![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভ্যালেন্টাইনের শুভেচ্ছা
সীমা আপু উধাও । উধাও তো উধাও । সীমা আপু বাসার লোকজন ছাড়া সবচেয়ে বেশি ঝাটকা লেগেছে আমাদের । বলতে, ক্লাস সিক্সে পড়া মিড-ব্রেঞ্চার ৪/৫ জন । আমাদের ধারনা ছিল । ঠিক ধারনা না, অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস ছিল যে, নাইন টেনে পড়া আমাদের আপুরা কে কার সাথে প্রেম করছেন সব আমাদের জানা । এমন কি, কিছু আপুদের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করে যখন কোন কিছু পাওয়া যেত না তখন নিজেরাই কাহিনি বানিয়ে রটিয়ে দিতাম ।
এই রটনার শিকার সামাদ ভাইয়ের উপর পিলু ভাই যেভাবে চড়াও হয়েছিলেন তা দেখে আমরা চরম ভয় পেয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আর না...... । কিন্তু কদিন যেতেই আবার সেই আমরা । বেচারা সামাদ ভাই কতভাবে বুঝাতে চেষ্টা করেছে যে এমন কিছুই ঘটেনি তা মফস্বল শহরের এক বোনের ভাই কেন মানতে যাবে । সেটা তখন তার কাছে লোকলজ্জার ব্যাপার ।
যাক, পরে জানলাম সীমা আপু তার খালাত ভাইয়ের সাথে পালিয়েছে । খালাত ভাই এই শহরের না তাই আমরা ঠের পাই নি । এই অকাট্য যুক্তি প্রমান করে, আসলে সীমা আপু র ব্যাপারটা আমাদের কৃতিত্ব খুব একটা ম্লান করতে পারে না ।
উকিল সাহেবের মেয়ে রুনা আপু মাহবুব ভাইয়ের সাথে পালাবে জানতাম । যেদিন ঘটনা ঘটল সেদিন বন্ধু মহলে আমাদের ক্রেডিট বেড়ে গেল অনেক ।
শিউলি আপু খুব সুইট ছিলেন । মানিক ভাই প্রতিদিন মুড়িওয়ালাকে চিঠি দিয়ে আসতেন । মুড়িওয়ালা সেই চিঠিতেই মুড়ি চানাচুর দিত শিউলি আপুকে । শিউলি আপু চিঠি রাখতেন স্কুলের নারিকেল গাছের পাতার গুড়ার দিকে চিপায় ।
মুন্নি আপু উপজেলার কোন এক অফিসারের মেয়ে । রতন দা তাকে পছন্দ করেন কিন্তু কখনই বলতে পারেন নি । ওটা কেউ জানে না, আমরা ছাড়া। বেচারা ফুটবল খেলতেন । শুধু তাকে দেখার জন্য রাস্তায় বল নিয়ে দাড়িয়ে থাকতেন । ভাবটা এমন যে তিনি বাকিদের জন্য অপেক্ষা করতেন । ওরা আসলেই খেলা শুরু হবে । হা হা ...... ভাই, বাকিরা আসবে মাঠে আপনি কেন এখানে রাস্তায় অপেক্ষা করবেন । যাক আমরা তার চাহনি বুঝি । বুঝে মুন্নি আপু ও ।
সারমিন আপু খুব সুন্দর ব্যাংকের ম্যানাজারের মেয়ে । জিল্লুর তাকে পছন্দ করে । লেখাপড়া ফাইভ/সিক্স পর্যন্ত । হালকা-খারাপ টাইপের ছেলেদের সাথে মেলামেশা ছিল। আমরা ভয় পেতাম । খেলার সময় এসে বলত , কয়টা বল করতো, চার ছয় কয়টা মেরে চলে যেত । হটাৎ করেই ভাল । পেন্ট সার্ট পড়ে ফিটফাট । সারমিন আপুকে ঈদ পার্বণে বই, কলম, কার্ড গিফট করতো । এখন বলতে পারি আমার দেখা এক অনন্য স্মার্ট মেয়ে সারমিন আপু । ১৪/১৫ বছরের একটা মেয়ে বুঝতে পেরেছিল এই রকম একটা বাউন্ডোলে টাইপের ছেলেকে মুখের উপর না বলা যাবে না । অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে । তারচেয়ে তাকে হেন্ডেল করে দূরে দূরে রাখতে হবে । কোনভাবে বুঝিয়েছে কাছে এসে কথা বলা যাবে না বাসায় সমস্যা হবে । লাভের লাভ যেটা হল, বিনা খরছে বাসা টু স্কুল পর্যন্ত বডিগার্ড পাওয়া গেলো । সারমিন আপু স্কুল পাস করলেন, বাবা ও বদলী হলে এই প্রেম (!) এখানেই শেষ ।
ছেলেবেলায় আমাদের মফস্বল উপজেলাগুলোতে এমন প্রেমই দেখেছি ।
অনেক হইলো, এইবার আমাদের প্রেমের বয়স হইলো । ইঁচড়ে পাকাদের যারা সফল প্রেমিক । তাদের যখন দাওয়াত করে, বাচ্চার বাপ হওয়ার খুশীতে মিষ্টি খাওয়াই সেই বন্ধুই দুইদিন পরে তার বাচ্চার এসএসসি পাসের মিষ্টি খাইয়ে যায়। সফল প্রেমের ফল !!!
