নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মোদি ভক্ত ! এটা জেনে আপনি দুঃখ পেলে আমি আনন্দিত হব।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্য : লকডাউন ও এক মাতাল রিক্সাওয়ালা

১০ ই মে, ২০২০ রাত ১১:৩৬

ভর সন্ধ্যাবেলা চিৎকার চেঁচামিচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল | এমনিতেই আজ একটু বেলা করে ঘুমিয়েছি |

বারান্দায় বেরিয়ে দেখি গুপ্তদা অমন সৌম্যকান্তি চেহারা নিয়ে | সাদা পাজামা, পাঞ্জাবি পরে গম্ভীর মুখে একটা সাইকেল রিক্সা চালিয়ে আবাসনের ভেতরে ঢুকছেন |

গেটের সিকিউরিটি গার্ড গেট খুলে হাঁ করে তাকিয়ে আছে | আমার মতন ফ্ল্যাটের অন্য প্রতিবেশীরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কেউ হেসে লুটিয়ে পড়ছে | কেউ কেউ বিস্ময়ে নিজেরা বলাবলি করছে আহা রে এই ভাবে এতোদিন ঘর বন্দী হয়ে মনে হয় মাথা খারাপ হয়ে গেছে |
মারাত্মক ডিপ্রেশনের শিকার হয়েছেন |

বৌদি বারান্দা দিয়ে চিল চিৎকার করছেন | ঘুমের ওষুধ ফুরিয়ে গেছে বলে কিনতে বেরিয়ে সাইকেল রিক্সা চালিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকছো ?
মাথাটা কি একদম খারাপ হয়ে গেছে তোমার ?

গুপ্তদার দেখলাম কোনো ব্যাপারেই কোনো হেলদোল নেই | একদম স্টেডি হয়ে ধরে ধরে রিক্সাটা চালিয়ে ফ্ল্যাটের নীচে ঢুকে গেলেন |

বৌদি চিৎকার করতে করতে দেখলুম সশব্দে বারান্দার দরজাটা দিয়ে দিলেন |

বুঝলাম আজ গুপ্তদার কপালে অশেষ দুঃখ আছে |

কিন্তু কিছুতেই মাথায় ঢুকলো না একজন উচ্চ পদস্হ চাকুরিজীবি মানুষ ভর সন্ধ্যাবেলা ঘুমের ওষুধ কিনবে বলে বেরিয়ে হঠাৎ একটা সাইকেল রিক্সা চালিয়ে বাড়ি ফিরবে কেন ?

রিক্সাটা কার ? রিক্সাওয়ালা কোথায় ? এখন কি নতুন নিয়ম হয়েছে যে ওষুধের দোকানে কেউ ঘুমের ওষুধ কিনতে গেলে তাকে রিক্সা চালিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে ?

হাজারটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে খেলা করে বেড়াতে লাগলো |

ঘন্টাদুয়েক পরে আর কৌতূহল না চাপতে পেরে গুপ্তদাকে ফোনই করে ফেললুম |

বেশ কিছুক্ষণ বাজার পরে গুপ্তদা ফোনটা ধরে বললো | অলরেডি চল্লিশটা ফোন পেয়ে গেছি | একটাও তুলিনি | কিন্তু তুই তো আমার খুবই স্নেহের পাত্র | তাই তোর ফোন না ধরে আর পারলুম না |

আমি কেন রিক্সা চালিয়ে ঢুকলাম এটা জানতে চাইছিস তো ? তোর দোষ নেই | সত্যিই তো হঠাৎ করে একটা দামড়া লোক ওষুধ কিনবে বলে হেঁটে বেরোলো | খানিক পরে একটা রিক্সা চালিয়ে ঢুকলো | মানুষ তো অবাক হবেই | তোর বৌদিও তো সব শোনার পরে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে | জানি কদিন এখন এই রকম চলবে |

গুপ্তদা সোজা প্রসঙ্গে চলে আসায় আমার ঝামেলা অনেক কমে গেল |

বললাম কি হয়েছে দাদা ?

