নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুর্জয়।

Either Man will abolish war, or War will abolish Man." (Bertrand Russel)

দূর্জয় হাফিজ

এই পৃথিবীতে নয় আমি একা,সঙ্গে আছে আমার সৃষ্টিকর্তা,পরিবার এবং বন্ধুরা।

দূর্জয় হাফিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তত্ত্বধায়ক সরকারের প্রয়োজনীতা শেষ হয়ে যায়নি।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫৬

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নত মানের নয়। কারন এ দেশের পূর্ব রাজনৈতিক ইতহাস খুব বেশী ভাল নয়। ইংরেজরা আমাদের এই দেশ প্রায় ২০০শত বছর শাসন এবং শোষণ করে গেছে ।১৯৪৭ সালে ইংরেজরা চলে যাওয়ার পর আমরা বন্দী হয় পাকিস্তানী শাসকদের হাতে, তারাও আমাদের একই ভাবে শাসন এবং শোষণ করে। ১৯৭১ সালে আমরা তাদের নিকট থেকে স্বাধীনতা লাভ করি।স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের পুরা সময়টায় গণতান্ত্রিক ছিলনা। বহুবার সেনা শাসকরা ক্ষমতা দখল করে এবং শাসন করে।তাদের শাসনামলে দুর্বল গণতন্ত্র আরো দুর্বল হয়ে যায়।

বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।যাতে বিদ্যমান থাকবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্ম নিরপেক্ষবাদের ন্যয় মূলনীতি সমূহ।কিন্তূ রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক মতপার্থক্যর কারনে রাজনীতিবিদ্যের মধ্যে দেখা দেয় অবিশ্বাস,দলীয় স্বার্থ,জাতীয়তাবদের অভাব,সংঘাত ও বিরোধীতা মূলক মানসিকতা।যে কারনে বিরোধী রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন দলের উপর আস্থা রাখতে পারে না।আবার ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলের কোন সংস্কার প্রস্তাব গ্রহন করে না।আর এই রাজনৈতিক দোলাচালে স্বীকার আমাদের নির্বাচন কমিশন।যার কারনে নতুন পথ হিসাবে আবির্ভূত হয় নির্দলীয় তত্ত্বধায়ক সরকার নামক একটি নতুন ব্যবস্থা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারঃ

র একপ্রকারের শাসন ব্যবস্থা, যার অধীনে দুইটি নির্বাচিত সরকারের মধ্যবর্তী সময়কালে সাময়িকভাবে অনির্বাচিত ব্যক্তিবর্গ কোন দেশের শাসনভার গ্রহণ করে থাকে। সাধারণতঃ নির্বাচন পরিচালনা করাই এর প্রধান কাজ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।



প্রথমঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকার,১৯৯১

বাংলাদেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান সম্মত ছিল না। সকল দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টা হতে রাজি হন। তবে তার শর্ত ছিল, দ্বায়িত্ব পালন শেষে তাকে আবার নিজ কাজে ফিরে যেতে দিতে হবে। সকল দল এতে রাজি হন এবং বিএনপি সরকার গঠন করে সংবিধান সংশোধন করে তাকে আবার প্রধান বিচারপতির দ্বায়িত্ব পালনে ফেরত পাঠায়। ১৯৯১ সালে ঐ সরকারের অধীনের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে সুক্ষ কারচুপির অভিযোগ তোলে কিন্তু তারা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নাই।



দ্বিতী্য়ঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকার,১৯৯৬

দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে। ১৯৯৬ সালে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের সর্ব প্রথম সংবিধান সম্মত তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে ১৪৭ আসন লাভ করে এবং জামায়াতে ইসলামের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। বিএনপি এই নির্বাচনে ১১৬ টি আসনে জয়লাভ করে দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে সংসদে যোগ দেয়।



তৃতীয়ঃতত্ত্বাবধায়ক সরকার, ২০০১

তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন বিচারপতি লতিফুর রহমান। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় ঐক্য জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ মোট ৩০০ টি আসনের মধ্যে ৫৮ টি আসনে জয়লাভ করে। দেশে বিদেশে এই নির্বাচন ব্যাপক প্রশংসা লাভ করলেও আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে স্থুল কারচুপির অভিযোগ তোলে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন তারা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করবেন ও শপথ নেবেন না। পরে অবশ্য আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যগন শপথ নেন, এবং সংসদে যোগ দান করেন।

চতুর্থঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকার,২০০৬

চতুর্থ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় ২০০৬ সালে। প্রথমে ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। নিয়োগ দেওয়া উপদেষ্ঠাদের মধ্যে চার জন একমাসের উর্ধে কাজ করার পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ সাথে মতনৈক্যের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন। এরা হলেন ড. আকবর আলি খান, লে.জে. হাসান মশহুদ চৌধুরী, সি. এম. শফি সামী ও সুলতানা কামাল চক্রবর্তি। পরবর্তিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নতুন চার উপদেষ্ঠার নিয়োগ দেন। পরবর্তিতে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ইয়াজউদ্দিন আহমেদ আরো চার নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ দেন। এরা ছিলেন, বেসরকারী সংস্থা আশার প্রধান সফিকুল হক চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মইনউদ্দিন আহমেদ, মেজর জেনারেল রুহুল আমিন চৌধুরী ও ড. শোয়েব আহমেদ। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হয় জানুয়ারি ২২, ২০০৭, নতুন উপদেষ্টা পরিষদ বিবাদমান রাজনৈতিক দল গুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে বাধ্য হন। একপর্যায়ে সকল প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতি দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন । বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে নতুন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ড. ফখরুদ্দীন আহমদ দশজন নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজ শুরু করেন এবং সেই সাথে রাষ্ট্রপতি ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিন ঘোষণা করেন। ২৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে দেশে সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন।

এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার দূর্ণীতি বিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা ২০০৭ এর অগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় ১৭০ জন শীর্ষ নেতাকে দূর্ণীতির অভিযোগে আটক করে। প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াকেও দূর্নীতির দায়ে গ্রেফতার করে। নেত্রীদ্বয়ের পরিবারের বিভিন্ন সদস্যকেও দূর্ণীতির দায়ে আটক করা হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান যেমন, নির্বাচন কমিশন, জন প্রশাসন কমিশনে সংস্কার করেন। ২০০৮ সালের ২৮ শে ডিসেম্বরর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে নির্বাচন অনুষঠিত হয় এবং নোয়াখালি একটি আসনে এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারনে ঐ আসনে নির্বাচন স্থগিত হয়।২৯৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট আসন পায় ২৬২টি আসন এবং তারা সরকার গঠন করে। বি এন পি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট পায় মাত্র ৩২টি. বি এন পি এই নির্বাচনে ডিজিটাল কারচুপির অভিযোগ আনে।





সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন, ১৯৯৬

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবলিত বাংলাদেশের সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন আইন, ১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ ষষ্ঠ সংসদের প্রথম অধিবেশনে ২৬৮-০ ভোটে পাস হয়৷ ২৮ মার্চ রাষ্ট্রপতির সম্মতিলাভের পর এটি আইনে পরিণত হয়৷ এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে চতুর্থ ভাগে “২ক পরিচ্ছদ : নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার” নামে নতুন পরিচ্ছেদ যোগ হয়৷ এতে ৫৮ক, ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ ও ৫৮ঙ নামে নতুন অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত হয়৷ এছাড়া সংবিধানের ৬১, ৯৯, ১২৩, ১৫৭, ১৫২ অনুচ্ছেদসহ তৃতীয় তফসিলের বিধান সংশোধন করা হয়৷



রায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল*

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজন করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী করায় এর বৈধতা নিয়ে ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী এম সলিমউল্লাহ, রুহুল কুদ্দুস বাবু ও মো. আবদুল মান্নান খান হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এই তিন রিট আবেদনকারী আইনজীবীর মধ্যে এম সলিমুল্লাহ মারা গেছেন। রুহুল কুদ্দুস বাবু এখন হাইকোর্টের বিচারপতি। এ কারণে মো. আবদুল মান্নান খানকেই রিট আবেদনকারী হিসেবে ধরা হয়েছে।

রিট আবেদনে বলা হয়েছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বা পদ্ধতি গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনার পরিপন্থী। এটা সংবিধানেরও পরিপন্থী। কারণ গণতন্ত্র ও সংবিধানের চেতনা হচ্ছে, সব সময় নির্বাচিত সংসদ বহাল থাকবে। নির্বাচিত সরকারই দেশ পরিচালনা করবে। রিট আবেদনে আরো বলা হয়, প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করা নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক্করণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ওই রিট আবেদনের ওপর দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বৈধ ঘোষণা করে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেন আদালত। ফলে আপনাআপনিই আপিল হিসেবে মামলাটি আপিল বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়। এ আপিলের ওপর গত ১ মার্চ থেকে আপিল বিভাগে শুনানি হয়। শুনানি শেষ হয় ৬ এপ্রিল।১০ মে ২০১২সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।



কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বি এন পি আদালতের এই রায়কে মেনে নিতে পারিনি।তারা আওয়ামী লীগের অধীনে কোন নির্বাচন চায় না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধিতি পূণর্বহল চায়।ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আদলতের রায় মেনে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে চায়।যেহেতু কোন গণতান্ত্রিক দেশে এই সরকার ব্যবস্থার প্রচলন নেই।

আওয়ামী লীগের দাবির যৌক্তিকতা থাকলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নত দেশের মত নয়।এদেশের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধিতি বিকল্প এখনো তৈরী হয়নি বলে অধিকাংশ বিজ্ঞজনেরা মনে করেন।যদিও প্রত্যেক টি নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা হয়েছে।বিশেষ করে শেষ নির্বাচন টি।তারপরও রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ না হওয়া পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এর মাধমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা যেতে পারে।প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধিতিকে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে যেন আরেকটি ১/১১ এর আগমন না ঘটে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:১৪

আশফাক সুমন বলেছেন: পুরপুরি সহ মত ।

++++++++++++

২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪৬

তিমিরবিদারী বলেছেন: জটিল....................।

৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫৫

মো.জাকারিয়া হাবিব বলেছেন: লেখাটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ; আশা করি ভবিষ্যতেও এ ধরনের লেখা পাবো ; চালিয়ে যান

৪| ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ২:০৫

মো.জাকারিয়া হাবিব বলেছেন: Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.