নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মোদি ভক্ত ! এটা জেনে আপনি দুঃখ পেলে আমি আনন্দিত হব।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাস্তিকতা বনাম ঈশ্বরবিশ্বাস । শেষ পর্ব (পর্ব ৪)। অভাবনীয় চমক এখানেই পাবেন।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৫৪

পর্ব: চার

আগের পর্বে যেখানে শেষ করেছিলাম সেখান থেকেই শুরু করা যাক। "উন্নত ভাষা" নিয়ানডার্থালের সাথে হোমোস্যাপিয়্যান্সের পার্থক্য তৈরি করে দিতে সমর্থ হলো। এই উন্নত ভাষা সৃষ্টির কারণ হিসেবে জীব বিজ্ঞানীরা দু'টো তত্ত্ব সামনে এনেছেন। এক) "নদীর ধারে একটা সিংহ ছিল" তত্ত্ব। দুই) "পরচর্চা তত্ত্ব" বা "গসিপ থিয়োরি"। আপাতদৃষ্টিতে পি এন পি সি বা পর নিন্দা পর চর্চার জন্য একটা প্রজাতি এক জটিল এবং বহুমুখী ভাষা নির্মাণ করেছে -এটা শুনতে যতই হাস্যকর লাগুক বেশীরভাগ বিজ্ঞানীরা কিন্তু গসিপ তত্ত্বের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। আজো মানুষ দিনের অনেকটাই পি এন পি সির জন্যই ব্যয় করে। এমনকি এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে একজন সরকারী আমলা রবিবার খাবার টেবিলে সরকারের নতুন অর্ডারের কার্যকারিতা সম্পর্কে লেকচার দেয় কিম্বা ফিজিক্সের গবেষক হুউস্কির আসরে কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে কথা বলে। কখনো কখনো বলেনা এমনটা হয়তো নয় কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই অমুক বাবুর পরকীয়া, তমুক বাবুর ডেভেলপমেন্টের পয়সা মেরে গাড়ি কেনা কিম্বা অন্য কোন বাবুর শারীরিক অসুস্থতার ব্যাপারে কথা বলায় তাদের নিত্য দিনের কার্যক্রম। গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষকে দলের অন্য সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য জানতে হয়। কার সাথে শিকারে যাওয়া নিরাপদ নয়, কে গুহাতে বেশি সময় কাটায়, কে গোষ্ঠীর কোন না কোন মেয়ের সাথে প্রণয়ে লিপ্ত থাকে এসব না জানলে গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়া যায়না। আর এই পরচর্চা করা ও অন্যের সম্পর্কে খবর সংগ্রহের কারণেই হোমোস্যাপিয়্যান্সকে অপেক্ষাকৃত জটিলতর ভাষা সৃষ্টি করতে হলো। এই উন্নত ভাষার মাধ্যমেই জেনে নেওয়া যেতো জঙ্গলের কোনদিকটায় আজ শিকার পাবার সম্ভাবনা, কতজন লোক লাগবে আরেকটা নতুন গুহাকে বাসযোগ্য করতে কিম্বা গোষ্ঠীপতির বিরুদ্ধাচরণ করতে পারে কে কে বা এরকম নানা রকম মানবিক সম্পর্কের টানাপোড়েন। একটা গোষ্ঠীকে পরিচালনা করতে কিম্বা গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠতে হলে বাকি সদস্যদের সম্পর্কে খুঁটিনাটি খবর রাখা একান্ত জরুরি। