নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ নিয়ে পরপর তিনদিন হল।
তিনদিন আগে দেখলাম বউ রাত একটা নাগাদ বিছানা থেকে উঠে বাইরে যাচ্ছে।
এমনিতে বউ ভীষণ ভিতু। আগে রাতে বউয়ের বাথরুম পেলে আমাকে ঘুম থেকে তুলত, বাথরুমের বাইরে দাঁড়াতে হত। সেই কারণে পরে আমি বেডরুমের সঙ্গে একটা অ্যাটাচড বাথরুম বানিয়ে নিই। তো সেই ভীরু মহিলা একা একা বেরিয়ে কোথায় যাচ্ছে? শোওয়ার ভান করে পড়ে থেকে দেখেছিলাম প্রথম দিন ফিরল প্রায় এক ঘন্টা পরে। পরের দিন প্রায় দেড় ঘন্টা পরে।
.
আজ আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না। বউ ওঠার একটু পরেই আমি পা টিপে টিপে বাইরের ঘরে গেলাম।
গিয়ে অবাক হয়ে দেখলাম বউয়ের পোশাক টি-টেবিলের ওপর রাখা আছে। সেকী কেন! বউ পোশাক খুলে ফেলেছে কেন!
ভেজানো দরজায় উঁকি দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে যা দেখলাম তাতে শরীরের রক্ত আইসক্রিম হয়ে গেল! বুকের মধ্যে ডবল ইঞ্জিনের দুরন্ত এক্সপ্রেস দৌড়াতে লাগল!
দেখলাম হলুদ কালোয় ডোরাকাটা একটা জীব তুরন্ত সরে গেল!
বউ বাঘ হয়ে গেছে! না বাঘ নয় বাঘিনি!
একটা সিরিয়াল দেখেছিলাম তাতে একটা ছেলে রাত হলেই বাঘ হয়ে যেত। তা বলে আমার বউ!
আমি অজ্ঞান হয়ে যেতে যেতেও হলাম না। কোনরকমে নিজের বিছানায় গিয়ে বডি ফেললাম। ঘন্টাখানেক পর বউ ফিরল। সে রাতে একটুও ঘুম হল না আমার। একবার বউকে ছুঁতে গিয়েও হাত সরিয়ে নিলাম। মানসচক্ষে একটা বাঘের মুখ দেখতে পেলাম, সে বিশাল হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
.
পরের দিন ছিল রবিবার। বাজারে গিয়ে একটা দোকানে দেখলাম সবাই মিলে লোকাল দৈনিকের একটা খবর পড়ছে। বাঘের খবর। এক ফুটপাথবাসী সাংবাদিককে বলেছে, সে রাত্রে শুয়েছিল ফুটপাথে হঠাৎ বাঘ দেখেছে। বাঘ দেখেই ভয়ে দৌড়ে গলির মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
আর একজন আবার বলেছে, একটা নয় একাধিক বাঘ। দূর থেকে দেখে কোনরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে লুকিয়ে পড়েছে।
.
আমি মনে মনে বললাম, ওরে বোকা, বাঘ নয় বাঘিনি বল। আর দ্বিতীয়টা নিশ্চই মাতাল। তাই মদের ঘোরে অনেকগুলো বাঘিনি দেখেছে।
হঠাৎ কেন জানি না, আমার ভয়ের বদলে বেশ গর্ব হতে শুরু করল। জীবনে অহংকার করার মতো কিছু ছিল না। আজ বউ আমাকে সে সুযোগ করে দিয়েছে। বাঘিনি বউ কজনের ভাগ্যে হয়!
.
পালক ছাড়িয়ে একটা গোটা চিকেন কিনলাম বউয়ের জন্য। আর আমার জন্য নিলাম একটা লেগপিস। ও বেচারা একটু ভাল করে কাঁচা মাংসই খাক।
.
গোটা চিকেন দেখে বউয়ের চোখ চকচক করে উঠল। খুব আনন্দ হয়েছে বুঝলাম। বললাম, "একটু হাত খালি হলে আর এক কাপ চা করে দেবে?"
তারপর হঠাৎ আমার কানে যেন হালুম গর্জন শুনতে পেলাম, বললাম, "না না দরকার নেই। বেশি চা না খাওয়াই ভাল।"
কিন্তু আমার বউ বাঘিনি হলে কী হয় ভীষণ দয়ালু। বলল, "আর এক কাপ খেলে কিছু হবে না, করে দিচ্ছি।"
.