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গুপ্তদা বললে | এই দেড় মাস এক ফোঁটা মদ খাই নি | কিন্তু কাল থেকে টিভিতে এতবার মদ,মদ করে মাথা খারাপ করলো যে প্রচন্ড ইচ্ছে করছিল খেতে | কিন্তু জানতাম বিশাল লাইন পড়বে |

তাই মোড়ের রিক্সা স্ট্যান্ডের ভলুকে বলেছিলাম আমার হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে যদি দুটো বোতল তুলে দেয় | আমি কিছু টাকা দিয়ে দেবো | খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল | বললাম নামটা মনে রাখতে পারবে তো ? ব্ল্যাক ডগ স্কচ হইস্কি |

বললো আরে হ্যাঁ দাদা নো পবলেম | ব্ল্যাক ডগ এস্কচ তো ? ঠিক মনে থাকবে |

বিপদ হলো সন্ধ্যাবেলা | ভলু ফোন করে বললো | দাদা বিশাল বাওয়াল হয়ে গেছে | আমি মাল কিনে বেরোনোর টাইমই লাইনে হেব্বি ঝামেলা হয়েছে | পুলিশ লাঠি চার্জ করেছে | দোকান বন্ধ করে দিয়েছে | আমি কোনোরকমে রিস্কার সীটের নীচে বোতল দুটো রেখে রিক্সা নিয়ে পালাতে যাবো |
এমন সময় একটা পুলিশ লাঠি দিয়ে উদোম ক্যালালো | বললো যা ভাগ এখান থেকে |

রিস্কা ফেলে সেই যে দৌড় দিয়েছি সোজা বাড়ি ঢুকে গেছি | জানি না আপনি ওই বোতল পাবেন কিনা |

ঈসস সে কি ? কি প্যাথেটিক ব্যাপার বলে উঠি আমি |

প্যাথেটিক বলে প্যাথেটিক |

তারপরে কি হল গুপ্তদা ?

আর কি হবে | বুকে পাথর চেপে বসে রইলুম ঘন্টা দুয়েক | তারপরে ভলুই ফোন করে বললো | দাদা অল কিলিয়ার | খবর পেয়েছি এলাকা ফাঁকা হয়ে গেছে | আমি রিস্কাটা মদের দোকানের উল্টোদিকে ল্যাম্পপোসেটর গায়ে হেলিয়ে রেখে এসেছি | যদি ভগোবান চান তাহলে এখনও হয়তে সীটের নীচে বোতলদুটো আছে |একবার গিয়ে দেখতে পারেন |

গলায় মধু মাখিয়ে বল্লাম তুমি কি একবার যেতে পারবে ভাইটু ?

ভলু বল্লে পাগল নাকি দাদা ? বাড়ি থেকে বেরোলে বউ কেলিয়ে আমসত্ব বানিয়ে দেবে | আপনি গেলে যান গে | রিস্কার জন্য আমি রিক্স নেবো নিকো |

থার্টি পারসেন্ট দাম বেড়ে গেছে | তার উপরে স্কচ | তাও দুটো | ভাবলাম যা থাকে শালা কপালে | শর্টকার্ট দিয়ে তো একটুখানি | যাই গিয়ে দেখে আসি |

বারমুডাটা ছেড়ে পাজামা, পাঞ্জাবিটা পরে |তোর বৌদিকে গম্ভীর ভাবে বললাম ঘুমের ওষুধ একদম শেষ | জাস্ট দু মিনিটে গিয়ে নিয়ে আসছি | বলেই কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বেরিয়ে পড়লাম |

গিয়ে দেখি রিক্সাটা ভলু যেমন বলেছিল ঠিক তেমন ভাবেই রাখা আছে | উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে রিক্সার সীটটা তুলে দেখি দুটো বোতলই রাখা রে | উফফ যা আনন্দ হলো না কি বলবো তোকে | ঝপ করে সীটটা ফেলে | কয়েক মিনিট দম নিয়ে পকেট থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগটা যেই বের করেছি |

অমনি মাটি ফুঁড়ে একজন পুলিশ অফিসার উঠে এল | গুরু গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলো | কি ব্যাপার কি করছেন এখানে ? কার রিক্সা ?