আমার বন্ধু রেজা প্রেম করছে নায়মার সাথে । কলেজে তখন । আরেক বন্ধু সোহেল মেয়ের কাজিনকে বলে দিয়েছে !!!! তুমুল গেঞ্জাম হয়েছে মেয়ের বাড়িতে । এমন ভাল্লুকের মত কাজ কারবার রেজা মেনে নিতে পারছে না । সবাই মিলে সোহেলকে নিয়ে বসেছি । “ সোহেল তুই এই কাম করলি ক্যা ?” সোহেল হাসে ...... কথা কয় না। সোহেল রেজার কথা বন্ধ । পরে কখনো, সোহেল বুঝায়, আমার আগে তুই প্রেম করতে পারবি না ?!?!?!?! রেজা বাকরুদ্ধ ?!?!?!? এতো বছর পর রেজা সেই গল্প বলে মজা পায়, সোহেল এখন ও হাসে, কথা কয় না।
মিশু বলবান, সাস্থবান । তার ঘুষিতে ভিটামিন থাকে। আমাদের অত্যাচার করে । জুয়েল তার রুমমেট । মিশুর ঘুষি এড়ানোর কৌশল সেই বেশি জানে । বলতে চাচ্ছি প্র্যাকটিসের সুযোগ সে বেশি পেয়েছে । একদিন, একদিন সেই একদিন জুয়েলের ভাগ্যের চাকা খুলে গেলো । হালকা গড়নের জুয়েলের হাতে মিশুর ডার্লিংকে লেখা চিঠির ফটোকপি । মূলটা মিশুর হাতে দিতে দিতে যে সন্ধিটা হল তাদের মধ্যে তাতে পালোয়ান মিশুকে চামচিকা জুয়েলের হাতে বাকি জীবনের জন্য কোপকাত হতেই হল। সন্ধিটা ছিল এমন যে, মিশু আর কখনই জুয়েলকে ভিটামিন দেয়ার নাম নিবে না । আর তা না হলে আমরা সবাই একটা করে চিঠির কপি পাব । এতেই কাজ হয়েছে, আজো রহস্য কি এমন ছিল সেই চিঠিতে যে মিশু আজো জুয়েলের বাধ্যগত (আমি নিশ্চিত ঐ চিঠির ভাষা XXX টাইপের ছিল)। আজো জুয়েলের সেই সাফল্যের হাসি অম্লান । মহাবীর রুস্তমও সেই হাসি দেখলে হিংসায় পুড়বেন । কত শত পালোয়ানকে পরাজিত করে,এতো এতো যুদ্ধ জয় করে ও মহাবীর এমন যুদ্ধজয়ী হাসি দিতে পারেন নি ।
আজকালের প্রেম দেখলে আফসোস হয় । আহা কত সুযোগ তাদের । যুগে যুগে প্রেমে এত যে ঝামেলা তার একমাত্র কারন যোগাযোগের অভাব বলতে, সমাজ লোকচক্ষু এড়িয়ে যোগাযোগ করাটা কঠিন। মনের কথা জানাতে হবে । এক মোবাইল ফোন এই সমস্যার প্রায় ৯০ ভাগ সমাধান করে দিয়েছে । আজকাল ছেলে মেয়েরাও খুবই সমজদার। ওরা প্রেমকে বেশ সহজ ও সরলীকরণ করে ফেলেছে । প্রেমের বয়স আসলে প্রেম করে ফেলতে হবে । এবং সময় মত প্রেমটা করেও ফেলে ঝুলিয়ে রেখে প্রান পুরুষ কিংবা ড্রিম গার্ল খুজে বেড়ায় না। আয়োজন করে ভ্যালেন্টাইন, পহেলা বৈশাখ, ফাল্গুন, বসন্ত পালন করে।
এখন পুরোপুরি প্রেমে পড়ার আগে বেশ কয়টা ক্রেশ খেতে হয় । আগে এমন কমই হত । যেই দেখা সেই চুরমার হৃদয়। এখনকার মত ক্রেশ খেতে খেতে প্রেমে পড়ার পদ্ধতিটা তখন আবিষ্কারই হয় নাই । সত্যি বলতে, এমন পরিস্থিতিটাকে যে " ক্রেশ খাওয়া" বলে সেটাই জানত না । অনেকে এই ক্রেশ খাওয়াকেই প্রেম বলে ধরে নিত ।
আবার প্রেমে পড়ার পর তারা একনাগাড়ে প্রেম করে বেড়ায় না । প্রেম করতে করতে ক্লান্ত হলে ব্রেক নেয় । একে ব্রেকআপ বলে । কয়দিন আগেও শুনা যেত, “ ‘ ক ’ এর সাথে ‘ অ ’ এর ব্রেকআপ হয়ে গেছে ।“ মানে এদের প্রেম শেষ, তারা উভয়ই এখন অন্য কারো প্রেমে পরতে পারেন বা প্রেমে পরতে প্রস্তুত আছেন।