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে পঞ্চাশ জনের একটা মানব গোষ্ঠী একে অপরের সাথে ১২২৫ রকম সম্পর্কে আবদ্ধ থাকতে পারে। এই তথ্য থেকেই বোঝা যায় গোষ্ঠী পরিচালনায় কত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর অন্যের সম্পর্কে না জানলে এই দলপতি হওয়া প্রায় অসম্ভব। দলপতি নির্বাচনে শারীরিক সক্ষমতা একমাত্র বিচার্য্য থাকেনা। দলের অন্যান্য সদস্যদের সাথে সুসম্পর্ক, শিকারে সময় দেওয়া, গোষ্ঠীর শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি সহানুভূতি ইত্যাদিও গুরুত্ব পায়। আমাদের নিকটতম জ্ঞাতি শিম্পাঞ্জিরা পর্যন্ত দলপতি নির্বাচনের আগে আগে বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরে, গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের সাথে খুনসুটি করে এমনকি নারীদের সাথে অতিরিক্ত রোমান্স প্রদর্শন করে। যাইহোক হোমোস্যাপিয়্যান্স উন্নত ভাষা পেল ঠিকই কিন্তু নিয়ানডার্থালদের ভাষা একেবারেই অনুন্নত ছিল এমনটাও নয়। তারা "নদীর ধারে সকাল বেলায় একটা সিংহ ছিল" হয়তো বলতে পারতোনা কিন্তু তাদের ভাষা অবশ্যই "সাবধান, সিংহ আসছে"র থেকে বেটার ছিল। ধরা যাক তারা বলতে পারতো "সকাল বেলায় একটা সিংহ ছিল" বা এইরকম। তাহলে খেয়াল করুন শারীরিক সক্ষমতায় এগিয়ে নিয়ানডার্থাল, মস্তিষ্কের আয়তনে মানে বুদ্ধিতে এগিয়ে নিয়ানডার্থাল। আর হোমোস্যাপিয়্যান্স কিসে? শুধু ভাষাতে। এই উন্নততর ভাষার সুবিধা কি ? এইখানে আসল মজাটা। মনে আছেতো আমি বিবর্তনের কথা এনেছি কেন? আজ্ঞে হ্যাঁ,ইসরোর চেয়ারপার্সন ডঃ কৈলাশাভাদিভু শিবনের মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। তাতে গোঁসা করে একদল অতিজ্ঞানী হাসাহাসি করে বলছেন "ঈশ্বরের ধারণা" নাকি অবৈজ্ঞানিক। ইসরোর বিজ্ঞানী হয়ে এই অবৈজ্ঞানিক ধারণাকে ধোঁয়া দেওয়া নাকি ডঃ শিবনের গর্হিত কাজ। এই বাক্যের ঠিক আগের লাইনটা ততটাই হাস্যকর যতটা খোরাক হবার কথা কেউ বললে যে ক্রিকেটার হয়ে গান গাওয়া গর্হিত কিম্বা সরকারি কর্মচারীর কবিতা লেখা নাজায়েজ। পুজো দেওয়া তার সংস্কার, তার মনের জটিলতর ধোঁয়াশা থেকে নিষ্কৃতির এক উপায়। আর বিজ্ঞান চর্চা তার সৃজনশীল পেশাদারিত্ব। দু'টোর মধ্যে কোন বিরোধ ছিলনা, আজো নেই। মহা ঋষি কনাদ পরমাণুর ধারণা দিয়েছিল। অসুবিধা হয়নি। হবার কথাও ছিলনা। ক্রিকেটার গান গাইতে জানলে গাইবে। আপনি যদি ক্রিকেট ফ্যান হন ওনার গানটা শুনবেননা। কিন্তু তার ক্রিকেটীয় স্কিলকে ট্রোল করতে পারেননা মশায়। তাছাড়া জেনে রাখুন "ঈশ্বরের ধারণা"ও একটা বিজ্ঞান।

