নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হুসেনি ব্রাহ্মণ- ভারতবর্ষের অর্ধ ইসলামী ব্রাহ্মণদের গল্প।।
কথায় আছে "বিপুলা বিশলা এই পৃথিবীর আর কি বা জানি"। সত্যিই সমগ্র পৃথিবী তো দূর তি বাত আমাদের এই উপমহাদেশের কত কিছু আজানা যা জানার পর আমরা নতুন করে ভাবতে বাধ্য হই। আজ এরকমই এক ইতিহাস তুলে ধরবো আর তা হলো হুসেনি ব্রাহ্মণদের ইতিহাস যারা সরাসরি ভারতবর্ষ থেকে গিয়ে কারবালার যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন।
ইসলামের ইতিহাসে কারবালার যুদ্ধ এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।কারবালার প্রান্তরে এই যুদ্ধ মূলত সংগঠিত হয়েছিল ইমাম হুসেন এবং ইয়াজিদের মধ্যে।এই কারবালার যুদ্ধে ভারতবর্ষ থেকে একদল ব্রাহ্মণ ও অংশগ্রহন করেন যা মূলত তৎকালীন সিন্ধ,বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। এরা ছিলেন সেসময় মহিয়াল সম্প্রদায় যা পরবর্তীতে হুসেনি ব্রাহ্মণ হিসেবে পরিচিতি পান।মহিয়াল সম্প্রদায় বালি, ভীমওয়াল, ছিব্বর, দত্ত, লাউ, মোহন এবং বৈদ নামে সাতটি উপ-গোষ্ঠী গঠিত ছিল।এটি মনে করা হয় যে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে যখন কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তখন প্রায় ১৪০০ ব্রাহ্মণ বাগদাদে বসবাস করছিলেন।
মহিয়ালদের মৌখিক ইতিহাস অনুসারে, দত্ত বংশের একজন মহিয়াল কারবালার যুদ্ধে ইমাম আল-হুসেনের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন এবং আরও তাঁর সাত পুত্রকে বলিদান করেছিলেন। কিংবদন্তি অনুসারে, রাহাব সিধ দত্ত (কিছু জায়গায় রহিব সিধ বা সিধ বিয়োগ দত্ত নামেও উল্লেখ করা হয়েছে) ছিলেন কারবালার যুদ্ধের সময় বাগদাদের কাছাকাছি বসবাসকারী ছোট সৈন্যদলের নেতা। তিনি বাগদাদের কাছে দাইর-আল-হিন্দিয়া নামে একটি জায়গায় বাস করতেন।
আজো বাগদাদের কাছে আল-হিন্দিয়া বলে একটি জায়গা আছে যা সে সময়ের উল্লিখিত দাইর আল হিন্দিয়ার সাথে মিলে যায়। যদিও ইতিহাসবিদরা রহিব দত্ত সম্পর্কে কিছু তথ্য নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন, তার চারপাশে কিংবদন্তিরও অভাব নেই।
এছাড়া অন্য একটি লোককথা অনুসারে রহিব দত্ত তাঁর পুত্রদের সাথে কারবালায় ধার্মিক ইমাম হুসেনের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। কেউ কেউ দাবি করেন যে তিনি চন্দ্রগুপ্ত নামের এক রাজার দরবারী ছিলেন যার রাজ্য ছিল সম্ভবত বর্তমানের সিন্ধ।আবার বেশ কয়েকজন গবেষক মনে করেন যে কারবালার যুদ্ধের সময় ইরাকে দুজন ব্রাহ্মণ (তাদের একজন সম্ভবত রাহিব দত্ত) ছিলেন। কিংবদন্তি অনুসারে যখন তারা যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পেরেছিল, তাঁরা এটিকে ভাল এবং মন্দের মধ্যে যুদ্ধ বলে মনে করেছিল।আবার অনেকে মনে করেন মুহম্মদের জীবনদশায় তাঁর সাথে বর্তমানের সিন্ধ,বেলুচিস্তান, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এসব অঞ্চলের রাজাদের সাথে পত্রবিনিময় হয়েছিল যার কারনে কারবালার যুদ্ধে এ অঞ্চলের রাজারা সাহায্য পাঠান।
