নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোনও কিছু আমার ঠিকঠাক হয় না। সামান্য পুরী বেড়াতে যাওয়াই ধরুন না কেন। ট্রেন লেট করে আসবে। ট্রলি ব্যাগের চাকা ভেঙে যাবে। কাগজ বা প্লাস্টিকের কাপ ফেটে গরম চা গায়ে পড়ে যাবে। সংরক্ষিত আসনে অন্য লোক টিকিট নম্বর ভুল করে শুয়ে থাকবে, তাকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে তুলতে হবে।
সে তো যাইহোক হল। রাতের ট্রেন। থ্রি টিয়ার। সর্বদাই যেমন হয় এবারেও আমার স্থান তেতলায়।
.
ট্রেনে ভ্রমণের জন্য স্লিপার ক্লাস শ্রেষ্ঠ। হকারের চিৎকার... মানুষের দৌড়াদৌড়ি... ইচ্ছে হলে কোনও স্টেশনে জানলা থেকে হাত বাড়িয়ে ধোঁয়া ওঠা চা কিনে খাওয়া।
এসিতে সেসব নেই। নিরাপত্তার কারণেই বাধ্য হয়ে এসিতে ভ্রমণ। পরিচ্ছন্ন বটে তবে এসিতে প্রবেশ মানে এক শব্দহীন বাতাসশূন্য বদ্ধ ঘরে নির্বাসিত হওয়া।
খাওয়া তো আগেই হয়ে গেছে। তাই সুটকেস-ব্যাগেদের সীটের নিচে শুইয়ে দিয়ে, আলো নিভিয়ে, আমি স্বর্গারোহণ থুড়ি আপার বার্থে চড়ে পড়লাম। আমাদের উল্টোদিকে এক মাঝবয়েসি দম্পতি। ভদ্রলোকের মাথায় পনেরোটা সোনালি পাঁচটাকার কয়েন একত্র করলে যেমন হয় সেইরকম আয়তনের চকচকে টাক।
তাঁর আরও গুণাবলি প্রকাশ পেল শুয়ে পড়ার পর। ডিজের আওয়াজ হার মেনে যাবে এমন নাকের গর্জন। নিস্তব্ধ এসির কাঁচের জানলায়-দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে তা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
কী আর করা, আমি সন্দীপনের উপন্যাস "কুকুর সম্পর্কে দুটো একটা কথা যা আমি জানি" তে ডুবে গেলাম।
.
মাঝ রাতে চোখ দুটো একটু লেগেছে এমন সময় দেখলাম আলো জ্বলে উঠল। আমার উনিই জ্বালিয়েছেন। কী হল আবার? উল্টোদিকের নাকডাকিয়েকে ততক্ষণে ঠেলে তুলেছেন উনি।
নাক ডাকা থেমে যেতেই পৃথিবীতে অপার শান্তি নেমে এলো।
তাঁকে তুলে উনি বললেন, "একটু দেখুন না, আমার কানের একটা দুল কোথায় পড়ে গেল। খুঁজে পাচ্ছি না।"
ভদ্রলোক উঠলেন। খুব অসভ্য বর্বর না হলে এক নারীর আবেদন অগ্রাহ্য করা যায় না।
তিনি উঠে খোঁজা শুরু করলেন। চাদর-বালিশ কম্বল দিয়ে শুরু হল। তারপর লাগেজ সরিয়ে মেঝে।
.
আমি বুঝলাম সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে। কানের দুল মানে সোনার গয়না হারানো যে কী ভয়াবহ অমঙ্গলের সেতো বাড়ির বড়দের কাছে সহস্রবার শোনা। অতএব বউয়ের মেজাজ গরম হবে। ফলত এবারের বেড়ানোটাই মাটি হল। আমি আরও বিষণ্ণ হয়ে নামতে গেলাম। বউ আমার দিকে এমন কটমট করে চাইল যে থমকে গেলাম। বলল, "তুমি এলে কাজের কাজ কিছুই হবে না মাঝখান থেকে হয় মাথা ঠুকে নেবে বা চোখে খোঁচা খাবে। তার চেয়ে যেমন আছ তেমনই থাকো।"
.
