নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবাক না হয়ে পারি না সত্যি

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৩৫

রাতে খেলা দেখিছি। দুনয়িার সব মনযোগ খেলার দিকে। এমন সময় ভাগ্নি টুক টুক করে হেঁটে আমার গায়ের সাথে ঘষতে ঘষতে বলল, "মাম্মা মালা দাও, মাম্মা মালা দাও।"

খেলায় শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। তারপরও ভাগ্নিকে আদর করে বললাম, "ঠিক আছে আম্মু তোমাকে কাল কিনো দেবো।"

বলেই খেলা দেখায় মনযোগী হলাম।

ভাগ্নি বলতে বলতে এক প্রকার অস্থির করে ফেলল। আধো আধো গলায় বলে যেতে লাগলো, "মাম্মা মালা দাও। মাম্মা মালা দাও।"

একটু বিরক্তি প্রকাশ করে বললাম, "আহ হা মা-মনি বললাম তো কাল কিনে দিবো। এখন খেলা দেখতে দাও।"

"মাম্মা মালা দাও। মালা দাও।"

ওকে দেখভালের দায়িত্বে থাকা আদুরি নামক মেয়েটিকে ডেকে বললাম, "এই দ্যাখ তো, রাত এগারোটা বাজে ও আমার কাছে মালা চাইতেছে। আমাকে অস্থির করে তুলল। ওকে নিয়ে যা।"

আদুরি ফিক করে হেসে ফেলল।

"কী ব্যাপার হাসির কী হলো? ওকে নিয়ে যা। সেই কখন থেকে কানের কাছে মালা দাও মালা দাও বলে মশার মতো ভনভন করছে"

আদুরি বলল, "ভাইজান আফনি এক্কেরে বুকা। কিছুই বুঝইন না যে।"

"আরে এতে বুকার কী দেখলি?"

"আরে ভাইজান অয় গলারমালার কতা কইতাছে না তো, অয় কিরণমালার কতা কইতাছে, বুঝছইন? কিরণমালা দিন যে!"

মনে হলো যেন দুনিয়া কাঁপানো শব্দ করে বিশাল সাইজের এক ঠাডা আমার মাথার উপর এসে পড়েছে।

খেলা বাদ দিয়ে হা-করে ভাগ্নির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার আড়াই বছরের ভাগ্নি যার মুখে এখনো কথা ফুটেনি ভালো মতো। সেও মালা তথা কিরণমালার নাম জানে। শুধু জানেই না- টিভিতে দেখতেও চায়!

আমাদের মা-বোন-খালা-চাচি-ফুফু-কাজের বুয়া-মেয়েরা মিলে যে বিষ পান করছেন। নিজেদের অজান্তে হলেও তারা ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝেও রোপণ করে চলেছেন সেই বিষবৃক্ষ।

জি বাংলা, স্টার জলসা, স্টার প্লাস এর কল্যাণে সাংসারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ আজ খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো এই বিষ এখন আর শুধু শহুরে মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্তের ঘরেই নেই, ছড়িয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম বাংলায়ও।

রাতে গ্রামে ফোন করলেই শোন যায়, রাই কিশোরী দেখছি, রাশি দেখছি, কিরণমালা দেখছি, তুমি আসবে বলে দেখছি, কিংবা বোঝে না সে বোঝে না দেখছি... শুনে অবাক না হয়ে পারি না সত্যি।

সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, এ তিনটি চ্যানেল বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হোক।

গতকাল খবরে দেখলাম, এক শাশুড়ি তার বউকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। তার আগের খবর, মা তার দুই সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। এরকম অনেক খবরই এখন আমাদের প্রতিনিয়ত দেখতে কিংবা শুনতে হচ্ছে-.... ছোটবোন বড় বোনের স্বামীকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। ...পাখি ড্রেসের জন্য কোন কিশোরী আত্মহত্যা করছে।

.....বিশ বছরের সংসার আর সন্তান ফেলে পরকিয়া করে প্রেমিকের হাত ধরে নারী বাড়ি ছাড়ছে ।....ভাবী ননদকে কুপিয়েছে।... বউ শাশুড়িকে পিটিয়েছে।... শাশুড়ি অন্য বউদের সহযোগিতায় ছোট বউকে ডিভোর্স দিতে ছেলেকে বাধ্য করেছে কিংবা বড় বউকে ঘরছাড়া করেছে। ...ইত্যাদি ইত্যাদি নানা ভয়ঙ্কর খবর আমাদের কানে আসছে প্রতিনিয়ত।

জি বাংলা, স্টার জলসা, স্টার প্লাস এর কল্যাণে সাংসারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ আজ খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো এই বিষ এখন আর শুধু শহুরে মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্তের ঘরেই নেই, ছড়িয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম বাংলায়ও।

রাতে গ্রামে ফোন করলেই শোন যায়, রাই কিশোরী দেখছি, রাশি দেখছি, কিরণমালা দেখছি, তুমি আসবে বলে দেখছি, কিংবা বোঝে না সে বোঝে না দেখছি... শুনে অবাক না হয়ে পারি না সত্যি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০৩

বিজন রয় বলেছেন: এসব দেখা বাদ দিলেই তো পারেন। আমার বাসায় তো কেউ দেখে না।

২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৪৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অলটারনেটিভ কি দেখবে ওরা?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.