যাই হোক ঐতিহাসিকরা বলেন রহিব দত্ত মনে করেছিলেন যে এই যুদ্ধটি মূলত রামায়ণ বা মহাভারতের মতো তাই তিনি, তাঁর সাত পুত্রসহ গোটা একটি ব্রাহ্মণের দল হুসেনের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন। হুসেন ও ইয়াজিদের মধ্যে যুদ্ধ একতরফা বলে মনে করা হয়। এটা জানা সত্ত্বেও রহিব দত্ত ও তাঁর ছেলেরা হুসেনের সাথে যোগ দেন।তিনি যখন ইমাম হুসেনের সাথে মিলিত হন তখন ইমাম তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং সুলতান উপাধি দেন। রহিব দত্ত যুদ্ধে বেঁচে গেলেও তাঁর ছেলেরা বেঁচে যাননি।তাঁর সাত পুত্রে মাথা কেটে কারবালার ভূমিতে পুঁতে দেয়া হয়। পরে রহিব দত্ত যখন হুসেনের পরিবারের সদস্যেদের মিলিত হন তখন যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ব্রাহ্মণের দলকে হুসেনের পরিবারের একজন সদস্য হুসেনী ব্রাহ্মণ বলে উপাধি দেন এবং মুহম্মদের চুলও উপহার দেন। কারবালা থেকে ফেরার সময় রাহিব দত্ত তার সাথে নবীর চুল নিয়ে আসেন যা বর্তমানে কাশ্মীরের হজরতবল মসজিদে রাখা আছে।কারবালার যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী এই ব্রাহ্মণের দল পরে ইরাক,আফগানিস্তান এবং বর্তমান পাকিস্তানের অঞ্চলসমূহে হুসেনী ব্রাহ্মণ নামে নতুন পরিচয় বসবাস করতে থাকেন যারা পরে মুহম্মদ ও তাঁর পরবর্তী বংশধরদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন।
সুনীতা জিংগরান যিনি নিজেকে রহিব দত্ত এর বংশধর হিসেবে দাবি করেন তিনি বলেন-
“Rahab Singh Dutt was a warrior who joined the forces of the Imam since he was standing for the righteous”,
T. P. Russell Stracey নামে এক ব্রিটিশ নৃতাত্ত্বিক ১৯১১ সালে ভারতীয় ব্রাহ্মণদের কারবালার যুদ্ধে অংশগ্রহণের ব্যাপারে সম্পূর্ন নিশ্চিত হন। তিনি লিখেছেনঃ
“From the Kavits of the clan, it is evident that the ancestors of the Datts were once in Arabia. They participated in the Karbala War between the descendants and followers of Hazrat Ali and Yazid Sultan, the son of Amir Muaviya. They were friends of Hasan and Hussain, the martyred grandsons of the Prophet, the incidents connected with which furnish the material for the passion play of the Shias at every Muharrum.
When these princes fell, a brave warrior of the Datts named Rahib, resolutely but unsuccessfully defended the survivors. The slaughter of his band, however, compelled him and the small remnant to retire to India through Persia and Kandahar.”