ঘন্টা খানেকের চেষ্টাতেও দুল খুঁজে পাওয়া গেল না। এই এসির ঠান্ডাতেও পরিশ্রমে ভদ্রলোকের টাক ঘামে সপসপে হয়ে গেছে। ভুবনেশ্বর আসতে ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা নেমে পড়ে বাঁচলেন। তাঁরা নেমে যেতে আমিও তেতলা থেকে নামলাম।
বউ বলল, "বেশ তো শুয়েছিলে, নামলে কেন?"
বললাম, "বাথরুম যাব। এসে আমিও একটু চেষ্টা করে দেখব।"
বাথরুম থেকে ফিরে আসতে বউ বলল, "আমি আলো নিভিয়ে দিচ্ছি। শুয়ে পড়ো। আমিও একটু শুই।"
.
আমি অবাক হয়ে তেনার দিকে তাকাতেই তিনি টপ করে হ্যান্ড ব্যাগ খুলে একটা কানের দুল বের করে ফেললেন।
খালি কানে দুলটা পরতে পরতে বললেন, "নাক ডাকার চোটে আমার মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়ে গিয়েছিল। বাপরে এমন নাক ডাকা যেন দশখানা শাঁখ, কারখানার সাইরেন সব একসঙ্গে বাজছে। থামানোর আর কোনও উপায় ছিল না.. তাই নেহাত বাধ্য হয়েই মিথ্যে বলতে হল..."
০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ১১:৪০
গেছো দাদা বলেছেন: অত পয়সা নাই আমার শতাব্দী চড়ার জন্য । হা হা হা ...
২| ০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ৩:১৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
রম্য পড়ে না হাসলাম, না পুলিকত হলাম, মিথ্যা শুনে কিছুটা রাগান্বিত হলাম।
০৯ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:০৫
গেছো দাদা বলেছেন: আপনার মন্তব্য পেয়ে আমি রোমাঞ্চিত হলাম । আশা আছে একদিন আমার লেখায় আপনি পুলকিত হবেন । আশায় বাঁচে চাষা। আমি সেই চাষা ।
৩| ০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ৩:৫৪
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সবথেকে বড় মিথ্যা সুটকেস।ছবি বড় করে পই পই করে খুঁজলাম কোথাও কোন সুটকেস দেখলাম না তবে লাল হলুদে বৈদিকে খুব মানিয়েছে।
১০ ই জুন, ২০২০ রাত ১:১৪
গেছো দাদা বলেছেন: বৌএর হাতে সুটকেস থাকে না ... বর এর হাতেই থাকে !! বর আগেই ট্রেনে উঠে গেছে । হা হা হা ...
৪| ০৮ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:০৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: প্রথমবার যখন নাবতে মানা করলো, তখনই বুঝেছিলাম - ডালমে কুছ তো কালা হ্যায়
হা, জরুর কালা
দারুন বুদ্ধি মাইরি....
বৌদিও বুঝি ঘষায় ঘষায় লোহা থেকে চুম্বক হয়ে যাচ্ছে
১০ ই জুন, ২০২০ রাত ১:১৬
গেছো দাদা বলেছেন: না গো দাদা... আপনার বৌদি হলো চুম্বক আর আমিই হলাম লোহা !! হা হা হা ...
৫| ০৮ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৩৫
পদ্মপুকুর বলেছেন: আজ সকালের প্রথম পঠন। তবে চোরবিষয়কটা ছিলো সুপার্ব।
১০ ই জুন, ২০২০ রাত ১:১৮
গেছো দাদা বলেছেন: দাদা কি পেশায় পুলিশ নাকি ? হা হা হা ...
