নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গৃহকোণের বাউন্ডুলে

গৃহন্ডুলে

যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের -মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা... বুঝিনা, তারপরও ভাল লাগে জীবনানন্দকেই ..............হয়তো বুঝিনা বলেই!

গৃহন্ডুলে › বিস্তারিত পোস্টঃ

Making of শাড়ি @ আমাদের বাড়ি। বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:০২



‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া.....' তাই চিন্তা করলাম যে নিজের এলাকার ঐতিহ্য টোইতিজ্য নিয়া কিছু লেখা দরকার। কি নিয়া লেখা যায় ভাবতে ভাবতে, সেই ছোটকাল থেকে যে জিনিস দেইখাঁ আসতেছি, যে জিনিসের খটর খট, খটর খট শব্দ শুইনা বড় হইছি, সেই জিনিসটাই মাথায় আইলো। আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়, থানা বেলকুচি। এহন মনে হয় বুইঝা গেছেন আমি কিসের কথা কইতেছি, হুম, তাঁতের কথা। বেশি খাটাখাটনি করবার মন ধরলো না, তাই গতবছর বাড়িতে গিয়া তোলা হাবিজাবি ছবি যা পাইলাম হেইডাই খানিক জোরা তালি মাইরা পোষ্ট কইরা দিলাম। বাড়িতে আগে হ্যান্ডলুমের (হস্তচালিত তাঁত) সংখ্যা বেশি আছিল, এহন বেশির ভাগই পাওয়ালুম (বিদ্যুৎ চালিত)। পুরা এলাকাতেই একই অবস্থা। ছবি গুলা তুলছিলাম মোবাইলের ক্যামেরায়, রেজুলেশন বেশি ভালো হয় নাই। আর ছবি গুলান ব্লগে দেয়ার জন্য তোলা হইছিলোনা, তাই পুরা প্রসেসটা দেয়া গেল না।







(ববিন থেকে ড্রামে সুতা পেচানো হচ্ছে। উপরের ছবিটার এগুলোকে বলা হয় 'ববিন', নিচের ছবিটায় 'ড্রাম'। ড্রাম যিনি চালান তাকে বলা হয় 'ড্রাম মাস্টার'। আমরা ফাইজল্যামি কইরা কই 'ডি এম' ছার! প্রথমে স্বয়ংক্রীয় মেশিনের সাহায্যে ববিনে সুতা পেচানো হয়, তারপর ববিন থেকে ড্রামে। তারপর ড্রাম থেকে খুলে রোল করা হয়, রোলটাকে বলে 'তেনা'। তারপর সেই তেনাকে তাঁত বা পাওয়ার লুমে বসানো হয়)



বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে তাঁত শিল্পের ভূমিকা অপরিসীম। হস্ত চালিত তাঁতে বছরে প্রায় ৭০ কোটি মিটার বস্ত্র উৎপাদিত হয় যা অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৪০ ভাগ মিটিয়ে থাকে। এ শিল্প থেকে মূল্য সংযোজন করের পরিমাণ প্রায় ১৫০০.০০ কোটি টাকা।







(এই রোলটাই হলো 'তেনা'। তেনা দিয়ে শাড়ির লম্বালম্বি বুননের কাজটা করা হয়। একেকটা তেনা থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ১০ থেকে ২০ টি শাড়ি তৈরি হয়)

বাংলাদেশের হস্তচালিত তাঁত শিল্প এদেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প। সরকার কর্তৃক সম্পাদিত তাঁত শুমারী ২০০৩ অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ৫ লক্ষাধিক হস্তচালিত তাঁত রয়েছে তন্মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলাতে রয়েছে ১ লক্ষ ৩৫ হাজারের অধিক। মহিলাদের অংশগ্রহণ সহ গ্রামীণ কর্মসংস্থানের দিক থেকে এর স্থান কৃষির পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম। দেশের প্রায় ১৫ লক্ষ লোক পেশার ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ শিল্পের সাথে জড়িত।





(এটাকে বলে মাকু, মাকু দি্যে শাড়ির আড়াআড়ি বুননের কাজটা করা হয়, মাকুর ভিতরে সোনালী রঙের যেটা দেখছেন সেটাকে বলে ছিটা বা নলি। মাকু নলীকে নিয়ে একবার এদিক আরেকবার ওদিক যাওয়া আসা করে। এভাবেই কাপরের বুনন হয়। ববিনের মতই ছিটা বা নলিতে সুতা পেচানো হয়। এই কাজটা বাড়ির ভিতরে স্বয়ংক্রিয় মেশিনের সাহয্যে মহিলা শ্রমিকেরা করে। গ্রামে তাঁদের বলা হয় 'জোগাইলা')

সিরাজগঞ্জ দেশের অন্যতম তাঁত অধ্যূষিত এলাকা। এ জেলা তাঁত বস্ত্র উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত সুপরিচিত। সিরাজগঞ্জ জেলার সাথে তাঁতের নাম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। সিরাজগঞ্জ জেলায় তাঁতী পরিবারের সংখ্যা মোট ১৪,৮৭০ এবং তাঁত সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজারের অধিক।















(পাওয়ারলুম চালাচ্ছে তাঁতিরা, প্রতিজন একসাথে দুটো করে পাওয়ার লুম চালায়, তবে হ্যান্ডলুমের ক্ষেত্রে একটা তাঁত একজন তাঁতিই চালায়)

