নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তুমি একটা খারাপ কাজ করেছো তার মানে তুমি একজন মানুষ; তুমি সেই খারাপ কাজটার জন্য অনুতপ্ত হয়েছো তার মানে তুমি একজন ভাল মানুষ। \n\nwww.facebook.com/bandar.khola

হাফিজ রাহমান

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম আদালত হলো মানুষের বিবেক।

হাফিজ রাহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিচিত্র এক ‘বন্দরখোলা’র ইতিকথা

২৫ শে জুন, ২০১৭ ভোর ৫:৪৯

গৌরচন্দ্রিকা
প্রতিটি মানুষই একটি স্বতন্ত্র পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠে। এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার তাগিদে এ পরিচয়টি তাকে বহন করতেই হয়। এ পরিচয়ের সাথে তার নাম, বাবার নাম, স্থান-কাল, জাতি-গোত্র প্রভৃতি বিষয়গুলো ওৎপ্রোতভাভে জড়িত। আবশ্যকীয় এ বিষয়গুলো ব্যতিরেকে একজন মানুষকে আলাদা করে দেখার অবকাশ নেই। শিক্ষা, স্বভাব, চরিত্র, পেশা ইত্যাকার নানা দিক থেকে একজন মানুষ একটা স্বতন্ত্র পরিচয়ের ধারক। পারিপাশ্বিক বিবেচনায় একজন মানুষ হিন্দু হয়, মুসলিম হয়, শিক্ষিত হয়, রিক্ষর হয়, কিষাণ হয়, কারিগর হয়, জেলে হয়, চামার হয়, উপজাতি হয়, বাংলাদেশী হয়, এ্যারাবিয়ান হয়, শ্বেতাঙ্গ হয়, কৃষ্ণাঙ্গ হয়, ধনী হয়, দরিদ্র হয়- আরো কত কি হয় তার যথার্থ পরিসংখ্যান নেই। অথচ সবাই মানুষ। সবার দেহের শোণিত ধারাই নিরেট লালিমা বর্ণের।

মানুষের মাঝে এ যে ব্যবধান- এটা একান্তই সহজাতিক এবং প্রাকৃতিক। মানুষে মানুষে প্রবেধের এ দেয়াল এমনিতেই দাঁড়িয়ে যায়। এর জন্য আলাদা কসরত-আয়োজনের প্রয়োজন হয় না। কিছু কিছু স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টিতে অবশ্য তাকে আলাদা করে কসরত করতে হয়। একজন মানুষের জন্মকালীন একটি নাম না হলেও তার একটি নাম পরিবেশগত কারণেই দাঁড়িয়ে যাবে। কারণ মানুষের স্বভাব, মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা এবং রুচিবোধ ও পরিবেশ ভেদে এ ব্যবধান তৈরি হতেই হয়। এ ব্যবধান মুছে দেয়া মানে প্রকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাওয়া। তবে এসব ব্যবধান একান্তই শব্দগত। কার্যক্ষেত্রে এ সবের কোনো মূল্য নেই। প্রকৃত অর্থে মানুষে মানুষে ব্যবধানের মূল উপাদান হল, সৎ-অসৎ। অন্য শব্দে সত্য মিথ্যার ব্যবধানই হল মানুষে মানুষের প্রকৃত ও চিরন্তন ব্যবধান। মানুষের এ আবশ্যকীয় পরিচয়গুলোর সাথে তার বাসস্থান বা জন্মভূমিগত পরিচয়টিও ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই তাকে তার গ্রাম, ইউনিয়ন, থানা, জেলা, বিভাগ, দেশ, মহাদেশের নামগুলো ধারণ করতে হয় নিজের পরিচয়ের পূর্ণাঙ্গতা দেয়ার স্বার্থেই।

