নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কুকরা

একজন সতর্ক কুকরা।

কুকরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭ নভেম্বর বিপ্লব দিবস! কার বিপ্লব?

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০২

বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সাল ঘটনাবহুল বছর। নানা কারনে ৭ নভেম্বর ইতিহাসের একটি যুগান্তকারী তারিখ। কিন্তু কি ঘটেছিল সেদিন?



১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর দেশ চলছিল নতুন উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে। কিন্তু ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর ডেপুটি চীফ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ তার অনুসারী সেনাসদস্যদের নিয়ে পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান। সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে গৃহবন্দী করেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ। স্বঘোষিত পদোন্নতি নিয়ে মেজর জেনারেল হয়ে খালেদ সেনাপ্রধানের পদ দখল করেন। খালেদ বঙ্গভবনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদকে গ্রেফতার করেন, মন্ত্রিসভা বাতিল করেন, জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দেন। একই দিনে তিনি প্রধান বিচারপতি আবু সা’দাত মোহাম্মদ সায়েমকে দেশের রাষ্ট্রপতি পদে বসান। সকলেই বুঝতে পারেন ভারতের সার্বিক সমর্থনে শেখ মুজিবের অনুসারীদের ক্ষমতাসীন করতেই ছিল ঐ অভ্যুত্থান। এভাবে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা ও ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কেটে যায় চারটি দিন। এরপর ৬ নভেম্বর গভীর রাতে সেনাবাহিনীর অন্যান্য সিপাহীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরদিন ৭ নভেম্বর সকালে সিপাহী বিপ্লবের সমর্থনে দেশের সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসেন। সিপাহি-জনতার মিলিত সেই বিপ্লবে বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত হন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। ঐদিন সৈনিক ও জনতা সম্মিলিতভাবে নেমে আসেন ঢাকার রাস্তায়, ছড়িয়ে পড়েন সারা দেশে। সৃষ্টি হয় অভূতপূর্ব এক সংহতির। ৭ নভেম্বর সিপাহী বিল্পব সফল না হলে দেশ ভারতীয় দালালদের দখলে চলে যেত, যার ফলে বাংলাদেশ সার্বভৌমত্ব হারাত।





৭ নভেম্বর সম্পর্কে জানতে হলে একটু অতীতে ফিরে যেতে হবে। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসনের অবসান হয় দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে। মুসলমানরা পায় পাকিস্তান, আর হিন্দুরা ভারত। পাকিস্তান রাষ্ট্রে ১২০০ মাইল দূরের পশ্চিমারা শুরু করলো আমাদের উপর শোষন শাসন। আমাদের চা-পাট বিক্রির টাকায় উন্নয়ন হয় পিন্ডিতে। অপরদিকে সামরিক শাসনের নিগড় চলতে থাকে। আবার শুরু হয় আন্দোলন সংগ্রাম- এবার স্বায়ত্বশাসনের জন্য। সত্তরের নির্বাচনে মওলানা ভাসনীর বয়কটের ফলশ্রুতিতে পূর্বপাকিস্তানে একক সংখ্যাগরিষ্টতা পায় আওয়ামীলীগ। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর করতে রাজী হয় না জেনারেল ইয়াহিয়া, নিরিহ জনতার উপর গুলি চালিয়ে হত্যা করে হাজার হাজার বাঙ্গালি। শুরু হলো যুদ্ধ – স্বাধীনতা যুদ্ধ। একটা দল প্রচার করে ওটা মুক্তিযুদ্ধ ! কিসের মুক্তি, কার মুক্তি? জনগন চেয়েছিল স্বাধীনতা- বাংলাদেশ। কিন্তু এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী চানক্যরা শুরু করে কঠিন খেলা। আওয়ামীলীগের অনুরোধে ভারত যুদ্ধে সাহায্য করতে রাজী হয় বটে, তবে তার জন্য শর্ত মানতে হবে। সাত দফা চুক্তি সই করলেন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও ভারতের কর্মকর্তারা। ওই চুক্তিতে ছিল: ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী যুদ্ধ করবে, কিন্তু কমান্ড থাকবে ভারতের হতে; পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হওয়ার পরে যতদিন ইচ্ছা ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে থাকবে; বাংলাদেশের কোনো নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকবে না, কেবল একটা প্যারা মিলিশিয়া থাকবে; বাংলাদেশে ভারতীয় অফিসাররা প্রশাসক হতে পারবে; বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হবে ভারতের পরিপুরক; বর্ডারে ভারত-বাংলাদেশ খোলা বাজার চালাবে। ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পাই বটে, কিণ্তু চক্রান্ত চলতে থাকে বৃহৎ প্রতিবেশীর। ভারত বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর পরিবর্তে ভারতীয় সেনা কমান্ডারের নিকট পাক বাহিনীর আত্মসমর্পন করিয়ে ভারত পাকিস্তানের উপর তাদের বিজয়কে প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হয়, বাংলাদেশ সেখা গৌণ মাত্র।



