নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
১.
রন্তু ঘাম মুছছে বারবার। তেষ্টায় গলা শুকিয়ে গেলেও পানি পান করার কথা তার মাথায় আসছে না। সে তার ইনকমে (Inner Communication Module) ম্রিদুনার টেলিপ্যাথিক তরঙ্গের ভাইব্রেসন অনুভব করতে পারছে। কিন্তু সে রেস্পনন্স করছে না, রেস্পনস না করে সাময়িক নিজের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে পারবে, কিন্তু বাস্তব থেকে কতটা নিজেকে লুকিয়ে রাখবে সে। মানুষ আজ চরম অবাস্তব জীবন বেছে নিয়েছে, তাই নয় কি? আজ ৭০১৭ সালের ১২৮তম দিবস। এই দিনটি হয়ত মানব ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে, হয়ত আগামীতে রন্তু আর ম্রিদুনার নাম স্মরণ করে মানবজাতি কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পরবে।
অথবা বিপরীতটাও হতে পারে, মানব ইতিহাসে চির কলঙ্ক হয়ে তারা ঘৃণার পাত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। সে যাই হোক, এখন রন্তুর হাতে রয়েছে খুবই অল্প সময়। সে ম্রিদুনাকে অবচেতন করে রেখে এসেছে, ঘণ্টা দুয়েকের ভেতরই সে চেতনা ফিরে পাবে। সে আসার সময় দেখে এসেছে চেতনাহীন ম্রিদুনা এক আজানা বেদনায় কেমন নীল হয়ে আছে। রন্তু অতি দ্রুত আশেপাশের রোবটিক্স মডিউলগুলোর দিকে ছুটতে লাগল। সে জানে হাতে বেশী সময় নেই।
২.
ম্রিদুনা ধীরে ধীরে চোখ খুলল। কতটা সময় পর চোখ খুলল তা বুঝতে পারছে না। ইনকমে সিগন্যাল রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে সময়টাও জেনে নিতে পারছেনা, রিকোয়েস্ট পাঠানোর শক্তিটুকুও সে পাচ্ছে না। তার সারা শরীরের সব শক্তি কে যেন শুষে নিচ্ছে। আজ মানব সভ্যতা এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যে মানুষকে কোন যন্ত্র ব্যাবহার করতে হয় না। মানব শরীরে জন্মের পরপরই ঢুকিয়ে দেয়া হয় ইনকম মডিউল, ইনকম একধরনের লিকুইড ক্রিস্টাল ডিভাইস যা রক্তের সাথে মিশে যায় এবং রক্তের লসিকার সাথে বিক্রিয়া করে একটিভ হয়ে যায়। যতদিন মানব শরীরে রক্তপ্রবাহ থাকে ততদিন এই ডিভাইস একটিভ থাকে। এই ডিভাইস মানুষের মস্তিস্কের সিগন্যাল পড়ে একধরনের সিগন্যাল তৈরি করে যা মানব শরীরের কম্পনের মাধ্যমে তরঙ্গাকারে প্রথম লেভেলের ভার্চুয়াল স্যাটেলাইটে চলে যায়। সেখান থেকে সিগন্যাল যায় সিসিআর (Central Control Region) এ, সেখান থেকে ইন্সট্রাকশন প্রাপ্ত হয় আশেপাশের রোবটিক্স মডিউলগুলো। মানুষ তার পার্শ্ববর্তী মডিউল হতে তার যে কোন প্রয়োজন মেটাতে পারে।
গত পাঁচ হাজার বছরে মানব সভ্যতা বেশ কয়েকটি চরাই-উতরাই পেড়িয়ে আজকের অবস্থায় এসেছে। প্রথমে মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে এসেছে মহাবিশ্বে সভ্যতার জন্ম হয়েছে বেশ কয়েক জায়গায়। মানুষ এক সময় মহাকাশ ভ্রমণে বের হল, একে একে বহু চেষ্টার পর পৃথিবীর ন্যায় বেশ কিছু গ্রহ পেল যেখানকার ভূখণ্ড, আবহাওয়া, বায়ুমণ্ডল, পানির অস্তিত্ব থেকে শুরু করে হুবহু মিল ছিল। কয়েকটি গ্রহের খোঁজ পেল যেখানকার নক্ষত্র থেকে শুরু করে গ্রহ-উপগ্রহ হুবহু সৌরমণ্ডলের অনুরুপ। কিন্তু কোথাও কোন প্রাণের অস্তিত্ব পায় নাই। এমনকি বেশ কিছু জায়গায় পৃথিবী থেকে মানুষ গিয়ে কলোনি তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু অজানা কোন এক কারণে মাত্র কয়েক বছরে কলোনির সকল মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। এভাবে ছয় হাজার বছর পার হয়ে যায়। তারপর আসে সেই মহাধ্বংসের কাল। প্রায় ৮০০ বছর আগে পৃথিবীর পার্শ্ববর্তী গ্রহ মঙ্গলের দুটি উপগ্রহই কোন এক অজানা কারণে কক্ষচ্যুত হয়ে তীব্র গতিতে পৃথিবীর গায়ে আছড়ে পড়ে, কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা পৃথিবীর কাছাকাছি এসে পরস্পরের সাথে ধাক্কা খায়। তারই ফলে, নাকি অন্য কোন কারণে কিছু মানুষ সেই ধ্বংস হতে বেঁচে যায়। এর পর...... আরে কিছু মনে নেই ম্রিদুলার। কারন অজানা কোন এক কারণে মানুষের কাছে এর পরের সভ্যতা গড়ে উঠার কোন স্মৃতি নেই।
তীব্র এক ব্যাথা মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে গেল। ম্রিদুলা দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সামলে উঠার চেষ্টা করল। ম্রিদুলা লাগাতারভাবে অষ্টম মাত্রার সিগন্যাল পাঠিয়ে যাচ্ছে রন্তুর কাছে।
৩.