এই যে আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, ব্র্যান্ডেড জামাকাপড় পরে ঘুরছেন, ফ্লাইটে চড়ে দেশান্তরে যাচ্ছেন অর্থাৎ আপনার প্রজাতি হোমোস্যাপিয়্যান্স যে পৃথিবীর অধীশ্বর আজ তার পেছনে আছে আপনার অতি পূর্বপুরুষের যে কটা আবিষ্কার তার প্রথমটা যদি হয় থার্মোডাইনামিক্স অর্থাৎ আগুনের ব্যবহার, দ্বিতীয়টা তবে ভাষাতত্ত্ব অর্থাৎ উন্নত ভাষা। আর তিন নম্বরে অবশ্যই স্থান পাবে ঈশ্বরের ধারণা।
নাস্তিক মশাই খুব হাসি পাচ্ছে তো? তবে আবার আগের আলোচনাতেই ফিরি চলুন।

সত্তর হাজার বছর আগে নিয়ানডার্থাল আর হোমোস্যাপিয়্যান্সের মধ্যে ঠিক হবে ভবিষ্যত পৃথিবীর শাসক- এই রকম পরিস্থিতিতে নিয়ানডার্থালরা এগিয়ে আছে শারীরিক শক্তি আর বুদ্ধিতে। আর পিছিয়ে আছে ভাষার ক্ষমতায়। কিন্তু এই ভাষা দিয়ে হোমোস্যাপিয়্যান্স নিরঙ্কুশ বিজয় স্থাপন করলো কিভাবে? গবেষণা জানাচ্ছে উন্নত ভাষা দিয়ে কোন সাংগঠনিক নিয়মকানুন ছাড়ায় আমরা সর্বোচ্চ ১৫০ জনের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি‌। অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায় আদিম হোমোস্যাপিয়্যান্সের এই উন্নত ভাষার সাহায্যেও ১৫০ জনের বেশি সদস্য সংখ্যার একটা দল গঠন কোনভাবেই সম্ভব ছিলনা। এখনো সেজন্য বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীতে একটি কোম্পানিতে সেনার সংখ্যা ১৫০ জনের বেশি রাখা হয়না। এছাড়া কোন পারিবারিক ব্যবসায় সদস্য সংখ্যা মোটামুটি ১৫০ ছাড়ালে তাকে আমেরিকায় কর্পোরেশন কিম্বা ফ্রান্সে লিমিটেড কোম্পানি করতে হয়। আর এই ১০০ কি ১৫০ জনের দুর্বল হোমোস্যাপিয়্যান্সের একটা দল ৪০- ৫০ জনের একদল দুর্ধর্ষ মেধাবী যোদ্ধা নিয়ানডার্থালকে সম্মুখসমরে কুপোকাত করবে এটা কষ্ট কল্পনাতেও স্থান পাবার যোগ্য নয়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হোমোস্যাপিয়্যান্সরা যখন ইউরেশিয়ায়( এশিয়া আর ইউরোপের মিলিত ভূখন্ড) নিয়ানডার্থালদের নিকেশ করছে তখন তাদের সদস্য সংখ্যা কয়েক শত। কোন কোন ক্ষেত্রে হাজারেরও বেশি। সাংগঠনিক শক্তিতে বলীয়ান এই নব্য হোমোস্যাপিয়্যান্সদের কাছে সত্তর হাজার বছর আগের সম্মুখ যুদ্ধে নিয়ানডার্থালরা জাস্ট দাঁড়াতেই পারেনি। কিন্তু কিভাবে এলো এই সাংগঠনিক দলবদ্ধতা? চলুন এগোনো যাক।