দেশ স্বাধীন হবার পরে শেখ মুজিবের সময় ৭-দফা চুক্তি মোতাবেক চালানোর চেষ্টা করে ভারত। কিন্তু কিন্তু মেজর জলিলের মত কিছু স্বাধীনচেতা সেক্টর কমান্ডোরের প্রতিবাদের মুখে পড়ে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। ইন্দিরা-মুজিব সমঝোতায় ভারতীয় সৈন্য ফেরত নিতে হয়, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বিলুপ্তি থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু পরাধীনতার বহিপ্রকাশে ৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়া এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ভারত থেকে আগে অনুমোদন করিয়ে আনতে হয়; শেখ মুজিবকে ওআইসি সম্মেলনে যেতে বাধা দেয় সাউথ ব্লক; ৭ দিনের জন্য ফারাক্কা বাধ চালানোর কথা বলে আর কখনো বন্ধ করেনি ভারত। এভাবেই ভারতীয় আনুগত্য ও দাসত্বের টানাপেড়েনের মধ্য দিয়ে চলে দেশ। শুরু হয় জাসদ ও সর্বহারার নতুন সংগ্রাম। মুজিবের রক্ষীবাহিনীর হাতে নিহত হয় ৩০ হাজার যুবক। দলবাজি, লুটপাট ও অব্যবস্থাপনায় চুহাত্তরের দুর্ভিক্ষে মারা যায় কয়েক লাখ মানুষ। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে মুজিব জারী করেন জরুরী অবস্থা। দেশের অবস্থা পর্যবেক্ষনে মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসাররা বিভিন্ন সেনানিবাসে গঠন করে ‘সেনা পরিষদ।’ ২৫ জানুয়ারী ১৯৭৫ মজিবের খামখেয়ালিতে সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় সরকার ’বাকশাল’ চালু করা হয়, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হরন করা হয়। ১৫ আগষ্ট মুজিবকে আজীবনের রাষ্ট্রপতি ঘোষনা করা হবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। জাতীয় জীবনের এমনি এক চরম দুর্দিনে আওয়ামীলীগের বর্ষিয়ান নেতা ও ‍মুজিব কেবিনেটের বানিজ্য মন্ত্রী খোন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে সেনা পরিষদের তরুন সেনা অফিসাররা ১৫ আগষ্ট মধ্যরাতে ঘটায় ঐতিহাসিক বিপ্লব- সপরিবারে নিহত হন মুজিব। রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন খোন্দকার মোশতাক। জেনারেল জিয়াউর রহমানকে নিয়োগ করা হয় সেনাপ্রধান।





কি ঘটেছিল ৭ নভেম্বর?



