নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হাফিজুর রহমান শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করি

হাফিজুর রহমান হাবিব

আমি হাফিজুর রহমান, শিক্ষার্থী , জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করি আর চেষ্টা করব আপনাদেরকে ভালো কিছু লেখা উপহার দেওয়ার

হাফিজুর রহমান হাবিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতর সিনেমা: সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য এবং আলোচনা

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ২:৪৩

সিনেমা শিল্পের একটি ধারাবাহিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে অতর (Auteur) সিনেমা বা আর্ট ফিল্মের উদ্ভব হয়েছে। এটি মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের থেকে ভিন্ন একটি ধারা, যা সিনেমার মাধ্যমে পরিচালকের নিজস্ব চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এই সিনেমাগুলি সাধারণত জটিল, গভীর এবং চিন্তাশীল বিষয়বস্তুকে উপস্থাপন করে, যা প্রায়ই সমাজের প্রচলিত নিয়ম বা দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে থাকে।

অতর সিনেমার সংজ্ঞা
অতর সিনেমা বলতে এমন চলচ্চিত্রকে বোঝায়, যেখানে পরিচালক একজন সৃজনশীল শিল্পী হিসেবে কাজ করেন এবং পুরো চলচ্চিত্রটির উপর তার নিজস্ব কল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব থাকে। এই ধরনের সিনেমাগুলোতে পরিচালকের হাতের ছাপ স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়, এবং সিনেমার প্রতিটি দিক, যেমন গল্প, চরিত্র, ভিজ্যুয়াল স্টাইল এবং সাউন্ড, সবকিছুতেই পরিচালকের স্বকীয়তা প্রকাশিত হয়।

অতর সিনেমার বৈশিষ্ট্য
অতর সিনেমার কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা একে বাণিজ্যিক বা জনপ্রিয় সিনেমা থেকে আলাদা করে। নিচে অতর সিনেমার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:

পরিচালকের স্বকীয়তা: অতর সিনেমার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল পরিচালকের স্বতন্ত্র সৃজনশীলতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি। পরিচালকের নিজস্ব চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনদর্শনের প্রতিফলন সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যে ফুটে ওঠে। পরিচালক নিজেই চলচ্চিত্রের মূল শিল্পী হিসেবে কাজ করেন এবং তার চিন্তাধারা, দর্শন এবং সৃজনশীলতার প্রভাব সিনেমার প্রতিটি দিক থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

গভীর এবং জটিল বিষয়বস্তু: অতর সিনেমায় সাধারণত গভীর, জটিল এবং আবেগপ্রবণ বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করা হয়। এই সিনেমাগুলো প্রায়শই সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, নৈতিকতা এবং মানুষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বা মনস্তাত্ত্বিক বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়। পরিচালক তার সিনেমার মাধ্যমে দর্শকের মনে ভাবনার উদ্রেক ঘটানোর চেষ্টা করেন।

অ-রৈখিক এবং ভিন্নমুখী গল্প বলা: অতর সিনেমার গল্প বলার পদ্ধতি সাধারণত ভিন্নমুখী এবং অ-রৈখিক হয়। এটি এমন একটি ধারা, যেখানে ঘটনা বা সময়কাল প্রথাগতভাবে অনুসরণ করা হয় না। গল্পটি ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে যায়, এবং কখনও কখনও সময়ের সাথে খেলা করা হয়।

প্রচলিত কাহিনীর কাঠামো থেকে বিচ্যুতি: অতর সিনেমাগুলোতে সাধারণত প্রচলিত কাহিনীর কাঠামো অনুসরণ করা হয় না। এই সিনেমাগুলিতে স্পষ্ট শুরুর বিন্দু বা সমাপ্তি না থাকলেও গল্পের গভীরতা এবং দর্শকের চিন্তাভাবনার উপর জোর দেওয়া হয়। পরিচালক একটি প্রশ্ন বা ধাঁধার মত সিনেমার সমাপ্তি ঘটান, যা দর্শককে চিন্তার মধ্যে ফেলে দেয়।

ভিজ্যুয়াল এবং স্টাইলিস্টিক সৃজনশীলতা: অতর সিনেমায় ভিজ্যুয়াল স্টাইল এবং ক্যামেরার কাজ একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উপস্থাপিত হয়। ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল, আলো এবং রঙের ব্যবহার এক ধরনের শৈল্পিক আবহ তৈরি করে। অনেক ক্ষেত্রে পরিচালক তার ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনায় প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন ধরনের ফর্ম বা স্টাইল গ্রহণ করেন।