আর এখন শুনি , “ ‘ ক ’ এর সাথে ‘ অ ’ এর ব্রেকআপ চলছে ।“ মানে কয়দিন পর আবার এদের মাঝেই প্রেম শুরু হওয়ার সুযোগ আছে ।
সময় বদলেছে অনেক কিছুই সহজ হয়ে গেছে তাই হয়ত ওরা এখন সাহসী । ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়ে দেয় কার সাথে কে রিলেশনশিপে আছেন । না বলে বাসা থেকে পালাতে হয় না। একসময় প্রেমে ছ্যেকা খাওয়া কে অপমান জনক মনে করা হত । আর প্রেমিকা থাকাকে একটা স্ট্যাটাস মানা হত । আর আজকাল ছেলে মেয়েরা অনেক বাস্তববাদী । তারা দুটোকেই স্ট্যাটাস হিসেবেই দেখেন । লাইফে প্রেম আর ব্রেকআপের সংখ্যার উপর সফলতা নির্ভর করে তাদের।
তবে প্রেমের সেকাল বলুন আর একাল । যেটা চিরন্তন সেটা হল, এটাই জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় । এই প্রেমের সময়টা কেউ কখনো ভুলতে পারে না । অনেকদিন পর এই অনুভূতিটারও গভিরতা কম বেশি হয় কারনে অকারনে ।
• ভালবেসে ছিলেন কিন্তু বলতে পারেন নি । আজ অন্য কারো সাথে সংসার করছেন । এক ধরনের বোকা বোকা অনুভূতি ।
• ভালবেসে ছিলেন কিন্তু বলতে পারেন নি বা পারলেও সাড়া পান নি। পরে আর সংসার করা হয়ে উঠেনি (কি যেন কি প্রমান করতে চান তারা। যা নিজেও জানেন না। )। বয়স হয়েছে এখন আর কেউ বিয়ের জন্য চাপ দেয় না । আরেকটু সাধিলে তখনই খাইতাম অনুভূতি।
• প্রেম করেছেন বিয়ে ও করেছেন । বাহাদুর বাহাদুর অনুভূতি ।
• প্রেম করেছেন বিয়ে করতে পারেন নি । সে সুখে নেই শুনাতেই যত সুখ(অনুভূতি)।
আজ ভালবাসার জন্য দিবস আমদানি করা হয়েছে । মিডিয়ায় এর ভরপুর আয়জন দেখাচ্ছে । এই ব্যাপারটার ভালই বানিজ্যিকিকরন হচ্ছে । কিন্তু এটি অনন্তকাল ধরে হয়ে আসছে । ভ্যালেন্টাইন দিবস থাক বা না থাক । অনুভূতি নামক মদ একই শুধু বোতলের চাকচিক্য বেড়েই চলেছে। চলুক ।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৬
হাসান রাজু বলেছেন: ধন্যবাদ । ভালোলাগাটুকু শেয়ার করার জন্য । ভ্যালেন্টাইনের শুভেচ্ছা রইলো, ভালো থাকবেন ।
২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২০
সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: অনেক সুন্দর উপস্থাপনা।
তবে অাপনাকে ব্লগে খুব একটা দেখা যায়না সম্ভবত।
শুভকামনা ভাইয়া।
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৮
হাসান রাজু বলেছেন: ধন্যবাদ । অশেষ ধন্যবাদ ।
আসলে তেমন লিখতে পারি না । কাঁচা তাই সাহস কম ।
কয়টা ফটো ব্লগিং আছে । লিখতে হয়না তাই সহজ লাগে ।
ঐ যে লিখায় ভয় আছে তাই লিখি কম এমন কি মন্তব্য ও করি কম ।
ব্লগে আমার দেখা নাই, কিন্তু ব্লগ আমি সব সময় দেখি ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩০
সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: হাহা। বুলেট করা পয়েন্টগুলো মজা পেলাম বেশি