নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাব আসে; ছন্দ আসে না

হাবীব কাইউম

পোস্ট পড়িবার পূর্বে হাবীব কাইউমের ১ নম্বর ব্লগ দেখিয়া লইবেন

হাবীব কাইউম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রেহাম খান, অধ্যায়-৩, পার্ট-১

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৬:৪৪



‘বিয়ে করবো? আমি? কখনো না!’
আমি মানেই হচ্ছে বিয়ে করবো না। পরবর্তীতে মিডিয়ায় অনেক কিছুই লেখা হবে : আমি কী রকম একজন পরোক্ষ সম্মতি দানকারিণী, নিজের উদ্দেশ্য সাধনকারিণী মহিলা ছিলাম। মানুষ বলবে আমার সব কিছুই ছিলো পরিকল্পিত এবং সুদূর অভিপ্রায়প্রসূত। সত্যি কথা হচ্ছে বাস্তব জীবনে আমার বেলায় যা ঘটেছে সবই ছিলো দুর্ঘটনাবশত।
আমি বাড়িতে একা ছিলাম। আমার বাবা তখন তার ক্লিনিক থেকে আমাকে ডাকলেন। বললেন অ্যাবোটাবাদে তার ভাগ্নের বিয়েতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে। পরিবারের বাকি সবাই কয়েক দিন আগেই চলে গেছে। বাবা আর আমি রয়ে গেলাম। কারণ তার শরীরটা ভালো যাচ্ছিলো না। যে ফুফাতো ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে, আমি তাকে খুব পছন্দ করতাম না। তারা আমাদের পরিবারের এমন এক অংশ ছিলো, যাদের সাথে কেউ খুব বেশি মিশতো না। এর পিছনে কারণ ছিলো তার বাবার ভয়ানক খ্যাতি। আমি বিশেষ করে এই ফুফাতো ভাইটাকে অপছন্দ করতাম আমার বান্ধবীদের ব্যাপারে তার ধৃষ্টতা এবং অতি উৎসাহের কারণে। আমি খুব ধর্ম অনুসরণে মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম এবং নারী-পুরুষের মিশ্র অনুষ্ঠানগুলো এড়িয়ে চলতাম। আমি মাথাও ঢাকতে শুরু করে দিয়েছিলাম। আমি ফোনে কাতর কণ্ঠে বললাম, ‘বাবা, বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার মতো আমার কোনো পোশাক নেই। আমাদের কি যেতেই হবে?’
বাবা তার বোনকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি স্পষ্টতই একটা আবেগী চাপের মধ্যে ছিলেন। বোন তাকে বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার জন্য প্ররোচিত করছিলেন। আমি অনীহার সাথে গোসল করতে গেলাম। টেইলারের কাছ থেকে আমার পোশাক নিয়ে আসার জন্য ড্রাইভারকে বললাম। আমরা যাত্রা শুরু করলাম। সেলাই করতে গিয়ে টেইলার কিছু ভুল করেছে। কিন্তু আমি বাবার অনুরোধ ফিরাতে পারলাম না। এটা একটা স্বীকৃত সত্য ছিলো : আমাকে কোনো কিছু করার জন্য বেশি জোরাজুরি করলে বিরক্ত হয়ে আমি কোনো চেষ্টাই চালাবো না।
আমরা যখন বরের বাড়িতে পৌঁছি, তখনো আমার চুল ভিজা। হালকা একটা খোঁপা করে আমি সেগুলো বেঁধে রেখেছি। আমার চেহারায় রুষ্টতার ছাপ। ঢোকার সাথে সাথে একটা বেডরুম থেকে একটা হ্যাংলা-পাতলা লোক বেরিয়ে এলো। বাড়িটাতে ছোট চারটা বেডরুম। লোকটার পরনে ধূসর স্যুট, হাতে কালো মোজা। এর আগে আমি কখনো তাকে দেখিনি। আমি জানতে চাইলাম ফুফু কোথায়? সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে বিচলিতভাবে আমার বড় বোনের নাম ধরে ডেকে উঠলো, ‘সুইটি?’
