নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মোদি ভক্ত ! এটা জেনে আপনি দুঃখ পেলে আমি আনন্দিত হব।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : বাইনোকুলার ও একটি আত্মহত্যা

২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ২:৫৯

বাড়ির বাইরে রাস্তায় সার দিয়ে দশটা ঝকঝকে ইনোভা গাড়ি দাঁড় করানো আছে।
একটা আরও দামি গাড়ি ফুল দিয়ে ঘ্যামা সাজানো হয়েছে। ওটা বরের গাড়ি।
তাপু মাঝে মাঝেই বেরিয়ে দেখছে। একটাতে ও চড়বে। ঋক দাদাবাবুর বিয়ে। বিয়ে হচ্ছে অনেক দূরে তাই দুপুরের ভাত খেয়েই বেরিয়ে পড়া হবে। আজ থেকেই বাড়ির রান্না-বান্নার যাবতীয় ভার ক্যাটারারের হাতে।
তাপুর জন্যেও একটা নতুন ড্রেস কেনা হয়েছে। ড্রেসটা বের করে রেখেছে সে। নতুন ড্রেস পরে বরযাত্রী যাবে।
.
বড় হলঘরে খাওয়া শুরু হতেই তাপু বসতে গিয়েছিল কিন্তু বড়বাবু উঠিয়ে দিয়ে বলল, "তোর এত তাড়া কিসের? তুই পরে খাবি।"
তাপুর এত তাড়া কিসের মানে? তাপুও তো বরযাত্রী যাবে। দাদাবাবুই তো বলেছে। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকেই বলেছে তাপু বরযাত্রী যাবে।
সে কথা বলতেই বড়বাবু বলল, "তুই ঘরে থাকবি। ঘরে বড়মা, মাসিমা থাকবে তাদের কাছে থাকবি।"
তাপু যাবে না? কবে থেকে ভেবে রেখেছে সে? কত আনন্দ করবে!
কিন্তু বড়বাবুর মুখের ওপর তো কিছু বলতে পারে না সে। সে কেন কেউই বলতে পারে না। বড়বাবু ঋক-দাদাবাবুর বাবা। এ বাড়ির কর্তা।
ভগ্নহৃদয়ে হলঘরের এক কোণে ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে রইল তাপু।
দাদাবাবুও হলঘরে ছিল। বড়বাবুর কথা শুনেছে। তাপুর মুখ দেখে বুঝেছে বেচারা বড্ড কষ্ট পেয়েছে। তাপুকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে গেল। বলল, "কাঁদিস না। আচ্ছা কী নিবি বল? বাইনোকুলারটা নিবি?"
দাদাবাবুর দূরবিনের ওপর তাপুর দুর্নিবার লোভ। দাদাবাবু সেটা জানে। খুব শক্তিশালী বাইনোকুলার। বিদেশি জিনিস অনেক দাম। এক আধবার দাদাবাবু দেখতে দিয়েছে। বহু দূরের জিনিস কেমন একদম কাছে চলে আসে।
দূরবিনের কথা শুনেই তাপুর চোখ চকচক করে উঠল। ঠিক শুনছে তো সে! দাদাবাবু তার নিজের প্রিয় দূরবিনটা তাপুকে দিয়ে দেবে?
শোকেস থেকে বাইনোকুলারটা বের করে দাদাবাবু তাপুর হাতে দিয়ে বলল, "নে আজ থেকে এটা তোর। আর মন খারাপ করে থাকিস না। কাল সকালেই চলে আসব। তারপরেই তো এ বাড়িতে আসল মজা শুরু হবে।"
চোখ মুছে আনন্দে নাচতে নাচতে চলে গেল তাপু। এই দূরবিন তার কাছে আলাদিনের প্রদীপ। আলাদিনের প্রদীপ পেয়েছে সে! এক অত্যাশ্চার্য জিনিস দূরবিন। যা চোখের সামনে ধরলেই কত দূরের সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়।
.
