নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

"আপনারা নাই, বুকটা কেমন খালি খালি লাগছে। কোন কিছুই ভালো লাগছে না"

৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:১১

আমাদের তিন হাজার বর্গফুটের বিশাল ফ্ল্যাটটিতে ঘন্টাখানেক ধরে পায়চরি করলাম। আজ তিন দিন হলো পুরো ফ্ল্যাটটি এক প্রকার ফাঁকাই পড়ে আছে। আমি, আমার স্ত্রী, ছেলে ও একজন বুয়া- এ চারজন মানুষ পুরো ফ্ল্যাট জুড়ে বসবাস করছি। বাবা মা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। অনেক বছর পর ছোট বোনও তাদের সাথে গেছে। পুরো ফ্ল্যাটজুড়ে রাজ্যের শূন্যতা বিরাজ করছে। যে শূন্যতা এর আগে কখনো এতটা উপলব্ধী করি নি আমি।

সব কিছুই আছে, তারপরও কি যেন নেই।... রাত যতই হতো মা ভাত বেড়ে সামনে এনে দিতেন। হাঁটা-হাঁটি করলে ওঠে এসে জিজ্ঞেস করতেন, "কিরে কিছু খাবি? ক্ষুধা লাগছে নাকি?"

"নাহ, এমনিতেই একটু হাঁটছি। আপনি ঘুমান"

আজ তিন রাত আমি হাঁটা-হাঁটি করি। এ রুম ওরুম ঘুরে শেষে বাবা-মা'র রুমের দিকে যাই। বুকের ভেতরটা হুহু করে ওঠে। অন্ধকারে ঢেকে থাকা রুমটিতে কিছু সময়ের জন্য একটু আলো জ্বালাই। তারপর খাটের উপর বসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি। বাবা-মা'র ব্যবহৃত কাঁথা-বালিশ ও বিছানার চাদর হতে তাদের গায়ের সুমিষ্ট ঘ্রাণ এসে আমার নাকে লাগে। ড্রেসিং টেবিলের উপর বাবার সুরমাদানিটার দিকে একটু চেয়ে দেখি। মায়ের চুল শুকানো গামছাটা দিয়ে নাক-মুখটা একটু মুছে নেই। তাদের বিছানায় শুয়ে খানিক গড়াগড়ি খাই।.....

বাবাও আমার মতো রাতে হাঁটেন। হাঁটা শেষে জগ থেকে পানি ঢেলে ঢক ঢক করে পানি খান...। শব্দ করে জগটা টেবিলের উপর রাখেন।

আমি জগ থেকে ঢেলে ঢক ঢক করে পানি খাবার জন্য আলতো পায়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম। হঠাৎ বাবার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম, তিনি আমায় ডাকছেন।

"কি রে পানি খাবি?"

"জ্বি"

"বৌ মা, নাতি কই?"

"জ্বি ঘুমাচ্ছে।"

"তুই জেগে আছিস কেন?"

"আপনারা নাই, বুকটা কেমন খালি খালি লাগছে। কোন কিছুই ভালো লাগছে না।"

এমন সময় মায়ের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। মা আকুলভরা কণ্ঠে বলছেন, "কি রে কিছু খাবি? ক্ষুধা লাগছে? একটু সেমাই রান্না করে দেই? নুডুলস খাবি? একটা আম কেটে দেই? একটা ডিম সিদ্ধ করে দেই? নাশপাতি খাবি? তোর বাবা আনছে আজ। একদম তরতাজা। নাকি ভাত খাবি? ভাত বেড়ে দেই?"

আমি কেঁদে ফেলালাম। অস্ফুট স্বরে বললাম, "মা, পানি খাবো। আমার গলাটা শুকিয়ে গেছে। বাবার মতো ঢক ঢক করে পানি খাবো- মা।"

"যাহ পানি খেয়ে গিয়ে শুয়ে থাক। আর হাঁট-হাঁটি করিস না। রাত অনেক হইছে।"

আমার চোখ দুটো ভিজে এলো। ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছে নিলাম। হাড় কাঁপানো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার হাঁটতে লাগলাম......।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৪:১৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনার আরও ২/১ টা বিয়ে করা দরকার, ফ্লাটে মানুষ বাড়ুক।

২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:৩২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: লেখাটা পুরাই অাবেগাচ্ছন্ন! এই বয়সে এত অাবেগ কেন, ভাই? যাহোক, মাতৃ-পিতৃভক্তি ভালো লেগেছে! তবে শিরোনামটা ভিন্ন হতে পারতো ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.