সে ভালো করেই জানে সুইটি দেখতে কেমন। আগের রাতের বিয়ের অনুষ্ঠানের যে পর্ব গেছে, সেখানে সুইটি ছিলো। এই লোকেরও শৈশবের বেশির সময় সুইটির কাছেই ছিলো। তার নির্বুদ্ধিতায় ক্ষিপ্ত না হয়ে আমি জবাব দিলাম, ‘না, আমি রেহাম।’ তার পিছন থেকে ফুফুকে দেখা গেলো। ফুফুকে বললাম প্রস্তুতির জন্য একটা জায়গা দরকার। তিনি সরাসরি বললেন, ‘না, এ বাড়িতে তেমন কোনো জায়গা হবে না।’ আমি ‘ঠিক আছে’ বলে আমার কাজিন জাহিদ ভাইয়ের বাড়ির দিকে পা চালালাম। তার হুকুম পাওয়ামাত্র কাজের লোকেরা আমাদের জন্য গেস্ট রুম খুলে দিলো। নবদম্পতিকে বরণের সময় সেই হ্যাংলা লোকটা তার সেই বিচলিত ভাব নিয়ে মেয়েদের পাশে এসে উঁকিঝুঁকি মারতে লাগলো। সে বরের বড় ভাই, এখনো বিয়ে করেনি। বরের সাথে তার বয়সের ফারাক অনেক।
সেই সন্ধ্যায়ই বরের ড্রইং রুমে আমরা সব কাজিন বসে গান গাইছিলাম। বড় ফুপির ছেলে-মেয়েদের সাথে আমার সব সময়ই ঘনিষ্ঠতা ছিলো। ওদের সাথে মিলে আমি ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত গাইলাম। এখানেও হ্যাংলা লোকটা ঘুরঘুর করছিলো। সে আমাদের সাথে যোগ দেয়নি, কিন্তু রুমের এক কোনা থেকে আমাদের সবাইকে দেখছিলো। জানা গেলো সম্প্রতি সে মানসিক রোগের ডাক্তার হিশাবে উত্তীর্ণ হয়েছে। সবাই তার কাছে যাচ্ছিলো হতাশা, নিদ্রাহীনতা, উদ্বেগ ইত্যাদি সহ তাদের যে কোনো সমস্যা সম্পর্কে জানতে। আমি দেখলাম মেডিকেল টার্মগুলো মনে করতে তাকে বেশ কোশেশ করতে হচ্ছে। অনেকবার চেষ্টা করেও সে যখন এক ধরনের ফোবিয়ার নাম মনে করতে পারলো না, আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। ফোড়ন কেটে বললাম, ‘এটাকে বলে অ্যাগ্রোফোবিয়া।’ সে আমার দিকে তাকালো। বুঝা গেলো সে বেশ মুগ্ধ। প্রশ্ন করলো, আমি কীভাবে জানি। আমি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললাম, আমি সাইকোলোজি পড়ছি। এবার সে জবাব দিলো, ‘কিন্তু মানুষ এখনো এ রোগটার ভুল নাম বলে। তারা এটাকে ক্লস্ট্রোফোবিয়া বলে।’
আমি উঠে টয়লেটে চলে গেলাম। ফিরে এসে শুনি আলোচনার বিষয়বস্তু বদলে তার বিয়েতে চলে গেছে। সে আমার মায়ের দিকে ফিরে বললো, ‘মামীজান, আপনি আমার জন্য কোনো মেয়ে দেখলে ভেবে দেখতাম। আমার মা আর বোনেরা আমাকে অদ্ভুত অদ্ভুত সব মেয়েকে দেখায়।’ কেউ একজন জানতে চাইলো তার কাছে কোন ধরনের মেয়ে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। সে জবাব দিলো, ‘অভিনেত্রী রেখা আমাকে টানে।’ এবার সে বলা শুরু করলো পাকিস্তানের মেয়েরা এখনো কতটা সেকেলে আর পরাধীন। লোকজনে ভর্তি লাউঞ্জে সে এই আলোচনা শুরু করলো। আমরা আর কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে এলাম।
পরের দিন শেষ অভ্যর্থনা। এই লোকটার সাথে আজ আর আমার কোনো কথা হলো না। এই অনুষ্ঠানের ঠিক দু দিন পর আমার ফুফু-ফুফা তাদের ছেলের জন্য আমার বিয়ের কথা তুললেন। প্রথমে আমার মা তাদের এই চিন্তাধারায় মর্মাহত হলেন। শুধু তার শ্বশুর বাড়ির ছেলে সে কারণে নয়, সে এমন এক লোকের ছেলে, যাকে তার পরিবার থেকে শুরু করে তার নিজের শহরের সব লোক অপছন্দ করে। এই লোকের উগ্র স্বভাবের কারণে আমার ফুফু সারাটা জীবন কী পরিমাণ ভুগেছেন সেটা আমার মা দেখেছেন। তার এই মেজাজের কারণে সেনা বাহিনী থেকে তাকে বিদায় দেয়া হয়। হজে থাকা অবস্থায় তিনি আমার আরেক ফুফাকে ঘুষি মারেন। কিন্তু আমার বোন এবং ভাবী (মুনিরের স্ত্রী) বরের ব্যাপারে দুর্বলতা দেখান। আমার মায়ের চিন্তা ছিলো ভিন্ন। তিনি চেয়েছেন যে পরিবারটা তার অপছন্দ, সেখানকার পরিবেশ থেকে তাকে বের করে আনতে। