নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভোরবেলায় আবিষ্কৃত হল দেহটা। মফস্বঃল শহরের শেষপ্রান্তে, যেখানে আবর্জনার স্তপ ডাঁই করা থাকে, তার পাশে ছোট্ট মাঠে। এদিকে প্রাতঃভ্রমণকারীরা আসেন না। মাঝারি স্কেলের সমাজবিরোধী আর উঠতি নেশাখোরদের আড্ডা। কয়েকজন মুনিষগোছের লোক প্রথম দেখতে পায়। ততক্ষন শেয়ালে, শকুন বা রাতচরা জন্তুরা খানিকটা খেয়েও নিয়েছে।
গায়ের শাড়ী আর লম্বা চুল থেকে বোঝা গেল দেহটা নির্ঘাৎ কোনো মহিলার।
সীমান্তশহরে এমনিতেও ধর্মীয়- রাজনৈতিক উত্তেজনার অভাব হয়না। সংখ্যা হিন্দু-মুসলিম প্রায় সমান সমান। রোদ ওঠার সাথে সাথে দুটো জিনিস একই সাথে ছড়িয়ে পড়ল, ধর্মীয় উত্তেজনা আর লাশপচা গন্ধ। থানা থেকে লোক এলেও তারা ধারে কাছে ভেড়েনি। উচ্চ পর্যায়ের নেতারা যতক্ষন না গ্রীন সিগন্যাল দেবেন ততক্ষণ এ বডি তোলা রিস্কি।
কয়েক আলোকবর্ষ দুর হতে পৃথিবীর মাটিতে এসে নেমেছে এলিসিয়া গ্রহের প্রাণীরা এবং তারা এসেছে এ শহরেই। অত্যুন্নত এই প্রাণীদের সমস্ত কিছু যন্ত্র নিয়ন্ত্রিত। তারা দুঃখ হাসি কান্না প্রেম ইত্যাদি আবেগের সাথে পরিচিত নয়। সুতরাং বুঝতে পারলনা সারাদিন ধরে শহরের মানুষজন কেন পাগলপারা হয়ে ছুটোছুটি করে। বাতাসের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়াতে আন্দাজ করল, ছোট্ট জনপদের বাসিন্দারা প্রচুর পরিমানে আগুন লাগাচ্ছে।
উগ্র হিন্দু সংগঠনের নেতারা দুপুর থেকে উত্তেজক বক্তব্য রাখল, বিকেলে ধর্মরক্ষায় মাঠে নামল মুসলিম জিহাদী গোষ্ঠীর সৈনিকেরা। উভয়েরই দাবী নিহত মেয়েটি তাদের ঘরের। মহিলাদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়েছে এ রাজ্যে। প্রতিকার চাই।
রাত্রি আটটা নাগাদ নাঙ্গা তলোয়ার ফেজ টুপি পরে আল্লা হু আকবর বলে যারা 'প্রতিকার চাই' প্রোগ্রামে নেমেছিল, তাদের নজর পড়ে দত্তবাড়ির ষোড়শী কন্যা টিউশন পড়ে ফিরছে। সদলবলে তেড়ে যাওয়ার মুখে তাদের বাধা দেন বৃদ্ধ মহীদুল মাস্টার।
ছুরিকাহত হয়ে তিনি শেষবারের মত বলতে পেরেছিলেন, মা তুই পালা। মেয়েটি যা হোক পালাতে পেরেছিল।
জয় শ্রীরাম ধ্বনি তুলে ত্রিশুল ফিশুল নিয়ে সাড়ে আটটার সময় কে বা কারা যখন সাত বছরের মুন্নু সেখকে কোপাতে আসছিল তখন মুদি দোকানদার হারান সাঁতরা তাকে তুলে নিয়ে ছুট মারে। হারানকে পিছন থেকে গুলি করা হয়, ঘটনাচক্রে পুলিশ ভ্যান এসে পড়েছিল। মুন্নু বেঁচে গেছে।
এলিসিয়া গ্রহে গবেষণা চলছে। সেই সূত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কিছু জিনিস স্যাম্পেল হিসাবে নিয়ে যাওয়া চাই। এই মারাত্মক অগ্নিকান্ড আর তান্ডবের ভেতরে তারা ঠাহর করতে পারেনা, তাদের অত্যুন্নত মস্তিষ্ক ফেল করে যায়, মানুষ নামের জীবগুলো কেন একে অপরকে মারছে সারাদিন?
পরদিন সাতসকালে মুদ্দফরাশ এসে হাজির। লাল ফিতের ফাঁস খোলা কি মুখের কথা? কলকাতায় বসে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ফাইল সই করেন বটে, সেটা নেমে ডিএম, এস ডিও হয়ে আসতে আসতে দেরি হয়ে যায়। যে মহিলার বডি নিয়ে উত্তেজনা ছড়ালো তা তুলে এনে পোস্ট মর্টেম সমাপনান্তে স্পেশাল এনকোয়ারি কমিটি বসানোর হুকুম হল।
মুদ্দফরাশরা কাছে গিয়ে বডি ধরে টানাটানি করে। বলে হুজুর এ লাশের তো অন্য কেস আছে। কি কেস? ঘেন্নায় নাকমুখ চেপে ধরে বড়বাবু জিজ্ঞেস করেন।
-আজ্ঞে এ মাল হেঁদু মোচুমান কিছুই না।
- মানে, তবে কি খেরেস্তান, যত্তসব, বডি দেখে মেয়েছেলের জাত বুঝে যাস!
