নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাসান ইকবাল-এর লেখালেখির অন্তর্জাল।

হাসান ইকবাল

.... ছেলেবেলার দুরন্ত শৈশব কেটেছে নেত্রকোনায়। আর সবচেয়ে মধুর সময় ছিল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দিনগুলি। আর এখন কাজ করছি সুবিধাবন্চিত শিশুদের জন্য একটি স্পানিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায়।

হাসান ইকবাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারীর রুপকথা .... এবং আমাদের কন্যাশিশুরা

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৪

যদি প্রশ্ন করি-কেমন আছো বাংলাদেশ?

বাংলাদেশ কী সত্যিকারেই ভালো আছে? ভালো নেই। বাংলাদেশ যদি মা হয়, তার সন্তান কন্যারা। আমাদের নারীরা কী ভালো আছে, ভালো আছে আমাদের কন্যা শিশুরা।



শিশুদের নিয়ে খবর জাতীয় গণমাধ্যম গুলোতে ৩ শতাংশের বেশি প্রকাশিত হয়না। এর বাস্তব পরিসংখ্যান মিলবে আপনি যদি গত ছ’মাসের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে প্রকাশিত-প্রচারিত খবর, ফিচারের একটা তালিকা করে টালী তৈরি করেন।



কন্যাশিশুর পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক ইউনিসেফের এক গবেষণা তথ্য মতে, শতকরা ৩৫ ভাগ কিশোরী অপুষ্টির শিকার।

শূন্য থেকে ৪ বছর বয়সী কন্যাশিশুরা ছেলেদের চেয়ে ১৬ শতাংশ ক্যালরি ও ১২ শতাংশ প্রোটিন কম পায়।

এ ছাড়া ১০-১২ বছর বয়সী ৫৪ শতাংশ এবং ১৩-১৭ বছর বয়সী ৫৭ শতাংশের উচ্চতা আদর্শ উচ্চতার নিচে।



জাতীয় পুষ্টি কার্যক্রমের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের শতকরা ৬০ ভাগ কিশোরী অপুষ্টি ও রক্তস্বল্পতায় ভুগছে।

যার মধ্যে ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী ৪৩ ভাগ কিশোর-কিশোরী রক্তস্বল্পতায় ভুগছে এবং এদের প্রায় ৫ ভাগ কিশোর-কিশোরীর রক্তে হিমোগ্গ্নোবিনের পরিমাণ ১০ গ্রামের কম। দেশের কিশোর-কিশোরীর শতকরা ৪৩ জনের আয়োডিনের ঘাটতি রয়েছে এবং এর অভাবে স্নায়ুতন্ত্রের বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, মেধা ও বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। শতকরা ৬০ ভাগ কিশোরী অপুষ্টি ও অ্যানিমিয়ার শিকার।



বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাল্যবিয়েতে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। শত প্রচার আর আইন করেও বাল্যবিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৬৬ ভাগ কন্যাশিশুর ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। এর মধ্যে ৬৪ ভাগ কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণ করে।



আর অপুষ্টির শিকার কিশোরী মা হলে সে একটি অপুষ্ট শিশুরই জন্ম দেবে। অপুষ্টির শিকার মায়ের নানা জটিলতা দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে অপুষ্টির শিকার মায়েরা কম ওজনের শিশু জন্ম দেন।



প্ল্যান বাংলাদেশের সমীক্ষা মতে, পারিবারিক সহিংসতার কারণে ১৩ থেকে ১৮ বছরের যুব গৃহবধূ ও মেয়েদের শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি মারাত্মক শারীরিক আঘাতে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়ে থাকে। এ ছাড়া এসিড সন্ত্রাস, যৌন হয়রানি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় দেশের কন্যশিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।



এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন সূত্র মতে, শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ নারী ও কিশোরী এসিড সন্ত্রাসের শিকার।



আর সেই শিশুদের নিয়ে আমরা অনেক কথা বলি। একটি কন্যা শিশু, মেয়ে (১৮ বছরের নিচে) ইভটিজিংয়ের শিকার, বাল্য বিবাহ কিংবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেলে এ নিয়ে সংবাদ হয়। কিন্তু একটি কন্যা শিশু যে প্রতিনিয়ত তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সে খবর আমরা কেউ রাখিনা। মরা লাশের ছবির খবর প্রচার করে আমরা টিভি স্ক্রীনে আমরা সুন্দর অক্ষরে লিখে দেই “আমরা শিশুদের লাশ ও বিভৎস ছবি দেখাইনা।" এতটুকু করেই আমরা ক্ষান্ত হই। আমরা সুখবরগুলো খবরের কাগজে কম দেখতে পাই। আমাদের মিডিয়ার সংস্কৃতি হয়ে গেছে দুদলের লেজ টানাটানির খবর শিরোনাম করা। আমরা শিশুদের অধিকারের কথা ভাবিনা। শিশুদের নিয়ে যেমন অবহেলা ঠিক তেমনটি দেখি নারীদের ক্ষেত্রেও।



