| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গোলাম মহিউদ্দিন নসু
মনের কথা- সত্য কথা- বাস্তবতা- গবেষণা- সমস্যা- সম্ভাবনা- ইতিহাস- ঐতিহ্য- স্থাপত্য- ফোক কালচার সহ ইত্যাদি বিষয়ে সাংবাদিকতার দৃষ্টিতে লেখা-লিখি।
গোলাম মহিউদ্দিন নসু,বেগমগঞ্জ(নোয়াখালী)
স্বাধীনতার ৪৭ বছরে আজো নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের সামনে কবর দেয়া দুই মুক্তিযোদ্ধার কবর সংরক্ষনে সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহ্রন করেনি। পরিবারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে আর্থিক সংকটের কারনে এবং সরকারী সহায়তার অভাবে এখনো কবরগুলো অরক্ষিত রয়ে গেছে।
শহীদ তাজুলের বিধবা স্ত্রী আজিমা খাতুন(৭৩)র সাথে আলাপ করতেই কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন-“আমার ছোট মেয়ে রোকেয়া আছিল গর্ভে।কোলে ছিল আলেয়া। আরো ছোট তিন শিশু বাচ্চাকে এতিম করছে পাকিস্তানীরা। আমি হইছি বিধবা। যুদ্ধশুরুর কয়েকদিন পর আমার স্বামী, লগে অন্য দুই ভাইয়েরেও ধরি লইগেলো। একমাস পরে জানলাম উনারে মারি বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা কালা পুলের উত্তরে পালাই রাখছিলো। এলাকার লোকজন রাস্তার পাশে মাটি ছাপা দিছে। সেই থেকে জানি এটা আমার স্বামী তাজুল ও ভাসুর মোস্তফার কবর। মাঝে মধ্যে আই। কবর দেখি যাই। আমার ছেলেরা ইট দিয়ে ঘিরা দিয়ে রাখছ্ েকিন্ত সরকার কোন ব্যবস্থা না করাতে মাইন্সে(মানুষ) ভাঙ্গি হালাইতো চায়। কবরটি সরকারী ভাবে দেখা শুনা করা আর আঁর এতিম ছেলোগো লাই সরকার যদি কোন ব্যবস্থা করে- এটা আমার মরনের আগের আশা। আমার স্বামীর কোন সম্পদ আছিল না। বাচ্চাদের বাচানোর জন্য আমার বোনের জ্মাাই মনির মেম্বর ফেনীর ছাগল নাইয়া এতিম খানায় দিয়া দিছিলো। সে থেকে অভাব অনটনের মধ্যে আজো বাঁিচ আছি, আমরা আপনাদের সহযোগীতা চাই।”
নোয়াখালী কাদির হানিফ ইউনিয়নের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের স্ত্রী অজিমা খাতুন(৭৩) কান্না জড়িত কন্ঠে বড় ছেলে বুদ্ধি আলম,ছোট মেয়ে রোকেয়া বেগম, মুক্তিযোদ্ধা আরজু মিয়ার মেয়ে হামিদা বেগমমের সামনে এ সব কথা বলেন।
পারিবার ও সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, শহীদ তাজুলের কবরে তারই সহদর ভাই মোস্তফাকেও এখানে দাফন করা হয়েছিল। কবর দু’টি সরকারীভাবে সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতে তাজুলের বড় ছেলে বুদ্ধি আলম(৫৫) ৬/৮/১৫ তারিখে মুক্তি যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে আবেদন করে। মন্ত্রী ঔদিনেই কবরটি সংরক্ষনের ব্যবস্থা নিতে নোয়াখালী জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসক বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরজমিন তদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ পূর্বক ৩০/১২/১৫ তারিখে নোয়াখালীর এলজিআরডির নির্বাহী প্রকোশলীকে কবর দু’টি সংস্কার ও মেরামত করে নতুন সাইনবোর্ড দেয়ার জন্য চিঠি প্রেরন করে। কিন্ত নির্বাহী প্রকৌশলী কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ১৯/১/১৬ তারিখে চিঠি দিয়ে জেলা প্রশাসককে সাফ জানিয়ে দেয়, এ সংক্রান্ত কাজের জন্য এলজিআরইডি বিভাগে কোন বরাদ্ধ নেই।
