নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোকা মানুষের কথায় কিই বা আসে যায়

বোকা মানুষ বলতে চায়

আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১

বোকা মানুষ বলতে চায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাস্তায়......খুঁজে ফিরি কায়দায়......

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪০

ডিসেম্বর থেকে মার্চ, এই চার মাসের মধ্যে রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকাবাসী পেতে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা যা এই শহরের তীব্র ট্রাফিক জ্যাম হতে নিস্তার দেবে এই শহরের অধিবাসীদের। এর মধ্যে রয়েছে কুড়িল ফ্লাইওভার, মিরপুর-বনানী ফ্লাইওভার, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার স্টাফ রোড রেল ক্রসিং এর ওভারপাস, বহুল আলোচিত ও কাঙ্ক্ষিত হাতিরঝিল প্রকল্প প্রভৃতি। আরও অনেকের মত আমিও আশা করি, আমরা, ঢাকা শহরবাসীরা এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কল্যাণে মুক্তি পাবো নিত্যদিনের ট্র্যাফিক জ্যাম থেকে। কিন্তু এইগুলো আসলে কতটুকু উপকৃত করবে সাধারণ নাগিরিকদের তা প্রশ্ন স্বাপেক্ষ। কেননা বেশিরভাগ প্রকল্পের সুবিধা পাবে প্রাইভেট ট্রান্সপোর্টগুলো, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট থাকছে উপেক্ষিত। আমার মনে হয়......... মনে হয় কেন, এটাইতো সত্যি যে বেশীরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের মাষ্টারপ্ল্যানই করা হয় সমাজের উচ্চ শ্রেণীর একটি ক্ষুদ্র অংশর স্বার্থকে মাথায় রেখে। রাজধানী ঢাকার পরিবহণ ব্যাবস্থা দেখলেই তা সহজে অনুমান করা যায়। পূর্বের চার লেন পদ্ধতি, ভি আই পি সড়ক, মূল সড়কগুলোতে রিকশার প্রবেশ নিষিদ্ধকরন, ফ্লাইওভারগুলোতে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের প্রবেশাধিকার সীমিতকরণ ইত্যাদি শুধুই উপকৃত করেছে ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠীকে, উপেক্ষিত থেকেছি আমরা সাধারণ শহরবাসীরা, জীবন ও জীবিকার তাগিদে যাদের প্রতিদিন ছুটতে হয় শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।



আমাদের গতিময় জীবনের একটি বিশাল অংশ চলে যাচ্ছে প্রতিদিনকার ট্র্যাফিক জ্যামে। প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা সময় হারিয়ে যাচ্ছে এই ট্র্যাফিক জ্যামের নিকষ আঁধারে। প্রতিদিনকার ৮-৯ ঘণ্টার কর্মব্যাস্ততার সাথে যোগ হচ্ছে ৩-৪ ঘণ্টার যাত্রাপথ যা মাঝে মাঝে ৫-৬ ঘণ্টায়ও পৌঁছে। সব মিলিয়ে গড়ে ১৪-১৬ ঘণ্টা জীবিকার সন্ধানে চলে যাচ্ছে আমাদের জীবন থেকে প্রতিদিন। বাকি সময়টা নিজেকে পরের দিনের কর্মব্যাস্ততার জন্য তৈরি করতে কেটে যায়। অধরা থেকে যাচ্ছে নিজেকে, পরিবারকে, পরিজনকে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকু।



আর পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলোর বেহাল দশা আর অপ্রতুলতা নিয়ে আর কি বলব। পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলোর বেশীরভাগই অতি পুরানো অথবা কিছুটা সংস্কার করে নতুনের মাঝে পুরানো। যদিও ইদানীংকালে বি.আর.টি.সি. বেশকিছু রুটে নতুন বাস নামিয়েছে, কিছু প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিও নতুন বাস আমদানি করেছে। কিন্তু এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। যারা নিত্যদিনকার ডেইলিপেসেঞ্জারি করে, শুধু তারাই যানে এই অপ্রতুলতার যাতনা। যদি আপনার বাস স্টপেজ, যেখান থেকে আপনি বাসে উঠেন, তা হয় কোন রুটের মধ্যবর্তী স্থানে, তাহলে আপনি জানেন যে, সকাল বেলা বাসে উঠতে কি যুদ্ধই না করতে হয় আপনাকে। বাদুড়ঝোলা শব্দটির উদাহরণ হননি এমন ডেইলিপেসেঞ্জার পাওয়া দুস্কর।