আপনি গৃহকর্তা/গৃহকত্রী হলে আপনার বাসায় কাজ করে কেটে খাওয়া ১০ বছরের ছোট শিশুটিকেও মারা/ নির্যাতন করা আরেক সংস্কৃতি চালু হয়েছে। সম্প্রতি নির্যাতত হওয়া ছোট মেয়ে "আদুরী"ও বাদ যায়নি। টার জন্য আমাদের শুভ কামনা নিরন্তর। এতো কিছু ঘটছে প্রতিদিন। আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের শম্ভুক গতি দেখে আমরা বিস্মিত হই। দেশে শিশু সুরক্ষার অনেক আইন আছে। আইনের সঠিক বাস্তবায়ন চাই আমরা।



যৌন নির্যাতনের শিকার (ধর্ষিতা) হয়ে সম্প্রতি একজন মহিলা আইনের আশ্রয় চাইতে থানায় গিয়েছিলেন। ডাক্তারী পরিক্ষার নাম করে যে বিভৎস অবস্হার সম্মুখীন হয়েছিল মেয়েটি সে খবর আমরা রাখিনা। একটি ধর্ষিতা মেয়ের ডাক্তারী পরিক্ষা-নিরীক্ষা কীভাবে একজন পুরুষ চিকিৎসক দ্বারা হতে পারে সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা অনেকেই সেটা খবরের কাগজে পড়েছি।



যৌতুকের বলি হয়ে কিংবা তালাকপ্রাপ্তা হয়ে একটি মেয়ের যে কী জঘন্য সময় কাটে। তাদের মনোজগতের খবর আমরা জানিনা। একটা কিশোরী মেয়ে কেন আত্মহত্যা করে, আত্নহননের পেছেনে কারা দায়ী আমরা কী কোনদিন একটু সময়ের জন্য এর কারন অনুসন্ধানে মনোযোগী হয়েছে। নাকি আমরা নিজেকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি পরিচয় দিতেই বেশি সময় ব্যায় করছি!



কিছুদিন আগে কুষ্টিয়া শহরে কোচিং সেন্টারে একজন গণিতের শিক্ষক দ্ধারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল দেড় শতাধিক মেয়ে শিশু। আমরা সে খবর জানতে পেরেছি। অপরাধের শাস্তির কথা বলেছি, আমরা কখনো ভেবেছি সে কোমলমতি মেয়েদের মানসিক অবস্হা কোন পর্যায়ে ঠেকেছিল। তারা জীবনে বড় হবার যে স্বপ্ন দেখেছিল, তা যখন ভেঙে চুরমার হলো, এতগুলো কিশোরী মেয়ের স্কুল যখন বন্ধ হয়ে যাবার পথে। আমরা ক'জন তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছি।



এরকম অসংখ্য গণিত শিক্ষক, পরিমল আমাদের মাঝে ছড়িয়ে আছে, যাদের কথা জানিনা। আমাদের মেয়েরা লজ্জায় কারোও কাছে বলতে পারেনা। তবে আমাদেরকে আরো বেশি লজ্জায় ফেলে দিয়েছিল যখন আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলে বসলেন- শিক্ষকরা আমাদের কাছে সম্মানের পাত্র, তাদের ক্ষেত্রে “শাস্তি” শব্দটি মানানসই নয়। একজন শিক্ষক যখন ধর্ষনের মত অনৈতিক অপরাধ করেন তখনতো আর শিক্ষক থাকছেন না।



একটি শিশু তার স্কলে/কোচিং-এ গন্ডির মধ্যেও নিরাপদে থাকতে পারছেনা। স্কুলে /মাদ্রাসায় নির্যাতিত হয় শিক্ষক দ্বারা, আর রাস্তাঘাটে শারীরিক মানসিক ভাবে নির্যাতিত হয় মাস্তান বখাটে দ্বারা। একটি কিশোরী মেয়ে তখন তার জীবনের স্বাভাবিক বিকাশের পথগুলোতে হোছট খায়। ঝরে পরে স্কুল থেকে। অনেক ক্ষেত্রে বাল্য বিবাহের ঘটনা ঘটে। ঘটে আত্নহত্যার মতো ঘটনা। অনেকেই বিচারের জন্য আইনের আশ্রয় নিলেও দেখা যায়, অপরাধী খুব কম সময়ের মধ্যে ছাড়া পেয়ে যায়।