৬| ০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: কানের দুল নিয়ে আমার চিন্তা না। ভ্রমন নিয়েও আমি ভাবছি না।
শুধু ভাবছি সন্দীপনের উপন্যাসটার কথা।- কুকুর সম্পর্কে দুটো একটা একটা কথা যা আমি জানি
বইটা আমার পড়া হয় নি।
দাদা বইটা নিয়ে একটা রিভিউ দেন না প্লীজ।
১০ ই জুন, ২০২০ রাত ১:২৪
গেছো দাদা বলেছেন: এখানেই কিছুটা রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করলাম : হেমাঙ্গ নামের এক ভদ্রলোকের হঠাৎ আশেপাশের সবাইকেই কুকুর মনে হতে লাগলো । ব্যাপারটা কিভাবে হলো তা সম্পর্কে তাঁর তেমন ধারণা নেই কিন্তু সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে শুরু করলো প্রতিটা মানুষ ই কোন না কোন জাতের কুকুর । কেউ জার্মান শেফার্ড , কেউ বুলডগ , কেউ নেড়ি ইত্যাদি । এমনকি তাঁর নিজেকেও কুকুর মনে হয় ।
ব্যাপারটা স্পষ্ট করার জন্য বই থেকে কয়েকটা লাইন তুলে দেওয়া যাক ,
''এখানে কফিখানায় আসে নানা আকৃতির , নানান জাতের নানা রঙের কুকুর । এরা সবাই মূলত নেড়ি । এদের মধ্যে তারা কালক্রমে জাতে উঠছে যারা গাড়ি কিনেছে । যারা ফ্ল্যাট কিনেছে। ব্যাঙ্কে টাকা বাড়ছে ।এদের পেডিগ্রি রয়েছে এরা দাবী করে।এরা ক্রিকেট সিজনে ক্রিকেট , ফিল্ম ফেস্টিভালের সময় ফিল্ম ফেস্টিভাল , নির্বাচন কালে নির্বাচন এবং শরৎ ঋতুতে সাহিত্যের কথা বলে ।পৃথিবীর তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল নিয়ে এখানে অহরহ কথা উঠে । প্রতিদিনের সংবাদপত্র থেকে এই আজ এটা পড়েছেন কিংবা এই আজ সেটা পড়েছেন -এভাবে কথা শুরু হয় ।তবে বাংলার তুলনায় ইংরেজি কাগজ রেফার্ড হওয়া এখানে কাম্য । একজন কুকুর হিসেবে আমি এখানে প্রায়ই আসি । এদের সঙ্গ কামনা আমার পক্ষে প্রাকৃতিক । কুকুরজীবন তো আমাকেও কাটাতে হবে । ''
উপন্যাসের শেষ পর্যায়ে লেখক খুব বড় একটা ধাক্কা দিয়েছেন । ধাক্কাটা হজম করতে কষ্ট হয়েছে ।
পড়তে চাইলে পড়তে পারেন । তবে না পড়াই ভালো ।শেষ হওয়ার পর অস্বস্তি লাগে ।
স্যাঁতস্যাঁতে অস্বস্তি ।
৭| ০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:১০
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: "যেমন কুকুর,তেমন মুগুর"-থেরাপি সঠিক।
কিন্তু সামান্য একটু মিথ্যার আশ্রয়-একটু কেমন কেমন লাগল।
১০ ই জুন, ২০২০ রাত ১:২৯
গেছো দাদা বলেছেন: কোনো কোনো সময় মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয় বৃহত্তর স্বার্থে । একটা উদাহরন দিলাম : মৃত্যুপথযাত্রী আপনজন কে আমরা স্বান্তনাবাক্য হিসাবে যা বলি তা কি মিথ্যা নয় ?
৮| ০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:২২
নেওয়াজ আলি বলেছেন: আকাশ আর মাটি মাঝখানে ফাঁকা
১০ ই জুন, ২০২০ রাত ১:৩১
গেছো দাদা বলেছেন: হুমমম ....
৯| ০৮ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৫:১৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
'বৌদি দেখি তোমার থেকে এক ডিগ্রি সরেস !!
তার কারেন তোমার এত নাকানি চুবানি খাওয়া!
একটু টাইট দিয়ে রেখো দাদা, নইলে ষোল কলা
দেখিয়ে ছাড়বে ! একবার হয়েছিলো কি ? বলবো !!
১০ ই জুন, ২০২০ রাত ১:৩৪
গেছো দাদা বলেছেন: টাইট দিতে দিতে আমি নিজেই স্ক্রু ড্রাইভার এর মত বেঁকে যাচ্ছি !! হা হা হা ...
১০| ১১ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৪৪
Rajibrpsoft বলেছেন: দিদি বাজিমাত করে দিল
১২ ই জুন, ২০২০ রাত ১:৩৯
গেছো দাদা বলেছেন: একদম ...
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই জুন, ২০২০ রাত ৩:১৩
মা.হাসান বলেছেন: গেছো দাদা, ভাবিও দেখছি কম যান না। আপনাদের দুজনের একে বারে রাজযোটক হয়েছে।
দিনের ট্রেনে স্লিপার ক্লাস ই ভালো, পরিবার নিয়ে চললে থ্রি টিয়ার ছাড়া রাতে উপায় কি? কিন্তু পুরি যাবার জন্য দিনের বেলা শতাব্দি ছিলো না?