রন্তু ম্রিদুলার হাত ধরে আরেকবার চাপ দিল, সে টের পাচ্ছে ম্রিদুলার শরিরে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু অজানা কোন এক কারণে তার শরীরের ইনকম কাজ করছে না। ম্রিদুলার বিছানা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। হঠাৎ ম্রিদুলার পায়ের কাছের লম্বা জামার ভেতরে একটা কম্পন দেখেতে পেল। দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে সে ম্রিদুলার পায়ের কাছে বসে পড়ল, পায়ের কাছ থেকে জামা সরাতেই রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে দেখল রক্তমাখা একটি ছোট্ট মানবশিশু পড়ে রয়েছে। কাঁপা কাঁপা হাতে রন্তু শিশুটিকে স্পর্শ করল। রন্তুর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে শিশুটির বন্ধ চোখের পাতায় গিয়ে পড়ল।
রন্তু আর ম্রিদুলা পাশাপাশি উনিতে (উনি হচ্ছে এক ধরনের কলোনি যেখানে বর্তমান মানুষেরা বসবাস করে) বড় হয়েছে, পড়ালেখা করেছে। ছোটবেলা থেকেই তারা দুইজন খুব ভালো বন্ধু ছিল। দুইজনে ছিল খুবই ভাব। কিন্তু একদিন তারা দুজন হারিয়ে যায়, ধারনা করা হয় তারা কোনভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীর ধ্বংসাবশেষে চলে গিয়েছিল। একদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে তারা ফিরে আসে। কিন্তু মাঝখানের সময়টায় তারা কোথায় ছিল, কি করেছে কেউ জানে না। বর্তমানে মানব শিশুর মাঝে যে ইনকম জন্মের পরপরই ঢুকানো হয় তা শুধু মানব শরীরের মাধ্যমে যোগাযোগ করার উদ্দেশে নয়, এর আরেকটা কারন হল এটা মানুষকে নপুঙ্কসক করে দেয়। মহাধ্বংস’র পর মানুষ পেয়েছিল মাত্র হাজার পাঁচেক স্থলভূমি বেঁচে থাকার জন্য। তখন থেকে মানুষ জনসংখ্যা সীমিত রাখার জন্য এই ব্যাবস্থা নেয়া হয় এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষের শিখরে থাকা তখনকার বেঁচে যাওয়া কিছু বিজ্ঞানী এই ব্যাবস্থার প্রবক্তা।
এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ জীবনের যে কোন একটি সময়ে একটি শিশুর জন্য আবেদন করতে পারে। এখেত্রে তার জন্য যোগ্য সঙ্গী পেলে তাদের শরীরের টিস্যু হতে সংকরায়নের মাধ্যমে নতুন মানবশিশুর জন্ম হয় কেন্দ্রীয় “বার্থ কন্ট্রোল ব্যুরোতে”। ম্রিদুলা আরে রন্তু হারিয়ে যাওয়ার পর যখন ফেরত আসলো আবার, তখন থেকেই তারা তাদের মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছিল। তারা পরস্পরের প্রতি কেমন এক অজানা আকর্ষণ বোধ করত। এভাবেই একদিন তারা দৈহিকভাবে মিলিত হল। কিন্তু কিছুদিন পর যখন ম্রিদুলা তার গর্ভে অন্যকার অস্তিত্ব টের পেল সেদিন দুজন অজানা আশঙ্কায় শিউরে উঠলো। তারা আবার তাদের উনি হতে পালিয়ে গেল। মানব বসতির একেবারে গা ঘেসে ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীর এক জঞ্জালের ভেতরে আশ্রয় নিল। সপ্তাহান্তে রন্তু মানব বসতিতে ঢুকে তাদের প্রয়োজনের জিনিস সংগ্রহ করে নিয়ে আসতো।