উন্নত ভাষা সৃষ্টির ফলে হোমোস্যাপিয়্যান্সদের কথা বলা গেলো বেড়ে। তারা নিজেদের মধ্যে আরো বেশিমাত্রায় গল্পগুজব শুরু করলো। এখন তাদের জটলা গুলোতে আর শুধু পরচর্চায় থাকলোনা তাদের গল্পে স্থান পেলো নানান কল্পিত আখ্যান। একেই বলা হয় "বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লব" বা "Cognitive Revolution"। এই বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লবের ফলে নিত্যনতুন কল্পিত গল্প যোগ হতে থাকলো। যেমন ধরা যাক জার্মানির স্ট্যাডেল গুহায় আবিষ্কৃত ৩২ হাজার বছরের পুরানো সিংহমানবের মূর্তিটি। যার মুখমন্ডল সিংহের মতো কিন্তু দেহ মানুষের মতো। এই সিংহমানবের প্রতিকৃতিটি পিউজো গাড়ি কোম্পানি নিজেদের লোগো হিসেবে ব্যবহার করে।অর্থাৎ মানুষ এমন এক অবাস্তব কল্পনা করতে সমর্থ হলো যা সে কখনো দেখেনি। পৃথিবীর বুকে হোমোস্যাপিয়্যান্সই একমাত্র প্রজাতি যারা কোন কিছু না দেখেই, না শুনেই, না অনুভব করে তা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বকবক করতে পেরেছে। এবং এসব গল্পের শ্রোতা নেহাত কম থাকেনা সবসময়। এইরকম কল্পিত গল্পের চর্চা করতে করতেই চলে আসে "ঐ দূরের পাহাড়ে বাস করে একটা রাক্ষস কিম্বা ভূত" অথবা "আমরা সবাই বাইসনের বংশোদ্ভূত" বা এইরকম কিছু। এই গল্পগুলোকেই বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন "Imagined Realities" বা "কল্পিত বাস্তবতা"। এই কল্পিত বাস্তবতায় একে একে স্থান পায় টোটেম প্রথা, নানারকম ট্যাবু এবং হ্যাঁ ঈশ্বরও। কল্পিত বাস্তবতার সাথে ঢাঁহা মিথ্যের পার্থক্য এই যে কল্পিত বাস্তবতাকে বহুসংখ্যক মানুষ একত্রে বিশ্বাস করে। গবেষণায় দেখা গেছে এই আধুনিক যুগেও ১৫০ জনের বেশি সদস্যকে একত্রিত করতে হলে এই রকম কোন না কোন কল্পিত বাস্তবতা প্রয়োজন। বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লবের পরই মানুষ এইরকম কোন না কোন কল্পিত বাস্তবতার প্রভাবে একত্রিত হয়েছে , আজো হয়। যে কোন গোষ্ঠী বা জাতির ইউনিফায়িং ফ্যাক্টর সর্বদা এইরকম কল্পিত বাস্তবতা। সুতরাং হোমোস্যাপিয়্যান্সের এইরকম কল্পনাপ্রবণ মস্তিষ্ক যা বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লবের ফলে গঠিত হলো তা হোমোস্যাপিয়্যান্সকে নিয়ানডার্থালদের থেকেও বহুগুণ এগিয়ে দিল। খুকি যদি একটা কাঠবিড়ালিকে তার ভাষায় প্রস্তাব দেয় - যদি তুমি আমাকে এখন ঐ পাকা পেয়ারাটা দাও তবে তুমি জেন্নাতে গিয়ে এরচেয়েও সুস্বাদু একহাজারটা পেয়ারা পাবে। এই গল্পটা কোন হোমোস্যাপিয়্যান্সের পক্ষেই বিশ্বাস করা সম্ভব কিন্তু কাঠবিড়ালিটা নিশ্চিতভাবে গাছের ঐ পেয়ারাটাকে গোগ্রাসে শেষ করবে। ধরুন বার্সেলোনা ক্লাবের কথা। বার্সেলোনা ক্লাবটা আসলে কি? একটা ক্লাবঘর? কয়েকজন সমর্থক? নাকি এগারোজন ফুটবলার? ঐ এগারোজন যদি খেলা ছেড়ে দেয় ক্লাবটা উঠে যাবে? বার্সেলোনার ক্লাবহাউসটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলে ক্লাবটার অস্তিত্ব বিলীন হবে ? হবেনা। এই ক্লাব, এই দেশ, এই রাজনৈতিক আদর্শ, ইউ এন ও, জাতীয়তাবোধ এবং ঈশ্বর একেকটা ইউনিফায়িং ফ্যাক্টর, একেকটা কল্পিত বাস্তবতা। এই প্রসঙ্গে ডঃ ইউভাল নোয়া হারারি তার "স্যাপিয়েন্স:এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ হিউম্যান কাইন্ড" পুস্তকে একটি দুর্দান্ত কথা লিখেছেন - "ইউ এন ও বলেছে লিবিয়া তার নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ। এই ইউ এন ও টাই বা কি, লিবিয়াটাই বা কিরকম আর মানবাধিকারটায় বা কি বস্তু - একেকটা কল্পিত বাস্তবতা ছাড়া?"