সত্যি বলছি | পুলিশ দেখে মারাত্মক ভয় পেয়ে গেলাম রে | বেজায় ঘাবড়ে গিয়ে বললাম আ- আমার স্যার |

মানে ?? পুলিশ অফিসারের মাস্ক পরা মুখে চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেল দেখলাম |

আপনার রিক্সা ? আপনি রিক্সা চালান ?

ন-না | মানে ইয়েস স্যার |

আরে কি বলছেন মশাই ঠিক করে বলুন | রিক্সাটা আপনার ? আপনি চালান তাই তো ?

ইয়েস স্যার |

কোথায় থাকেন ?

অপ্সরা অ্যাপার্টমেন্টে স্যার |

হোয়াট ?? এই অপ্সরায় থাকেন ? রিক্সা চালান ? একরাশ অবিশ্বাস ঝরে পড়ে অফিসারের গলায় | মাস্ক পরেন নি কেন ? জানেন একটু আগে এখানে বিশাল গন্ডগোল হয়েছিল | আপনি অপ্সরা বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে এইখানে রিক্সা নিয়ে কি করছেন ?

দেখলাম ভয় পেয়ে যখন মিথ্যা বলেই ফেলেছি আর থামা যাবে না | অন্য কেস খাবো | লোকনাথ বাবাকে জোরসে স্মরণ করে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বললাম |

প্যাসেঞ্জার ছিল স্যার | বয়স্ক মানুষ ওই গলির ভিতরে ছেড়ে দিয়ে এলাম | এইবারে বাড়ি চলে যাবো |

অফিসারের মুখে মাস্ক তাই মুখটা দেখতে পাচ্ছিলাম না | তবে চোখ দুটোয় কেমন জানি একটা পৈশাচিক উল্লাস দেখতে পেলুম |

চিবিয়ে চিবিয়ে বললে সাথে ব্যাগ কেন ?

কি অদ্ভূত ভাবে উত্তর গুলোও চলে আসছিলো রে | বললাম ফেরার পথে এট্টু সব্জি কিনতুম স্যার | আমাদের বিল্ডিংয়ের পাশেই বসে |

হুমম | অপ্সরা বিল্ডিংয়ে থাকেন | রিক্সা চালান | এখন সব্জি কিনে বাড়ি ঢুকবেন | বাঃ খুব ভালো | তা সবসময়ই কি এমন ধপধপে সাদা পাজামা, পাঞ্জাবি পরে রিক্সা চালান ?

ই- ইয়েস স্যার | এটাই আমার ট্রেডমার্ক বলতে পারেন |

হুমম অপ্সরায় একা থাকেন ?

না স্যার আমি আর আমার মিসেস |

মিসেস কি করেন ?

স্কুল টিচার |

হুমম, বলে পুলিশটা কিছুক্ষণ চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে | আমি ভয়ে কাঁপতে থাকি | প্রবল বেগে পেচ্ছাব এবং পায়খানা দুটোই পেতে থাকে |

হঠাৎ অফিসার প্রশ্ন করে | আপনি কিসে আছেন ?

গ্ল্যাক্সো কোম্পানীতে স্যার |

কি পোস্ট?

সেলস ম্যানেজার |

এই যে বললেন রিক্সা চালান |

বুঝলাম এটা ওর স্ট্র্যাটেজি | প্রথমে নার্ভাস করে দাও | তারপরে দুম করে প্রশ্ন করে সত্যিটা বার করে নাও |

তবে আমিও হারার পাত্র নই | লোকনাথবাবার ভক্ত আমি | স্পষ্ট অনুভব করলাম আমার পিছনে মদ চাপা রিক্সার সীটের উপর স্বয়ং লোকনাথবাবা প্যাসেঞ্জার হয়ে বসে আছেন রে | উনিই কথা যোগালেন মুখে |

বললাম ইয়েস স্যার | এটা জাস্ট একটা ফিট থাকার উপায় | মা- মাথা খাটিয়ে বের করেছি | কাজের যা স্ট্রেস | তাই ইভনিংয়ে এটা নিয়ে বেরোই | বেশ কয়েক চক্কর দিই | টু কিপ মাইসেলফ ফিট | আর যদি প্যাসেঞ্জার পেয়ে যাই তো একটু সোশ্যাল ওয়ার্ক ও করি | পয়সা নিই না | হেঁ, হেঁ একটা অদ্ভূত সখ বলতে পারেন |