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘মাখন থেকে যদি একটা চুল আমি টেনে বের করে আনতে পারি, তো খারাপ কীসে?’
আমার ভাবী তাকে সত্যিই পছন্দ করলেন। অন্য দিকে আমার ভাই এই চিন্তাটাকে অপছন্দ করলেও তার মতামত প্রকাশ করলেন না। আমার বাবা এবং ভাইয়ের অসন্তোষ বোঝা যায় তাদের নীরবতা দেখে। এই স্বভাবের কারণে তারা পরিবার এবং বন্ধুদের কাছে সম্মানের পাত্র। তবে আমার মরহুম দুলাভাই এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমার মায়ের সাথে ফোনে বেশ কয়েকবার দীর্ঘক্ষণ কথা বললেন।
আমার মতো পরিবারগুলো আধুনিকতা দেখাতে গিয়ে খোলামেলা আলোচনা এবং তর্ক এড়িয়ে চলে। অর্থাৎ কেউ সরাসরি কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলে না। এটাই আমাকে আমার সন্তানদের সাথে খোলামেলা এবং সৎ বানিয়েছে। আমি সরাসরি প্রশ্ন করতাম, সরাসরি উপদেশ দিতাম। তবে বাবা তার মতামত চাপিয়ে দিতেন না। বেশির কথা বলার সুযোগই মাকে দিতেন। অন্য দিকে মায়ের মধ্যে ছিলো ভদ্রমহিলাদের মতো সংক্ষেপে কথা শেষ করার বৈশিষ্ট্য। তিনি সরাসরি এবং খোলামেলা আলোচনা এড়িয়ে চলতেন। বিশেষ করে আমি যেমন কালোকে কালো বলার মতো সাহসিকতা দেখাতাম এটা তিনি পছন্দ করতেন না। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, আমাদের সাথে যারা বাস করে তারা হয়তো কখনো আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে চেনে না। অনেক সময় আপনি নিজে আপনাকে যতটুকু চেনেন তার চেয়ে নতুন একজন আপনার অন্তর সম্পর্কে ভালো জানে।
পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে আরো তিন মাস লাগলো। তবে শেষ পর্যন্ত আমি রাজি হলাম। আমি শুধু এটুকুই ভাবতে পারলাম : আমার মনে হয় তার মধ্যে কোনো দোষ নেই। তার মধ্যে কোনো দোষ ছিলো না? আজকালকার মেয়েরা কোনো কারণ ছাড়াই একজনকে বিয়ে করতে চায় না। সারা জীবনের কথা বাদ দিন, কোনো পুরুষের সাথে একটা সন্ধ্যা কাটিয়ে যদি সবাই মিলে তাকে ভালো বলে তার আগে তার সব কিছু ঠিক থাকা উচিত। আমি নিজেকে প্রবোধ দিতে লাগলাম, ‘আমার মনে হয় সে ঠিক আছে।’ এর উপরে ভিত্তি করে আপনি তর্কে জড়াতে পারেন না। আমার বয়স তখন ১৮। কলেজের সবচেয়ে বিখ্যাত মেয়ে। মা-বাবার জন্যও আমি অর্থনৈতিক দিক থেকে বোঝা ছিলাম না। তারপরও আমার কাছে মনে হলো সে-ই আমার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
