নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন বাঙ্গালি। বাংলা আমার ভাষা, নিভৃত আবাস ও অহংকার। বিঃ দ্রঃ- ব্লগে ছন্দ নামে দ্বন্দ্ব নাই।

কবি হাফেজ আহমেদ

অসাধারণ মানুষগুলো সাধারণ হয়, অতিসাধারণ মানুষগুলো মানুষ হ্য়, মানুষ হতে হলে সাধারণ হতে হয়। হাফেজ আহমেদ

কবি হাফেজ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুমি কী শুনতে পাও বাবা?

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৩১

ধরণীর বুকে চোখ মেলে
তোমাকে প্রথম দেখিনি আমি
দেখেছি আলো
তারপর দেখেছি প্লাবন
প্লাবনের বুকেই ছিলো জন্ম আমার।
তারপর আকাশ বাতাস
বুনোহাঁস পাতিহাঁস আরো কত ইতিহাস!
শুধু দেখার বাকি ছিলো তোমায়
তোমার প্রতীক্ষায় ছিলো নিশ্বাস।

তোমাকে প্রথম দেখেনি বলে
আমার প্রথম কান্না তুমি শুনতে পাওনি
আমার প্রথম হাসি তুমি দেখতে পাওনি
আমার প্রথম ডাক তুমি শুনতে পাওনি হে আমার হতভাগা পিতা!
হে আমার বাবা!
তোমাকে দেখার আগে আমি আকাশ দেখেছি
তোমাকে দেখার আগে আমি অনেক ডেকেছি
অতঃপর একদিন মরু তেপান্তরের উষ্ণতা নিয়ে ফিরে এলে তুমি।
হীরার মত চকচকে সাদা চুল
তোমার গালভরা দাড়ি
মাথার উপর বাঁধা ছিলো আরবের পাগড়ি
সেদিন তোমার চোখজুড়ে ছিলো সৌখিনতার চশমা।

এতকাল ধরে আকাশের বুকে লুকায়িত ছিলো যা
বাতাসের ছিলো যত গোপন দরজা
তুমি এসে উন্মোচিত করে দিলে তার সব
তোমার আগমনে ছিলো সব কলরব
বুকের মাঝে পেয়েছি এক মখমল শয্যা
তোমার উষ্ণতার মাঝে পেয়েছি শক্তি ও সাহসের সম্ভার।

তোমার কাঁধে আমি এক নতুন বাজার দেখেছি
ঘরের ভিতরে দেখেছি কত আয়োজন।
শুধু দেখিনি তোমার চোখের সেই সৌখিনতার চশমাটি
কিংবা পরনে কোনো দামী জুতো দেখিনি আর কোনোদিন।

যতদিনে দেশে এলে তুমি
ততদিনে বয়স বেড়ে গেছে আমার
ঘর ছেড়ে চলে যাই শহরে
তারপর হসপিটালে কিছুদিন তোমার পাশে
অতঃপর একদিন সূদুর প্রবাসে পাড়ি।

দুবাই শহরে তোমার শেষ কলটি আমাকে এখনো বিস্মিত করে বাবা !
তুমি কত শত মাইল পাড়ি দিয়ে ঢাকায় এয়ারপোর্টে আমার অপেক্ষায়!
অথচ আমি তখনো বিমানে পা রাখিনি।
সেদিন প্রথম দেখেছিলাম তোমার রক্তচক্ষুর আড়ালে লুকায়িত মোমবাতির গলিত স্রোত!

এবার যখন দেশে গেলাম
এয়ারপোর্টে আর কেউ আসেনি
এতরাতে কেউ আমার কলটি রিসিভও করেনি বাবা।

বাড়িতে গিয়ে আরেকটি নতুন বাড়ি দেখতে পেলাম।
যে বাড়ীটি এখন শুধুই তোমার দখলে।
ভেতরে আলো কী অন্ধকার তাও দেখিনি আর ,
মাটির কাছে প্রশ্ন করেছি বারবার
তুমি কী শুনতে পেয়েছো নীরব কোনো চিৎকার?

এখন হিমালয়ের দখলে চলে গেছে আমার সমস্ত বুক
যার শীতল ধোঁয়ার কাছে পরাজিত হয় অগ্নিগিরি
দু-চোখ বেয়ে উড়ে যায় বরফের ধোঁয়া
ঠান্ডায় কেঁপে ওঠে পা
এলোমেলো পথচলা
তোমার বুকের সেই উষ্ণতা আর ফিরে পাই না
জানিনা এত সাহস ও শক্তি কোথায় হারিয়ে গেছে সব!

তুমি কী পারোনা সেই উষ্ণতা ফিরিয়ে দিতে আবার?
তুমি কী পারোনা আবারো এয়ারপোর্টে এসে আমার অপেক্ষায় থাকতে বাবা!

হয়তো আমার এতো কষ্ট হতো না কোনদিন
যদি তোমার ছষট্টি বছর জীবনে
মাত্র ছষট্টি মাস আমি তোমাকে কাছে পেতাম!

আমি আজও আকাশ দেখি
আজও তোমায় ডাকি
যেভাবে ডেকেছিলাম ঠিক জন্মের পর।
তুমি কী শুনতে পাও বাবা?

তবে কেন মাটিতেও তোমার কোনো শব্দ নেই
বাতাসে বা পানিতে কোথাও নেই, তুমি নেই
আকাশের বুকেও নেই কোনো সংবাদ!

সবাই নীরব
তুমিও নীরব

তোমার প্রতীক্ষায় নীরবেই কেটে যায় কত অষ্টপ্রহর
তুমিহীন আমার পৃথিবী এক নষ্ট শহর!

০২-০২-২০১৯
হাফেজ আহমেদ

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৩৭

সনেট কবি বলেছেন: সুন্দর কবিতা

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৪৩

তারেক ফাহিম বলেছেন: আপনার বাবা ওপারে ভালো থাকুক।

হৃদে দাগ কাটার মত কবিতা।

৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর।

৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৪২

জাহিদ অনিক বলেছেন: কবিতা ভালো লেগেছে কবি হাফেজ আহমেদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.