যেহেতু বর্তমান সীমানাগুলোর উপর যুদ্ধের রেখাগুলি পুনরায় নতুন করে আঁকা এবং তৎকালীন সময়ের অনেক পরিপূর্ন মানচিত্রের অভাবের কারনে এবং উপমহাদেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হওয়ায় হুসেনি ব্রাহ্মণদের বসবাসকৃত অনেকগুলো স্থান নির্নয় করা কঠিন। যেগুলো রয়ে গেছে তাও কিছু কিছু করে ক্রমশ মুছে যাচ্ছে স্মৃতি ও ইতিহাসের পাতা থেকে।
হুসেনি ব্রাহ্মণদের বসবাসকৃত এলাকাগুলো একসাথে মোটামুটি জুড়লে দেখতে পাওয়া যায় মানচিত্রটি কারবালার ঐতিহাসিক যুদ্ধের সময় থেকে এবং পরবর্তীতে বালখ, বোখারা, সিন্ধু, কান্দাহার, কাবুল, পাঞ্জাব, ইরাকের কুফায় এবং সপ্তদশ শতকের পরবর্তী সময়কাল থেকে তারা বেশিরভাগকে গুজরাট, সিন্ধু, পাঞ্জাব এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে পাওয়া যেত।
অষ্টাদশ শতকে অনেক হুসেনী দত্ত ব্রাহ্মণ অমৃতসরে তাদের প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, মহারাজা রঞ্জিত সিং-এর সিংহাসন আরোহণের পর তিনি সেখানকার একজন নেতৃস্থানীয় দত্তের স্ত্রী মাই কারমন দাত্তানিকে অমৃতসরের কাটরা ঘানাইয়ানের শাসক নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি তার শাসনকৃত এলায়ার সর্বজনীন স্থানে ন্যায়বিচার প্রদান করতেন। আজো অমৃতসরে মাই কারমুন কি দেওহরি নামে একটি বিশিষ্ট বাজার (কারমন দেওরি নামে স্থানীয়দের মধ্যে পরিচিত) রয়েছে। তাঁকে অমৃতসরের "জোন অফ আর্ক" হিসাবে স্মরণ করা হয়।
হায়দ্রাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মুহম্মদ মুজিব হুসেনি ব্রাহ্মণদের সম্পর্ক লিখেছেন,
“they [Hussaini Brahmins] were not really converts to Islam, but had adopted such Islamic beliefs and practices as were not deemed contrary to the Hindu faith.” Family narratives reveal that the name of Imam Husain was recited during mundans of young Dutt Brahmin boys, and halwa was cooked in the name of bade (Imam Husain) at weddings. Until the Partition in 1947, the Dutts were commonly called Sultans in different parts of the subcontinent.
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় সিন্ধ, বেলুচিস্থান এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ যা বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্গত এসসব অঞ্চলে দত্ত ব্রাহ্মণরা তাদের ছেলেদের জন্মের পর মাথা মুন্ডনের সময় ইমাম হোসেনের নাম আবৃত্তি করতেন এবং ইমাম হোসেনের নামে হালুয়া রান্না করতেন ।প্রতি মহররমে তাদের বাড়িতে বাড়িতে রুটি রান্না করা হতো। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগ পর্যন্ত উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হুসাইনি ব্রাহ্মণ দত্তদের সাধারণত সুলতান বলা হত।
দেশভাগের পূর্বে অমৃতসরে সবচাইতে বড় হুসাইনী ব্রাহ্মণদের তাজিয়া মিছিল বের হতো।এখানে উল্লেখ্য বিষয় এই যে দেশভাগ পূর্ব পাঞ্জাবের অন্যতম তাজিয়া মিছিলের প্রধান অংশীদার ছিলেন দত্ত ব্রাহ্মণরা শহরের মধ্য দিয়ে তাজিয়াগুলিকে কাঁধে করে এগিয়ে নিয়ে যেতেন এমনকি শিয়াদের সাথে মিলে " ইয়া হুসাইন, ইয়া হুসাইন বলে বিলাপ করতেন।
দেশভাগ পূর্ব হুসাইনি ব্রাহ্মণদের তাজিয়া মিছিল সম্পর্কে The Wall এ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার ননিকা দত্ত। উনি নিজেও একজন হুসাইনি ব্রাহ্মণ। তিনি বলেন