কিন্তু এই যাতনার বিপরীতে আমাদের পে করতে হয় উচ্চ হারে। ঢাকা শহরে এখন সর্বনিম্ন বাস ভাড়া পাঁচ টাকা। এই নিয়মের স্বপক্ষে যুক্তি ছিল মালিকদের সর্বনিম্ন মুনাফা, যা না হলে তাদের ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, বেশীরভাগ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি স্টপেজ বা দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করে না, তারা যা করে তা হচ্ছে, কিছু নির্দিষ্ট টাকার অঙ্কে টিকেট বানিয়ে তার উপর ভিত্তি করে স্টপেজগুলোকে নির্দিষ্ট করে। আর এই গ্যাঁড়াকলে পরে আমরা অনেক সময় কিলোমিটার প্রতি ৩-৫ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হই যা নির্ধারিত রেটের দুই-তিন গুন বেশী। আবার কিছু ট্রান্সপোর্ট রয়েছে যার ভাড়া রুটের যে কোন স্থানের জন্যই সমান অর্থাৎ আপনি যেখানেই নামেন আপনাকে পুরো ভাড়া প্রদান করতে হচ্ছে। কিন্তু এগুলো দেখার জন্য কেউ আছে বলে মনে হয় না। ভাড়া প্রসঙ্গে বলতে চাই পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় যে পদ্ধতিতে তা হল “কষ্টিং ফর সার্ভিস”। এই সম্পর্কে কিছুটা জানি বলে বলতে চাই, সরকার নির্ধারিত কিঃমিঃ প্রতি ভাড়া সর্বনিম্ন নয়, এখানে রয়েছে তেল খরচ, গাড়ীর স্টাফদের বেতন/মজুরি, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, গাড়ীর অবচয় (যে মূল্যয় গাড়ীটি কেনা হয়েছে তা গাড়ীর মোট সার্ভিস প্রদানকাল সময়ে সমহারে খরচরুপে চার্জ করা), বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স, ইন্সুরেন্স, সাবস্ক্রিপ্সন ফি ইত্যাদি বাবদ খরচ এবং মালিকের মুনাফা যা দ্বারা ব্যাংক সুদ, সরকারি কর পরিশোধের পরও বেশ ভাল অঙ্কের মুনাফা গাড়ীর মালিকের পকেটে যায়। আমি নিজে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের কষ্টিং করে দেখেছি, সব খরচ বাদ দেয়ার পরও প্রায় ২০-৩০% মুনাফা থাকে এই মালিকদের যদি তারা সরকারের নির্ধারিত রেটে কিঃমিঃ প্রতি ভাড়া কাটে।



কিন্তু আমরা প্রতিদিন নির্দিষ্টর চেয়ে বেশী ভাড়া দিয়ে, বাদুর ঝোলা হয়ে, একপায়ে ভর দিয়ে কোনমতে দাড়িয়ে, ট্র্যাফিক জ্যামে ঘণ্টার পড় ঘণ্টা কাটিয়ে পাড়ি দেই আমাদের প্রিয় এই শহরের রাজপথ। এইসবের বাইরেও রয়েছে আরও হাজারটা ঝুট-ঝামেলা। প্রতিদিনকার চলার পথের এইসব যাতনা সহ্য করেই আমরা রোজ ছুটে চলি। আমাদের চলার পথের কষ্ট আমাদের মহামান্য নেত্রীবৃন্দ কি কখনো বুঝবেন? নিজ দেশের ট্রান্সপোর্ট সম্পর্কে তাদের ভাবনা সম্পর্কে ধারনা পেতে একটি গল্প শুনুনঃ



তিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান একসাথে বিশ্ব ভ্রমনে বের হয়েছেন। আমেরিকা, ভারত আর বাংলাদেশের। তাদের গাড়ি ছুটে চলছে। হঠাৎ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘আমরা এখন আমেরিকায়’। বাকি দুইজন জিজ্ঞাসা করলেন যে, তিনি কিভাবে বুঝলেন? উত্তরে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘সব গাড়িকে সারিবদ্ধ হয়ে দ্রুত ছুটতে দেখে। আমাদের দেশে গাড়িগুলো এভাবে সারিবদ্ধ হয়ে দ্রুত ছুটে চলে’। এক সময় ভারতীয় প্রেসিডেন্ট বলে উঠলেন, ‘আমরা এখন ভারতে’। বাকি দুইজন জিজ্ঞাসা করলেন যে, তিনি কিভাবে বুঝলেন? উত্তরে ভারতীয় প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘এইমাত্র পার হওয়া এক জায়গায় এক টাকা তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সমাবেশ দেখে। আমাদের দেশে এক পয়সা ভাড়া বাড়লেই প্রতিবাদের মিছিল শুরু হয়ে যায়, আর এত তেলের দাম বাড়া...’। কিছক্ষন পর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বলে উঠলেন, ‘আমরা এখন বাংলাদেশে’। বাকি দুইজন জিজ্ঞাসা করলেন যে, তিনি কিভাবে বুঝলেন? উত্তরে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘রাস্তায় আর কোন গাড়ি না দেখে। আমাদের দেশে রাস্তায় একই সময় একাধিক গাড়ি চলেনা’।



সবশেষে গায়ক অর্ণবের একটি গানের অনুকরনে বলতে চাই, ‘রাস্তায়......খুঁজে ফিরি কায়দায়...... যেতে পারি যদি কাঙ্ক্ষিত জায়গায়............’

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০০

আতাউররহমান১২০০৭ বলেছেন: খুব বাস্তবধর্মী একটা লেখা । আসলে যানজট নিরসনে সরকারের চলমান ও Future এ হাতে নেওয়া প্রকলপ গুলো সমাজের ক্ষুদ্র অংশ ,এলিট Class কেই সুবিধা পৌছাবে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.