![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি হাফিজুর রহমান, শিক্ষার্থী , জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করি আর চেষ্টা করব আপনাদেরকে ভালো কিছু লেখা উপহার দেওয়ার
বর্তমান ডিজিটাল যুগে, গণমাধ্যম সাক্ষরতা (Media Literacy) সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যখন তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা আমাদের জীবনের প্রতিটি কোণে পৌঁছে গেছে, তখন এটি একইসঙ্গে সঠিক এবং ভুল তথ্যের প্রবাহকেও ত্বরান্বিত করেছে। সঠিক তথ্য যাচাই করা এবং মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য থেকে নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা মানুষকে সচেতন নাগরিক হতে সাহায্য করে। এ প্রেক্ষিতে, গণমাধ্যম সাক্ষরতা কীভাবে গণমাধ্যমের ভূমিকাকে ব্যাখ্যা করে, তা এই আলোচনায় বিশদভাবে তুলে ধরা হবে।
গণমাধ্যম সাক্ষরতা: একটি ধারণাগত বিশ্লেষণ
গণমাধ্যম সাক্ষরতা বলতে বোঝায়, যে দক্ষতা বা ক্ষমতা একজন ব্যক্তিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উপস্থাপিত তথ্য বিশ্লেষণ, সমালোচনা, এবং মূল্যায়ন করতে সহায়তা করে। এটি শুধুমাত্র সংবাদপত্র, রেডিও বা টেলিভিশনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত তথ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আজকের দিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর পরিমাণে ভুয়া খবর (Fake News) এবং মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়ে, যা মানুষের চিন্তাধারায় প্রভাব ফেলতে পারে। গণমাধ্যম সাক্ষরতা সেইসব তথ্য যাচাইয়ের ক্ষমতা দেয়।
ভুয়া খবর ও ভুল তথ্যের প্রভাব
ভুয়া খবর এবং ভুল তথ্য সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং মানুষকে বিভাজিত করে। উদাহরণস্বরূপ, রাজনৈতিক প্রচারণা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য পর্যন্ত ভুল তথ্যের প্রভাব অনেক ক্ষেত্রে ভয়াবহ হতে পারে। COVID-19 মহামারীর সময় ভুয়া তথ্যের প্রসার দেখা গেছে, যেখানে ভুল চিকিৎসা পরামর্শ ও ভ্যাকসিন নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সাক্ষরতার অভাব মানুষকে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করতে পারে।
গণমাধ্যম সাক্ষরতার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
গণমাধ্যম সাক্ষরতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে শেখানো হয় কীভাবে নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সনাক্ত করতে হয়। শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে গণমাধ্যম সাক্ষরতার উপর জোর দেওয়া হলে, মানুষকে এমন একটি জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদান করা যায়, যা তাদের বিভিন্ন উৎস থেকে আসা তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে সক্ষম করবে। শিক্ষার্থীদের গণমাধ্যম সাক্ষরতা শেখানো কেবল সাংবাদিকতার জন্য নয়, বরং প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয়।
অনেক দেশে স্কুল ও কলেজের পাঠ্যক্রমে গণমাধ্যম সাক্ষরতা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যেমন, তারা কীভাবে তথ্য যাচাই করা যায়, কীভাবে সোর্স (তথ্য সূত্র) মূল্যায়ন করা যায়, এবং কোন কোন তথ্যের পিছনে পক্ষপাতিত্ব বা উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকতে পারে তা শেখানো হয়।
সাংবাদিকতার ভূমিকা ও গণমাধ্যম সাক্ষরতা
সাংবাদিকরা গণমাধ্যম সাক্ষরতার মূল অভিভাবক হিসেবে কাজ করতে পারেন। তাঁরা নির্ভরযোগ্য এবং সত্যনিষ্ঠ সংবাদ প্রদান করার পাশাপাশি, সাধারণ মানুষকে কিভাবে সঠিক তথ্য যাচাই করতে হয়, তার উপরও নির্দেশনা দিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, সাংবাদিকরা তাঁদের প্রতিবেদনের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে খোলামেলা থাকলে, তা পাঠক বা দর্শকের মধ্যে আস্থা বাড়াতে পারে।
গণমাধ্যম সাক্ষরতা ও গণতন্ত্র
গণমাধ্যম সাক্ষরতা গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, কারণ এটি সচেতন নাগরিক গড়ে তুলতে সাহায্য করে। যখন মানুষ তথ্য যাচাই করতে সক্ষম হয়, তখন তারা তাদের রাজনৈতিক মতামত এবং ভোটের সিদ্ধান্তগুলো আরো সঠিকভাবে নিতে পারে। এটি একটি শক্তিশালী নাগরিক সমাজ গঠনে সহায়ক হয় এবং একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি তৈরি করে।
বাংলাদেশে গণমাধ্যম সাক্ষরতার চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে গণমাধ্যম সাক্ষরতার প্রসার নিয়ে কিছু বিশেষ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একদিকে, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দ্রুত উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষ আরো বেশি তথ্য পাচ্ছে, কিন্তু অন্যদিকে অনেকেই সেই তথ্যের বৈধতা যাচাই করার প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করেনি। ফলে ভুয়া খবর এবং অপপ্রচারের প্রভাব বাড়ছে। গণমাধ্যমের সাথে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য গণমাধ্যম সাক্ষরতা বাংলাদেশে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে।
গণমাধ্যম সাক্ষরতা বৃদ্ধির জন্য করণীয়
গণমাধ্যম সাক্ষরতা বাড়াতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণমাধ্যম সাক্ষরতা পাঠ্যক্রম: স্কুল ও কলেজের পাঠ্যক্রমে গণমাধ্যম সাক্ষরতা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই তথ্য যাচাইয়ের কৌশল শিখতে পারে।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ: সরকার এবং এনজিওগুলো গণমাধ্যম সাক্ষরতা প্রচারের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। এর মাধ্যমে ভুয়া খবর এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানো যায়।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা: ফেসবুক, টুইটার, এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ভুয়া খবর এবং বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণে আরো কঠোর নীতি প্রণয়ন করতে পারে। একইসাথে, এ ধরনের প্ল্যাটফর্মে গণমাধ্যম সাক্ষরতা বিষয়ক কন্টেন্ট প্রচার করা যেতে পারে।
সাংবাদিকতার মান উন্নয়ন: সাংবাদিকরা যাতে আরো নির্ভরযোগ্য ও সত্যনিষ্ঠ তথ্য প্রদান করতে পারে, তার জন্য সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত মান উন্নয়নে জোর দেওয়া উচিত। এতে করে সমাজে গণমাধ্যমের প্রতি বিশ্বাসের মাত্রা বাড়বে।
গণমাধ্যম সাক্ষরতা আজকের যুগে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দক্ষতা। তথ্যের বৈধতা যাচাই, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করা, এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া—এই সবকিছুই গণমাধ্যম সাক্ষরতার আওতায় আসে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা কেবল একটি সুবিধা নয়, বরং এটি একটি প্রয়োজনীয়তা।
©somewhere in net ltd.