বন্দরখোলা নামের ইতিবৃত্তি

মাদারীপুর জেলার শিবচর থানা অন্তর্গত পাঁচ্চর ইউনিয়নাধীন বন্দরখোলা গ্রামটির অতীত ইতিহাস নিয়ে এ যাবত কোনো গবেষণা হয় নি। তাই এর কোনো লিখিত খতিয়ান লাভ করা দুষ্করই বটে। বন্দরখোলা গ্রামটি ঘেষে বয়ে যাওয়া ছোট নদীটা এক কালে আড়িয়াল খা নদী ছিল। ভরা বর্ষায় এর বর্তমান ভয়ঙ্কর রূপটি এখানে প্রকাশ পেত। এক সময় নদীটি তার দু কুলবর্তী অধিবাসীদের উপর দয়া করে আপন ভয়ঙ্কর অস্তিত্ব গুটিয়ে নিয়ে চলে গিয়ে ছিল পশ্চিম দিকে। সে যে গেছে আর ফিরে আসা হয় নি। বন্দরখোলা পুরাতন স্টান্ড ঘেষে সুউচ্চ একটি মঠের দেখা মেলে। কোনো এক কালে জনৈক হিন্দু ধনাঢ্য ব্যক্তি এটাকে নির্মাণ করেছিল আপন কোনো মানুষের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য। রূপ কথা মতে আড়িয়াল খা হলো পুরুষ-নদ। আর পদ্মা হলো মেয়ে-নদী। আড়িয়ালখা পদ্মাকে বিবাহ করবে। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে উভয়েই জনপদ বিরান করে করে কাছাকাছি হবে। দুজনের মিলন মোহনা এ স্মৃতিমঠ। যেদিন পদ্মা উত্তর দিক থেকে আর আড়িয়ালখা দক্ষিণ দিক থেকে জনপদ উজাড় করে করে মঠটির নিকটে চলে আসবে এবং উভয়ই যৌথভাবে মঠটিকে ভক্ষণ করে দুজন দুজনায় একাকার হয়ে যাবে সেদিনই তাদের শুভ বিবাহটি সম্পন্ন হবে। বস্তুত পদ্মা নদীটি এক কালে মঠটির উত্তর দিকস্থ পূর্বতন বিশ্বরোডের নিকটে চলে এসেছিল। আজকের সন্ন্যাসীরচর, সাড়ে বিশরশি, নাজিমুদ্দীনকান্দি-সবই এক কালের পদ্মা নদী ছিল। আড়িয়ালখা এবং পদ্মা উভয়ই কাছাকাছি হচ্ছিল। কিন্তু এক সময় উভয়ই একে অপর থেকে দূরে সরে চলে যায়। এক কালে পদ্মা ও আড়িয়ালখার কাছাকাছি হওয়ার বিষয়টি সত্য। তবে বৈবাহিক বিষয়টির পুরোটাই রূপকথা। লোক মুখেই এর অস্তিত্ব বিদ্যমান। মাঠ পর্যায়ে এর কোনো বাস্তবতা নেই। সম্ভবত এটা সনাতনী ধর্মালম্বীদরে মুখে মুখে চাউর হয়ে জনশ্রুতির মর্যাদা পেয়েছে। কারণ এসব ধারণা-বিশ্বাস সনাতনী ধর্মালম্বীদের মাঝে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান।

নদ ও নদীর পার্থক্য

বাংলা, হিন্দি, ফারসি ইত্যাদি ভাষার ক্ষেত্রে পুরুষবাচক শব্দ সাধারণত অ-কারান্ত এবং নারীবাচক শব্দ আ-কারান্ত বা ই-কারান্ত হয়। যেমন রহিম (অ-কারান্ত), রহিমা (আ-কারান্ত, নামের শেষে আ আছে), রজক (অ-কারান্ত), রজকী (ঈ-কারান্ত, নামের শেষে ঈকার আছে)। তেমনিভাবে ফুল-ফুলি, কুমার-কুমারী, নদ-নদী ইত্যাদি। তাই যে সকল নদীর নাম পুরুষবাচক অর্থাৎ অ-কারান্ত সে সকল নদী নদী নয়; নদ। আর যে সকল নদীর নাম নারীবাচক অর্থাৎ আ-কারান্ত বা ঈ, ই-কারান্ত সে সকল নদী নদী। এ কারণে ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী থাকলেও এটি নদ। একই কারণে নীল নদী নদী নয়; নদ। অনেকে আমাজন নদী বললেও উপরোল্লিখিত কারণে তা হবে নদ।

