![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশে রেফ্রিজারেটরের ব্যবসায় অস্থিরতা চলছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ১০ মাসে চারবার রেফ্রিজারেটর আমদানিতেট্যারিফ মূল্য পরিবর্তন করে চারটি আদেশ জারি করে। অল্প সময়ে বারবার ট্যারিফ মূল্য পরিবর্তনের ফলে এই ব্যবসায় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন এ খাতের আমদানিকারকেরা।
সর্বশেষ গত ২৯ আগস্ট এনবিআর এক আদেশে আমদানিকৃত রেফ্রিজারেটরের ওপর লিটারপ্রতি শুল্কায়ন হার ৬০ সেন্ট থেকে বাড়িয়ে ন্যূনতম এক ডলারও দেড় ডলার নির্ধারণ করে। এতে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। প্রসঙ্গত, রেফ্রিজারেটরের শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করা হয় লিটার ধরে।
শুল্কায়ন হার বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে আমদানিকারকেরা রেফ্রিজারেটর খালাস করছেন না। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে বিপুল পরিমাণ রেফ্রিজারেটর-ভর্তি কনটেইনার পড়ে আছে। এ রকম চললে রেফ্রিজারেটর বিক্রির মৌসুম হিসেবে পরিচিত কোরবানির ঈদের আগের সময়টিতে বাজারে বড়ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে এই রেফ্রিজারেটর আমদানিতেআন্ডার ইনভয়েসিংয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে এনবিআর এ আদেশ জারি করে বলে জানা গেছে। তাই প্রকৃত মূল্য যাচাই করতে সম্প্রতি এনবিআরের একটি প্রতিনিধিদল চীন ও থাইল্যান্ড সফর করে। এসব দেশের বিক্রয়কেন্দ্রের মূল্যধরে আমদানি করা রেফ্রিজারেটরের শুল্কায়নযোগ্য নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
তবে আমদানিকারকেরা দাবি করেছেন, তাঁরা সরাসরি উৎপাদকের কাছ থেকে রেফ্রিজারেটর কেনায় এর মূল্য অনেক কম।
রেফ্রিজারেটর আমদানিকারকেরা বলছেন, শুল্কায়নযোগ্য মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় রেফ্রিজারেটরে ভোক্তাপর্যায়ে দাম মডেলভেদে ছয় থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়বে। এতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই ব্যবসার স্বার্থে তাঁরা আপাতত বন্দর থেকেপণ্য খালাস করছেন না।
দেশে বর্তমানে বছরে সাড়ে আট লাখ পিস রেফ্রিজারেটরের চাহিদারয়েছে। এর প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানি করা রেফ্রিজারেটর দিয়ে চাহিদা মেটানো হয়। আর আমদানি করা রেফ্রিজারেটরে শুল্কহার গড়ে প্রায় ১০৭শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশে ওয়ালটন নামে একটি মাত্র রেফ্রিজারেটর সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানরয়েছে। দেশীয় সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানহিসেবে ২৩ শতাংশ হারে শুল্ক-করাদি পরিশোধ করতে হয় তাদের। এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছরগড়ে এক লাখের কিছু বেশি রেফ্রিজারেটর বিক্রি করে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু সিঙ্গার বাংলাদেশেরই প্রায় দেড় শ কনটেইনার ভর্তি রেফ্রিজারেটর পড়ে রয়েছে। আর প্রতিদিন একটি কনটেইনার বন্দরে রাখার জন্য মাশুল দিতে হয় ৭২ ডলার।
আমদানিকারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ঈদুল আজহা সামনে রেখে সারা বছরের এক-তৃতীয়াংশ রেফ্রিজারেটর বিক্রি হয়। এটি রেফ্রিজারেটর ব্যবসার মৌসুম। সে অনুযায়ী আমদানিকারকেরাঋণপত্র খুলে রেফ্রিজারেটর আমদানি করেছেন। কিন্তু এনবিআর শুল্কায়ন হার পরিবর্তন করায় তাঁরা এখন বিপাকে পড়েছেন।
বাংলাদেশ ইলেকট্রনিকস মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ সানা উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়তি ট্যারিফ মূল্যে রেফ্রিজারেটর খালাস করে বাজারে বিক্রি করা হলে আমদানিকারকদের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এর ফলে এ ব্যবসাটি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না। অথচ আমরা প্রতিবছর ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকা রাজস্ব দিই।’
তিনি আরও জানান, জাতীয় বাজেট ঘোষণার সময় এ খাতের ওপর কোনো নতুন শুল্কহার নির্ধারণ করা হয়নি। আর আমদানিকারকেরা সেটা বিবেচনায় এনে সারা বছরের, বিশেষ করে কোরবানির মৌসুমে রেফ্রিজারেটর আমদানি করেছেন। এখন হঠাৎ করে এত টাকা শুল্ক পরিশোধ করে বেশি দামে রেফ্রিজারেটর বিক্রি করতে গেলে ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এমন অবস্থায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর ইলেট্রনিকসমার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এনবিআরের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে উচ্চ ট্যারিফ মূল্যের ফলে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশীয় রেফ্রিজারেটর সংযোজনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে প্রতিষ্ঠানটি শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর সুবিধাসহ সরকার-প্রদত্ত সুবিধা ভোগ করলেও ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছেন না। কেননা, আমদানি করা রেফ্রিজারেটর ও ওয়ালটনের রেফ্রিজারেটরের মধ্যে দামের খুব বেশি পার্থক্য নেই।
©somewhere in net ltd.