১৫ আগষ্টের ঘটনায় ভারত ক্ষুব্ধ হয় এবং পাল্টা কিছু করার জন্য সচেষ্ট থাকে। আড়াই মাস পরে ২ নভেম্বর ডেপুটি চীফ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে দিয়ে পাল্টা ক্যু ঘটায়। বন্দী করা হয় জেনারেল জিয়াকে। খোন্দকার মোশতাককে অপসারন করে খালেদ রাষ্ট্রপতি করেন বিচারপতি সায়েমকে। খালেদ মোশারফের সেনা অভ্যুত্থানের খবর পেয়ে ৩ তারিখে ভারতের পররাষ্ট্র দফতরে মিষ্টিমুখ করানো হয়। ২ থেকে ৬ নভেম্বর ঘটে যায় অনেক ঘটনা। ২ তারিখ রাতে জেলখানায় নিহত হন আওয়ামীলীগের চার বর্ষিয়ান নেতা তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, ও কামরুজ্জামান। ৩ তারিখে ঢাকা সেনানিবাসে খালেদ মোশাররফের পদাতিক বাহিনী এবং বঙ্গভবন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফারুক রশীদের ট্যাংক বাহিনী মুখোমখি অবস্থান করে, খালেদের সমর্থনে আকাশে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার ও মিগ উড়ে, কিন্তু কোনো সংঘর্ষ হয় নি। খালেদের সাথে সমঝোতা করে আগষ্ট বিপ্লবের সাথে জড়িত রশিদ, ফারুক, ডালিম সহ ১৯ জন সেনা কর্মকর্তা দেশত্যাগ করেন। খালেদ মোশারফের মা ও ভাই রাশেদ মোশারফ রাজপথে মিছিল করে। জনগন বুঝতে পারে, ভারতীয় তাবেদার বাহিনী ক্ষমতায় আসছে। এমনকি খবর রটে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে ঢুকে গেছে। এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে বন্দী সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করার জন্য ৪ নভেম্বর থেকে সাধারন সৈনিকরা প্রস্তুতি নিতে থাকে। কর্নেল তাহেরের বিপ্লবী সংস্থার শ’খানেক সদস্য যোগ দেয় সৈনিকদের সাথে। সেনানিবাসে লিফলেট ছাড়ানো হয়।





৬ নভেম্বর রাত ১২ টার পরে ঢাকা সেনানিবাসের উত্তর দিক থেকে শুরু হয় খালেদের বিরুদ্ধে সেনা বিদ্রোহ। ‍এটা ছিল ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কাউন্টার ক্যু। গান ফায়ারের মধ্য দিয়ে সেনা বিদ্রোহ এগিয়ে চলে। টু ফিল্ডের সৈনিকরা জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করে ইউনিটে নিয়ে যায়। কর্নেল তাহেরের গণবাহিনীর হাতে ঐ রাতে নিহত হন ১২ জন সেনা কর্মকর্তা। পুরো ক্যান্টনমেন্ট তখন শ্লোগান “সিপাহি সিপাহি ভাই ভাই।” সোবাহিনীর কমান্ড কন্ট্রোল ভেঙ্গে পড়ে। বঙ্গভবন থেকে খালেদ মোশাররফ পালিয়ে যান তার বিশ্বস্ত কর্নেল নওয়াজিশের ১০ম বেঙ্গলে। কিন্ত সকাল বেলায় ক্ষুব্ধ সৈনিকরা খালেদ ও তার তিন সহযোগিকে হত্যা করে। এভাবেই ব্যর্থ হয় ভারতপন্থী অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা। সৈনিকরা বিশ্বাস করত, খালেদ মোশাররফ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট হারিয়ে যাওয়া বাকশালকে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার একটি প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।





৭ নভেম্বর রাজধানীতে প্রভাতে ঘটে এক অভুতপূর্ব ঘটনা। ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনারা বেরিয়ে আসে সাঁজোয়া যান ও ট্যাংক নিয়ে। অপরদিকে চার দিন ধরে বন্দী লাখ লাখ জনতা বাধ ভাঙ্গা জোয়ারে নেমে আসে রাস্তায়। তারা সৈনিকদের সাথে মিশে যায়। ট্যাংকের ওপর উঠে সারা শহর প্রদক্ষিন করে আর গগন বিদারী শ্লোগান কাপিয়ে তোলে- সিপাী-জনতা ভাই ভাই। ৭ নভেম্বর সকালে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা শুরু করেন। অতি দ্রুত নিজের অনুগামী সৈনিকদের ওপরেও শৃঙ্খলা বলবৎ করেন। ঢাকা নগরের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সারাদিন সৈনিকদের সঙ্গে মিলেমিশে মিছিল ও সমাবেশ করেন, যার অন্যতম দাবি ছিল দেশ বাঁচাও, সেনাবাহিনী বাঁচাও, ভারতপন্থীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও। বিপ্লবের চূড়ান্ত পর্যায়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী হিসেবে আবির্ভূত হন জনতা ও সেনাদের সম্মিলিত নেতা জেনারেল জিয়াউর রহমান। ৭ নভেম্বর এবং জেনারেল জিয়াউর রহমান অবিচ্ছেদ্য। তাই দেশে যখনই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত আসে, তখনই উঠে আসে ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের গাঁথা যেখানে জনতা ও সৈনিক এক হয়ে লড়াই করে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.