অনেকে নদী ও নদীর আরো একটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেন। সেটি হল, একটি সর্বদা পূর্ব-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয় এবং অন্যটি সর্বদা উত্তর-দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। নদীর প্রবাহদিক লক্ষ করা হলে নদের প্রবাহদিক অনুধাবন করা যায়। আবার কারো কারো মতে নদের কোনো শাখা বা উপশাখা হয় না। পুরুষবাচক নাম বলে হয়তো এমন ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। ব্রহ্মপুত্র নদ হলেও শাখা আছে। বস্তুত নদ ও নদীর শাখা থাকা না থাকার সাথে এর ব্যবধানের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি সম্পূর্ণ ব্যাকরণগত এবং ভারতীয় পুরাণ বা প্রচলিত প্রবাদের উপর নির্ভরশীল। আমাদের উপমহাদেশের সংস্কৃতিতে নদ ও নদীকে যথক্রমে নারী ও পুরষ হিসেবে ভাগ করার পেছনে পুরাণ, ধর্মীয় ও লোকজ বিশ্বাসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শাখা থাকুক আর নাই থাকুক, ব্রহ্মার পুত্র ব্রহ্মপুত্রকে মেয়ে ভাবার কোনো সুযোগ নেই। তেমনি হিমালয়দুহিতা গঙ্গা, সে তো নারী ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। তবে নদ ও নদী সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতে লেখা আছে, যে জলস্রোত কোন পর্বত, হ্রদ, প্রস্রবণ ইত্যাদি জলাধার হতে উৎপন্ন ও বিভিন্ন জনপদের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অন্য কোন জলাশয়ে পতিত হয় তাকে নদী বলে। যেমন মেঘনা, যমুনা, কুশয়ারা ইত্যাদি। আর যখন কোন নদী হতে কোন শাখা নদীর সৃষ্টি হয় না তখন তাকে বলা হয় নদ। যেমন কপোতাক্ষ, ব্রহ্মপুত্র, নীল নদ ইত্যাদি নদ।

বস্তুত বড়সড় নদীগুলোকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে শহর বন্দর। পৃথিবীর উন্নত শহর গুলোর সবই নদী কিংবা সমুদ্রকেন্দ্রিক। আরেকটু বাড়িয়ে এভাবে বলা যায়, এ যাবত পৃথিবীতে যত সভ্যতার উত্থান ঘটেছে তার সিংহভাগই ছিল নদীকেন্দ্রিক। সে হিসেবে একটি নদীকে কেন্দ্র করে অনেক কিছুই হয়।