দুপুরে সবাই চলে গেল বিয়ে দিতে। বড়মা, মাসি, কজন কাজের লোক আর তাপু রইল ঘরে। আসলে সেও তো কাজের ঝি। ছোট থেকে এ বাড়িতে তাপু আছে। তার বাড়ি গ্রামে। বাবা এখানে রেখে দিয়ে গেছে বছর সাতেক আগে যখন তার বয়স সাত বছর বা তার একটু কম। দাদাবাবুর ফাইফরমাশ খাটে। ভারি কাজ কিছু করতে হয় না। আরও কাজের লোক আছে। দাদাবাবুরা খুব বড়লোক। অনেক রকমের ব্যবসা আছে। বড়বাবু খুব রাগী তবে বড়মা আর দাদাবাবু খুব ভাল। তাকে খুব ভালবাসে। দাদাবাবু তাকে একটা নাইট স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে।
.
ঘর ফাঁকা হয়ে যেতেই তাপু দূরবিনটা নিয়ে এক ছুটে তিনতলার ছাদে চলে গেল। দূরবিনটা দিয়ে তাকাতেই তার শরীরে কেমন শিহরন খেলে গেল।
ফোনের টাওয়ারটা মনে হচ্ছে হাত দিয়ে ছোঁয়া যাবে। দূরে একটা বাড়ির ছাদে একটা কালো বেড়াল বসে আছে, মনে হচ্ছে ওর পিঠে হাত বুলাতে পারবে। সত্যিই এক আশ্চর্য জিনিস এই দূরবিন। দূরকে এত কাছে আর কেউ এনে দিতে পারবে না।
.
গোটা ছাদ ঘুরে ঘুরে চারিদিক দেখতে লাগল তাপু। হঠাৎ এক জায়গায় তার চোখ আটকে গেল। তাদের বাড়ির পরেই বাগান আর তার পরেই সুপ্তিদিদের বাড়ি। দোতলা বাড়ি। দোতলার একটা ঘরে সুপ্তিদি থাকে। মানে থাকত।
দাদাবাবুর বন্ধু ছিল সুপ্তিদি। সারাক্ষণ এ বাড়িতেই দাদাবাবুর সঙ্গে লেপ্টে থাকত। দুজনে কী ঝুটোপুটি করত। কত হইহই রইরই করে দিন কেটে যাচ্ছিল। তাপু ভেবেছিল দাদাবাবুর সঙ্গে সুপ্তিদিরই বিয়ে হবে। কিন্তু হল না। এই কিছুদিন আগেই সুপ্তিদির বিয়ে হয়ে গেল। এক ডাক্তারের সঙ্গে।
খুব রাগ হয়েছে সুপ্তিদির ওপর তাপুর। খুব খারাপ মেয়ে সুপ্তিদি। তাপু বিয়েতে খেতে যায়নি। দাদাবাবুও যায়নি। হাসিখুশি দাদাবাবু কদিন কেমন হয়ে গিয়েছিল। খেত না, হাসত না, মনমরা হয়ে থাকত সবসময়। অনেক দেরি করে বাড়ি ফিরত। সব ওই পাজি সুপ্তিদির জন্য।
সেও হয়ে গেল মাস ছয়েক। তারপরেই দাদাবাবুর মেয়ে খোঁজা শুরু করে দিয়েছিল বড়বাবু। বিয়ে ঠিকও হয়ে গেল।
.
দূরবিন নিয়ে দেখতে দেখতে তাপু দেখতে পেল সুপ্তিদিকে। সুপ্তিদি বাপের বাড়ি এসেছে।
ও অবাক হয়ে দেখল সুপ্তিদি এ বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। আরও অবাক হয়ে দেখল সুপ্তিদি কাঁদছে। দূরবিন সুপ্তিদির মুখটা একদম তাপুর কাছে এনে দিয়েছে। দু চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছে সুপ্তিদির।
কেন কাঁদছে সুপ্তিদি? দাদাবাবুর জন্য? দাদাবাবু বিয়ে করতে গেল বলে? তাহলে সুপ্তিদি দাদাবাবুকে বিয়ে করল না কেন?
দাদাবাবু বলেছিল সুপ্তিদি দাদাবাবুকে ভালবাসে না। তাহলে আজ কাঁদছে কেন? দাদাবাবু ভুল জানত? সব কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে! কিছুই বুঝতে পারছে না তাপু।
দূরবিন সত্যিই বড় আশ্চর্যের যন্ত্র, যা দূরকে কাছে এনে দেয়...
তবু কত কিছুই যে দূরে থেকে যায়..
.
হঠাৎ তাপু দেখল সুপ্তিদি বিছানার ওপর একটা টুল তুলেছে। টুল দিয়ে কী করবে সুপ্তিদি?
টুলের ওপর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে সুপ্তিদি! কেন কেন? ফ্যানটা ধরতে চাইছে সুপ্তিদি। কেন এমন করছে সুপ্তিদি?
