নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ছোট থেকে দারিদ্রেের মধ্যে মানুষ হয়েছি। বাবা'র ছোট্ট দোকান, মা হাউজওয়াইফ। ভাড়া বাড়িতে থাকতাম, একটা সাইকেল কিনে দিতে বাবা'র ৬ মাস টাকা জমাতে হয়েছিল। বাবা নিজে ফাটা চটি পরে আমায় জুতো কিনে দিয়েছে, নিজে ছেঁড়া জামায় গোটা পুজো কাটিয়ে আমায় নতুন জিন্স আর শার্ট কিনে দিয়েছে...
তবে হ্যাঁ, আমার বাবা'র মদ খাওয়ার একটা বদভ্যেস ছিল, আর সেটা আমি খারাপও বলবো না। কারণ সংসারের এত চাপে হয়ত ওই মদ খেয়েই একটু শান্তি খুঁজত লোকটা। কিন্তু দিনদিন মদের নেশা বেড়েই চলেছিল। মা কাঁদত চুপচাপ, কিন্তু আমি কিছু করতে পারতাম না!
তাই আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম যে আমায় ভালোভাবে পড়াশুনো করে বড় হয়ে পরিবারের হাল ফেরাতে হবে।
পড়াশুনোয় বিশাল কিছু করতে না পারলেও এখন আমি মোটামুটি একটা চাকরি করি। মাইনে যা পাই, তাতে মা'কে ভালো শাড়ি, সোনার গয়না, বাবা'কে দামী জুতো, একটা স্মার্টফোন কিনে দিতে পেরেছি।
সপ্তাহে একদিন মাংস খেতে পারি, ৬ মাসে একবার বাবা-মা'কে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারি... আর হ্যাঁ, বাবা'র মদের নেশাটাও অনেকটাই ছাড়াতে পেরেছি। এখন আর খায় না বললেই চলে...
এতদিন আমার মাথায় শুধু এই চিন্তাই ঘুরতো যে কীভাবে টাকা কামানো যায়, কীভাবে পরিবারকে একটু ভালো রাখা যায়। আর সেটা আমি করেও ফেললাম... মা বেশ হাসিখুশি থাকে। রান্না বান্না, সেলাই, বাংলা সিরিয়াল দেখে খুশি।
বাবাও দোকানে বসে, আড্ডা মারে, স্মার্টফোন পেয়ে সেটায় সারাদিন খুটুর খুটুর করে। স্মার্টফোনের কিছু বোঝে না হয়ত কিন্তু যেটুকু পারে, ওই নিয়েই ভীষণ খুশি!
এই সব হয়ে যাওয়ার পর আমার একটু নিজের দিকে খেয়াল পড়ে, মেয়েদের প্রতি একটু আকর্ষণ জন্মায়। এতদিন এ'সব ভাবার সুযোগই পাই নি, কিন্তু সব ঠিকঠাক ভাবে চলতে থাকায় এখন বেশ মনে হয় যে যদি কেউ থাকতো...!
তাই কিছু মেয়ের সাথে কথা বলতে শুরু করি। অফিসে, ফেসবুকে, ইনস্টাগ্রামে... আর ফেসবুকে এক মেয়ের সাথে ভালো আলাপও হয় আমার। দিনের পর দিন কথা হতে থাকে! অফিসে বসে, রাতে খাওয়ার পর, ছুটির দিন সারাদিন ধরে...
ওর আর আমার পছন্দও খুব মেলে। সুক্তো থেকে শুরু করে শাহরুখ খান, ইস্টবেঙ্গল থেকে শুরু করে ইলিশ মাছ, রোনাল্ডো থেকে শুরু করে রাবড়ি, মানে প্রায় সব কিছুতেই দেখি আমাদের পছন্দ মিলে যাচ্ছে!
ওকে দেখতেও দারুণ। দেখেই মনে হয় যেন কোনও মডেল! আমি তো খুব খুশি। আর তাছাড়া ও নিজেও বলেছে যে ওর-ও আমায় পছন্দ। আর আমায় পায় কে... একা একা হাসি, অফিসে বস'কে কিউট লাগে, কোলবালিশে যেন ওর গন্ধ পাই...
তবে হ্যাঁ, ওর সাথে আমার দেখাটা হয় নি... ও আসলে ব্যাঙ্গালোরে থাকে। তাই সঙ্গে সঙ্গে দেখা হওয়াটা সম্ভব না। তবে আমরা ঠিক করেছিলাম যে ও কলকাতা এলেই দেখা হবে। আর আমরা ঠিক করেছিলাম যে ভিডিও বা ভয়েস কল-ও ততদিন করবো না। নম্বরও নেবো না! সব হবে ও আসার পর! আসলে এটা ওরই আইডিয়া ছিল। এরকম হলে নাকি একটা এক্সাইটমেন্ট থাকে। আমারও প্ল্যানটা ভালোই লাগল, তাই রাজি হয়ে যাই।
যাই হোক, হঠাৎ করে একদিন শুনি যে ওর ২০০০ টাকার খুব দরকার। স্যালারির কোনও প্রব্লেম হয়েছে, আর বাড়িওয়ালা'কে টাকা দিতেই হবে। ২০০০ টাকা শর্ট পড়েছে। অন্য একটা অচেনা জায়গায় বিপদে পড়েছে মেয়েটা! আমি ওর গুগল পে নম্বরটা নিয়ে জোর করে টাকাটা পাঠালাম। ও খুব খুশি হল। আমায় অনেক বার করে থ্যাঙ্কিউ বলল।
আবার আমরা কথা বলছি আগের মতোই। আবার মোটামুটি দেড় মাস পরে ও বলল যে ওর ১৫০০ টাকা লাগবে। ও আমাকেই বলেছে নিরুপায় হয়ে। আমি আবার পাঠালাম। ১৫০০ টাকা আর কী এমন! আমার সেভিংসে যথেষ্ট আছে।
এর ২০ দিন বাদে আমার কাছে ৫০০০ টাকা চাইল! ও নাকি হসপিটালে! আমি সাথে সাথে পাঠালাম! কিন্তু আমার কেমন যেন একটা লাগল!