বন্দরখোলা গ্রামটি ঘেষে বয়ে যাওয়া পুরনো সে আড়িয়ালখা নদীটির তীরে তীরেও এক সময় গড়ে উঠেছিল ছোট ছোট বন্দর-নগর এবং হাট-বাজার। একসময় বন্দরখোলা গ্রামে অবস্থিত সুপরিচিত বন্দরখোলা বাজারটির অবস্থান ছিল মূলত পুরাতন আড়িয়ালখা নদীর তীরে। এখনো সে জায়গাটা পুরান বাজারখোলা নামে পরিচিত। এখন এখানে কোনো হাটুরে মানুষের সমাগম নেই। দোকান পাটের দাগ-চিন্হ নেই। পড়ে আছে বিস্তীর্ণ এক খ- জমি। আশে পাশে দু একটি নারিকেল গাছ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। কিষাণেরা এখানে এখন পাট-ধানের ফসল করে। হৈহোল্লোরপূর্ণ সে বাজারের কোনো অস্তিত্ব আজ এখানে নেই। পুরাতন এ বন্দরখোলা বাজারটি ছিল বেশ বড়সড় ও জমজমাপূর্ণ। জাহাজ স্টিমার পুরনো দিনের গয়না নৌকা এখানে এসে নোঙ্গর করত। নোঙ্গর করা সে জায়গাটি আজো গয়নাঘাটা নামে পরিচিত। সুতরাং পুরাতন বন্দরখোলা বাজারটি তখন একটি মিনি বন্দর হিসেবে গণ্য হত। এ বাজারের সীমানা পরিধিও ছিল বেশ দীর্ঘ। এখানে ডাল চাল থেকে শুরু করে অনেক ফসলী পণ্য মিহি করার মেশিন ছিল। পুরনো বাজার স্থানান্তরিত হবার পরও সেখানে ধান চাল ভাঙ্গাবার ব্যবস্থা চালু ছিল। গয়না ঘাটার বটতলার নিচে আজো সে ধান ভাঙ্গানো মেশিনগুলোর স্মৃতি চিহœ পড়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। সুতরাং পুরাতন আড়িয়াল খা নদীর তীরবর্তী সে মিনি বন্দর থেকে বন্দরখোলা নামের বন্দর শব্দটির উৎপত্তি। আর কোনো একটি জায়গার সাথে খোলা শব্দ জুড়ে দেয়ার প্রবণতা বাংলা ভাষায় বেশ লক্ষণীয়। যথা বাজারখোলা, হাটখোলা, চিতাখোলা ইত্যাদি। আর খোলা অর্থ জায়গা। কোনো একটা জায়গার সাথে খোলা শব্দ জুড়ে দেয়ার প্রবণতা থেকেই বন্দরখোলা নামের উৎপত্তি।

দেশীয় পরিমণ্ডলে বন্দরখোলা

বন্দরখোলা। একটি বিচিত্র নাম। ছোট বড় গ্রাম থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত এ নামে শিবচর থানায় বেশ কয়েকটি অঞ্চল রয়েছে। একটি তথ্যের বিবরণ মতে বন্দরখোলা একটি পরগনা (গ্রামসমষ্টি) ছিল। সেখানে বলা হয়েছে, ‘১৭৮১ সনে হাজী শরীয়াতুল্লাহ মাদারীপুর জেলার বন্দরখোলা পরগনার শামাইল নামক গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।’ তথ্যটি http://www.nirmanmagazine.com নামক সাইট থেকে সংগ্রহীত। তথ্যটির ঐতিহাসিক ভিত্তি কতটুকু তা যাচাই করা সম্ভব হয় নি। অন্যদিকে বন্দরখোলা পদ্মা নদীর তীরবর্তী শিবচর থানার ১৮টি ইউনিয়নের অন্যতম একটি ইউনিয়নের নামও বটে। তবে এ ইউনিয়নটি বড়খাস বন্দরখোলা নামে পরিচিত। শিবচরের চরজানাজাত ইউনিয়নে রয়েছে পূর্ব খাসচর বন্দরখোলা নামে একটি গ্রাম। শিবচরে ছোটখাস বন্দরখোলা নামেও একটি গ্রাম রয়েছে। রাজারচর বন্দরখোলা, বাজেয়াপ্তীর বন্দরখোলা নামেও শিবচরে দুটি এলাকার নাম রয়েছে। শিবচর থানার পার্শ্ববর্তী থানা সদরপুরে রয়েছে চর বন্দরখোলা নামে আরো একটি এলাকা। সরকারী নথিতে পাঁচ্চর বন্দরখোলা নামেও একটি স্বতন্ত্র গ্রামের নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। এদিকে আশির দশকে পাঁচ্চর ইউনিয়ন অন্তর্গত বন্দরখোলা গ্রামের প্রাচীন মাদরাসা ‘বন্দরখোলা মাদরাসা’ কে কেন্দ্র করে মোহাম্মদপুর বন্দরখোলা নামে আরেকটি ক্ষুদ্র এলাকার আত্মপ্রকাশ ঘটে। অথচ মাদরাসাটি মদবরচর ইউয়িনে অবস্থিত। যদিও এ নামটি শুধু মাদরাসা কেন্দ্রিক এরিয়াতেই ব্যবহৃত হয়। সুতরাং পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, শিবচর থানাতে বন্দরখোলা নামে নয়টি অঞ্চল পরিচিত হয়ে আছে। আর ফরিদপুর অন্তর্গত সদরপুর থানাতে রয়েছে একটি। পাঁচ্চর অন্তর্গত বন্দরখোলা গ্রামটি ঘিরে হাজী শরীয়াতুল্লাহ রাহ. এর কর্মতৎপরতা ছিল বেশ আলোচিত। হাজী শরীয়াতুল্লাহ রাহ. এর খলিফা সমাজ ব্যবস্থার রূপকল্প আজো এ গ্রামটিতে লক্ষ করা যায়। হাজী শরীয়াতুল্লাহ রাহ. এর নামের সাথে বন্দরখোলা নামটিও ইতিহাস ঐতিহ্য ও বিশ্বপরিমণ্ডলে ভাস্বর হয়ে আছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বন্দরখোলা

