নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভজহরিদা বলল, "তোকে আমায় একটু হেল্প করতে হবে রে।"
আমি বললাম, "বলো বলো।"
ভজহরিদা বলল, "তুই আমার সঙ্গে একটু আমার কাকুর বাড়ি যাবি। ব্যাস তাহলেই হবে।"
আমি ভয়ের গন্ধ পেলাম। এত সহজ-সরল ব্যাপারটা নয় বলেই মনে হল।
বললাম, "তোমার সেই বদরাগী কাকু?"
ভজহরিদা বলল, "একটু উপকার করে দে মাইরি। কাকু তো হাঁটুর জন্য হাঁটাচলা করতে পারে না ভাল করে। বাতিকগ্রস্ত লোক। বলছে এক্ষুনি একবার ডাক্তারকে কল দিতে। ওর চেক আপ দরকার। দিব্যি ভাল আছে! এখন এই লকডাউনের বাজারে কোন ডাক্তার যাবে বলত ফালতু ফালতু? তুই যাবি ডাক্তার সেজে।"
আমি বললাম, "ওরে বাবা ডাক্তার সেজে! আমি মরে গেলেও পারব না। তোমার কাকা আবার রিটায়ার্ড এক্সাইজ ইনস্পেক্টর। যা গল্প শুনেছি বুঝতেই পারছি হেব্বি খিঁচা লোক।"
ভজহরিদা বলল, "ওই চুল্লুওয়ালাদের পেছনে দৌড়ে দৌড়েই তো কাকুর হাঁটু দুটো গেছে। তুই না গেলে আমি ফেঁসে যাব মাইরি। কাকিমাকে কথা দিয়েছি। একটা স্টেথিসকোপ জোগাড় করে রেখেছি। তুই শুধু যাবি, গম্ভীর হয়ে পরীক্ষা করবি ব্যাস হয়ে যাবে। আরে আমি তো থাকব তোর সাথে, তোর চিন্তা কী? আর একদম বেশি বকবি না, বাকিটা আমি সামলে দেব।"
.
জীবনে এই প্রথম ডাক্তার হিসেবে কারুর বাড়ি গেলাম।
কাকু একটি বিছানায় পা ছড়িয়ে বসে আছেন। আমাকে বিছানার পাশে একটা চেয়ারে বসতে দেওয়া হল।
কাকুর গলাটা খানিকটা অমরীশ পুরী টাইপ।
বললেন, "আপনি কি ফিজিসিয়ান?"
আমি খুব গম্ভীর হয়ে শুধু হুঁ বলে স্টেথিসকোপটা কাকুর বুকে বসালাম। অভ্যেস নেই প্লাস ওইরকম তেড়িয়া লোক! উত্তেজনায় ভয়ে স্টেথিসকোপের উল্টোদিকটা বুকে লাগিয়ে পরীক্ষা করতে লাগলাম।
কাকু অবাক হয়ে বললেন, "এই প্রথম আমি কাউকে এইভাবে উল্টো করে স্টেথিসকোপ বসাতে দেখলাম!"
খেয়েছে! আমি তাড়াতাড়ি ম্যানেজ দেওয়ার জন্য বললাম, "আজকাল এভাবেই দেখা হচ্ছে।"
কাকু বাজখাঁই গলায় বললেন, "কেন?"
আমি ভয় পেয়ে গিয়ে বললাম, "জার্মানের এক বিখ্যাত ডাক্তার বলেছেন এভাবেই পরীক্ষা করে উচিত।"
কাকুর প্রশ্ন, "ডাক্তারের কী নাম?"
সেরেছে কোন নামটা বলি এখন! জার্মান ফুটবল প্লেয়ারদের নামগুলো কী যেন? বেকেনবাউয়ার...না না বাবা বুঝে যাবে। কিন্তু ভয়ে কোনও নামই যে মনে পড়ছে না।
ভজহরিদা পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, কাকুর চোখ এড়িয়ে খোঁচা দিল আমার পিঠে। আমি খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো বললাম, "ডক্টর জোয়াকিম ক্লিন্সম্যান।"
কাকু একটু থতমত খেয়ে গেলেন নামের ওজনে।
.
আমি পরীক্ষা শেষ করে বললাম, "সব ঠিকই আছে। শুধু পালস্ একটু স্লো মানে ভয়ের কিছু নয় জাস্ট স্ট্যামিনাটা একটু কম।"
কাকু বললেন, "প্রেশারটা একটু দেখে দিন।"
আমি নিশ্চিন্ত হেসে বললাম, "প্রেশারের যন্ত্র আনা হয়নি। প্রেশার আপনার ঠিকই আছে।"
এরপর যা ঘটল তার জন্য আমি বা ভজহরিদা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না।
কাকু কাকিমাকে বললেন, "একটু প্রেশার মাপার যন্ত্রটা বের করে দাও তো।"
সর্বনাশ! এখন কী হবে? আমি তো প্রেশার মাপতেই জানি না।
ভজহরিদাকেও দেখতে পাচ্ছি না। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। ধরতেই ভজহরিদা বলল, "তুই বল এই ফোনটা হাসপাতাল থেকে এসেছে। এমার্জেন্সি কল তাই যেতে হবে।"
আমি বললাম, "সে কী! তাই নাকি! বলেন কী! হ্যাঁ হ্যাঁ এক্ষুনি যাচ্ছি। এক্ষুনি দুটো না না দুটো নয় তিনটে ইঞ্জেকশন দিয়ে দিন। হ্যাঁ নামগুলো বলছি..."
.
