নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার যেমন ইচ্ছে লেখার খাতা

আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত আপনাকে মানসিক ভাবে নির্যাতন করার জন্য। কারন আমার লেখা পড়ে আপনি বিরক্ত হতেই পারেন।। আরেকটু বিরক্ত হতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন আমার ওয়েবসাইট http://ishuvo.rocks থেকে

জিএম শুভ

আমার যেমন ইচ্ছে লেখার খাতা

জিএম শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ক্ষনিকা!

২৬ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:৪৬

তখনও সূর্যের দেখা মেলেনি...আমি দাঁড়িয়ে আছি বৃষ্টি ভেজা মফস্বলটার বাস স্ট্যান্ডে, ফার্স্ট ট্রিপে ঢাকা যাওয়ার জন্যে...মাত্রই গতকাল পুরো আধ-শহরটাকে ভিজিয়ে দিয়ে গেছে বৃষ্টি...আর তাই কাদার অত্যাচারটা একটু বেড়েই গেছে।

সেই অত্যাচারী কাদার অত্যাচার সহ্য করেই একটা মেয়ে এগিয়ে আসছে বাস স্ট্যান্ডে... সম্ভবত বয়সে আমার চেয়ে বড়ই হবে মেয়েটা... ফর্সা মেয়েটা সালোয়ার-কামিজ পড়ে আছে...রঙ সাদা-কালো...তবে ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট হলেও মেয়েটার মধ্যে একটা অন্যরকম উজ্জ্বলতা আছে, যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না...হাতে দুটো ব্যাগ নিয়ে কাদার মধ্য দিয়ে সাবধানে এগুচ্ছে মেয়েটা...কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হলো না...একটা পা তার ফ্লাট জুতো নিয়ে কাদার মধ্যে ডুবে গেল...মেয়েটা সীমাহীন বিরক্তি নিয়ে এমনভাবে মুখটা বাকাল যে, কাদার যদি জীবন থাকত তবে কাদাও হয়তো ক্রাশ খেয়ে বসত...আর আমি তো রক্তে মাংসে গড়া মানুষই!

বিড়বিড় করে কাদার চৌদ্দগোষ্ঠী কে উদ্ধার করতে করতেই মেয়েটা আমার সামনে এসে দাড়াল...এতোক্ষনে চোখে পড়ল মেয়েটার কপালের কালো টিপ টা...আর টিপের নিচেই কাজল দেওয়া দুটো চোখ...কেউ একজন বলেছিল যে, "কাজল ছাড়া একটা মেয়ে চিনি ছাড়া চায়ের মতোই...অসম্পূর্ন!" কথাটা আর অবিশ্বাস হচ্ছে না মেয়েটাকে দেখার পর!

- এই ভাইয়া, তুমি একটু হেল্প করো!

বলেই একটা ব্যাগ আমার হাতে ধরিয়ে দিল...পাশেই যাত্রীর জন্যে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটার দিকে এগুতে এগুতে জানলাম মেয়েটা বিবিএ করছে...এখন ফিফথ সেমিস্টারে!!

বাসে ব্যাগগুলো রাখার পর আমি ভাল দেখে একটা সিট খুজছিলাম, মেয়েটা যে সিটে বসেছে তার পেছনে...তা দেখে মেয়েটা আমাকে ডাক দিয়ে বলল,

- এই, তুমি তো আমার ছোট ভাইয়ের মতোই...পাশেই বসো আমার!

নাহ, এবার আর ভালো লাগল না...হাজার হউক সুন্দরীরা "ভাইয়া" বললে এমনিতেই কলিজা ফেটে যায় আর "ছোট ভাই" বললে তো হৃদপিন্ড আর রক্ত পাম্প করতেই চায় না!

যাই হউক, তবুও ওর পাশেই বসলাম...আর যাই হউক, সুন্দরী বলে কথা...যদিও এটা আত্মসংযমের মাস!!

বাস ছেড়ে দিল...মাইলখানেক যাওয়ার পর মেয়েটার মনে পড়ল যে, মেয়েটার পায়ে এখনো কাদা লেগে আছে...অবশ্য বড্ড দেরী হয়ে গেছে, কারন এখন আর কিছুই করার নেই...ঢাকা পর্যন্ত এই কাদা-মাখা পা নিয়েই যেতে হবে....!