অভিনয়ে সংযম এবং বাস্তবধর্মিতা: অতর সিনেমায় চরিত্রগুলোর অভিনয় সাধারণত সংযত এবং বাস্তবসম্মত হয়। এখানকার চরিত্রগুলো খুব বেশি নাটকীয় না হয়ে মানুষের বাস্তব জীবনের মতোই অনুভূতিপ্রবণ এবং জটিল হয়। অভিনেতাদের অভিব্যক্তি এবং সংলাপের মাধ্যমে তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ করা হয়।

দর্শকের চিন্তা এবং বিশ্লেষণকে উদ্রেক করা:
অতর সিনেমা প্রায়ই দর্শকের চিন্তা, বিশ্লেষণ এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়। এই ধরনের সিনেমা দেখতে গেলে দর্শককে মনোযোগ সহকারে দেখতে হয় এবং সিনেমার প্রতিটি অংশের গভীর অর্থ নিয়ে ভাবতে হয়। সিনেমা শেষ হওয়ার পরও দর্শক তা নিয়ে ভাবতে থাকে এবং বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ পায়।

কোনগুলোকে আমরা অতর সিনেমা বলবো:
অতর সিনেমার উদাহরণ হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট চলচ্চিত্র রয়েছে, যেগুলি এই ধরণের সিনেমার আদর্শ নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়। নিচে কিছু অতর সিনেমার উদাহরণ উল্লেখ করা হলো:

আন্দ্রে তারকোভস্কির "স্টকার" (Stalker): এই রাশিয়ান চলচ্চিত্রটি অতর সিনেমার একটি প্রধান উদাহরণ। এর গল্প ধীরগতিতে এগিয়ে যায় এবং ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা অত্যন্ত শৈল্পিক। সিনেমাটি গভীরভাবে দার্শনিক এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রশ্ন তোলে এবং দর্শককে চিন্তার মধ্যে ফেলে দেয়।

ইঙ্গমার বার্গম্যানের "দ্য সেভেনথ সিল" (The Seventh Seal): বার্গম্যানের এই সিনেমাটি অতর সিনেমার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এখানে মৃত্যু এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে গভীর দার্শনিক প্রশ্ন করা হয়েছে, যা প্রথাগত বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে একেবারে ভিন্ন।

আকিরা কুরোসাওয়ার "রাশমন" (Rashomon): কুরোসাওয়ার এই সিনেমাটি একাধিক চরিত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে একই ঘটনা উপস্থাপন করে, যা দর্শককে ভাবিয়ে তোলে সত্য আসলে কী। এটি অতর সিনেমার একটি ক্লাসিক উদাহরণ।

সত্যজিৎ রায়ের "চারুলতা": সত্যজিৎ রায়ের "চারুলতা" একটি সংবেদনশীল গল্প, যেখানে একজন গৃহবধূর অভ্যন্তরীণ মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি ধীরগতির গল্প বলার পদ্ধতি এবং সংযত অভিনয়ের জন্য অতর সিনেমার শ্রেণিতে পড়ে।

কোনগুলোকে আমরা অতর সিনেমা বলবো না:
অতর সিনেমার বিপরীতে বাণিজ্যিক বা মূলধারার সিনেমা সাধারণত বিনোদনমূলক এবং সহজপাচ্য হয়ে থাকে। এখানে গল্পের গতি দ্রুত হয় এবং মূল উদ্দেশ্য দর্শকদের বিনোদন দেওয়া। নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো, যেগুলো অতর সিনেমার অন্তর্ভুক্ত নয়:

"ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস" সিরিজ: এই ধরনের সিনেমাগুলো অতর সিনেমার বিপরীতে বাণিজ্যিক এবং জনপ্রিয় বিনোদনের জন্য তৈরি হয়। এর মধ্যে প্রচুর অ্যাকশন, গাড়ি রেসিং, এবং উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্য থাকে, যা দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার উদ্দেশ্যে।

"মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্স": মার্ভেলের সুপারহিরো ভিত্তিক সিনেমাগুলি জনপ্রিয় বাণিজ্যিক সিনেমার উদাহরণ। এগুলোতে অ্যাকশন, ড্রামা এবং ভিজ্যুয়াল এফেক্টের উপর বেশি জোর দেওয়া হয় এবং এই সিনেমাগুলোর মূল উদ্দেশ্য দর্শকদের মনোরঞ্জন করা।

অতর সিনেমা এক ধরণের চলচ্চিত্র শিল্প যা মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের থেকে একেবারে আলাদা। এটি পরিচালকের নিজস্ব সৃজনশীলতা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং গল্প বলার শৈলীকে প্রকাশ করে। এই ধরনের সিনেমাগুলিতে সাধারণত জটিল এবং চিন্তাশীল বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করা হয় এবং এটি দর্শকদের চিন্তার উদ্রেক করে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.