চব্বিশ বছর পুলিশে চাকরি করছি | শরীর ফিট রাখার জন্য মানুষজন হাঁটে, দৌড়য়, সাঁতার কাটে , সাইক্লিং করে দেখেছি | বাপের জন্মে কোনোদিনও দেখিনি কেউ অফিস থেকে ফিরে সাইকেল রিক্সা চালায় নিজেকে ফিট রাখার জন্য | সাথে আবার প্যাসেঞ্জারও নেয় | তাও ফ্রীতে | এই করোনার জন্য মারাত্মক চাপে আছি নয়তো আপনার কপালে আজ অনেক দুঃখ ছিল |

আপনাকে দেখে তো রিক্সা চোর ও মনে হয় না | যাই হোক আমি আপনার পেছন পেছন যাচ্ছি | আমি দেখতে চাই আপনি আপনার রিক্সাটা চালিয়ে নিয়ে অপ্সরা বিল্ডিংয়ের ভিতরে ঢুকছেন |

কি আর করবো |ভিতরের রাস্তা দিয়ে মাথা নীচু করে রিক্সা চালিয়ে এলাম | পেছন পেছন হারামজাদা পুলিশটা বাইক নিয়ে এল |

ওই রাস্তার অনেকেই চেনে আমাকে | দেখলাম বিভিন্ন বারান্দায় গুনগুন, ভনভন করে গুঞ্জন হচ্ছে আমাকে নিয়ে | বুঝলাম বাড়ির পিছনের এই শর্টকাটটা সারা জীবনের মতন রেড জোন হয়ে গেল আমার কাছে |

গেটে সিকিউরিটির সমর দেখি আমাকে দেখে হাঁ করে ভ্যাবলার মতন তাকিয়ে আছে

| বললাম আরে কি দেখছো কি অমন করে ? রিক্সা চালিয়ে ঢুকতে যেন প্রথম দেখছো মনে হচ্ছে আমাকে ? যত্তোসব , গেট খোলো |

ঘাড় ঘুরিয়ে অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললুম আসছি স্যার ভালো থাকবেন | বলে রিক্সা চালিয়ে সোজা আমার ফ্ল্যাটের নীচে চলে এলাম |

তারপর তো সবই জানিস | শিবাশীষ কি বললো শুনলি তো ? কি গুপ্তদা জেন এস্টিলোটা চেঞ্জ করে এটা নিলেন ? বাঃ ভালো মডেল | আরও অনেকে অনেক কিছু বললো | তখন আর কান দিই নি | রিক্সাটা পার্ক করে সীটের তলা থেকে বোতল দুটো নিয়ে সোজা বাড়ি |

এই হচ্ছে ঘটনা | ভলুকে বলে দিয়েছি | কাল এসে রিক্সা নিয়ে যাবে | ওর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো আমি |

প্রথম কদিন এটা নিয়ে খুব চর্চা হবে জানি তারপরে সবাই ভুলে যাবে |

এই প্রথম পেগটা ঢাললুম | তোর সাথে কথা সেরে একটা লম্বা চুমুক দেবো | রাখি ভাইটু | ভালো থাকিস চীয়ার্স |
.
(বন্ধুবর অনিন্দ্য র অভিজ্ঞতা অবলম্বনে লেখা)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০২০ রাত ১১:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: ভারতের লোকজন মদ বেশি খায়। আমাদের দেশের লোকজন এত মদ খায় না।

১১ ই মে, ২০২০ রাত ১২:০৪

গেছো দাদা বলেছেন: কেন সেফু দা ?

২| ১১ ই মে, ২০২০ রাত ১২:২১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আমিও নিউজে দেখলাম কলকাতায় মদের দোকানে লম্বা লাইন

৩| ১১ ই মে, ২০২০ রাত ১:৪৭

Rajibrpsoft বলেছেন: রম্য রচনা হলেও কেমন জানি ব্যাপারটা সত্যি সত্যি মনে হচ্ছে যদিও বাংলাদেশে এমনটি হয়না .....ভালো লিখেছেন

৪| ১১ ই মে, ২০২০ রাত ১:৫৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দাদার কি একটু ................আছে নাকি?
বউদি চেচায়না !!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.