"১৯৪২ সালে, ডাঃ গোলাম নবী নামে অমৃতসরের একজন বিশিষ্ট শিয়া দন্তচিকিৎসক ছিলেন তিনি ফরিদ চকের কাটরা শের সিং-এ আমার দাদার বাড়ির কাছে থাকতেন। তিনি ছিলেন স্থানীয় শিয়া সম্প্রদায়ের নেতা এবং আমার দাদার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি প্রতি মহররমের দিন বলতেন, “দত্ত সাব, হামলোগ ইনতেজার কর রেহি হু। আপ কান্ধা দোগে ট্যাব তাজিয়া উথেঙ্গে।”
আজমীরে বসবাসরত ব্রাহ্মণরাও তাজিয়া মিছিল নিয়ে বের হতেন। তখন তাদের স্লোগান ছিলঃ
'Wah Dutt Sultan, Hindu ka dharm, Mussalman ka iman’; and ‘Dutt Sultan na Hindu na Mussalman”
১৯৪৪-৪৫এর দিক ছিল ইমাম হুসেনের জন্য রহিব দত্তের পুত্রদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করার অন্তিম মুহূর্ত।কারন দেশভাগ এই সম্প্রদায়ের ভাগ্যের কফিনে পেরেক ঠুকে দেয় কারণ তারা পাঞ্জাবের উভয় দিকে অনেকটা পরিত্যক্ত ছিল। পাকিস্তান পাঞ্জাবে, তাদের অমুসলিম হিসাবে দেখা হত, ভারতীয় পাঞ্জাবে তাদের আধা মুসলিম বলে মনে করা হত এবং ব্রাহ্মণ সমাজ থেকে এক প্রকার বিতাড়িত করা হয়েছিল। অমৃতসরের ফরিদ চকের কাটরা শের সিং-এ ব্রহ্ম নাথ দত্ত কাসিরের বাড়িতে ১৯৪৭ সালে হিন্দু ধর্মান্ধ দলগুলি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়৷ যে ফরিদ চকে
একদা হিন্দু মুসলিম সসংস্কৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল ১৯৪৭ তা যেন শ্মশান হয়ে যায়৷ সীমান্ত শহর হিসেবে অমৃতসরের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ ছিল এবং সে শহরে তার সবচেয়ে বড় শিকার হন হুসাইনি দত্ত ব্রাহ্মণরা । আক্রমনাত্মক ধর্মীয় পরিচয়ের রাজনীতি তাদের সাংস্কৃতিক জগতকে সম্পূর্ন ছিন্নভিন্ন করে দেয়।
আব্বাস মাহমুদ নামে লখনৌ থেকে আগত এক শিয়া
৫০ এর দশক থেকে এখানে আছেন।তিনি India times কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন-
“ Now there is no procession. Muharram is confined to the four walls of the Imambara), The grand shared tradition of Muharram in
Amritsar was destroyed by successive wars: 1947, 1965, 1971. Partition didn’t end in 1947. the Shia mosque in Farid Chowk had been razed to the ground in 1948-49. Almost all the imambaras, over a hundred in number, were taken over (kabza) or dismantled. "
আব্বাস আরো বলেন -
“Although the government took over the Karbala maidan, until recently the most prominent route for the Muharram procession was via the famous Sikri Banda Bazar to the present Imambara; taziya and alam would be brought there with much passion. But Bajrang Dal stopped it. Sunnis also didn’t support us. Now there is no procession: Ab ham darwaze diware band karke matam karte hain (Now we perform the mourning ceremony by shutting the doors and walls).”
মুহরমমের দিন হুসেনি ব্রাহ্মণরা এক ধরনের ভজন গায় যা 'কারবালার ভজন' নামেও পরিচিত৷
তবে এতো ধ্বংসলীলার মাঝে আজো অমৃতসর, আজমীর এ থাকা হুসাইনি ব্রাহ্মণদের মধ্যে মুহররমের দিন এ ভজন শোনা যায়।
ভজনটির ইংরেজি ও হিন্দি অংশ নিচে তুলে দিচ্ছিঃ
“Laryo Datt [Dutt] dal khet ji tin lok shaka parhyo
Charhyo Datt dal gah ji Garh Kufa ja luttyo.”
(The Datt warrior alone fought bravely in the field,
and plundered the fort of Kufa.)
“Baje bhir ko chot fateh maidan jo pai
Badla liya Husain, dhan dhan kare lukai.”