প্রতিবছর এ জেলায় হস্ত চালিত তাঁত থেকে প্রায় ২৩ কোটি মিটার বস্ত্র উৎপাদিত হয়ে থাকে। এছাড়া এ শিল্প সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় ৩ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সিরাজগঞ্জ জেলার তাঁতীরা শাড়ী, লুঙ্গি, গামছা, থান কাপড়, থ্রি পিচ, গ্রামীণ চেক সহ বিভিন্ন প্রকার বস্ত্র উৎপাদন করে থাকে।









(শাড়ি বাজারজাত করার আগে ইস্ত্রি করা হচ্ছে)

দেশের অন্যান্য জেলার মতো সিরাজগঞ্জ জেলার তাঁত শিল্পে নিয়োজিত অধিকাংশ লোক পল্লী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করে। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনের প্রচলিত ব্যবস্থা এখনও অত্যন্ত অসংগঠিত।





(শাড়ির ডিজাইন পেপার, যারা এই ডিজাইন অনুসারে কাজ করে তাঁদের বলা হয় 'জাকার্ড মাস্টার')





(রং করার পর সুতা রোদে শুকোতে দেয়া হয়েছে। এই সুতাই ববিন আর নলীতে পেচানো হয়)



জেলার কয়েকটি হাটে তাঁতীদের উৎপাদিত বস্ত্র বিক্রি হয়ে থাকে যার মধ্যে সোহাগপুর হাট, শাহাপুর হাট, এনায়েতপুর হাট ও সিরাজগঞ্জ নিউমার্কেট হাট উল্লেখযোগ্য । বিদ্যমান বিপণন ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্ত্বভোগী মহাজন, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তাঁতীদের নিকট থেকে বস্ত্র ক্রয় করে।



মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪২

রোড সাইড হিরো বলেছেন: আমি শাহাজাদপুরে (সিরাজগন্জ) থাকি। অনেক দিন ধরে চিন্তা করছিলাম এরকম একটা পোস্ট দিবো, কিন্তু দিতে পারছিলাম না তাত সম্পর্কে ডিটেইলস ধারণা না থাকার কারণে। আজ আপনি তা করে দিলেন, সুন্দর লিখেছেন +++

বর্তমানে ভারতে অনেক রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের তাতবোনা এই কাপড়...

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪০

গৃহন্ডুলে বলেছেন: ধন্যবাদ। ভার্চুয়াল ভূবনে নিজের এলাকার কাউকে পেলে ভাল লাগে!

২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৪৪

সাদা রং- বলেছেন: ভাই খুব ভালো লাগলো, ইচ্ছা আছে স্বচোখে একবার এসব কারুকাজ দেখার। এমন পোষ্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪১

গৃহন্ডুলে বলেছেন: কখনও বেলকুচি এলে জানাবেন। পোষ্ট ভাল লাগায় ধন্যবাদ!

৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫১

আসফি আজাদ বলেছেন: +++
বেলকুচি gesi.

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪৩

গৃহন্ডুলে বলেছেন: কবে? বেলকুচির কোথায়? অসিত হালাইয়ের মিষ্টি আর দৈ খাইছেন নি? পোষ্ট ভাল লাগায় ভাল লাগা!

৪| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৮

মদন বলেছেন: প্রিয়তে..

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪৫

গৃহন্ডুলে বলেছেন: ধন্যবাদ!

৫| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২০

মোঃ আবদুল হাই বলেছেন: খুব ভাল লাগল। এমন একটি বিষয় নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। প্লাস।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪৬

গৃহন্ডুলে বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য! :)

৬| ০২ রা মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:১৩

নুরুন নেসা বেগম বলেছেন: বেলকুচি গিয়েছি। কাজ দেখে অসাধারণ লেগেছে। তবে শাড়ীর পাড়ের ডিজাইন যেটা ওপরে থাকে বলে জেনেছি সেটা এখনো রহস্যময়। মিষ্টি ও খুব মজার। খেয়েছি, এনে বিলি্য়েছি। সুন্দর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ ও + ।

০৩ রা মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:১৯

গৃহন্ডুলে বলেছেন: বেলকুচির মিষ্টি এবং পোষ্ট ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ! বেলকুচির কোন গ্রামে গিয়েছিলেন, বলা যায় কি?

৭| ২২ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৩০

নুরুন নেসা বেগম বলেছেন: দলবেঁধে যাওয়ায় গ্রামের নাম জানা হয় নি। তবে বেশি ভেতরে যাইনি। ধন্যবাদ

৮| ১৪ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:৪৫

zaki642 বলেছেন: আমার বাড়ি বেলকুচির তামাইতে। আমাদের ফ্যাক্টরিতে অনেক আগে (১৯৯৪-৯৫) শাড়ি তৈরি হত। কিন্তু, ঝামেলার কারণে পরে বানানো হয় নাই। তামাইতে মূলত লুঙ্গি তৈরি হয়। আমানত শাহ্‌ লুঙ্গি সহ পাকিজা, শাহী, বেক্সি, এটিএম, ফজর আলী, ডিসেন্ট, ক্রিসেন্ট, অনুসন্ধান ওদের প্রায় সব লুঙ্গি তামাই থেকে সংগ্রহ করে থাকে। আপনাদের ওদিকে কী অবস্থা? কোন্‌ কোন্‌ ব্র্যান্ড আপনাদের কাছ থেকে শাড়ি সংগ্রহ করে? মিরপুর বেনারসী পল্লীতে কী পরিমান শাড়ী আপনাদের এলাকা থেকে আসে?

আমাদের প্রতিষ্ঠানের লিঙ্কঃ
http://www.PopularFabricsBD.com

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.