক আগে হোমোস্যাপিয়্যান্সের মস্তিষ্কে ঘটে যায় এক অত্যাশ্চর্য মিউটেশন। মস্তিষ্ক সুবিশাল হবার জন্যই তারা এই সুবিধাটি লাভ করে হঠাৎ। তারা তৈরি করে এক "উন্নত ভাষা"। যে ভাষায় সীমিত সংখ্যক শব্দ আর সংকেতকে ব্যবহার করে গঠন করা যায় অসীম সংখ্যক বাক্য। অর্থাৎ ভাব প্রকাশ ও জনসংযোগের মাত্রা যায় বেড়ে। এক অনন্ত সম্ভাবনার দরজা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে হোমোস্যাপিয়্যান্সের সম্মুখে। অবশ্য বিজ্ঞানীরা এই মত প্রকাশ করেছেন নিয়ানডার্থালদেরও এই মিউটেশন ঘটতেই পারতো। ঘটেনি এটা একটা ঘটনা। স্যাপিয়েন্সদের ঘটেছে এটা আরেকটা ঘটেনা। নিয়ানডার্থালদের ব্রেনের এই অভিব্যক্তি সংঘঠিত হলে তারা অবশ্যই হয়ে উঠতে পারতো পৃথিবীর সর্বময় কর্তা। কিন্তু বাঘ বা সিংহের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব ছিলনা, আজও নেই। তাদের মস্তিষ্কের অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র আয়তনই এই মিউটেশনের অন্তরায়। আমাদের পূর্বপুরুষেরা সেই কুড়ি থেকে পঁচিশ লক্ষ বছর আগে দেহকে বঞ্চিত করে মস্তিষ্ককে পুষ্ট করার যে ঝুঁকিটা নিয়েছিল সেটা তাদের সেইসময় কিছুটা বিপাকে ফেলেছিল ঠিকই কিন্তু তার সুফল আজ আমরা ভোগ করছি দুর্দান্তভাবে।
এবার আমরা দেখবো "ভাষা" আর "উন্নত ভাষা" র মধ্যে পার্থক্য ঠিক কিরকম ? একটি রিসার্চের উদাহরণ দিলে সহজেই বোঝা যাবে এই দুইয়ের পার্থক্য। বিজ্ঞানীরা সোনালী পশম ওয়ালা গ্রীন মাঙ্কিদের ওপর গবেষণা করে তাদের ব্যবহৃত ভাষার খোঁজ পেয়েছেন। তাদের ব্যবহৃত এরকম দু'টি বাক্য হলো- "সাবধান, সিংহ আসছে" এবং "সাবধান, ঈগল আসছে"। বিজ্ঞানীরা এই ভাষা রেকর্ড করে একটা গ্রীন মাঙ্কিদের দলকে শোনালে তারা যেই শোনে "সাবধান, সিংহ আসছে" সাততাড়াতাড়ি গাছের মগ ডালে উঠে বসে। আবার যেই শোনে "সাবধান, ঈগল আসছে" সাথে সাথে তারা আকাশের দিকে এদিক ওদিক তাকায়। এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা মিথ্যেবাদী বাঁদরেরও খোঁজ পেয়েছেন। সে গাছের একটা পাকা কলা দেখে এগিয়ে যাওয়া সঙ্গীর উদ্দেশ্যে অপেক্ষাকৃত দূর থেকে মিথ্যেই বলে ওঠে, "সাবধান, সিংহ আসছে"। সঙ্গী বাঁদরটা ভয় পেয়ে কলা ছেড়ে পড়িমরি করে একটা উঁচু গাছের ডালে উঠে গেলে সে সহজেই পাকা কলাটা হাতিয়ে নেয়। এখন কথা হলো গ্রীন মাঙ্কিদের মতোই সমস্ত প্রাণীদের দৌড় ঐ "সাবধান, সিংহ আসছে" পর্যন্তই। কিন্তু উন্নত ভাষার বলে বলীয়ান হোমোস্যাপিয়্যান্সেরা তার সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে বলে দিতে পারতো- "ঐ দ্যাখ পূব দিকের আতা গাছটা নড়ছে। মনে হয় ওখানে একটা বাঘ আছে" কিম্বা "নদীর ধারে আজ সকালে একটা সিংহ ছিল। এখন কি ওদিকটায় বাইসন শিকারে যাওয়া উচিৎ হবে?"। অর্থাৎ অনেক নিখুঁত ভাবে ভাষার মাধ্যমে মতপ্রকাশ করা স্যাপিয়েন্সদের করায়ত্ত হয়। সকল জীবজন্তুদের মধ্যে ব্যবহৃত ভাষার সাহায্যে মত বিনিযময়ের সর্বোচ্চ সীমা যেখানে "সাবধান, সিংহ আসছে"; কোন দিক থেকে আসছে, কটা আসছে - এসব কিচ্ছু না স্রেফ "সাবধান, সিংহ আসছে" সেখানে হোমোস্যাপিয়্যান্সের এই সীমা "নদীর ধারে একটা সিংহ ছিল"র থেকেও বহুগুণ বিবর্ধিত। "নদীর ধারে একটা সিংহ ছিল" তত্ত্বের পাশাপাশি আরেকটি স্বীকৃত তত্ত্ব হলো "গসিপ থিয়োরি" পরের পর্বে এখান থেকে শুরু করছি।
.
