নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
রুবির চেহারা দেখে প্রীতমের ভয় লাগছে। আগে তার এইরকম চেহারা কখনো দেখিনি। এই চেহারা বলে দেয় সে সব কিছু করতে পারে। প্রীতম যথাসম্ভব চেহারাটা গম্ভীর করার চেষ্টা করল।
“দেখো রুবি আমি ঠাট্টা একেবারে পছন্দ করিনা”
“স্যার, আমি ঠাট্টা করছিনা। আপনি আমার শিক্ষক, আপনার সাথে আমি ঠাট্টা করব কেন?”
“তার মানে কি তুমি যা বলছ, তা সত্যি সত্যি করবে?”
“হ্যাঁ স্যার। কাল রেজাল্টে যদি দেখি আমি A+ পাইনি, তবে আমি সত্যি সত্যি আত্মহত্যা করব।”
“ওহ রুবি, তুমি অবশ্যই A+ পাবে। আর যদি নাও পাও, তাতে কি আসে যায়? A+ পাওয়াটাইতো সব নয়!”
“না স্যার, আমার জন্য A+ পাওয়াটাই সব। আপু, ভাইয়া দুজনই A+ পেয়েছে। আমি না পেলে সবার টিটকারি শুনতে হবে, আমি তা সহ্য করতে পারব না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি যা করবে তাই ঠিক আছে। তবে আত্মহত্যা করার আগে রেজাল্টটা আমাকে জানাবেতো?”
প্রীতমের এই কথায় রুবির মুখে হাসি ফুটল। গত তিন বছরের বেশী সময় ধরে প্রীতম রুবিকে পড়াচ্ছে। ক্লাস এইট থেকে তিলে তিলে রুবিকে এস.এস.সি.’র জন্য তৈরি করেছে। রুবির পরিবার খুব উচ্চ শিক্ষিত, তার বড় দুই ভাই-বোন ঢাকা মেডিক্যালে পড়ছে। ওর বাবা আর্কিটেক্ট, মা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। এই পরিবারের সন্তান A+ পাবেনা এটা এই ছোট মেয়েটির কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পরাজয়।
প্রীতম খুব অবাক হয় আমাদের দেশের পড়ালেখার অবস্থা দেখে। জীবীকার তাগিদে গত ১৫ বছর যাবত প্রাইভেট টিউশনি করে যাচ্ছে। আর দেখছে আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যাবস্তার দুর্বলতাগুলো। অঙ্ক বইয়ে ভুল অঙ্ক, ভুল উত্তর বছরের পর বছর অপরিবর্তিত থাকছে। সিলেবাস কোন ধারাবাহিকতা মেনে হয়নি, রয়েছে প্রচুর অসামঞ্জস্য। মার্কস, গ্রেডের পেছনে ছুটছে সবাই। কিন্তু এই ছোটা কি দিচ্ছে প্রকৃত বিদ্যার্জনের অনুপ্রেরনা?
ভুঁড়ি ভুঁড়ি গ্রেড প্রাপ্তি হচ্ছে, কিন্তু মেধার বিকাশ কি হচ্ছে? মুখস্ত বিদ্যার জোড়, আর সাথে নানান সাজেশন, শিক্ষক-পরীক্ষকদের ঔদার্য ইত্যাদির কল্যাণে আজ পাশের হার দাঁড়িয়েছে ৮৯%। A+ পাওয়ার হিরিক, আজ ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। কিন্তু এই ৫০ হাজার ছেলে-মেয়েকে যথাযথ উচ্চ শিক্ষা দেয়ার অবকাঠামো বা প্রতিষ্ঠানিক অবকাঠামো কি আমাদের আছে? আজ রুবির মত ছেলে-মেয়েরা গ্রেডের এই সোনার হরিণের পেছনে ছুটছে, ছুটছে মিথ্যা মায়ার পেছনে। কিন্তু এই মায়া যেদিন মরীচিকা রুপ নিয়ে তাদের বাস্তব জীবনে হাজির হবে, সেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনা এরা কিভাবে বইবে?
প্রীতম নিজে আজ কোন ভাষা খুজে পায়না রুবিদের সান্তনা দিতে। জীবনের প্রথম স্বপ্নভঙ্গের যাতনা যে বড়ই তীব্র।
কেউ কি জানেন এই ৮৯% পাশের হার, ৫০ হাজার A+ আমাদের এই আগামী প্রজন্মকে কি উপহার দিবে?
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৩১
গাঁয়ের ছেলে বলেছেন: আস্ত ঘোড়ার ডিম