বাংলাদেশের পরিমণ্ডল পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বন্দরখোলা নামে বেশ কয়েকটি অঞ্চল রয়েছে। নেপালের একটি বিশিষ্ট এলাকার নাম বন্দরখোলা। তদ্রূপ আফগানিস্তানের একটি বড়সড় অঞ্চলের নাম বন্দরখোলা। আর ভারতের ঝারখন্ড প্রদেশ অন্তর্গত একটি অঞ্চলের এ জাতীয় একটি নাম রয়েছে। তবে নামটি বন্দরখোলা নয়; বন্দরকোলা।

বন্দরখোলা নামক এলাকার সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান

১। বন্দরখোলা (পরগনা)
২। বন্দরখোলা (গোয়ালকান্দা)
৩। বন্দরখোলা (বড়খাস বন্দরখোলা ইউনিয়ন)
৪। পূর্ব খাসচর বন্দরখোলা (চরজানাজাত ইউনিয়ন)
৫। ছোটখাস বন্দরখোলা (সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়ন)
৬। চর বন্দরখোলা (ফরিদপুর, সদরপুর)
৭। মোহাম্মদপুর বন্দরখোলা (মাদবরচর ইউনিয়ন)
৮। রাজারচর বন্দরখোলা (সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়ন)
৯। বাজেয়াপ্তীর বন্দরখোলা (শিবচর)
১০। পাঁচ্চর বন্দরখোলা (পাঁচ্চর ইউনিয়ন)
১১। বন্দরখোলা (নেপাল)
১২। বন্দরখোলা (আফগানিস্তান)
১৩। বন্দরকোলা (ইন্ডিয়া)

আলোচিত পাঁচ্চর ইউনিয়নস্থ বন্দরখোলাটি পাঁচ্চর, সন্ন্যাসিরচর, মাদবরের চর- এ ত্রি ইউনিয়নের কিছু কিছু অঞ্চলের একটি সমন্বিত নাম। তবে পাঁচ্চর ইউনিয়নের ১ নাম্বার ওয়ার্ড অন্তর্গত গোয়ালকান্দা গ্রামটির বৃহত্তর অংশই মূল বন্দরখোলা নামে পরিচিত। গোয়াল কান্দা গ্রামের সীমান্তবর্তী সন্নাসীরচর এবং মাদবরচরের কিছু এলাকাও বন্দরখোলা নামে পরিচিতি পেয়েছে। সেখানকার লোকজনও নির্দ্বিধায় নিজেদেরকে বন্দরখোলা গ্রামের অধিবাসী বলে পরিচয় দেয়। সে হিসেবে বন্দরখোলা নামের এ গ্রামটি একটি বৈচিত্রময় গ্রামের মর্যাদা বহন করে। তবে গোয়ালকান্দা গ্রামের পূর্ব-দক্ষিণ অংশটির অধিবাসীরা নিজেদেরকে গোয়ালকান্দা গ্রামের অধিবাসী বলেই পরিচয় দেয়। তারা সাধারণত বন্দরখোলা গ্রামের নাম ব্যবহার করে না।