তাপুর কানে গুড় গুড় করে মেঘ ডাকছে! খারাপ কিছু একটা ঘটতে চলেছে! তাপু টিভিতে দেখেছে মানুষ এ ভাবে নিজেকে মেরে ফেলে। তাপু দূরবীন রেখে দিয়ে দৌড়াল।
.
সুপ্তিদির বাড়ির সবকিছু নখদর্পণে তাপুর। ও রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে একদম সুপ্তিদির ঘরে পৌঁছে বন্ধ দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে চেঁচাতে লাগল, "সুপ্তিদি দরজা খোলো।"
তাপুর চিৎকারে সুপ্তিদির মা-বাবা ছুটে এল। তাঁদেরকেও যা দেখেছে বলল তাপু। তাঁরাও ভয় পেয়ে 'সুপ্তি দরজা খোল' বলে চেঁচাতে লাগলেন।
.
একটু পরে তাপুদের অবাক করে দরজা খুলে সুপ্তিদি বেরোল।
বলল, "দরজা ভেঙে ফেলবে নাকি? সবাই মিলে এমন অসভ্যের মতো চেঁচাচ্ছ কেন?"
সুপ্তিদির মা বলল, "তাপু নাকি দেখেছে তুই ফ্যানে..."
সুপ্তিদি বলল, "ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলাম! তোমরা কী পাগল হয়েছ? এমনটা ভাবলে কী করে তোমরা? আমি কেন সুইসাইড করব? আমি কত ভাল আছি তোমরা জানো না?"
সুপ্তিদির বাবা বললেন, "যত নষ্টের গোড়া এই তাপুটা! এই তুই ভাগ! বদমাশ মেয়ে !"
সুপ্তিদি বলল, "তোমরা যাও, তাপু একটু থাকুক আমার কাছে।"
.
দরজা বন্ধ করল সুপ্তিদি। কিছুক্ষণ তাপুর হাত ধরে বসে রইল। হঠাৎ তাপু দেখল হাতে টপ টপ করে জল পড়ছে। সুপ্তিদির চোখের জল। সুপ্তিদি বলল, "কী যে হয়ে গিয়েছিল আমার! খুব বড় একটা ভুল করতে যাচ্ছিলাম রে! ভুল... বোকামি... তুই না দেখলে..."
তাপু বলল, "দূরবিনটা না থাকলে..."

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুন, ২০২০ ভোর ৫:০৭

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সুন্দর গল্প ,উপভোগ করলাম।কিন্ত রাত তিনটার সময় গল্প লিখছেন,বৌদি বাসায় নেই।

২৫ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:২৭

গেছো দাদা বলেছেন: আপনার বৌদি পাশে নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। হা হা হা ।

২| ২৫ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:১২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

গল্প সুখপাঠ্য হয়েছে দাদা
অনেক উৎকণ্ঠায় ছিলাম !!
যা হোক শেষ পর্যন্ত বিয়োগান্তক
হয়নি। ভালো থেকো দাদা

২৫ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:২৫

গেছো দাদা বলেছেন: আপনিও খুব ভালো থাকুন নুরু দাদা।

৩| ২৫ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:১৮

পদ্মপুকুর বলেছেন: যথারীতি সুন্দর।
আপনার পকেটমারে একটা মন্তব্য দিয়ে এসেছি, দেখবেন প্লিজ।

২৫ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:২০

গেছো দাদা বলেছেন: দেখলাম। উত্তর দিয়েছি। ভালো থাকবেন।

৪| ২৫ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর।

২৫ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:২৩

গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.