আর বিচার না পেয়ে অনেক মেয়েশিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।



“কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন” এই শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে গেল সপ্তাহে আমাদের অনেক আয়াজন ছিল। অনেক কন্যা শিশুদের নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া বিড়ম্বনার কথা আমাদের অকপটে বলেছে।

শিশুরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে কি ধরণের নির্যাতন পায় অথবা মেয়ে শিশুদের নির্যাতিত হতে দেখে এবং এই ধরণের নির্যাতন কিভাবে বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা ও কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এই আলোচনা শিশু নির্যাতন বিশেষভাবে মেয়ে শিশুর উপর নির্যাতন বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে নেতৃবৃন্দ, নীতি-নির্ধারক এবং সুশীল সমাজের সংগঠন সহ সকলকে ঐক্যবদ্ধ ও অঙ্গীকারাবদ্ধ করবে। উন্মুক্ত আলোচনায় উঠে আসে কন্যা শিশুর প্রতি নির্যাতন, ইভ টিজিং, বাল্য বিবাহ ও সহিংসতার কথা। আমরা ঘুরে ফিরে শিশু অধিকার সনদের দিকে তাকাই।

অনুচ্ছেদ-৬ এ আছে শিশুর বেঁচে থাকার অধিকাররে কথা। যেমন-

-প্রতিটি শিশুর বেঁচে থাকার অধিকারকে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ স্বীকৃতি দেবে৷

-অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র শিশুর বেঁচে থাকার এবং উন্নয়নের জন্য যথাসম্ভব সর্বাধিক নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করবে৷

দেশের শিশু ও বৃদ্ধদের দেখাশোনার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কারণ, সরকার শুধু আইন করে, তা বাস্তবায়ন করে না। তাই শিশুদের নিরাপত্তায় সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।



আমরা চেয়ে থাকি জাতীয় শিশু নীতির দিকে। যেখানে শিশুদের বাঁচার কথা বলে, স্বপ্নের কথা বলে। অথচ আমাদের শিশুদের বাঁচাতে পারছি কোথায়।

জাতীয় শিশু নীতিতে শিশুর সুরক্ষার কথা আছে, যেমন-

-সকল প্রকার সহিংসতা, শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন এবং শোষণের বিরুদ্ধে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। শিশুদের উপর সহিংসতা, নির্যাতন ও অবহেলা বন্ধ করার লক্ষ্যে কার্যকর ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

-আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু এবং বিচার প্রক্রিয়ায় শিশু অংশগ্রহণের অধিকার শিশু আইনের অধীনে নিশ্চিত করা হবে।

-শিশুদের মাদক ব্যবহার প্রতিরোধ উপযুক্ত পদক্ষেপ এবং মাদকাসক্ত শিশুদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

-শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার, প্রলোভন বা জোর করে জড়িত করা হবে না।



সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে একটি মেয়ের মা-বাবা যেমন চিন্তিত হয়, আজ তার মেয়েটা ভালভাবে ঘরে ফিরে আসবেতো। স্কুলে, হাসপাতালে, কল-কারখানায়, অফিসে যেখানেই যাক না কেন। মাথায় দুশ্চিন্তার অনুরনন বন্ধ হয়না। এরকম কেন? একটা ভালো সকালের নিশ্চয়তা নেই, একটা ভালো দিনের নিশ্চয়তা নেই।



আমরা কী তাহলে সেই একাত্তুরের সেই ভয়াল দিনগুলোতেই আছি। বিভৎস এক একটি ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত। যেখানে পাক-হানাদারদের ভয়ে সম্ভ্রম বাঁচানোর জন্য কাচুমাচু হয়ে বেঁচে থাকা।



আমাদের অনেক কিছু করার আছে। এটিও একটি নতুন যুদ্ধ। আমাদের কন্যা শিশুদের ভয়হীন নিরাপদ ভবিষ্যত বিনির্মানের জন্য। লাল-সবুজের শক্তির প্রত্যয় নিয়ে যার যার অবস্হান থেকে ইভটিজিং, বাল্য বিবাহ, যে কোন ধরনের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।



ছোটবেলা থেকে আমরা গান করছি-

"আমরা করব জয়, আমরা করব জয়, আমরা করব জয় একদিন"



সে একদিন কবে আসবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হবার সময় এখনই। সে "একদিন" র সূচনা আজ থেকেই করতে হবে।



হাসান ইকবাল

৬ অক্টোবর ২০১৩, ঢাকা।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.