বলা হয় এই মহাবিশ্বের সব কিছুই পরস্পর সম্পর্কিত। কয়েক বছর পর আমি আবিষ্কার করলাম আমার জীবনের সবগুলো ঘটনা আশোলে কীভাবে আমার ভাগ্যের সাথে সম্পর্কিত। ১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্ব কাপ ফাইনাল পর্যন্ত আমাদের পরিবার এই প্রস্তাব নিয়ে ভাবতে থাকলো। বাবা ছিলেন খেলা পাগল। পাকিস্তানের খেলার সময় মনে হলো তিনি রেগে আছেন। আমরা সবাই এই ম্যাচে ডুবে আছি। আমার মনে আছে, পাকিস্তানের বিজয়ের জন্য ব্যাকুলভাবে দোয়া করছিলাম। আচমকা আমি রুম থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলাম, এমন সময় আমার পাণিপ্রার্থী কাজিন ইজাজ পূর্বঘোষণা ছাড়াই সপরিবারে হাজির হলো।
আমাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে এমন লোকের সাথে একই রুমে বসে খেলা দেখাটা শোভনীয় ছিলো না। আমার মনে আছে, শেষের কয়েকটা মুহূর্ত দেখতে গিয়ে এই নির্বুদ্ধিতার জন্য নিঃশব্দে গজগজ করছিলাম। আমি তখন পরিষ্কার কাচের দরজার ও পাশ থেকে খেলা দেখছি। হারতে হারতে জিতে যাওয়া সেই ম্যাচের পর বিজয়ানন্দের কথা আমার মনে আছে। মা তখন জানতে চেয়েছিলনে এই বিজয়ের পুরো কৃতিত্ব কেন শুধু অধিনায়ককে দেয়া হচ্ছে। মা বললেন, অধিনায়ক যে শব্দগুলো উচ্চারণ করছিলো সেগুলো আত্মগর্বের পর্যায়ে পড়ে। আমার মায়ের খুব তীক্ষ্ন আর সহজাত উপলব্ধি ক্ষমতা ছিলো। তিনি লোকজনের অঙ্গভঙ্গি থেকে তাদেরকে বিচার করতে পারতেন। দুঃখজনক বিষয় হলো আমাদের কালচার তার এই ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করতে দেয়নি। অবশ্য বাবা কোনো দিন এ ক্ষেত্রে কোনো বাধার সৃষ্টি করেননি।
পুরো জাতি এতটা আনন্দে মেতে উঠলো যে, আমাদের পরিবার থেকে সিদ্ধান্ত হলো এই বিজয় উদযানের জন্য আমরা পার্ল কন্টিনেন্টালে খেতে যাবো। এটা ছিলো হাতের কাছে একমাত্র চার তারকা হোটেল। আমাদের পরিবার কিন্তু বাইরে খেতে বলতে গেলে যায় না। এই আনন্দের ধাক্কায় বিয়ের প্রস্তাবটা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। আমার উনিশতম জন্ম দিনের আগের দিন, এপ্রিলের ২ তারিখ আমার প্রথম কাজিন ইজাজ উর-রহমানের সাথে আমার বিয়ের এনগেজমেন্ট হলো। সে দিন আমি রোজা রেখেছিলাম। আমার হাতে আংটি পরানোর পর দুজনকে কিছুক্ষণের জন্য নিভৃতে ছেড়ে দেয়া হলো। জায়গাটা ছিলো আমাদের বাড়ির ড্রইং রুমে। আমি ঠোঁটে আত্মবিশ্বাসের হাসি ফুটিয়ে আমার বিচলিত ভাবকে লুকানোর চেষ্টা করলাম। সে একটা সিগারেট ধরালো। তার স্নায়বিক অস্থিরতা প্রকাশ পেলো। সুতরাং টিনেজার মেয়েটা কোনো রকম প্রভাবিত হলো না। সে তার চেহারার উপর কাছ থেকে অর্ধনীমিলিত চোখ ফেলে এই প্রথমবারের মতো লোকটার ধূসর জুলফি দেখতে পেলো।
লোকটা একটা অস্বস্তিকর মুচকি হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে জানতে চাইলো, ‘পরবর্তী অনুষ্ঠান কখন হতে পারে?’
আমি তৎক্ষণাৎ তার সিগারেটটা দেখিয়ে কটু ভাষায় জবাব দিলাম, ‘এটা চললে কখনোই না।’
‘আচ্ছা।’ সে তার সিগারেটটা নিভিয়ে ক্রিস্টালের ছাইদানিতে ফেললো। ‘এই তো শেষ করে দিলাম। এবার বলো, তাহলে আমরা কখন অনুষ্ঠানটা করতে পারি?’
‘আমার মনে হয় আমাদের উচিত একজন আরেকজনকে জানা। আমি একটা ভালো পেশা গড়তে চাই। থিতু হওয়ার আগে জীবনে আমি অনেক কিছু করতে চাই।’
এ কথার জবাবে সে বললো, ‘সেটা তুমি পাশ্চাত্যের কোনো দেশে ভালোভাবে করতে পারবে। এখন আমরা বিয়ে করি, তুমি বিয়ের পর পড়তে পারবে। যা খুশি পারবে।’