গোয়ালকান্দা বনাম বন্দরখোলা

বস্তুত বন্দরখোলা এ গ্রামের প্রকৃত নাম নয়। এটি একটি রূপক নাম। কাগজ কলমে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। স্থানীয় প্রশাসনের ফাইল পত্রে গ্রামের নাম হিসেবে বন্দরখোলার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। এ গ্রামের মূল নাম হল গোয়ালকান্দা। এটি এ গ্রামের মৌজাগত নামও বটে। যদিও মৌজা এবং গ্রাম সব ক্ষেত্রে সমর্থক হয় না। বাংলাদেশে এ গোয়ালকান্দা নামেও বেশ কয়েকটি এলাকার নাম রয়েছে। আমাদের ক্ষুদ্র অনুসন্ধান মতে বাংলাদেশের মোট চারটি এলাকার নাম গোয়ালকান্দা। আলোচিত গোয়ালকান্দা ব্যতীত অন্য তিনটি গোয়ালকান্দাই আস্ত একেকটি ইউনিয়ন। যথা :
১। জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ, গোয়ালকান্দা
২। ঝালকাঠী, সদর থানা, গোয়ালকান্দা
৩। রাজশাহী, বাঘমারা, গোয়ালকান্দা
এছাড়াও বাংলাদেশের আরো অনেক গ্রামের নাম গোয়ালকান্দা থাকা বিচিত্র কিছু নয়।

গোয়ালকান্দা নামের ইতিবৃত্তি

কেন গোয়ালকান্দা নামে এ এলাকার নাম করণ হলো ? বস্তুত এ গ্রামটি এক কালে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ বসতি ছিল। গোয়াল শব্দটি হিন্দু বা সনাতনী সম্প্রদায়ের সাথে বেশ সাযুজ্য রাখে। কারণ গো পোষা, দুধ বিক্রি, গরু থেকে দুগ্ধ সংগ্রহ করাসহ এতদ সংক্রান্ত কার্যাবলী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই বেশি করে থাকে। গোয়াল অর্থ দুগ্ধ ব্যবসায়ী, গোপালক, গোপাল, গোয়ালপাড়া, গোপ পল্লি, ঘোষ। গোয়ালকান্দা অর্থ গোয়ালপাড়া, গোয়ালদের বসতি, গোয়াল জনবহুল এলাকা। আর কান্দা শব্দটি একটি ফারসী শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ খোদাই কৃত। বাংলাদেশে কান্দা ও কান্দি যোগে অনেক জনবসতির নাম পরিচিত হয়ে আছে। যেমন নগরকান্দা, দাউদকান্দি, খাড়াকান্দি ইত্যাদি। নগরকান্দা মানে নগর বন্দর ঐ বসতির অণু প্রমাণুতে মিশে আছে। যেন নগরকে সংশ্লিষ্ট বসতির দেহে খোদাই করে এঁকে দেয়া হয়েছে। সুতরাং গোয়ালকান্দা অর্থ গোয়াল জনবহুল এলাকা। দূর অতীতের সে গোয়াল আর কান্দা শব্দ যোগে এ এলাকার নাম করণ হয়েছে গোয়ালকান্দা। দূর এলাকায় গোয়ালকান্দা নামের তেমন পরিচিতি নেই। বন্দরখোলা নামেই সবাই এ এলাকাটি চিনে। যদিও কাগজ কলমে তুলনামূলক সুন্দর এ নামটির কোনো হদিস পাওয়া যায় না।