এভাবে গত আট মাস ধরে তারা এখানে ছিল। শেষে যখন ম্রিদুলার পেট খুব বেশী ফুলে উঠলো, তখন একদিন তারা একটি আধপোড়া ছাপানো বই খুঁজে পেল এবং তা দেখে অবাক হল। কারন এখনকার পৃথিবীর মানুষ ইনকমের সাহায্যে জন্মের পরপরই বিশাল জ্ঞানের অধিকারী হয়। বইটি হাতে নেয়ার পর উল্টেপাল্টে দেখতে লাগল। বইটি খুলে চোখ বুলাতে তারা আবিস্কার করল তারা বইয়ের লেখাগুলো বুঝতে পারছে। আর সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল ধ্বংসপ্রাপ্ত যে ভবনটি হতে তারা বইটি পেয়েছে তা ছিল একটু মিউজিয়াম আর্কাইভ, সেখানে প্রায় ৬০০০ বছরের পৃথিবীর সব ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষিত ছিল, বেশীরভাগই এক্সকম ডিভাইসে (ডেটা সংরক্ষনের ডিভাইস)। কিন্তু কিছু পুস্তকও ছিল, তার মধ্যে একটি ছিল “Pregnancy – An internal journey of human being” বইটিও। আরে পুড়ে যাওয়া এই বইটি তারা দুইজন খুঁজে পায়। এই বই পড়ে তারা বুঝতে পারে কি ঘটনা ঘটেছে, ম্রিদুলা গর্ভবতী হয়েছে। এরপরই কিভাবে মানব শিশু প্রকৃতির নিয়মে জন্ম নেয় তা তারা জেনেছে, জেনেছে কীভাবে শিশু প্রসব করে কোন মানবী।
রন্তু কতক্ষণ নির্বাক বসে আছে জানে না। ম্রিদুলা চোখ খুলে দেখল রন্তু একটি রক্ত মাখা দেবশিশু কোলে নিয়ে বসে আছে, তার দৃষ্টি মেঘলা আকাশের পানে। কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল শিশুটির উপর। তা আকাশের কান্না নাকি হৃদয়ের তা বোঝা গেল না। ম্রিদুলার জোরে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু গলার কাছে কে যেন দশ আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরেছে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৩
মদন বলেছেন: +
৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৩
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: বেশ চমৎকার একটা গল্প। নামটা বেশ ইন্টারেস্টিং!
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, এটা আমার লেখা প্রথম সায়েন্স ফিকশন। গতকাল অফিস থেকে ফেরার পথে মাথায় গল্পের প্লটটা এল। বাসায় ফিরে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে লিখে ফেললাম।
কিছুদিন আগে একটি সাইন্স ফিকশন লেখায় কয়েকজন বলেছিল এখন সামুতে সায়েন্স ফিকশন লেখা পাওয়া যায় না, তাই আগ্রহ জাগল। সবার উৎসাহ পেলে আরও লেখার ইচ্ছা আছে।
৪| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৯
শান্তির দেবদূত বলেছেন: অনেক ভাল লিখেছেন, ভুলেও সাইন্স ফিকশন লেখা থামাবেন না, সামুতে আসলেই সাই-ফাই অনেক কমে গেছে আগের তুলনায়।
আপনার এই গল্পটা অনেক কিছু ছোট পরিসরে চলে এসেছে, যার করনে অনেক কিছুই ক্লিয়ারলি ফুটে উঠছে না। আরও বিস্তারিত পটভুমিতে লিখলে আরও ভাল হত।
নির্দিধায় আরও বড় করতে পারতেন এই গল্পটা, কারন আপনার লেখার গতিশীল ও সাবলীল। যার কারনে পড়তে ক্লান্তি আসবে না।
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল, জলদি আরও সাই-ফাই লেখা চাই।
৫| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৩
নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
চমৎকার হয়েছে বর্ণনা।
ইন্টারেস্টিং থিম নিয়ে লিখেছেন
৬| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৬
মামুন রশিদ বলেছেন: ভাল লিখেছেন । +
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৯
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: গল্প ইন্টারেস্টিং লাগল। চমৎকার।