ঈশ্বর হলো এমন এক কল্পিত বাস্তবতা যার ইউনিফায়িং ক্যাপাবিলিটি অসাধারণভাবে বেশি। এই কাল্পনিক গল্পের আবেদন যত বেশি থাকবে ততই তার গোষ্ঠী গঠন ও সম্প্রসারণের ক্ষমতা অধিক হবে। এই গল্পেই বাজিমাত করেছিল বৈদিক ঋষিরা, বাজিমাত করেছিল মহম্মদ এবং কমিউনিজমের প্রবর্তক কার্ল মার্কস্। স্বর্গীয় সুখ কোন হিন্দু অনুভব করেনি, কোন মুসলমান দেখেনি বেহেস্তকে, কোন কমিউনিস্ট পৌঁছাতে পারেনি শ্রেণীহীন সমাজে। তবুও তারা সেগুলোর বিশ্বাসে অটল। এইভাবে ঈশ্বরকে সামনে রেখেই সত্তরহাজার বছর আগে বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লবকে কাজে লাগিয়ে হোমোস্যাপিয়্যান্সরা বৃহত্তর গোষ্ঠী গঠন করতে সমর্থ হয়েছিল আর নিশ্চিহ্ন করেদিয়েছিল নিয়ানডার্থালদের। এই ঈশ্বরের ধারণা না এলে হয়তো হোমোস্যাপিয়্যান্স প্রজিতিটাই শেষ হয়ে যেতো অথবা এখনো সেই প্রাগৈতিহাসিক হাতিয়ার দিয়ে অনিশ্চিত জীবন কাটাতো আফ্রিকায়। হয়তো সেইসময়ের কল্পিত ঈশ্বরের কল্পিত আকার ছিল ভিন্ন,কল্পিত সক্ষমতা ও কার্যপ্রণালী ছিল ভিন্ন কিন্তু নিশ্চিত ভাবে সেই কল্পিত ঈশ্বরের শক্তি ছিল হাজার হাজার প্রাচীন হোমোস্যাপিয়্যান্সকে একত্রিত করার। সময়ের সাথে সেই গল্পের আবেদন গেছে কমে । সেখানে স্থান করে নিয়েছে নতুন গল্প তারপর নতুন আরেকটা। কিন্তু কথা হলো এখনো এইরকম গল্পকে রিপ্লেস করতে পারে এরথেকেও আবেদনময় আরেকটা গল্পই। আপনি যদি জার্মান হয়ে জন্মগ্রহণ করতেন ১৯০০ সালে ও আজ পর্যন্ত বেঁচে থাকতেন তবে আপনি চার চারটি রাষ্ট্রীয় কল্পিত বাস্তবতার সম্মুখীন হতেন। প্রথমে আপনি শিখতেন রাজা দ্বিতীয় উইলহেলম্-এর রাজতন্ত্রই দুর্দান্ত ভালো তারপর যৌবনে ভাবতেন হিটলালের একনায়কতন্ত্রই সর্বশক্তিমান, তাপর বিশ্বাস করতেন সমাজতন্ত্রই মানুষের মুক্তি ঘটাতে সক্ষম আর বার্দ্ধক্যে বুঝতে পারতেন গণতন্ত্রই সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট। এই কল্পিত বাস্তবতায় মানবিক গুণ ও প্রকৃতি গুলিকে অসম্ভব দ্রুততায় পরবর্তী প্রজন্মে প্রেরণ করতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে জিন ও পরিবেশের সাহচর্যে কোন মানবিক বৈশিষ্ট্যের স্থায়ি রূপান্তর ঘটে কয়েক হাজার বা লাখ লাখ বছরে সেখানে কল্পিত বাস্তবতা অতি দ্রুততায় পরিবর্তন করতে পেরেছে মানবিক গুণাবলীকে। হোমো ইরেকটাসরা কুড়ি লাখ বছর আগেই পাথরের ছোটখাটো হাতিয়ার উদ্ভাবন করে ফেলেছিল এবং এই কুড়িলাখ বছর ধরেই তাদের হাতিয়ার প্রায় একই রকম ছিল। সেখানে বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লবের পর তিরিশ হাজার বছরের মধ্যে হোমোস্যাপিয়্যান্স তৈরি করে নিল সূক্ষ্ম হাতিয়ার, ছূঁচ এমনকি নৌকা।