অযতেœ থাকা দুই মুক্তিযোদ্ধার কবরের সম¥ান রক্ষার ব্যবস্থার আশায় গুড়েবালি। উপেক্ষিত হলো মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর নির্দেশ।
পরিবারের চেষ্টায় পরবর্তীতে কবরগুলো সংরক্ষনের ব্যবস্থা নিতে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ১৪ ফেব্রয়ারী-১৬ স্বারক নং-৬০ মোতাবেক জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে নির্দেশ ক্রমে অনুরোধ করা হলেও কোন ্উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। ১৬ ই ফেব্রয়ারী উপজেলা মুক্তিযোদ্দা কমান্ডার াাবুল হোসেন বাঙ্গালী, যুদ্ধকালীন বিএলএফ বেগমগঞ্জ ডিপুটি কমান্ডার অবদুল মান্নানসহ প্রমূখ মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি উপজেলা উন্নয়ন সভায় উপস্থাপন করলে ইউএনও রেজাউল করিম ৭দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি।
সরকারী বিভাগের এমন অসহযোগীতামূলক আচরনে শহীদ তাজুলের পরিবার হতবাক। তাজুলের বিধবা স্ত্রী ৭৩ বয়োষর্দ্ধো আজিমা খাতুনের সাথে আলাপ চারিতায় আরো জানা যায়,তার স্বামী একজন কৃষিজীবি ছিলেন। একই সময়ে তিনি নোয়াখালী জেলাধীন আনচার বাহীনির সদস্য ছিলেন। মুক্তি যুদ্ধ শুরু থেকেই পিটিআই স্কুলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। তার অপর দুই ভাই মোস্তফা মিয়া ,আবুল খায়েরও মুক্তিযুদ্ধেযোগ দেয়।প্রথম ফেনীতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাড়ীতে আসেন। এলাকার রাজাকাররা খবর পেয়ে গভীর রাতে তাজুলরা তিনভাইকে ধরে নিয়ে যায়। বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাাল স্কুলে পাকিস্তানী আর্মি ক্যাম্পে নির্মম নির্যাতন করে এবং কালা পোলের কাছে গুলি করে । তাজুল ও মোস্তফা ঘটনাস্থলে মারা যায়্। সৌভাগ্যক্রমে তাদের বড় ভাই খায়ের মিয়া গুলি বিদ্ধ অবস্থায় বেঁচে যায়। মিরওয়ারিশপুর ইউনিয়নের ভোলাওয়াশ্বা নুরনবীর বাড়ীতে এক মাসের বেশী সময় চিকিৎসাধীন ছিলেন। সে গ্রামের দলু জমাদার বাড়ীর মুক্তিযোদ্ধা আরজু মিয়ার মেয়ে হামিদা বেগম(৫৮) জানান, তারই বাবাসহ তাজুল ও মোস্তফাকে কালা পুলের উত্তরে প্রধান সড়কের পূর্ব পাশে( বর্তমান নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের সামনে) মাটি চাপা দিয়েছে বলে- মায়ের কাছে কথাটি বলতে শুনেছেন।
স্থানীয় শহীদ ছালেহ আহাম্মদ স্মৃতি সংসদের সাধারন সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ওরপে নেতা বাবুল বলেন, একই কবরে সমাহিত দুই মুক্তিযোদ্ধার কবরটি দীর্ঘদিন থেকে অবহেলার শিকার। অনতি বিলম্বে সরকারীভাবে কবরটি সংরক্ষন করে মুক্তি যোদ্ধার মর্যাদা নিশ্চিত করা হোক।
উল্লেখ্য,গত ১৫.১১.১৫ তারিখে বেগমগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ফেরদাউস আলম সরকার শহীদ তাজুল ও মোস্তার কবর সরজমিন তদন্ত কালে বেগমগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কামন্ডার আবুল হোসেন বাঙ্গালী, ডিপুটি কমান্ডার আবদুল মালেক, বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন কমান্ডর মহিউদ্দিন,আমানউল্যাপুর ইউনিয়ন কমান্ডার আবুল বসারসহ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। # 
©somewhere in net ltd.