এক নজরে পাঁচ্চর ইউনিয়ন

নাম : পাঁচ্চর মডেল ইউনিয়ন
গ্রাম : ৩৮টি মৌজা : ০৮ ওয়ার্ড : ৯টি
১। মোট আয়তন : ৭.৪৯বর্গ কিঃমিঃ
২। মোট জনসংখ্যা : ১৫,৭৯৪ জন
৩। মোট পুরম্নষ : ৮,০৬০ জন
৪। মোট মহিলা : ৭,৭৩৪ জন
৫। মোট ভোটার সংখ্যা : ৯১২৪জন
৬। পুরুষ ভোটার সংখ্যা : ৪৬৮১জন
৭। মহিলা ভোটার সংখ্যা : ৪৩৪৩জন
৮। ধর্ম : ১। মুসলিম : ৯৯.৬৮% ২। হিন্দু : ০.৩২%
৯। শিক্ষার হার : ৩২.৬৯%
১০। পুরুষ শিক্ষার হার : ৪৮%
১১। মহিলা শিক্ষার হার : ২৮.১৫%
১২। বিদ্যালয় সংখ্যা : ৭টি
১৩। মাধ্যমিক বিদ্যালয় : ১টি
১৪। সঃ প্রাঃ বিদ্যালয় : ৪টি
১৫। রেঃ প্রাঃ বিদ্যালয় : ২টি
১৬। মাদ্রাসার সংখ্যা : ৬টি
১৭। জামে মসজিদ : ১০টি
১৮। কমিউনিটি ক্লিনিক : ১টি
১৯। হাসপাতাল FWE t ১টি
২০। তথ্য সেবা কেন্দ্র : ১টি
২১। মন্দির : ১টি
২২। গুচ্ছ গ্রাম : ১টি
২৩। বাজার : ১টি
২৪। সেনিটেশন : ১০০%
২৫। গভীর নলকুপ : ৫০টি
২৬। বিদ্যুতায়ন: ৫.৮৮%
২৭। মুরগির খামার : ৪টি
২৮। গরুর খামার : ০২টি
২৯। একটি বাড়ী একটি খামার সমিতি : ৯টি
৩০। কাচা রাস্তা : ২৪কি.মি
৩১। ইটের সোলিং : ১১কি.মি
৩২। পাকা রাস্তা : ২০.৯৮৬কি.মি
৩৩। ব্রিজ : ১৭টি
৩৪। কালভার্ট : ১৪টি

পাঁচ্চর ইউনিয় : গ্রাম ও জনসংখ্যা

গ্রামের নাম জনসংখ্যা
বাহেরচর ১৫৭০ জন
বড় বাহাদুরপুর ১২৪৫ জন
কেরানীবাট ৭৯৪ জন
হোগলারমাঠ ঢালীকান্দি৮৯২ জন
ব্যাঙচড়া ৭৮০ জন
ছোট বাহাদুরপুর ১০১২ জন
বড়দোয়ালী ৮৭০ জন
সোনাপট্টি ১,২৪০ জন
পাঁচ্চর বন্দরখোলা ১২০১ জন
রঘুনাথপুর ২১৩৮ জন
শিকদারকান্দি ৭৫৩ জনর :
খানাকান্দি ৭৫০ জন
হাজীপুর ৮২০ জন
মাঝি কান্দি ৭৯০ জন
ঢালীকান্দী ৬০৪৫ জন
বাহাদুরপুর ৭২০ জন
দক্ষিনকান্দি ১১৫০ জন
পাঁচ্চর ৪০৪০ জন

পুনশ্চ, নিবন্ধটি প্রামাণ্য তথ্যসূত্রভিত্তিক সম্পাদিতব্য।

তথ্যসূত্র :
dlrs .portal.gov.bd/sites/default/.../DATA BASE - Shibchor-2013.xls
http://pancharup.madaripur.gov.bd/site. http://answers.priyo.com

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.