আমি তাকে আরেকটু বাজাতে চাইলাম, ‘আপনি তো জানেন, মা বলেছেন আমি বিয়ের পর মিডিয়ায় ক্যারিয়ার গড়তে পারবো।’
সে জানতে চাইলো, ‘মিডিয়ায় ক্যারিয়ার?’
‘জি। আমি টিভিতে কাজ করতাম। আপনার বাবা ছিলেন আমার সবচেয়ে বড় ভক্ত। আর এখন আমি একটা ফিল্মের স্ক্রিপ্ট লিখছি।’
সে জবাব দিলো, ‘সত্যিই? দারুণ তো। তুমি যদি চাও, আমি মনে করি পারবে।’
কিন্তু তার এই ঘোষণার মধ্যে যে অস্বস্তির আলামত ছিলো সেটা অষ্টাদশীর চোখে ধরা পড়লো না।
লোকটাকে দমাতে গিয়ে আমি ব্যর্থ হচ্ছিলাম। তাকে আগ্রহী মনে হলো। আমি কেন নিশ্চিত হলাম না? সেই অনুভূতিটা কী ছিলো? সে সব কথারই সঠিক জবাব দিচ্ছিলো, কিন্তু আমি অভিভূত হতে পারিনি। পরের কয়েক মাস এনগেজমেন্টের ছবির দিকে তাকিয়ে কেটে গেলো। মনে আছে, এই লোকটাকে ভালোবার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা চালালাম। তাকে ভালোবাসো। তাকে ভালোবাসো। কিন্তু সেই অসহযোগিতামূলক বাজে অনুভূতিটা গেলো না।
এরপর চিঠিগুলো এসে পৌঁছলো। সেগুলো ছিলো দীর্ঘ, সুন্দর করে লেখা, সুন্দর যুক্তি দেয়া। সে আমাকে বলছিলো এতে কাজ হবে, সে কাজ হওয়ার জন্য সব রকমের চেষ্টা চালাবে। একটা চিঠিতে সে লিখলো, ‘তুমি আমার জন্য এক কদম এগিয়ে এলে আমি তোমার দিকে একশো কদম এগুবো।’ এটা আমাকে স্পর্শ করলো। আমি অভিভূত হলাম। অন্য একটা চিঠিতে সে জোর দিয়ে বলতে চাইলো, বিয়ের জন্য ভালোবাসাটা দরকার। ভালোবাসা সত্যিই দরকার। কিন্তু সেটা চাপিয়ে দেয়া যায় না কিংবা জোর করে আদায়ও করা যায় না।
এরপর এলো গানের সংগ্রহ। সে আমাকে জানালো জন লেননের জেলাস গাই তার প্রিয়। এটা কিন্তু এটা সতর্ক সংকেত ছিলো, কিন্তু উনিশ বছর বয়সী মেয়েটা লোকটা সম্পর্কে কিছুই জানলো না। আমি কখনো কারো হাত ধরিনি কিংবা কারো সাথে গোপনে দেখা-সাক্ষাৎ করিনি। আমি কখনো কারো তোষণের মধ্যে পড়িনি। আমি কখনো কোনো পুরুষের সাথে কথা বলিনি। আমার কোনো ধারণা ছিলো না যে, চমৎকারভাবে মহড়া দিয়ে আসা ও সব কথা এবং তোষণবাক্য প্লেবয়রা এমনিতেই বারবার বলে। তারা বারবার এমন সব জিনিশ ব্যবহার করে, যেটা কাজে আসে।
বয়সের সাথে আমার সরলতা দূর হয়নি। ৪২-এ এসেও আমি আবার এর ফাঁদে পড়লাম।

আগে পরে পড়তে চাইলে লেখকের সময়কাতারে ঢুঁ মারুন : https://www.facebook.com/habib.kaium.bd

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:০৯

স্রাঞ্জি সে বলেছেন:
পড়লাম। কিন্তু এ আর কত আছে....

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৪৮

হাবীব কাইউম বলেছেন: অনেক আছে।

২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:২৯

সনেট কবি বলেছেন: কিছুটা পড়লাম।

৩| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৮

রাজীব নুর বলেছেন:
উনিই তো রেহাম খান?? নাকি???


উনার সম্পর্কে খবরের কাগজে লেখা গুলো পড়ি।
বিবিসিতে চাকরি করতেন। উনার বর্তমান বয়স ৪২ বছর।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:০৯

হাবীব কাইউম বলেছেন: জি...

৪| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৫৬

করুণাধারা বলেছেন: এই পর্বও পড়লাম পরম আগ্রহ নিয়ে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, নিয়মিত অনুবাদ দিয়ে যাবার জন্য। যদি এটা বই হিসেবে বের হয়, আশা করি ব্লগে খবর টা জানাবেন।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৪

হাবীব কাইউম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও। অবশ্যই জানাবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.