(When they won the field, the drum was beaten;
Husain was avenged and the people shouted “bravo”, “bravo”.)
“Baje bhir ko chot fateh maidan jo pai
Badla liya Husain, dhan dhan kare lukai.”
(When they won the field, the drum was beaten;
Husain was avenged and the people shouted “bravo”, “bravo”.)
“Rahib ki jo jadd nasal Husain jo ai
Diye sat farzand bhai qabul kamai.”
(The seven sons of Rahib (Datt) throwing in their lot With the faithful few on hapless Husain’s side, Died as Datts fighting, deeming their death But friendship’s welcome sacrifice.)
Finally:
“Jo Husain ki jadd hai Datt nam sab dhiyayo,
Arab shahr ke bich men Rahib takht bathayo.”
(Off-spring of Husain! forget not thy father’s friend Rahib, once enthroned in Arabia’s city ere thy father’s end. Wherefore the name of Datt recite In thy prayers to Allah, at morn and night.)
অপরদিকে পাকিস্তানে থাকা হুসেনি ব্রাহ্মণদের ও শোচনীয় পরিনতি বরন করতে হয়।অনেক জায়গা থেকে তাদেরকে অমুসলিম তকমা দিয়ে বিতাড়িত করা হয়।একসময় লাহোরে ছিল হাজারখানেক হুসেনী ব্রাহ্মণ পরিবারের বাস। আজ হয়তো খুঁজলে সেখানে আর দশটি হুসেনী ব্রাহ্মণ পরিবার আর পাওয়া যাবে না। সিন্ধ,পশ্চিম পাঞ্জাব,শিয়ালকোট,উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ,গিলগিট -বাল্টিস্থান থেকে হুসেনি ব্রাহ্মণরা ব্যাপকহারে ভারতে চলে আসেন। পরে তাঁরা পুরো উত্তর ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে উত্তর প্রদেশের রামপুর, সাহারানপুর, বাদাউন,ফৈজাবাদ, দিল্লি, মালেরকোটলা,জলন্ধর,পাতিয়ালা,জম্মু, লখনৌ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েন। উত্তর প্রদেশে এখনো উর্দুভাষী ব্রাহ্মণরা রয়েছেন যারা মুহম্মদের জন্মদিন (ঈদ এ মিলাদুন্নবী) পালন করেন। বিহারের মুজাফফরপুর জেলার ভূমিহার ব্রাহ্মণদের একটি সম্প্রদায়ও হুসাইনি ব্রাহ্মণ বলে নিজেদের দাবি করে এবং প্রতি বছর মহরমে অংশ নেয়।
আজমীরে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর দরগায় হুসেনি ব্রাহ্মণদের দেখা যায় যারা প্রায়ই গেয়ে ওঠেন -
"Wah Datt Sultan, Hindu ka dharm, Musalman ka Iman, Adha Hindu adha Musalman."
উত্তর প্রদেশের কল্যানপুর ও পুরনো দিল্লির হুসেনী ব্রাহ্মণরা প্রতিবছর মহররমের দিন আলাদা তাজিয়া মিছিল নিয়ে বের হন।
আরেকটা উল্লেখ্য বিষয় পালাইয়া জামা মসজিদ যা তামিলনাড়ুতে অবস্থিত বিশ্বের পঞ্চম প্রাচীন মসজিদ যা ৬২৮-৬৩০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত। এটি প্রথমে মুসলিম বণিকদের দ্বারা নির্মিত হলেও পঞ্চ-দ্রাবিড় ব্রাহ্মণ যারা দক্ষিনী হুসেনী ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত পরে তারা বর্তমান রুপ দান করেন।সারা বছর এ মসজিদটি দেখতে অসংখ্য মুসলিম পর্যটক তামিলনাড়ুর পালাইয়া তে যান।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয় সঞ্জয় দত্তের পিতা সুনীল দত্ত মারা যাবার সময় বলেছিলেনঃ
“For Lahore, like my elders, I will shed every drop of blood and give any donation asked for, just as my ancestors did when they laid down their lives at Karbala for Hazrat Imam Husain.”