ভজহরিদা বলল, "আর রাতে বেশিক্ষণ বাইরে থাকা যাবে না রে। বাঘ বেরোচ্ছে! শুনেছিস তো?"
আমি গম্ভীর গলায় বললাম, "বাঘ নয় বাঘিনি।"
ভজহরিদা বলল, "বাঘিনি? তুই জানলি কেমন করে?"
আর একটু হলে আমি সব বলে দিচ্ছিলাম আর কি! অনেক কষ্টে নিজেকে নিরস্ত করলাম।
.
সেই রাতেও বউ যথারীতি বেরোল। আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম বউ বাঘিনি হওয়ার ফায়দা আমাকে তুলতে হবে। যাদের যাদের ওপর আমার রাগ আছে বউকে দিয়ে তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে।
বউ সোয়া ঘন্টা পরে ফিরল। তারপর নিশ্চিন্তে ঘুমোলাম। পাশে বাঘিনি বউ থাকলে একটু একটু যেমন ভয়ও করে আবার মনে হয়, যতই হোক ও আমার বিয়ে করা বউ, তাই আমার ক্ষতি করবে না। উল্টে পাশে বাঘিনি থাকলে কাউকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। চোর-ডাকাত কাউকে না।
.
পরের দিন আবার বউয়ের জন্য একটা গোটা মুরগি আর আমার জন্য মাছ নিয়ে এলাম। বউ খুশিতে ডগমগ হয়ে গেল।
তখনই কথাটা পাড়লাম।
বললাম, "দেখো দুটো লোক আমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। একজন হচ্ছে পাশের বাড়ির ডেন্টুকাকা আর আমার অফিসের বস মজুমদারসাহেব। এরা সবসময় আমার ক্ষতি করতে চাইছে। এদের যদি, না মানে প্রাণে মারার দরকার নেই, কেউ হয়তো কামড়ে পায়ের খানিকটা মাংস তুলে নিল... তাহলে আনন্দের আর সীমা থাকে না। কী বল?"
আমার কথার কোনও উত্তর না দিয়ে বউ বলল, "চা খাবে?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ দাও।"
বউ মনে হল ব্যাপারটা টেক-আপ করেছে, তাই প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেল। যাক বাবা নিশ্চিন্তি, এবার ওরা শাস্তি পাবেই। আর কে কে আমার শত্রু আছে ভাবতে শুরু করলাম। সব ব্যাটাকে আমার বাঘিনি টাইট দেবে। বেশি খিদে পেলে খেয়েও নিতে পারে। তাই ভেবেচিন্তে বলতে হবে।
সেইদিন রাতেও বউ বেরোল।
.
এখন আমি রোজই বাজার যাই আর গোটা মুরগি নিয়ে আসি। নইলে আমার বউটা দুর্বল হয়ে যাবে যে। বাঘিনির কী আর অল্প খেলে চলে? বউ গোটা মুরগি দেখে খুব খুশি হয়।
আজ বউয়ের জন্য একটা ছাগলের দাম করব নাকি ভাবতে ভাবতে লোকাল কাগজটা দেখলাম।
আবার বাঘের খবর বেরিয়েছে।
.
হেডলাইন : বাঘ রহস্যের পর্দাফাঁস।
.
ফটোগ্রাফারকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক সারা শহর কয়েক রাত ধরে ছানবিন করছিল। কালই আমাদের পাড়ায় বাঘের দেখা পেয়েছে। একটা-দুটো নয়, ন'টা বাঘ ছিল। না বাঘ নয় বাঘিনি।
আসলে এই লকডাউনের কালে কয়েকজন মহিলা মিলে একটা গ্রুপ তৈরি করে তার নাম দিয়েছে বাঘিনি। বাঘছালের মতো ড্রেসও বানিয়ে নিয়েছে সবাই। স্বামীদের কাছে গোপন রেখেছে এই প্রমীলা-বাহিনীর কথা। ওরা একটু বেশি রাতে বাঘছালের চুড়িদার পরে বেরোয়। খাবার নিয়ে বেরিয়ে রাস্তার অভুক্ত কুকুরদের খাওয়ায়। পরে ওদের ইচ্ছে আছে অভুক্ত মানুষদেরকেও খাওয়ানোর।
সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাঘিনি বলেছেন, "যতই গোপন করার চেষ্টা করি গোপন কী আর থাকে! আমার স্বামী বোধহয় বুঝতে পেরে গেছে, মুখে কিছু বলেনি তবে কদিন গোটা গোটা মুরগি এনে দিচ্ছে বাজার থেকে। আমিও মহানন্দে সেটা রান্না করে কুকুরদের খাওয়াচ্ছি। বাকি সবাইও যে যা পারে আনছে। কুকুরগুলো প্রথম প্রথম ভয় পেত, এখন যা খুশি হয় কী বলব...."