- হুজুর এ হল গিয়ে.... ছেলেও না মেয়েও না!
এলিসিয়া গ্রহের প্রাণীদের ডেটাবেসে ফুটে উঠছে পৃথিবীর বিস্ময়কর এক তথ্য। এ গ্রহে তৃতীয় লিঙ্গের একরকম প্রাণী জন্ম নেয়। এদের লিঙ্গপরিচয় নেই, ধর্মপরিচয় সচরাচর দেয়না। এদের হিজড়ে বলে। জন্মসুত্রে যাই হোক, মোটামুটি সমন্বয়বাদী ধর্ম পালন করে এরা। মরনের পরে বাইরের সমাজ জানতে পারেনা কি হল। হয়ত খুব গোপনে দাহ বা দাফন করা হয় তাদের, অনেকের মরদেহকে ঝাঁটা-জুতো-লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ফেলে রাখা হয় মাঠে। শালীনতাহীন বীভৎস পরিনতি নিয়ে সে হতভাগা বা হতভাগী যেন এই বিষাদময়জীবন আর ফিরে না পায় পরজন্মে।
বডি মর্গে পাঠানো হল। কাল রাত থেকে যেসব বীরপুঙ্গব শিশু নারী বৃদ্ধর জবাই করার প্রস্তুতি নিয়েছিল, তারা হঠাৎ সুবোধ হয়ে গেল। সিআরপিএফ জওয়ানরা ঠান্ডা চোখ মেলে শহরে পায়চারি করছে। আরো ঠান্ডা তাদের বন্দুকের নল। ওদিকে মর্গে হইচই পড়ে গেছে৷ আগের দিন দাঙ্গায় নিহত দুটো লোকের বডিতে আশ্চর্যরকম ফুটো। কেউ যেন নিখুঁত হাতে কেটে তুলে নিয়েছে তাদের হৃৎপিন্ড দুটি! মিডিয়া এসেছে, রহস্যের হাতছানি পেয়ে আজ সন্ধ্যেয় সরগরম থাকবে নিউজচ্যানেল।
প্রায় আলোর সমান গতি নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে এলিসিয়ার মহাকাশযান। তাদের এই বিপজ্জনক গ্রহে থাকার সাহস হয়নি। নীল গ্রহের খুব দামী দুটো জিনিস নিয়ে ফিরে যাচ্ছে তারা, মাতাল, বোকাসোকা হারান সাঁতরা আর রুগ্ন ধর্মভীরু মহীদুল মাস্টারের হৃৎপিন্ড। ক্ষুধা, দারিদ্র, কান্না, ঘেন্নায় ভরা প্রেমহীন ধরিত্রীর সবচেয়ে দামি আর বিরল দুটো জিনিস।
১০ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৫৩
গেছো দাদা বলেছেন: একদম।
২| ০২ রা আগস্ট, ২০২০ রাত ১:০৩
মা.হাসান বলেছেন: অস্কার ওয়াইল্ডের হ্যাপি প্রিন্সের কথা মনে করিয়ে দিলেন।
দাঙা থাক, রম্য দেবেন। ওসব খারাপ খবরের মধ্যে ২৪ ঘন্টা থাকি, আর ভালো লাগে না।
৩| ০২ রা আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৪৪
শেরজা তপন বলেছেন: শেষ টুকু খুব ভাল লাগল' গেছো দাদা'। আপনাকে ঈদের শুভেচ্ছা
৪| ০২ রা আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:০১
রাজীব নুর বলেছেন: দাঙ্গা শব্দটাকে আমি অনেক ভয় পাই। ভারত উপমহাদেশে কম দাঙ্গা হয়নি। হিন্দু মুসলমানের। কম লোক মারা যায় নি।
৫| ০২ রা আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৫৪
বিজন রয় বলেছেন: অনেক ভাল একটি গল্প পড়লাম।
অনেক ভাল।
শুভকামনা রইল।
৬| ০২ রা আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: দাদা আজ একটা মারাত্মক হাসির গল্প দেন। আমার মন মেজাজ ভালো নাই। অনেকক্ষন হাসতে চাই।
৭| ১০ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:০৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ছোট বেলায় দেখতাম প্রতিবেশী কিংবা পাশের গ্রামের
মানুষদের মাঝে সামান্য ব্যাপার নিয়ে বল্লম সুরকী,রামদা
নিয়ে মারা মারি। ভীষণ ভয় পেতাম। তখনো, এখনো!!
১০ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৫২
গেছো দাদা বলেছেন: সত্যি, আমরা কবে মানুষ হবো ??
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৪৪
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: দরদ ভরা হৃদপিণ্ড চাই।