তবে বর্তমানের হুসেনী ব্রাহ্মণ গোষ্ঠী যাদের পূর্বপুরুষরা ইমাম হোসেনের জন্য তাদের সাত পুত্রকে উৎসর্গ করেছেন, তাদের অনেকেই তাদের হুসেনী ব্রাহ্মণ পরিচয় বর্জন করেছেন এবং নিজেদেরকে "ব্রাহ্মণ" হিসেবে উপস্থাপন করতে শুরু করেছেন। এর পেছনে মূল কারন হলো তারা পাকিস্তান, আফগানিস্থান থেকে বিতাড়িত হয়ে এসেছেন এবং ভারতবর্ষে আসার পরে ও অনেক জায়গাতে তাদেরকে অস্পৃশ্য ব্রাহ্মণ হিসেবে মনে করা হয়।এমনকি প্রায় বলতে গেলে তাদের সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে।
তবে দিনশেষে হুসেইনি ব্রাহ্মণরা যারা পৃথিবীর দুটো বৃহৎ সম্প্রদায়ের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করছেন তা সকলের সামনে তুলে ধরা অত্যাবশ্যক।
* কৃতজ্ঞতা স্বীকার : আল-হাসান
তথ্যসূত্রঃ
১/ The Forgotten History of Hussaini Brahmins and Muharram in Amritsar, September 30, 2019, The Wire.
২/ Hussaini Brahmins: The Hindus who fought for Imam Hussain in war of Karbala, October 24, 2015, India.com.
৩/ The Brahmins who fought for Hussain at Karbala, September 10, 2019, The Rahnuma Daily.
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৫৮
গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকুন।
২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:২৬
সোনাগাজী বলেছেন:
এদেরকে বিজিপিতে নেয়া যায় না? এদের পাছায় হনুমানের লেজ লাগায়ে দেন।
২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:৪১
গেছো দাদা বলেছেন: কেন ?
আপনি একটা ভালো মাথার ডাক্তার দেখান।
৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:২৭
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
এই বিষয়টা প্রথম জানলাম।
ভালো লাগলো।
২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:৪২
গেছো দাদা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৫৭
অক্পটে বলেছেন: শিয়াদের ব্যপারে জানতাম মোটামুটি। তবে এই সম্প্রদায়ের পরিচয় পেলাম আপনার মাধ্যমে। খুব ইনটারেস্টিং। আসলে ধর্ম পরিচয়ের কারণে মানুষের মানবিক পরিচয় যখন অপমানিত হয় তখন খুব কষ্ট লাগে। ধর্ম আগে না মানুষ আগে। চমৎকার পোষ্ট!
৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৪৩
সোবুজ বলেছেন: অনেক আগে একবার কোথায় যেন পড়েছিলাম।এখন মনে পড়ছে না তবে পড়েছিলাম।
৬| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:১৬
কালো যাদুকর বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। এতকিছু জানতাম না।
৭| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:২৫
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সম্পুর্ন নতুন একটা বিষয় জানলাম।
৮| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৪২
নাজিম সৌরভ বলেছেন: আপনার লেখা থেকে নতুন জিনিস জানলাম। অনেক ধন্যবাদ।
৯| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:২১
জ্যাকেল বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা। উনাদের ব্যাপারটা পুরাটাই আন্ধারে ছিলাম।
১০| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ২:৫২
জটিল ভাই বলেছেন:
জটিল তথ্যের জন্যে জটিলবাদ।
১১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৩:৩৩
আল আমিন হাসান সাদেক বলেছেন: মালদ্বীপ । পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য । দুরবীন বাংলা । Maldives । DURBEEN BANGLA
১২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: রম্য লেখা কি বাদ দিয়ে দিলেন?
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৪১
মলাসইলমুইনা বলেছেন: দাদা,
আপনার লেখাটা ইন্টারেস্টিং । এই বিষয়টা কখনো জানতাম না । ভালো থাকুন ।