(কৃতজ্ঞতা....জয়ন্ত সিনহা ।)
১ম পর্বের লিঙ্ক :
২য় পর্বের লিঙ্ক :
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:০৯
গেছো দাদা বলেছেন: আম্মো তাই।
২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫০
নতুন বলেছেন: আপনার এই আলোচনার বিরাট অংশ কিন্তু ধারনা, এই ধারনার পেছনে স্বীকৃত গবেষনা ল্বধ ইনফরমেসন আছে কি?
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:১০
গেছো দাদা বলেছেন: অবশ্যই আছে। সূত্র : হারারির হোমো সেপিয়েন্স
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:৩১
গেছো দাদা বলেছেন: আসল ও শেষ চমক এর পরের শেষ পর্বেই পাবেন দাদা।
৩| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৪:০৮
সাকিবুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেছেন: আমি যদি ভুলভাল না বকি তাহলে আমার মনে হচ্ছে আপনি হারারির হোমো সেপিয়েন্সে বইয়ের বাংলা অনুবাদ করতেছেন।
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:১২
গেছো দাদা বলেছেন: আপনি ঠিক অনুমান করেছেন। তবে আমার লেখাটি অনুবাদ নয়। অনুপ্রানিত বলতে পারেন।
৪| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি জানা বিষয়গুলো নিয়ে বিরক্তিকর রিপিটেশানে আছেন, পাঠকেরা বসে থাকবে না। দেখবেন, ক্রমে পাঠক কমে যাবে।
আসল বিষয়ে যান; দেখা যাক, বিজেপি'তে বানর ছাড়া হনুমানও আছে কিনা
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:১৪
গেছো দাদা বলেছেন: দাদা, আপনি শেষ পর্যন্ত থাইকেন। আসল চমক পরের পর্বেই পাবেন।
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:২৭
গেছো দাদা বলেছেন: আর একটা কথা , আপনি কি আমাকে বিজেপি মনে করেন? আপনার কমেন্টে অহেতুক বিজেপি শব্দ টি কেন ব্যবহার করেছেন?
৫| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:১৫
আনমোনা বলেছেন: ঠিক বুঝে উঠে পারছিনা লেখাটা কোনদিকে যাচ্ছে। গসিপ থিওরী থেকে কি ঈশ্বর বিশ্বাস আসে?
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:১৬
গেছো দাদা বলেছেন: আসল চমক পরের পর্বেই পাবেন। দয়া করে সাথে থাকুন ।
৬| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৫৮
গেছো দাদা বলেছেন: চাঁদগাজীর মন্তব্য সত্য প্রমান করে আমার এই পোষ্টের ভিউয়ারশিপ অনেক কম। এজন্য সকল পাঠক কে ধন্যবাদ জানাই।
৭| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৪১
গেছো দাদা বলেছেন: বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাত্র হত্যাকান্ডের নিন্দা জানাই। আমার শেষ ৪র্থ পর্বের লেখাটি ৪/৫ দিন পরে পোষ্ট করবো।বন্ধুরা সাথে থাকবেন প্লীজ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: নাস্তিক আস্তিক খুব ক্যাচালে ব্যাপার। এই দুই শ্রেনীকেই আমি ভয় পাই।