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৪৩
গেছো দাদা বলেছেন: "আবোল তাবোল" আমার প্রিয় বই। সুকুমার রায়ের লেখা। ওখানে একটা হাসির কবিতার প্রথম কয়েকটি লাইন তো ক্ল্যাসিক !!
"রাম গড়ুরের ছানা, হাসতে তাদের মানা !!
হাসির কথা শুনলে বলে, হাসবো ? নানা না না !!"
২| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৫
শাহ আজিজ বলেছেন: সন্ধ্যার শুরুটা বেশ রসিয়ে হাসলাম । ভাল লাগলো ।
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৪৪
গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৫
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: খারাপ না গেছো দাদা ।
কয়েকটা বাঘিনী মিলে কিছু সারমেয়কে এই দূর্দিনে খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার মহতি উদ্যোগ নিয়েছে আর আপনি তাতে অংশগ্রহন করতে পেরেছেন ,এই জন্য শুকরিয়া প্রকাশ করুন।
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৪৬
গেছো দাদা বলেছেন: হা হা হা । ধন্যবাদ।
৪| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২১
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুবই চমৎকার একটা লেখা। খুব ভালো লাগল।
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৪৬
গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ।
৫| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:২৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বাঘিনীরা আগেই খাইয়ে কুকুর গুলোকে বস করে
রেখে ছিলো বলেই রক্ষা!! তা না হলে কুকুরের হামলায়
গায়েব হয়ে যাওয়া আপনার বাঘিনীর বিরহে জ্বলতে
হতো আজীবন !!
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৪৮
গেছো দাদা বলেছেন: কুকুরে কি বাঘ খায় ? জানিনা তো.।!
৬| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১৬
নেওয়াজ আলি বলেছেন: পড়ে কিন্তু হাসতে মানা । মজা পেলাম
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৫২
গেছো দাদা বলেছেন: কে আপনাক হাসতে মানা করেছে ? নাম বলেন । সামু মামুকে নালিশ করমু !!
৭| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার বিনোদন।
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৫৩
গেছো দাদা বলেছেন: হুমম।
৮| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:৩৫
অন্তরা রহমান বলেছেন: দারুণ মজা করে লেখা, বেশ হয়েছে।
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৩
গেছো দাদা বলেছেন: হুমমম । ধন্যবাদ।
৯| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:১৬
পদ্মপুকুর বলেছেন: বেশ কুকুরবিক (মানবিক) রম্য মনে হলো...
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৪
গেছো দাদা বলেছেন: বাহ । ভালো বলেছেন।ধন্যবাদ।
১০| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৫৪
শামছুল ইসলাম বলেছেন: এ্ত্তো মজা করে লিখেছেন, যে না হাসবে তার মতো বেরসিক আর নেই।
হাসির রসদের সাথে চিন্তাধারাটাও খুব অভিনব মনে হয়েছে।
১১| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:৪৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হা হা হা
বড্ড বেরসিক সাংবাদিক! ছাগলটা কেনারও সময় দিলো না
বরাবরের মতোই রসময় রম্য
১২| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:২৩
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: যদি লোকাল পেপারে খবর বের হত যে বাঘটি ধরা পড়েছে বা মানুষের পিটুনিতে মারা গেছে সে ক্ষেত্রে আমাদের বৌদির ব্যাপারে আপনার মনে কি আসত এটা কি জানা যাবে?
১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৬
গেছো দাদা বলেছেন: না এটা জানা যাবে না। কারন যদির কথা নদীতে। হা হা হা ।
১৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:১৫
Rajibrpsoft বলেছেন: দাদা আপনি পারেনও ... আপনার মাথায় সারাদিন কি এইসব গিজ গিজ করে ??????
১৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:২৬
আফনান আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: ভালো ছিলো।
১৫| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:১৫
সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: অসাধারন, আমি ভয়ে ভয়ে শেষে গিয়েছি!
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
আবোল তাবোল।