- তুমি রোযা আছো?
- হ্যা, আপনি?
- নাহ, আমাদের তো রোযা থাকতে হয় না...মাঝে মাঝে উপবাস করা লাগে...
- ওহ, আপনি.....
- হ্যা! তো, রোযা থাকতে কষ্ট হয়?
- খুব বেশি একটা না...তবে আশে-পাশে আপনার মতো সুন্দরী থাকলে আত্মসংযমে একটু সমস্যা হয়ে যায় আরকি!

মেয়েটা হেসে উঠল...এমনিতেই আমি মেয়েটার জালে জড়িয়ে যাচ্ছি...তারমধ্যে তার "একটু" হাসি আমাকে তার জালে আরেকটু জড়িয়ে ফেলল!

- আচ্ছা, রোযা রাখার সময় হালকা কোন খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা রাখলে ভাল হতো...তাই না?
- কেনো, খাই তো!
- তাই নাকি? কি খাও?
- এইতো ক্রাশ-ট্রাশ!

মেয়েটা এবার আওয়াজ করেই হেসে উঠল...হাসতেই হাসতেই ব্যাগ হাতড়ে হেডফোন বের করে কানে গুজে দিল...আর আমি মনযোগ দিলাম ফেসবুকের নিউজফীডে...বাধ্য হয়ে!

মেয়েটা গান শুনছে আর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে...আর আমি তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে...তবে আড় চোখে...নীল কানের দুল ঝুলছে মেয়েটার কানে...কপালের টিপ,কাজল আর তার উড়ন্ত চুলগুলো মেয়েটার মধ্যে অন্যরকম এবং অসাধারন একটা সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করেছে...যার মধ্যে আমি এই মূহুর্তে ডুবে আছি!

তবে মেয়েটার কাদা-মাখা ডান পায়ের একদম বিচ্ছিরি অবস্থা...তবে এই বিচ্ছিরি পায়ের ক্ষমতা নেই তার সৌন্দর্য্যে এতোটুকু ছেদ ফেলার...সো, জাস্ট ইগনোর!

মেয়েটার সাথে আর খুব বেশি একটা কথা হলো না...মাঝখানে মেয়েটা একবার ঘুমিয়েও পড়ল...মেয়েটার ঘুম ভাঙ্গল যখন দু-চারটে বৃষ্টির ফোটা মেয়েটাকে ছুয়ে দিল...

- বৃষ্টি পছন্দ করেন??
- আমি হুমায়ুন আহমেদের বিশাল ফ্যান!
- হাহা, মাথায় তো ভালই বুদ্ধি নিয়ে ঘুরেন।
- কিছুটা!
- ওহ, আচ্ছা...আপনার নামটা কি?
- সেজুতি রায়।
-ওয়াও!
-ওয়াও কেনো?
- নামটা সুন্দর!

কিছুক্ষন পর বাসটা একটা পেট্রল পাম্পে থামল। একটু নেমে হাঁটাহাঁটি করা দরকার...মেয়েটা নামবে না...আমি নামার জন্যে পা বাড়ানোর সাথে সাথেই সেজুতি ডাক দিল।

- দাঁড়াও!

আমি দাড়ালাম...ও হাত দিয়ে চুল গুলো পেছনে নিয়ে বাধছে...আর আমি হা করে তাকিয়ে আছি...তার কালো চুল, চুলে হাত বোলানো, পেছন দিকে চুলগুলো টেনে নেওয়া যেন আমাকে নিয়ে যাচ্ছে ভাল লাগার কোন অদ্ভুত আবেগীয় স্তরে...যেখানে আমি খুব কমই ঘুরেছি!

কিন্তু খুব বেশীক্ষন স্থায়ী হলো না সেই স্তরে ঘুরাঘুরি, কারন মেয়েটার বড্ড তাড়াহুড়ো...আর না হয় এতো দ্রুত কেউ চুল বাধে, একটু স্লো মোশনে বাধলে কি হয়?

সেজুতি আমার হাতে একটা একশো টাকার নোট দিয়ে একটা জুস,চিপস আর কয়েকটা ম্যাংগো বার এনে দিতে রিকোয়েস্ট করল।

জিনিষগুলো এনে ওর হাতে দিয়ে একটু হেসে বললাম,

-সেজুতি, তোমার জন্যে!
- বাহ, আনিসুল হকের বইও পড়ো তুমি?
- এইতো মাঝে মাঝে!

