![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম আদালত হলো মানুষের বিবেক।
১৫.১১.’১৭ বুধবার। রাত তখন ০৮.৩০ মি.। চারদিকে নিকষ আঁধারের ভয়ার্ত আবহ। কালো আঁধারের প্রচণ্ডতায় বিদ্যুত জ্যোতি চুপসে যাবার উপক্রম। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ধারা নেমে চলছে অবিরাম। নিশি কালিমা ভেদ করে করে এগিয়ে চলছে আমাদের অটো। মাদারীপুর শহর থেকে মুস্তফাপুর। স্বল্পদৈর্ঘ পথ। মাঝ পথে এসে এক যাত্রী মহাশয় বললেন, ড্রাইভার সাহেব ! দাঁড়ান। একজন যাত্রী আছে; নিয়ে আসি। ড্রাইভার মহোদয় দাঁড়ালেন। যাত্রীসকল নীরব। কারণ, এই তো চলে আসবে। মহাশয় সময়ের হিসেব নিকেষ বুঝিয়ে দিয়ে যান নি। তিনি নেমে চোখের আড়াল হয়ে যান। প্রতীক্ষার পরিধি বেড়ে চলে। যাত্রীদের মাঝে ইশপিশ শুরু হলো। সাথে ড্রাইভার মহোদয়ও নীরবতা ভাংলেন। সময় দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। মহাশয়ের টিকিটুকুরও দেখা মিলছে না। প্রতীক্ষা মৃত্যুর চেয়ে অধিক কষ্টদায়ক বলে আরব বিশ্বে একটি প্রবাদ চলিত আছে। উদাম অটো। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ছোটো ছোটো পশলা এসে আমাদের পরশ বুলাচ্ছে। এমন একটি বীতশ্রদ্ধ মুহূর্তে প্রতীক্ষার প্রহর সত্যিই বেদনাদায়ক। আরব্য প্রবাদটির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বুঝতে ও তার নিগূঢ় রহস্য উদঘাটন করতে এতটুকুও বেগ পেতে হচ্ছে না। ড্রাভারকে বলা হচ্ছে প্রতীক্ষার ইতি টেনে সমুখে এগিয়ে যেতে। তিনি শুনছেন না। তিনি গলা ছেড়ে মহাশয়কে ডেকে চলেছেন। কিন্তু বেচারার ভরাট কণ্ঠের আহ্বান বৃষ্টি ভেজা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। প্রতিধ্বনিত হয় না। মেজাজহীন মানুষগুলোও এসব ক্ষেত্রে মেজাজবান হয়ে উঠে। কারণ মানুষ তো পরিশেষে মানুষই। বেশ দীর্ঘ সময় পর যাত্রীসমেত মহাশয়ের উদয় হলো। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ধীর পদে পা পা করে এগিয়ে আসছেন। যেন এক সেকেণ্ডের বিলম্ব হয়েছে মাত্র। আমি নিয়ন্ত্রিত মেজাজে বললাম, এ কি করলেন ভাই ! আপনি এতটা সময় নেবেন তা আমাদের আগে বলবেন তো ! এতটা সময় বসিয়ে রাখার কি অর্থ ? মহাশয় এবার মুখে কথার খৈ ফোটালেন। বললেন, ‘রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকেন তাতে কিছু হয় না ! আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন মিয়া !’ আকাশ থেকে পড়বো ? আক্কেল গুড়ুম করবো ? না চক্ষু চড়কগাছা ? কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। কিছুটা প্রকৃতিস্থ হতে চেষ্টা করলাম। ভাবলাম, এ অসহায় মানুষটার সাথে তর্কে নামাটা অনেক বেশি বোকামো হয়ে যাবে। লোকটার প্রতি আমার ক্রোধ নয় অনেক বেশি মায়া হলো। দেহে জুব্বার দীর্ঘতা আছে। মাথায় টুপির শুভ্রতা আছে। মুখে দাড়ির কৃষ্ণতা আছে। কত সুন্দর মানুষটা কত বেশি অসহায় ! এখানে নীরবতা হলো আমার অলঙ্কার। স্রষ্টার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলাম, স্রষ্টা আমায় ওমন করে তৈরি করে নি বলে। আমি বিজিত হয়েও বিজয়ী হলাম। অসহায় মানুষটা বিজয়ী হয়েও চরমভাবে পরাজিত হলো। পরাজয়ের অনভূতিটা সৃষ্টি না হওয়ায় পরাজয়ের ঘনত্ব বহুগুণ বেড়ে গেল। তাই বলি, মানুষটার মুখে দাড়ি গজালেও হৃদয়ে দাড়ি গজায় নি। মানুষটার মাথায় টুপি শোভা পেলেও হৃদয়ের টুপি এখনো শোভিত হয় নি। দেহে জুব্বার দীর্ঘতা পেলেও হৃদয়ের জোব্বা এখনো তৈরি হয় নি। অসহায় মানুষটার মাঝে নৈতিক টুপির সংকট যেরূপ জ্ঞানিক টুপির সংকটও তদ্রূপ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৫
শামচুল হক বলেছেন: পোষ্টে সুন্দর কথাই বলেছেন