শারীরিক সক্ষমতার জোরেই উত্তর ইউরোপের শীতেও নিয়ানডার্থালরা টিকে থাকতে পেরেছিল কিন্তু হোমোস্যাপিয়্যান্সের শারীরিক সক্ষমতা ছিলনা ঐ শীত সহ্য করার। তাতে কি? তারা পশুর চামড়া আর পশম দিয়ে গরম পোশাক বানিয়ে নিতে পারলো। আর এই অর্জিত গুণাবলীকে অসম্ভব দ্রুততায় প্রজন্মান্তরে প্রেরণ করতে সক্ষম হলো জিনের সাহায্য ছাড়ায়। কল্পিত বাস্তবতার হাত ধরে হোমোস্যাপিয়্যান্স যতই গোষ্ঠীবদ্ধ হয়েছে ততই তাদের সেই গোষ্ঠীকে সংঘবদ্ধ করতে প্রয়োজন হয়েছে আরো আরো পার্থিব সুযোগ সুবিধা ও পরিষেবার। হোমোস্যাপিয়্যান্সের প্রযুক্তি ক্রমশ উন্নতই হতে থেকেছে বছরের পর বছর ধরে। আবার সেই কল্পিত বাস্তবতাকে যখন মনে হয়েছে গোষ্ঠীকে সংঘবদ্ধ রাখার জন্যে অপ্রতুল, ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। আনা হয়েছে আরেক জোরালো গল্পকে। আরো শক্তিশালী ঈশ্বরকে। সেই প্র্যাকটিস আজো চলছে।

তাহলে বোঝা গেলো ঈশ্বরের ধারণার আবিষ্কার হোমোস্যাপিয়্যান্সের জন্য কতটা জরুরি ছিল ?একদম প্রথম পর্বে নব্য নাস্তিকদের একমাত্রিক ও অসম্পূর্ণ ধারণা থেকে গৃহীত অনুসিদ্ধান্তগুলি - ১)ঈশ্বরের ধারণা কোন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার নয়। ২)ঈশ্বরের ধারণার জন্ম মানুষের ক্ষতি, শুধু ক্ষতিই করেছে।
৩) কোন প্রাগৈতিহাসিক চতুর ও ঠগ মানুষ ব্যক্তিগত সুবিধা এবং দুর্বল দের শোষনের জন্য ঈশ্বরের ধারণা এনেছিল( এই ধারণাটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মার্ক্স ও এঙ্গেলস)। কতটা ভ্রান্ত।

ডঃ শিবন মন্দিরে পুজো দিয়েছেন তাতে তার পেশাদারিত্ব ও সৃজনশীলতা এতটুকুও কালিমালিপ্ত হয়না। তিনি এটা বিশ্বাস করে পুজো দেননি যে কোন ঐশ্বরিক শক্তি বিক্রমের সাথে ইসরোর যোগাযোগ ঘটিয়ে দেবেন। তাহলে তিনি কতকগুলো যন্ত্রপাতি, নাটবোল্টস্ আর খানিকটা জ্বালানি একটা ফাঁকা মাঠে রেখে দিয়ে মন্দিরে যেতে পারতেন। কারণ তার কল্পিত বাস্তবতা এতটা শক্তিশালী হলে নিশ্চয় সেই ঈশ্বর যন্ত্রপাতি গুলো দিয়ে একটা রকেট বানিয়ে ফেলতে সমর্থ হতো। এবং সেই রকেট থেকে একটা মহাকাশযানকে সেই ঈশ্বর সফল ভাবে চাঁদে অবতরণ করিয়ে দিতে পারতো। ডঃ শিবনকে তার সংস্কার প্রকাশ্যে পেশ করার জন্য ধন্যবাদ আর যারা হাজার কল্পিত বাস্তবতায় বিশ্বাসী হয়ে অন্য একজন গুণী মানুষকে ট্রোল করতে ময়দানে অবতীর্ণ হয় তাদের জন্যে শেষ কথা : তাদের পিতা যে একটি কল্পিত বাস্তবতা সেটা সম্ভবত তারা বিশ্বাস করেনা।

■[সমাপ্ত]
লিঙ্ক : পর্ব ১ view this link
লিঙ্ক : পর্ব ২ view this link
লিঙ্ক : পর্ব ৩ view this link