তারপর আর কথা হচ্ছে না ওর সাথে...মাঝখানে একবার ভুলে চিপস অফার করেছে। ঘন্টাখানেক পর যাত্রাবাড়ী পৌছার পর সেজুতি জিজ্ঞেশ করল এখানেই নামব কিনা...আমি সায় দিলাম!

যাত্রাবাড়ী মোড়ে নামার পর দেখি সেজুতির জন্যে একটা হ্যাংলা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে...ওকে দেখেই সেজুতি দিকে এগিয়ে গেল...আর আমি পেছনে দাঁড়িয়ে...সেজুতি গিয়ে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরল...আমি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে!

আর তা দেখে আমার অবস্থা শোচনীয় প্রায়...যদিও আমি সেজুতিকে নিয়ে কোন লম্বা স্বপ্ন দেখি নাই...তবুও...একটু খারাপ লাগছে...কারন...নাহ, কারনও জানি না! তবে এতোটুকু মনে হচ্ছে কেউ আমার উপর একটা ওভারলোডেড ট্রাক চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে!

সেজুতি এবার আমার দিকে ফিরল...ছেলেটাকে নিয়ে এগিয়ে আসল...

- আমার দাদা...ঢাকাতেই থাকে।

কথাটা শুনেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম...আসলে সুন্দরীরা সিঙ্গেল হলে কেনো যেনো সব ছেলেদেরই একটু ভাল লাগে...না থাকুক প্রেম করার চান্স তবুও ভাল লাগে...কেনো লাগে তা জানি না, সম্ভবত এটা ভেবে যে আমার দূর্ভাগ্যের বিপরীতে অন্তত তার বয়ফ্রেন্ড হওয়ার সৌভাগ্য কারোর হয় নি এই পৃথিবীতে! যাই হউক,ওভারলোডেড ট্রাকটা এখন আর আমার উপর চলছে না, এখন ওভারলোডেড কিউটনেসের মালিককেই শেষ বারের মতো দেখছি আমি! যদিও জানি মনে লাড্ডু ফুটে লাভ নেই, তবু কেনো যেনো বার বার মনে লাড্ডু ফুটতেছে...আহা!

যাই হউক, আমার কাছ থেকে সেজুতি বিদায় নেওয়ার সময় সিঙ্গেল কিনা তা সিউর হওয়ার জন্যে জিজ্ঞেশ করলাম,

- সিঙ্গেল?
- হুম, কেনো??
- নাহ, শুনতে ভাল লাগে যে, সেজুতির মতো সুন্দরী সিঙ্গেল এখনো!

শেষবারের মতো আমার দিকে তাকিয়ে হাসল ও...তারপর দাদার হাত ধরে মৃদু পায়ে হাঁটতে শুরু করল সেজুতি...

হাঁটছে সেজুতি....তার সাদাকালো ওড়নার একটা পাশ আর চুলগুলো উড়ছে বাতাসে...ধীরে ধীরে ভীরের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া সেজুতি সামনে তাকিয়ে...আর আমি তাকিয়ে ওর দিকে...হয়তো আর কখনো দেখা হবে না ওর সাথে...তবুও ক্ষনিকের জন্যে পরিচিত হওয়া এই ক্ষনিকা আমার মনে দাগ কেটে থাকবে অনেক দিন...পরের বেশ কিছু বাস জার্নি হয়তো মনে করিয়ে দিবে ওকে...একটা সময় হয়তো অন্য কোন ক্ষনিকার উপস্থিতি এই ক্ষনিকার কথা ভুলিয়ে দিবে...তবুও, আমি তো বাঁচি আজকের জন্যেই...আজকের এই ক্ষনিকা না হয় শুধু আমার আজকের দিনটা জুড়েই থাকুক!

ও, হ্যা! তার পায়ের কি অবস্থা...ওহহো, এখনো পায়ের মধ্যে কাদা লেগে আছে...তবে শুকিয়ে গেছে...কিছুটা বিচ্ছিরি লাগছে... তবে এই বিচ্ছিরি পায়ের কোনো ক্ষমতা নেই তার সৌন্দর্য্যে এতোটুকু ছেদ ফেলার...সো, এবারও ইগনোর করলাম!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৫০

মোঃ হৃদয় শেখ বলেছেন: ;)

২| ২৭ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৩৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: ;) ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.