বলে আমি উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ভজহরিদা ওদিক থেকে বলল, "হুঁ ভাল হচ্ছে। এইবার বিড়বিড় করে তিনটে ইংরেজি নাম বলে ফোন কেটে দে।"
কী যে বলা যায়! করোনার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ছাড়া আর কোনও ওষুধের নাম মনেই পড়ছে না! উফফ মিডিয়ার কী প্রভাব! বুড়ো আবার কান খাড়া করে আছে। বললাম, "হাইড্রক্সিক্লোরো-কুইন, হাইড্রক্সিক্লোরো-কিং, হাইড্রক্সিক্লোরো-সারভেন্ট এই তিনটে ইঞ্জেকশন এক্ষুনি দিয়ে দিন।"
ফোন কেটে দিয়ে আমি কাকুর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম, যা জড়িয়ে বলেছি কিছুই বুঝতে পারেননি।
.
একটু গলা ঝেড়ে বললাম, "এক্ষুনি চলে যেতে হবে। হঠাৎ করে একজন পেশেন্টের অবস্থা ক্রিটিক্যাল হয়ে গেছে।"
কাকু বললেন, "কিন্তু আমার স্ট্যামিনা বাড়ানোর জন্য একটা ওষুধ লিখে দিয়ে যান।"
আমি গলা যতটা সম্ভব ভারী করে বললাম, "সে প্রেসক্রিপশন না হয় করে দিচ্ছি। একটা কাগজ লাগবে।"
অমনি একটা ডায়েরির ছেঁড়া পাতা চলে এল।
এইসময় ভজহরিদা উদয় হয়ে বলল, "ডাক্তারবাবু প্রেশার দেখা হয়ে গেছে?"
আমি করুণ চোখে বললাম, "না মিস্টার ভটচাজ আমার একজন পেশেন্টের যায় যায় অবস্থা, খাবি খাচ্ছে, তিনটে ইঞ্জেকশন দিতে বললাম, আরও তিনটে বলে দিতে হত। এক্ষুনি চলে যেতে হবে।"
ভজহরিদা তাড়া লাগাল, "তাহলে আর বসে আছেন কেন? চলুন চলুন আপনাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিই।"
কাকু দাবড়ে বলল, "তুই থাম তো ভজু। উনি আগে আমার ওষুধটা লিখে দিন।"
আমি খসখস করে লিখে দিয়ে কাকুর হাতে কাগজটা দিয়ে বললাম, "আসি তাহলে।"
কাকু কাকিমাকে বললেন, "ওনার ফিসটা দিয়ে দাও।"
তারপর ডায়েরির পাতাটা আমাকে দেখিয়ে বললেন, "এটা কি ভিটামিন?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ।"
কাকু আমার সামনে কাগজটা মেলে ধরে বললেন, "বাপন নাম মেডিসিনটার? Bapon?"
সর্বনাশ হয়েছে! এক খেয়ালে আমি নিজের নাম লিখে দিয়েছি। কিন্তু এখন তো ভুলটা স্বীকার করা যাবে না। একদিকে মঙ্গল যে কাকু জানে না আমার ডাক নাম বাপন।
আমি খুব গম্ভীর হয়ে ঘাড় নেড়ে বললাম, "হ্যাঁ বি মানে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। আর এ মানে ভিটামিন এ।"
কাকু বললেন, " আর 'পি' 'ও' 'এন' ?"
ভজহরিদা আবার খোঁচা দিল। কেন যে খোঁচা দেয়!
বললাম, "নতুন তিনটে ভিটামিন আবিষ্কার হয়েছে আপনি জানেন না বোধহয়। ভিটামিন পি , ভিটামিন ও আর ভিটামিন এন ।"
কাকুর চোখ কপালে উঠে গেল। বললেন, "তাই নাকি? খবরের কাগজ নিয়মিত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি কিন্তু এই ভিটামিনগুলোর বিষয়ে কিছু পড়িনি তো!"
আমি ব্যঙ্গাত্মক হেসে বললাম, "কাগজের কথা আর বলবেন না। আসল খবরই সব চেপে দেয়! এই যে..."
ভজহরিদা আর কিছু বলতে দিল না আমায় টেনে বাইরে বের করে নিয়ে এলো।
০২ রা জুন, ২০২০ রাত ২:১২
গেছো দাদা বলেছেন: ভালো বলেছেন । সিনেমার নাম ছিল মুন্নাভাই MBBS ।
২| ০২ রা জুন, ২০২০ রাত ২:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: এজন্য একটু আধটু অভিনয় জেনে রাখা দরকার আছে।
০২ রা জুন, ২০২০ রাত ৩:১৮
গেছো দাদা বলেছেন: আমি অভিনয়ে একদমই কাঁচা। আমার বলা মিথ্যে কথা সব আমার বৌ ধরে ফ্যালে । পোড়া কপাল আমার।
৩| ০২ রা জুন, ২০২০ রাত ২:৫৬
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: পেটে পেটে এতো বুদ্ধি!
৪| ০২ রা জুন, ২০২০ রাত ৩:৪২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জব্বর হয়েছে মাইরি !!
বাপের নাম ভুলিয়ে দাদা
৫| ০২ রা জুন, ২০২০ ভোর ৫:০০
নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো বুদ্ধি আছে আপনার ।
৬| ০২ রা জুন, ২০২০ সকাল ১১:৫৩
সাইন বোর্ড বলেছেন: মজা পাইলাম ।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জুন, ২০২০ রাত ১২:৫৫
বুরহানউদ্দীন শামস বলেছেন: হা হা হা..
বাপন ভাই এমবিবিএস ...