তারপর প্রায়ই ও আমার থেকে টাকা চাইতে লাগল। কখনও ৫০০, কখনও ১০০০, কখনও ১৫০০... একবার আমি না করায় আমার সাথে এক বেলা কথাই বলল না! আমিও বাধ্য হয়ে টাকাটা পাঠালাম। কারণ ওকে আমি ভালোবেসে ফেলেছিলাম...
কিন্তু এরকম চলতে দেওয়া যায় না। ওর সাথে কথা বলে ব্যাপারটার একটা সমাধান করা দরকার। আমিও বা কত টাকা দেবো! টাকা কামাই তো আমি বাড়ির জন্য! মায়ের জন্য, বাবার জন্য! সেটা ভুলে গেলে চলবে না।
তাই আমি এক রবিবার দেখে ওকে ভয়েস কল করলাম মেসেঞ্জারে... ধরল না। আবার করলাম, ধরল না। মেজাজটা বিগড়ে গেল পুরো। তার মিধ্যে মা দশ বার করে খেতে ডাকছে... মা'কে একবার ঝাঁঝিয়ে বললাম, "যাচ্ছি তো। দাঁড়াও না একটু।"
বলে খারাপ লাগল! একটা মেয়ের জন্য মায়ের সাথে এরকম আচরণ করছি আমি! আমি গেলাম ওই ঘরে খেতে। "বাবা কই?", আমি জিজ্ঞাসা করলাম মা'কে।
মা বলল, "তোর বাবার পেটটা খারাপ। অনেকক্ষণ ধরে বাথরুমে। তুই খেয়ে নে।"
আমি খেতে খেতেই আবার মেসেঞ্জারে কল করলাম। আর সঙ্গে সঙ্গে দেখি মেসেঞ্জারে ফোন করলে যে রিংটোনটা বাজে ওটা বাজছে! আমি আমার ফোন চেক করলাম। না তো, ঠিকই আছে।
আমি কেটে আবার করলাম। আবার সেই রিংটোন!
আমি খাওয়া দাওয়া ফেলে এবার রিংটোনের আওয়াজটা ফলো করলাম... শব্দ ফলো করে গিয়ে পৌঁছলাম বাবার প্যান্টের সামনে!
আমার হাত পা কাঁপছে! মাথা বনবন করে ঘুরছে। শরীর কেমন দুর্বল লাগছে!
পকেট থেকে বাবা'কে গিফট করা সেই স্মার্টফোনটা বের করলাম আমি, যেটা নিয়ে বাবা সারাদিন খুটুর খুটুর করে! আবার কল করলাম সেই মেয়েটার মেসেঞ্জারে। দেখি বাবার মোবাইলে আমার নাম দিয়ে কল আসছে!
ফোনটা আমার হাত থেকে পড়ে গেল। আমার, বাবার, দু'টো ফোনই!
মানে আমার নিজের বাবা ফেসবুকে ফেক প্রোফাইল বানিয়ে মেয়ে সেজে এতদিন ধরে আমার সাথে মিথ্যে কথা বলে, প্রেমের নাটক করে টাকা হাতিয়ে গেছে? যে বাবা'র জন্য আমি চাকরি শুরু করলাম, সেই বাবা স্ক্যামার? তাও আবার নিজের ছেলের টাকাই স্ক্যাম করল? আমার কাঁদতে ইচ্ছে করছিল, সে'দিন খেলাম না কিছু।
বাবা'কে ধরলাম পরের দিন। বাবা প্রথমে একটু হালকা অপরাধবোধ দেখিয়ে পরে আমার উপরেই চোটপাট শুরু করল! আমি মদের টাকা দিতাম না বলে নাকি এই ভাবে টাকা নিতে হয়েছে। গুগল পে'র নম্বরটা কোন এক মদের দোকানের মালিকের, আর সেখানে বাবার খাতা চলে!
সে'দিন আমি চারটে জিনিস বুঝলাম।
এক, আমার বাবা মদ খাওয়া ছাড়ে নি।
দুই, আমার বাবা আমার চেয়েও বড় ঢ্যামনা।
তিন, আমার বাবা যথেষ্ট ভালোভাবে স্মার্টফোন চালাতে পারে।
চার, আমার দ্বারা মেয়ে পটানো সম্ভব নয়।
(আমার এক কাল্পনিক বন্ধুর বয়ানে লেখা)
২| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:৩১
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এগুলিকে রম্য বলে গিলাতে চাচ্ছেন কেন?
৩| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৩৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এরকম ঘটনা আনেক শুনেছি,
আপন ভাই বোনের প্রেম হয় ফেস বুকের
মাধ্যমে। দাদা রম্য বেশ হয়েছে
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১:৩৭
কামাল৮০ বলেছেন: একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে।আরেকটু যৌক্তিক হলে ভালো হতো।