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


বৈদিক ঋষিদের "কাল্পনিক ভাব জগত", নবী মোহাম্মদ (স: )'এর "এক সৃষ্টিকর্তার ভাববাদ" একই সুত্রে বাঁধা কিন্তু একই লেভেলের (স্তরে) নয়; আর কার্লমার্ক্সের কম্যুনিজম ভাবনা কোনভাবে বৈদিক ঋষি ও নবী মোহাম্মদ (স: )'এর ভাববাদের একই সুতোর বর্ধিত অংশ নয়, ইহা রুশ বিপ্লবের প্রতিফলন, রিপাবলিক ভাবনার এক দিক এবং একটি অর্থনৈতিক দর্শন।

আপনি এখানে ভয়ংকর অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:৩১

গেছো দাদা বলেছেন: স্বর্গীয় সুখ কোন হিন্দু অনুভব করেনি, কোন মুসলমান দেখেনি বেহেস্তকে, কোন কমিউনিস্ট পৌঁছাতে পারেনি শ্রেণীহীন সমাজে। তবুও তারা সেগুলোর বিশ্বাসে অটল। এইভাবে ঈশ্বরকে সামনে রেখেই সত্তরহাজার বছর আগে বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লবকে কাজে লাগিয়ে হোমোস্যাপিয়্যান্সরা বৃহত্তর গোষ্ঠী গঠন করতে সমর্থ হয়েছিল আর নিশ্চিহ্ন করেদিয়েছিল নিয়ানডার্থালদের।

২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:৩৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


আস্তিকতা হচ্ছে, মানুষের লাখ বছরের ক্রমবর্ধমান কাল্পনিক জগত, ইহা মনুষের নিজের তৈরি; বিজ্ঞান হচ্ছে প্রকৃতির লজিক্যাল ব্যাখ্যা; আপনি এটার বাহিরে নতুন কিছু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন?

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:৩৩

গেছো দাদা বলেছেন: ঈশ্বর হলো এমন এক কল্পিত বাস্তবতা যার ইউনিফায়িং ক্যাপাবিলিটি অসাধারণভাবে বেশি। আমি এই পয়েন্টের উপর ফোকাস করেই যাবতীয় যুক্তি দিয়েছি। ধন্যবাদ।

৩| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:৩৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


এটাই শেষ পর্ব? আপনি কোন কিছুই তুলে ধরেননি, কোন কিছু ব্যাখ্যা করেনি, কোন কিছুই প্রতিষ্ঠিত করেননি; সুবিধে হয়নি

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৩১

গেছো দাদা বলেছেন: সত্যিই তাই ?

৪| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:


১ নং মন্তব্যে টাইপো: ( * দেয়া শব্দটি শুদ্ধ)

বৈদিক ঋষিদের "কাল্পনিক ভাব জগত", নবী মোহাম্মদ (স: )'এর "এক সৃষ্টিকর্তার ভাববাদ" একই সুত্রে বাঁধা কিন্তু একই লেভেলের (স্তরে) নয়; আর কার্লমার্ক্সের কম্যুনিজম ভাবনা কোনভাবে বৈদিক ঋষি ও নবী মোহাম্মদ (স: )'এর ভাববাদের একই সুতোর বর্ধিত অংশ নয়, ইহা *ফরাসী বিপ্লবের প্রতিফলন, রিপাবলিক ভাবনার এক দিক এবং একটি অর্থনৈতিক দর্শন।

আপনি এখানে ভয়ংকর অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

৫| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ২:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


দাদা কি এখনো ডালে ডালে ঝুলছেন? ব্লগে আসেন!

৬| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৭:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: তথ্যসুত্র কই??

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:৩৭

গেছো দাদা বলেছেন: তথ্যসূত্র : জেমস্ জে ম্যাককান্নার " প্রাইমেট এগ্রেশন", রবার্ট আড্রের "আফ্রিকান জেনেসিস" কিমবা ইউভাল নোয়া হারারির "স্যাপিয়েন্স:এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ হিউম্যান কাইন্ড" ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.